গুরুতর অপরাধ মানুষ হত্যা

গুরুতর অপরাধ মানুষ হত্যা

অশান্তির আগুনে ঘেরা পৃথিবী দ্বন্দ্ব-সংঘাতে ভরা অবনী   পৃথিবীতে এখন মানবজীবনের চেয়ে সস্তা কিছু নেই বিশেষত বাংলাদেশের মতো তৃতীয়বিশ্বের দেশগুলোয় মাত্র ১০ টাকার জন্যও মানুষ খুন হচ্ছে মিডিয়ায় কান পাতলে কিংবা সংবাদপত্রের পাতায় চোখ রাখলেই নিহতের স্বজনের আহাজারী আর মাতমের দৃশ্য থাকবেই সন্তানের হাতে জন্মদাতা কিংবা জন্মদাতার হাতে সন্তান, স্বামীর হাতে স্ত্রী কিংবা স্ত্রীর হাতে স্বামী, শিক্ষকের হাতে ছাত্র কিংবা ছাত্রের হাতে শিক্ষক, কর্মচারীর হাতে মালিক কিংবা মালিকের হাতে কর্মচারী, নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে সাধারণ নাগরিক কিংবা নাগরিকের হাতে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য খুন- কোনোটাই যেন এখন আর অস্বাভাবিক নয়!

এদিকে কথিত উন্নত সভ্য দেশগুলো মোড়লিপনা দেখাতে গিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আগ্রাসন চালিয়ে খুন করছে হাজার হাজার নিরপরাধ মানুষকে। যারা মুসলিম দেশগুলোকে মানবাধিকারের সবক দেয়, তারাই আবার মজলুম মুসলিম দেশগুলোয় প্রতিদিন নিষ্পাপ শিশু অসহায় নারী বৃদ্ধদের ওপর বোমা নিক্ষেপ করছে। পৃথিবীর মানচিত্রজুড়েই এখন মুসলিমের তপ্ত খুনের ছোপছোপ দাগ

অতি সম্প্রতি বাংলাদেশে যোগ হয়েছে গুম নামের এক আতঙ্ক। সুস্থ-সবল মানুষকে চোখের সামনে পরিবার থেকে উঠিয়ে নিচ্ছে আর সে লোকটি ঘরে ফিরছে লাশ হয়ে। কখনো লাশটিও আর ফেরত পাচ্ছে না হতভাগা পরিবার। কে নিচ্ছে, কোথায় নিচ্ছে, কারা নিচ্ছে- কোনোটারই যেন হদিস নেই

পৃথিবীর তাবৎ মানুষের মতো বাংলাদেশের নাগরিকরাও হত্যা-নৈরাজ্য থেকে পরিত্রাণ খুঁজে ফিরছে। মুক্তির অন্বেষায় তারাও যত্রতত্র ধর্ণা দিচ্ছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। লাশের মিছিল কেবল দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতরই হচ্ছে। এমতাবস্থায় আর সব সমস্যার মতো এর সমাধানেও ইসলামই হতে পারে হতাশায় আলোকদিশা। উপায়হীনের অব্যর্থ উপায়। সেটি হলো, আমাদেরকে অবশ্যই ইসলামের শিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে। তুলে ধরতে হবে ইসলামের অমলধবল আলোকশিখা।
পবিত্র কুরআন সুন্নাহের অমূল্য বাণীগুলো মানব হত্যাকে হারাম ঘোষণা করেছে। অন্যায়ভাবে অপরের প্রাণ হরণকে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে বড় গুনাহসমূহের। শুধু তাই নয় পৃথিবীতে যত রকমের গুনাহের কাজ রয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে বড় মহান আল্লাহর সঙ্গে কাউকে অংশীদার বা শরীক সাব্যস্ত করা। এরপর সবচেয়ে বড় গুনাহ অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করা। হন্তারকের জন্য মহান আল্লাহ দুনিয়ায় বড় শাস্তি এবং আখেরাতে তীব্র আযাবের ঘোষণা দিয়েছেন। যেমন : আল্লাহ তাআলা বলেন,
﴿ ۞قُلۡ تَعَالَوۡاْ أَتۡلُ مَا حَرَّمَ رَبُّكُمۡ عَلَيۡكُمۡۖ أَلَّا تُشۡرِكُواْ بِهِۦ شَيۡ‍ٔٗاۖ وَبِٱلۡوَٰلِدَيۡنِ إِحۡسَٰنٗاۖ وَلَا تَقۡتُلُوٓاْ أَوۡلَٰدَكُم مِّنۡ إِمۡلَٰقٖ نَّحۡنُ نَرۡزُقُكُمۡ وَإِيَّاهُمۡۖ وَلَا تَقۡرَبُواْ ٱلۡفَوَٰحِشَ مَا ظَهَرَ مِنۡهَا وَمَا بَطَنَۖ وَلَا تَقۡتُلُواْ ٱلنَّفۡسَ ٱلَّتِي حَرَّمَ ٱللَّهُ إِلَّا بِٱلۡحَقِّۚ ذَٰلِكُمۡ وَصَّىٰكُم بِهِۦ لَعَلَّكُمۡ تَعۡقِلُونَ ١٥١ ﴾ [الانعام: ١٥١] 
বল, “এসো, তোমাদের ওপর তোমাদের রব যা হারাম করেছেন, তা তিলাওয়াত করি যে, তোমরা তার সাথে কোন কিছুকে শরীক করবে না এবং মা-বাবার প্রতি ইহসান করবে আর দারিদ্র্যের কারণে তোমাদের সন্তানদেরকে হত্যা করবে না। আমিই তোমাদেরকে রিয্ক দেই এবং তাদেরকেও। আর অশ্লীল কাজের নিকটবর্তী হবে না- তা থেকে যা প্রকাশ পায় এবং যা গোপন থাকে। আর বৈধ কারণ ছাড়া তোমরা সেই প্রাণকে হত্যা করো না, আল্লাহ যা হারাম করেছেন। এগুলো আল্লাহ তোমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে তোমরা বুঝতে পার।”’ {সূরা আল-আনআম, আয়াত : ১৫১}
তাফসীরকার বাগবী (রহ.) বলেন, আয়াতে আল্লাহ যে কোনো মুমিন মুসলিম রাষ্ট্রে ট্যাক্স প্রদানকারী অমুসলিম নাগরিককে অন্যায়ভাবে হত্যা হারাম ঘোষণা করেছেন। হত্যার ন্যায়সঙ্গত কারণের মধ্যে রয়েছে ইরতিদাদ তথা কোনো মুসলিমের ইসলাম ধর্মত্যাগ, কিসাস তথা হত্যার বদলে হত্যা এবং রজম তথা বিবাহিত ব্যক্তির জেনা-ব্যভিচারের দণ্ড। [মাআলিমুত তানযীল : /২০৩]

আরেক আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন,
﴿ وَٱلَّذِينَ لَا يَدۡعُونَ مَعَ ٱللَّهِ إِلَٰهًا ءَاخَرَ وَلَا يَقۡتُلُونَ ٱلنَّفۡسَ ٱلَّتِي حَرَّمَ ٱللَّهُ إِلَّا بِٱلۡحَقِّ وَلَا يَزۡنُونَۚ وَمَن يَفۡعَلۡ ذَٰلِكَ يَلۡقَ أَثَامٗا ٦٨ يُضَٰعَفۡ لَهُ ٱلۡعَذَابُ يَوۡمَ ٱلۡقِيَٰمَةِ وَيَخۡلُدۡ فِيهِۦ مُهَانًا ٦٩ ﴾ [الفرقان: ٦٧،  ٦٨] 
আর যারা আল্লাহর সাথে অন্য ইলাহকে ডাকে না এবং যারা আল্লাহ যে নাফ্সকে হত্যা করা নিষেধ করেছেন যথার্থ কারণ ছাড়া তাকে হত্যা করে না। আর যারা ব্যভিচার করে না। আর যে তা করবে সে আযাবপ্রাপ্ত হবে। কিয়ামতের দিন তার আযাব বর্ধিত করা হবে এবং সেখানে সে অপমানিত অবস্থায় স্থায়ী হবে।’ {সূরা আল-ফুরকান, আয়াত : ৬৮-৬৯}
কাউকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা হলে ইসলাম তার প্রতিকারের কার্যকর ব্যবস্থা নির্দেশ করেছে। আল্লাহ তাআলা বলেন,
﴿ وَلَا تَقۡتُلُواْ ٱلنَّفۡسَ ٱلَّتِي حَرَّمَ ٱللَّهُ إِلَّا بِٱلۡحَقِّۗ وَمَن قُتِلَ مَظۡلُومٗا فَقَدۡ جَعَلۡنَا لِوَلِيِّهِۦ سُلۡطَٰنٗا فَلَا يُسۡرِف فِّي ٱلۡقَتۡلِۖ إِنَّهُۥ كَانَ مَنصُورٗا ٣٣ ﴾ [الاسراء: ٣٣] 
আর তোমরা সেই নাফসকে হত্যা করো না, যা আল্লাহ হারাম করেছেন, সঙ্গত কারণ ছাড়া। যে অন্যায়ভাবে নিহত হয় আমি অবশ্যই তার অভিভাবককে ক্ষমতা দিয়েছি। সুতরাং হত্যার ব্যাপারে সে সীমালঙ্ঘন করবে না; নিশ্চয় সে হবে সাহায্যপ্রাপ্ত। {সূরা বনী ইসরাইল, আয়াত : ৩৩}
আয়াতে কিসাস তথা হত্যার বদলা হিসেবে হত্যার বিধানের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। অন্য সূরায় যেটি পরিষ্কার করে বলা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা যেমন বলেন,
﴿ وَكَتَبۡنَا عَلَيۡهِمۡ فِيهَآ أَنَّ ٱلنَّفۡسَ بِٱلنَّفۡسِ وَٱلۡعَيۡنَ بِٱلۡعَيۡنِ وَٱلۡأَنفَ بِٱلۡأَنفِ وَٱلۡأُذُنَ بِٱلۡأُذُنِ وَٱلسِّنَّ بِٱلسِّنِّ وَٱلۡجُرُوحَ قِصَاصٞۚ فَمَن تَصَدَّقَ بِهِۦ فَهُوَ كَفَّارَةٞ لَّهُۥۚ وَمَن لَّمۡ يَحۡكُم بِمَآ أَنزَلَ ٱللَّهُ فَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلظَّٰلِمُونَ ٤٥ ﴾ [المائ‍دة: ٤٥] 
আর আমি এতে তাদের উপর অবধারিত করেছি যে, প্রাণের বিনিময়ে প্রাণ, চোখের বিনিময়ে চোখ, নাকের বিনিময়ে নাক, কানের বিনিময়ে কান দাঁতের বিনিময়ে দাঁত এবং জখমের বিনিময়ে সমপরিমাণ জখম। অতঃপর যে তা ক্ষমা করে দেবে, তার জন্য তা কাফ্ফারা হবে। আর আল্লাহ যা নাযিল করেছেন, তার মাধ্যমে যারা ফয়সালা করবে না, তারাই যালিম।’ {সূরা আল-মায়িদা, আয়াত : ৪৫}

বর্তমান অন্যায় অবিচারে ভরা জগতের অনেক মানুষ ইসলামের বিধানটিকে অমানবিক আবার কোনো কোনো অবিশ্বাসী একে বর্বর পর্যন্তও বলে বসেন। অথচ বর্তমান পৃথিবীর বাস্তবচিত্রও সাক্ষ্য দেয় আপাতদৃষ্টিতে কঠোর মনে হলেও এর মাধ্যমেই মানবজাতির মুক্তি শান্তি নিশ্চিত করা হয়েছে। আমরা বুঝি না বলেই যত অমূলক সমালোচনা। কিসাসের আয়াতের শেষাংশে যেমনবিবেকসম্পন্নগণবলে ইঙ্গিত করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন,
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ كُتِبَ عَلَيۡكُمُ ٱلۡقِصَاصُ فِي ٱلۡقَتۡلَىۖ ٱلۡحُرُّ بِٱلۡحُرِّ وَٱلۡعَبۡدُ بِٱلۡعَبۡدِ وَٱلۡأُنثَىٰ بِٱلۡأُنثَىٰۚ فَمَنۡ عُفِيَ لَهُۥ مِنۡ أَخِيهِ شَيۡءٞ فَٱتِّبَاعُۢ بِٱلۡمَعۡرُوفِ وَأَدَآءٌ إِلَيۡهِ بِإِحۡسَٰنٖۗ ذَٰلِكَ تَخۡفِيفٞ مِّن رَّبِّكُمۡ وَرَحۡمَةٞۗ فَمَنِ ٱعۡتَدَىٰ بَعۡدَ ذَٰلِكَ فَلَهُۥ عَذَابٌ أَلِيمٞ ١٧٨ وَلَكُمۡ فِي ٱلۡقِصَاصِ حَيَوٰةٞ يَٰٓأُوْلِي ٱلۡأَلۡبَٰبِ لَعَلَّكُمۡ تَتَّقُونَ ١٧٩ ﴾ [البقرة: ١٧٨،  ١٧٩]  
হে মুমিনগণ, নিহতদের ব্যাপারে তোমাদের উপরকিসাসফরয করা হয়েছে। স্বাধীনের বদলে স্বাধীন, দাসের বদলে দাস, নারীর বদলে নারী। তবে যাকে কিছুটা ক্ষমা করা হবে তার ভাইয়ের পক্ষ থেকে, তাহলে সততার অনুসরণ করবে এবং সুন্দরভাবে তাকে আদায় করে দেবে। এটি তোমাদের রবের পক্ষ থেকে হালকাকরণ রহমত। সুতরাং এরপর যে সীমালঙ্ঘন করবে, তার জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক আযাব। আর হে বিবেকসম্পন্নগণ, কিসাসে রয়েছে তোমাদের জন্য জীবন, আশা করা যায় তোমরা তাকওয়া অবলম্বন করবে।’ {সূরা আল-বাকারা, আয়াত : ১৭৮-১৭৯}
পৃথিবীতে হত্যার পরিসংখ্যান দেখলে জানা যাবে, সৌদি আরব যেখানে একমাত্র এই কিসাস ব্যবস্থা এখনো বলবৎ রয়েছে, সবচেয়ে কম খুনোখুনির ঘটনা ঘটে। ইসলামকে যারা বর্বর বলে তারা শুধু জ্ঞানপাপীই নয়, মূর্খও বটে। কারণ, ইসলামই পৃথিবীর একমাত্র ধর্ম যেখানে যে কোনো নিরপরাধ মানুষের প্রাণসংহারকে মানবতাবিরোধী মানবজাতির হত্যার তুল্য অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন,
﴿ مِنۡ أَجۡلِ ذَٰلِكَ كَتَبۡنَا عَلَىٰ بَنِيٓ إِسۡرَٰٓءِيلَ أَنَّهُۥ مَن قَتَلَ نَفۡسَۢا بِغَيۡرِ نَفۡسٍ أَوۡ فَسَادٖ فِي ٱلۡأَرۡضِ فَكَأَنَّمَا قَتَلَ ٱلنَّاسَ جَمِيعٗا وَمَنۡ أَحۡيَاهَا فَكَأَنَّمَآ أَحۡيَا ٱلنَّاسَ جَمِيعٗاۚ وَلَقَدۡ جَآءَتۡهُمۡ رُسُلُنَا بِٱلۡبَيِّنَٰتِ ثُمَّ إِنَّ كَثِيرٗا مِّنۡهُم بَعۡدَ ذَٰلِكَ فِي ٱلۡأَرۡضِ لَمُسۡرِفُونَ ٣٢ ﴾ [المائ‍دة: ٣٢] 
কারণেই, আমি বনী ইসরাঈলের ওপর এই হুকুম দিলাম যেযে ব্যক্তি কাউকে হত্যা করা কিংবা যমীনে ফাসাদ সৃষ্টি করা ছাড়া যে কাউকে হত্যা করল, সে যেন সব মানুষকে হত্যা করল। আর যে তাকে বাঁচাল, সে যেন সব মানুষকে বাঁচাল। আর অবশ্যই তাদের কাছে আমার রাসূলগণ সুস্পষ্ট নিদর্শনসমূহ নিয়ে এসেছে। তা সত্ত্বেও এরপর জমিনে তাদের অনেকে অবশ্যই সীমালঙ্ঘনকারী।’ {সূরা মায়েদা, আয়াত : ৩২}
তেমনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়াসাল্লামও হত্যাকাণ্ডকে গুরুতর অপরাধ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। আনাস বিন মালেক রাদিয়াল্লাহুআনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« أَكْبَرُ الْكَبَائِرِ الإِشْرَاكُ بِاللَّهِ وَقَتْلُ النَّفْسِ ، وَعُقُوقُ الْوَالِدَيْنِ ، وَقَوْلُ الزُّورِ » .
কবীরা গুনাহগুলোর মধ্যে সবচে বড় গুনাহ হলো আল্লাহর সঙ্গে শিরক করা, নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করা, পিতামাতার অবাধ্য হওয়া এবং মিথ্যা কথা বলা।’ (বুখারী : ৬৮৭১; মুসলিম : ৮৮)     
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহুআনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« أَوَّلُ مَا يُقْضَى بَيْنَ النَّاسِ فِى الدِّمَاءِ » .
কিয়ামতের দিন মানুষের মধ্যে প্রথম বিচার করা হবে রক্তপাত সম্পর্কে।’ [বুখারী : ৬৩৫৭; মুসলিম : ৩১৭৮]
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহুআনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন :
« اجْتَنِبُوا السَّبْعَ الْمُوبِقَاتِ » . قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ وَمَا هُنَّ قَالَ « الشِّرْكُ بِاللَّهِ ، وَالسِّحْرُ ، وَقَتْلُ النَّفْسِ الَّتِى حَرَّمَ اللَّهُ إِلاَّ بِالْحَقِّ ، وَأَكْلُ الرِّبَا ، وَأَكْلُ مَالِ الْيَتِيمِ ، وَالتَّوَلِّى يَوْمَ الزَّحْفِ ، وَقَذْفُ الْمُحْصَنَاتِ الْمُؤْمِنَاتِ الْغَافِلاَتِ » .
তোমরা সাতটি ধ্বংসাত্মক কাজ থেকে বিরত থাক। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, সেগুলো কী হে আল্লাহর রাসূল? তিনি বললেন, . আল্লাহর সাথে শরীক করা . জাদু করা . অন্যায়ভাবে নিরপরাধ লোককে হত্যা করা . সুদ খাওয়া . এতিমের সম্পদ আত্মসাৎ করা . রণক্ষেত্র থেকে পলায়ন করা . সুরক্ষিত পবিত্রা নারীকে অপবাদ দেওয়া।’ [বুখারী : ৬৮৫৬; মুসলিম : ১২৯]

ইবন উমর রাদিয়াল্লাহুআনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন :
« لَنْ يَزَالَ الْمُؤْمِنُ فِى فُسْحَةٍ مِنْ دِينِهِ ، مَا لَمْ يُصِبْ دَمًا حَرَامًا » .
মুমিন তার দীনের ব্যাপারে সর্বদা অবকাশের মধ্যেই থাকে যাবৎ না সে নিষিদ্ধ রক্তপাত ঘটায়।’ [বুখারী : ৬৮৬২]

ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহুআনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন :
« يَجِىءُ الْمَقْتُولُ بِالْقَاتِلِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ نَاصِيَتُهُ وَرَأْسُهُ بِيَدِهِ وَأَوْدَاجُهُ تَشْخُبُ دَمًا يَقُولُ يَا رَبِّ هَذَا قَتَلَنِى حَتَّى يُدْنِيَهُ مِنَ الْعَرْشِ ».
কিয়ামতের দিন নিহত ব্যক্তি হন্তারককে নিয়ে আসবে। হন্তারকের চুলের অগ্রভাগ মাথা নিহতের হাতের মুষ্ঠিতে থাকবে আর তার কণ্ঠনালী থেকে তখন রক্ত ঝরতে থাকবে। সে বলবে, হে রব, ব্যক্তি আমাকে হত্যা করেছে। এমনকি সে তাকে আরশের কাছে নিয়ে যাবে।’ [তিরমিযী : ২৯৫৫; মুসনাদ আহমদ : ২৫৫১, সহীহ, সিলসিলা সহীহা : ২৬৯৭]
আবূ সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহুআনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন :
يَخْرُجُ عُنُقٌ مِنَ النَّارِ يَتَكَلَّمُ يَقُولُ : وُكِّلْتُ الْيَوْمَ بِثَلاَثَةٍ : بِكُلِّ جَبَّارٍ ، وَبِمَنْ جَعَلَ مَعَ اللهِ إِلَهًا آخَرَ ، وَبِمَنْ قَتَلَ نَفْسًا بِغَيْرِ نَفْسٍ ، فَيَنْطَوِي عَلَيْهِمْ فَيَقْذِفُهُمْ فِي غَمَرَاتِ جَهَنَّمَ.
জাহান্নাম থেকে একটি গলা বের হয়ে কথা বলতে শুরু করবে। সে বলবে, আজ আমি তিন ব্যক্তির প্রতি ন্যস্ত হয়েছি : প্রত্যেক অত্যাচারী, যে আল্লাহর সঙ্গে অন্য কাউকে শরীক স্থির করে এবং ওই ব্যক্তি যে অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করে। অতপর সে তাদের থাবা দিয়ে কব্জা করবে এবং জাহান্নামের গহীনে তাদের নিক্ষেপ করবে।’ [মুসনাদ আহমদ : ১১৩৭২, সহীহ, সিলসিলা সহীহা : ২৬৯৯
আবদুল্লাহ ইবন উমর রাদিয়াল্লাহুআনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন :
« إِنَّ مِنْ وَرْطَاتِ الأُمُورِ الَّتِى لاَ مَخْرَجَ لِمَنْ أَوْقَعَ نَفْسَهُ فِيهَا ، سَفْكَ الدَّمِ الْحَرَامِ بِغَيْرِ حِلِّهِ » .
যেসব পরিত্রাণঅযোগ্য ধ্বংসে মানুষ পতিত হয় তার অন্যতম হলো বৈধ কারণ ছাড়া নিষিদ্ধ রক্ত ঝরানো।’ [বুখারী : ৬৮৬৩]
বলাবাহুল্য, এসব গেল হত্যা খুনোখুনির আইনী প্রতিকারের দিক সত্যিকারার্থে পরিত্রাণ চাইলে আমাদেরকে এর নৈতিক দিকগুলোও বিবেচনায় নিতে হবে। ক্রমবর্ধমান মূল্যবোধের অবক্ষয় মানবিক গুণাবলির অধোঃপাতের কথাও চিন্তা করতে হবে। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন,
﴿ ظَهَرَ ٱلۡفَسَادُ فِي ٱلۡبَرِّ وَٱلۡبَحۡرِ بِمَا كَسَبَتۡ أَيۡدِي ٱلنَّاسِ لِيُذِيقَهُم بَعۡضَ ٱلَّذِي عَمِلُواْ لَعَلَّهُمۡ يَرۡجِعُونَ ٤١ ﴾ [الروم: ٤١] 
মানুষের কৃতকর্মের দরুন স্থলে সমুদ্রে ফাসাদ প্রকাশ পায়। যার ফলে আল্লাহ তাদের কতিপয় কৃতকর্মের স্বাদ তাদেরকে আস্বাদন করান, যাতে তারা ফিরে আসে।’ {সূরা আর-রূম, আয়াত : ৪১}
সত্যিই তো আজ যেসব সামাজিক ব্যধি সমস্যায় আমরা নাকাল, এর দায় তো আমাদেরই। আমাদের ব্যক্তিগত আমল আচরণের দিকে তাকালেই সেটা পরিষ্কার দেখা যায়। কিয়ামত যত ঘনিয়ে আসছে অবস্থার যেন ততই অবনতি ঘটছে। আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহুআনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন :
لَا تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى يَكْثُرَ الْهَرْجُ قَالُوا وَمَا الْهَرْجُ يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ الْقَتْلُ الْقَتْلُ
কিয়ামত ততক্ষণ সংঘটিত হবে না যতক্ষণ না হারাজ বেশি হবে। সাহাবায়ে কিরাম জিজ্ঞাসা করলেন, ‘হারাজকী হে আল্লাহর রাসূল? তিনি বললেন হত্যা, হত্যা।’ [মুসলিম : ৫১৪৩]
হত্যাকাণ্ডের রাহুগ্রাস থেকে মুক্তি পেতে আমাদের যেমন আল্লাহর আইনের সুফল অনুধাবন জরুরী, আইনের শাসন ন্যায় বিচার জরুরী, তেমনি প্রয়োজন নিজেদের সব ধরনের অন্যায়, অবিচার যাবতীয় পাপাচার থেকে একনিষ্ঠভাবে তাওবা করা। নিজেদের সন্তান তথা ভবিষ্যত প্রজন্মকে আল্লাহভীতি নৈতিকতার বলে বলীয়ান হিসেবে গড়ে তোলা। সব ধরনের অশ্লীলতা বেহায়পনা থেকে তাদেরকে যে কোনো মূল্যে দূরে রাখা। বলিউড হলিউডের সিনেমা আর স্যাটেলাইট কালচার আমাদের সন্তানদের মানবিক বিকাশকে শুধু বাধাগ্রস্তই করছে না, তাদেরকে হিংস্র নরপশু বানিয়ে ছাড়ছে। পার্থিব ভোগ লালসা মানুষকে অন্ধ বধির বানিয়ে ছাড়ছে। আল্লাহ আমাদের অনুধাবন সংশোধনের তাওফীক দান করুন। আমীন

আলী হাসান তৈয়ব

আরও পড়ুন-

1. ইসলাম গ্রহণে যে কারণে জোর-জবরদস্তি নেই

2. ইসলামে শ্রমিকের অধিকার :প্রেক্ষিত মে দিবস Workers' rights

3. সত্য মিথ্যার মিশ্রণ

4. শান্তির ধর্ম ইসলাম

5. ইসলাম সন্ত্রাসবাদ

6. ইসলাম বর্তমান শিক্ষাক্রম

7. এইডস প্রতিরোধে ইসলাম

8. অমুসলিম সংখ্যালঘুদের প্রতি ইসলামের উদারতা

9. জালেম শাসকের সামনে সত্য তুলে ধরা

10. ইয়াতীম প্রতিপালন

11. ইয়াতীম প্রতিপালন

12. পরিচ্ছন্নতা রক্ষায় ইসলামের শিক্ষা

13. সাধারণ ইসলামী শিক্ষা: কী এবং কেন?

14. জুলুম : পীড়িতের অশ্রু পীড়কের পরাজয়

15. ইসলামী খেলাফত : একটি পর্যালোচনা

16. মুসলিমদের উদাহরণ হল বিশ্বব্যাপী এক বিশাল আর্মি

17. ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান

18. ইসলামের বিধান চিরকল্যাণকর

19. মানব সম্পদ উন্নয়নে ইসলাম

20. ভাষা মাতৃভাষা : আল্লাহর বিশেষ দান

21. কুরআন হাদীছের আলোকে ভুল

22. খেলাধুলা শরীরচর্চায় ইসলামী মূলনীতি

23. ঘৃণ্য অপরাধ খাদ্যে ভেজাল

24. গুরুতর অপরাধ মানুষ হত্যা

25. ইসলাম বাস্তববাদী জীবনাদর্শ

26. ইসলাম চির বিজয়ী, যা কখনো পরাজিত হয় না

27. ইলমের গুরুত্ব প্রয়োজনীয়তা

28. মুসলিম বিশ্বের ধর্মীয়, রাজনৈতিক সামাজিক হালচাল

29. মানব সমাজসেবায় ইসলামের প্রেরণা

30. প্রতিবন্ধীদের ব্যাপারে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি

31. মুহাম্মদ (সাঃ) সম্বন্ধে বাইবেলের ভবিষ্যদ্বাণী

32. কুরআনের উল্লেখিত ভবিষ্যদ্বাণী, যা পরবর্তীতে বাস্তবে ঘটেছে

33. ইসলামী শিক্ষা

34. মসজিদ হবে সব কল্যাণের স্রোতস্বিনী The mosque will be the source of all welfare

35. ইসলামের দৃষ্টিতে মাদকতা

36. ইসলামের উত্তরাধিকার আইন

37. ইসলামের কতিপয় সামাজিক বিধান

38. ক্ষুধার্তকে খাদ্য দানের গুরুত্ব, ফযীলত এবং প্রয়োজনীয়তা

39. দুর্নীতি ইসলামের দৃষ্টিতে তার প্রতিকার

40. শান্তি সহিষ্ণুতার ধর্ম ইসলাম

41. ইসলামের দৃষ্টিতে আবাসন

42. ইসলামে কাজের গুরুত্ব

43. ইসলামী বিচার ব্যবস্থার কল্যাণকামিতা

No comments

Powered by Blogger.