ইসলাম চির বিজয়ী, যা কখনো পরাজিত হয় না
প্রায় দেড় হাজার বছর আগে রবিউল আউয়াল মাসে আরব মরুর মক্কা উপত্যকায় এক নতুন প্রভাত উদিত হয়েছিল। সে প্রভাত গোমরাহী ও মুর্খতার পুরুপর্দা বিদীর্ণ করেছিল। অবিচার ও অনাচারের ঘূর্ণি হাওয়াকে প্রভাতের মলয় সমীরণে পরিণত করেছিল। বছরের পর বছর ধরে যে আরবভূমি তথা বিশ্ব মানবতা পিপাসায় হাহাকার করছিল, তার উপর রহমতের মেঘমালা বারিবর্ষণ করল এবং সততা, নিষ্ঠা, ভ্রাতৃত্ব, হৃদ্যতা, ন্যায় ও সাম্য থেকে বঞ্চিত মানবতার ভূমিকে শ্যামল শোভায় পূর্ণ করেছিল।
ঐতিহাসিকরা লিখেছেন- ‘আজ রাতে কিসরা প্রাসাদের চৌদ্দখানা পাথর খসে পড়েছে, পারস্যের অগ্নিকুন্ড নিভে গেছে। সাওয়াহ নদী শুকিয়ে গেছে।’ বস্ত্তত কিসরা প্রাসাদ নয় বরং অনারবের মর্যাদা, রোমের প্রভাব, চীনের অগ্রগতি আকাশের ঘাঁটিসমূহ ভেঙে পড়েছিল। পারস্যের আগুন নয়। অনিষ্টের নরক, কুফরীর অগ্নিকুন্ড, মূর্খতার দাবানল স্তিমিত হয়ে গিয়েছিল। মূর্তির ঘরে ধূলো উড়তে লাগল। অগ্নিপূজার স্রোত থেমে গেল। খৃস্টবাদের পাতাসমূহ এক এক করে ঝরে গেলো। তাওহীদের ধূমধাম পড়লো। সৌভাগ্যের ফুল বাগিচায় বসন্ত এলো। হিদায়েত রবির কিরণ চারদিকে ছড়িয়ে পড়লো, মানব চরিত্রের দর্পণ পবিত্র ঝলকে চমকে উঠলো।
অর্থাৎ আব্দুল্লাহর এতীম, আমিনার কলিজার টুকরা, হারাম শরীফের বাদশাহ আরবের শাসনকর্তা, দু জাহানের শাহানশাহ রূহ জগত থেকে পৃথিবীতে শুভাগমন করলেন। যিনি এতীম হয়ে ভূমিষ্ট হলেন, যৌবনেও তিনি এতীমই রইলেন। তিনি যে ধ্বনি তুললেন তা ছিল অপরিচিত। অন্যরা দূরে থাকুক, নিজ সম্প্রদায় ও গোত্রের লোকদেরই তা বেশি খারাপ লাগলো। যারা এতদিন তাকে আল আমীন ও বিশ্বস্ত নামে আখ্যায়িত করতো, এখন তারা তাঁকে কবি ও গণক বলতে লাগল। তিনি বড় হয়েও নিজ সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে অসহযোগিতা ও নিঃসঙ্গের আঘাতে জর্জরিত হলেন। পূর্ব, পশ্চিম, উত্তর, দক্ষিণ-সবদিকে এ সত্য আহবানকে অপরিচিত মনে করা হলো। আহবানকারী আক্ষেপে চারদিকে তাকালেন। সবদিকে নজরে এলো অজানা ও অচেনা আকাশ। অগত্যা তিনি মক্কা থেকে তায়েফ গেলেন। এরা শুনলো না হয়তো তারা শুনবে। এরা মানলো না হয়তো তারা মানবে। কিন্তু সেখানে যা পেলেন, তা ছিল আরো বেদনাদায়ক। আহবানকারী কোন রাজনৈতিক নেতা ছিলেন না যে, এদিক ওদিকের লোকদের সাথে কিছু তালমিল করবেন, নিজের কিছু ছাড়বেন, অন্যদের কিছু ছাড়তে বলবেন। এই আহবান তাঁর নিজের ছিল না। নিজের কোন উচ্চাভিলাষ ও আকাঙ্ক্ষার ফল ছিল না। তাহলে তিনি নিরাশ হতেন, সাহস হারাতেন। সত্য ও ন্যায়ের এ আহবান ছিল আল্লাহর তরফ থেকে। মানুষের সৃষ্টিকর্তার পক্ষ থেকে মানুষের প্রতি করুণার বার্তা। প্রেরণকারী তাঁকে করুণার মূর্ত প্রতীক করে পাঠিয়েছিলেন।
আমি আপনাকে সারা জগতের জন্য একমাত্র রহমত করেই পাঠিয়েছি।’
এ জন্য কাউকে কিছু বলার পরিবর্তে, কোন আশ্রয় অনুসন্ধানের পরিবর্তে তিনি তাকেই বললেন এবং অত্যন্ত দরদ ও আক্ষেপের সাথে বললেন- ‘হে প্রভু, নিজের দুর্বলতা, নিঃস্বতা ও মানুষের মাঝে হেয়তার জন্য আমি তোমার কাছে ফরিয়াদ করছি, তুমি শ্রেষ্ঠ করুণাময়। অসহায় অক্ষমদের মালিক তুমিই, আমারও মালিক তুমি। আমাকে কার নিকট অর্পণ করা হচ্ছে। অপরিচিত রুক্ষ মেজাজ না এমন দুশমনের যে আমার উপর ক্ষমতাবান? আমার প্রতি যদি তোমার অসন্তোষ না থাকে তাহলে আমার কোন পরোয়া নেই। বরং তোমার করুণা আমার জন্য অধিক ব্যাপক। আমি তোমার সত্তার নূরে আশ্রয় প্রার্থনা করছি যাতে সকল অন্ধকার আলোকিত হয়ে যাবে এবং দীন ও দুনিয়ার সকল কাজ তাতে ঠিক হয়ে যাবে যদি না আমার প্রতি তোমার অসন্তোষ বা ক্রোধ আপতিত হয়। তোমার সন্তুষ্টি আমার প্রয়োজন। সৎকাজ করার ও অসৎ কাজ থেকে বেঁচে থাকার শক্তি তোমার পক্ষ থেকেই আমি লাভ করি।’
প্রার্থনার শেষ বাক্যটি উচ্চারিত না হতেই পাহাড়ের পরিচালক ফেরেশতা এসে উপস্থিত হন, অনুমতি প্রার্থনা করেন। আপনি অনুমতি দিলে তায়েফবাসীদের দু’দিকের পাহাড় চাপিয়ে দিয়ে পিষ্ট করে দিই। আহবানকারী কোন রাজনৈতিক নেতা ছিলেন না যে বলবেন, হ্যাঁ, অবশ্যই এরূপ করুন, যাতে আমার প্রভাব প্রতিষ্ঠিত হয়। জুতা দু’খানি রক্তে ভিজে পায়ের সাথে লেগে গেছে। পুরো শরীর রক্তাক্ত হয়ে গেছে। ইরশাদ করলেন- না, আমি আশা করি, তাদের সন্তানদের মধ্যে এমন কেউ জন্ম নেবে, যে এক আল্লাহর ইবাদাত করবে এবং তাঁর সাথে কাউকে শরীক করবে না। তায়েফের এই নিঃস্ব ব্যক্তিটির হাতে কোন তলোয়ার ছিল কি যে, তলোয়ারের জোরে ইসলাম প্রসারের অপবাদ দেয়া যায়? তলোয়ার তো ছিল অন্যদের হাতে।
তায়েফের মুসাফির পুনরায় মক্কায় ফিরে আসেন। আহবান করতে করতে তেরটি বছর কেটে যায়। গুটিকয়েক ব্যক্তি এই আহবানে সাড়া দেয়। যারা লাববাইক বলে তারা নিজেদের জীবনকে ঝুঁকিতে ফেলে। কোন শান্তি নেই। তথাপি মুখে আহাদ আহাদ শব্দই উচ্চারিত হয়। কখনো আবু তালিব পাহাড়ের ঘাঁটিতে মর্মান্তিক বিপদের সম্মুখীন, কখনো আবিসিনিয়ায় হিজরত। তের বছর অতীত হয় কিন্তু মক্কার পাথরী ভূমিতে এ বারিপাতের কোন প্রভাব পড়ে না, শুষ্ক ভূমি শুষ্কই থেকে গেল। আহবানকারী ও তাঁর মুষ্টিমেয় সাথী যেখানেই পা রাখেন উত্তাপ ও গরমের সম্মুখীন হন। অবশেষে তারা মদীনার দিকে ফেরেন। কী ভয় ও ত্রাসের পরিবেশে এ সফর! ছওর গুহার মুখে মাকড়সা ও কবুতরের কাছে প্রশ্ন করুন। কাত হয়ে দেখা আবু বকরের নিকট প্রশ্ন করুন- সুরাকা কতো দ্রুত ঘোড়া চালিয়ে আসছে- একশ’ উটের মূল্যবান পুরস্কারের যার লালসা। ইসলামের মুসাফির মদীনায় পৌঁছে একটু আরামের শ্বাস নিলেন।
মদীনার নরম ভূমি তাঁর অনুকূল হয়। তিনি সেখানে অবস্থান নিলেন। কিন্তু মক্কার লোকদের এখনও শান্তি আসে না। তারা নিজেদের জন্য বিপদ মনে করে। যদি এই নতুন ধর্ম প্রসার লাভ করে, যেমনটি তার লক্ষণ পরিলক্ষিত হচ্ছে তাহলে মুহাম্মাদের সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অস্তিত্ব বিপজ্জনক। তাই তাদের চক্রান্তসমূহ তখনও অব্যাহত থাকে যথারীতি। বদর ও উহুদের যুদ্ধ এই জ্বলন্ত বাতিটিকে নিভানোর জন্যই সংঘটিত হলো, যে বাতি মুর্খতা ও ভ্রষ্টতার পর্দ বিদীর্ণ করতে এসেছিলো এবং সর্বকালের জন্য এসেছিলো। অতঃপর আহযাব যুদ্ধের আকারে সম্মিলিত আক্রমণ হয়। নতুন ধর্ম ও এর অনুসারীদের নিঃশেষ করেই ছাড়তে হবে। একদিকে ক্ষুদ্র একটি দল অপরদিকে তার উপর সম্মিলিত শক্তির আক্রমণ, বস্ত্ত সামগ্রীর জগতে কে বলতে পারতো যে এখন মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর অনুসারীরা অবশিষ্ট থাকবে? এই নাজুক ও বিপজ্জনক পরিস্থিতির চিত্র একমাত্র মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর উপর যে গ্রন্থ নাযিল হয়েছিল তা ব্যতীত অন্য কোথাও কি রূপায়িত হতে পারতো?
‘যখন তারা তোমাদের উপর নিচ থেকে আক্রমণ করলো এবং যখন চক্ষুসমূহ ঘুরে গেল, প্রাণগুলো ওষ্ঠাগত হলো এবং তোমরা আল্লাহ সম্পর্কে নানারূপ ধারণা করতে লাগল। সেখানেই মুমিনরা পরীক্ষিত হলো এবং প্রচন্ডভাবে আন্দোলিত হলো।’ (সূরা আহযাব : ১০)
ইসলাম ছিল বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত নানাধর্ম ও বিশ্বাস, ধারণা ও প্রথার বিরুদ্ধে এক যুদ্ধ ঘোষণা। অতএব এর পথে যেসব বাধা এলো তা ছিল অবধারিত। তথাপি এ আহবান বিজয়ী হলো এবং পৃথিবীতে ইসলামের বিজয় ধ্বনি বাজতে লাগল। মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর ইন্তিকালের পর খোলাফায়ে রাশেদীন, সাহাবায়ে কেরাম এবং এ দীনের জন্য যারা জীবন উৎসর্গ করেছিলেন তারা দুনিয়ার প্রতিটি
প্রান্তরে ইসলাম পৌঁছিয়ে দিলেন। কিন্তু তাদের পরীক্ষার দিন শেষ হলো না। ইসলামকে ভিতর-বাইর উভয় দিকের আঘাত সহ্য করতে হলো। ভিতর থেকে এভাবে আঘাত এলো যে কালের প্রবাহে স্বয়ং এর অনুসারীদের মধ্যে দল-উপদল সৃষ্টি হলো। কিন্তু ইসলামের কোন ক্ষতি হলো না। এমন ওলামা ফুকাহা, মুহাদ্দিসীন, মুফাসসিরীন এবং অতঃপর মুজাদ্দেদীন জন্ম নিলেন, যাঁদের দ্বারা ইসলাম নবশক্তি ও নবজীবন লাভ করতে লাগলো এবং ইসলাম তরী ডুবে ডুবে ভাসতে লাগলো। যারা ডুবে যাচ্ছিল তাদেরকে পরিত্রাণের কূলে পৌঁছিয়ে দিতে লাগলো।
অপরাপর ধর্ম ও সম্প্রদায়ের লোকেরাও ইসলামের ক্ষতি করার জন্য লিপ্ত হলো। ক্রুসেডসমূহ সংঘটিত হলো। নতুন নতুন চিন্তাধারা পেশ করা হলো, যা বুদ্ধিবৃত্তিক দিক দিয়ে ইসলামের ক্ষতি করতে পারে। কিন্তু ইসলামের বিরুদ্ধে প্রচারিত প্রতিটি শ্লোগান কিছু দিনের মধ্যে থেমে যায়। অতঃপর নতুন প্লাবন নয়া মূর্তিতে ছেয়ে উঠে। মনে হয় যেন এখন ইসলামের বাতি আর জ্বলবে না। কিন্তু কিছুকালের মধ্যে সম্ভবত এ সময় পঞ্চাশ বছর বা একশ’ বছর দীর্ঘ হয়। কিন্তু ইসলাম আপন মৌলিক আকৃতিতে টিকে থাকে। এর বিরুদ্ধে পরিচালিত আন্দোলন বা মতবাদ নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। ইসলামের চৌদ্দশ’ বছরের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে এই বাস্তবতা পরিস্ফুট হয় যে, ইসলাম নিজ মৌলিক আকৃতিতে বিদ্যমান রয়েছে। এর বিরুদ্ধে পরিচালিত অসংখ্য আন্দোলন কিছুদিন চলার পর শেষ হয়ে গেছে। ইসলাম যে সত্য ধর্ম এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে জগতের রহমত ও মানবতার পথ প্রদর্শক তা এ থেকে প্রমাণিত হয়।
বর্তমান যুগেও ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে অসংখ্য চক্রান্ত চলছে। নানারূপ পরিকল্পনা তৈরি হচ্ছে। মনে হচ্ছে এখন ইসলাম চলবে না। কিন্তু ইসলাম অগ্রসর হচ্ছে, জীবনের ঝড়ো হাওয়ায় ঘাবড়ে গিয়ে মানুষ ইসলামের কোলে আশ্রয় নিচ্ছে। এখনও ইসলাম তেমনই বিরোধিতার সম্মুখীন হচ্ছে যেমনটি পূর্বেও ছিল। কিন্তু এসকল খেলা কিছুদিনের মধ্যেই সাঙ্গ হবে। ইসলাম আপন অবস্থায় টিকে থাকবে। সকল চক্রান্ত ও বিরোধিতা সত্ত্বেও আজ বিশ্বের কোণায় কোণায় পূর্ব থেকে পশ্চিম, উত্তর থেকে দক্ষিণ সাগরের কিনারা, পাহাড়ের পাদদেশ, প্রত্যন্ত গ্রাম ও বস্তি এবং সভ্যতাসমৃদ্ধ শহরগুলোতেও দুচার লাখ নয়, দুচার কোটি নয় বরং শতাধিক কোটি আদম সন্তানের মুখে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ ধ্বনিত হয়। এ সেই শব্দ যা মক্কার দেওয়ালে দেওয়ালে প্রতিধ্বনিত হয়েছিল এবং তাঁকে দাবীয়ে রাখার জন্য সকল প্রচেষ্টা চালানো হয়েছিল। তায়েফ গিয়েও এ শব্দ কোন কর্ণকূহরে প্রবেশ করলো না। কোথাও এর আশ্রয় পেল না। কিন্তু এ ছিল খোদায়ী আওয়াজ। বান্দাদের নামে রহমতের বার্তা, যা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর মাধ্যমে মানুষের নিকট পাঠানো হয়েছিলো। তাই মক্কা ও তায়েফে যে আওয়াজ শোনা হয়নি দুনিয়ার কোণায় কোণায় তা প্রতিধ্বনিত হয়েছে এবং হচ্ছে।
আজ যখন রবিউল আউয়ালের জলসাসমূহ অনুষ্ঠিত হয়, লাখ লাখ টাকা খরচ করে আলোকসজ্জা করা হয়, তখন চিন্তার বিষয় যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর পক্ষ থেকে আমাদেরকে যা দিয়ে গিয়েছেন আমরা তার কতটুকু মূল্য দিচ্ছি। আমাদের বাস্তব জীবনে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর শিক্ষার কতটুকু প্রভাব আছে। স্বয়ং আমাদেরই হাতে ইসলামের কত ক্ষতিই না হচ্ছে। তাও চিন্তা করা দরকার। উপরে উল্লেখ করা হয়েছে যে, চৌদ্দশ’ বছরের ইতিহাসে ইসলাম অভ্যন্তরীণ ও বহিরাগত উভয় প্রকারের আঘাতসমূহ সহ্য করেছে। তথাপি পূর্ব গৌরব ও প্রতিপত্তি নিয়ে তা টিকে আছে। ইসলামের বিরুদ্ধে বাইরের যে সব চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র রয়েছে তা তো রয়েছেই। উপরন্তু আমাদেরই মধ্যে এমন কত লোক যে রয়েছে যাদের দ্বারা ইসলামের ক্ষতি হচ্ছে তার ইয়ত্তা নেই। আমাদের প্রত্যেকের উচিত মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সেই সব শিক্ষার কথা উল্লেখ করা যা আজকের অশান্ত, পীড়িত ও হাহাকারে নিমজ্জিত বিশ্বের বেদনার উপর শান্তির প্রলেপ দেয়া এবং সকলকে আপন করে নিয়ে ধ্বংসপ্রাপ্ত পৃথিবীকে আবার আবাদ করার কাজে লাগায়।
ইসলাম প্রথম দিন থেকে যেসব পরীক্ষা ও বাঁধার মধ্য দিয়ে অতিক্রম করে চৌদ্দশ বছর ধরে আলোকবর্তিকা হয়ে টিকে আছে, তাতে এক বিন্দুও পরিবর্তন আসেনি। কালের পরিবর্তন উত্থান পতন নতুন নতুন আবিষ্কারাদি কোন কিছুই তার উপর প্রভাব ফেলতে পারেনি। এ এক জ্বলন্ত প্রমাণ যে, ইসলাম আল্লাহর প্রেরিত পয়গাম। সর্বকালের মানুষের তা পথপ্রদর্শন করবে, তাদেরকে ধ্বংস ও ক্ষয় থেকে হিফাযত করবে। কেননা এ হচ্ছে সেই প্রকৃত রূপকারের প্রস্ত্ততকৃত সংবিধান যিনি মানুষের স্বভাব প্রকৃতি ও প্রয়োজনাদি সম্পর্কে সমধিক জ্ঞাত।
ইসলাম আগমনের পরে কত বিধানই তো রচিত হলো আবার ভেঙ্গে গেল। স্বল্পকালের মধ্যেই তা বিলুপ্ত হল। কোন আন্দোলন ও মতবাদের নাম নিতে হয় না। এতটুকু বলা যায় যে, বিংশ শতাব্দীতেই কত যে মতবাদ সৃষ্টি হল আবার কী পরিণতিই না সেগুলোর হল। এরই আলোকে ইসলামের সত্যতা ও বিবর্তনশীল জীবনের সাথে এর সঙ্গতি বিধানের যোগ্যতা অনুমান করা যায়। ইসলাম আগমনের পর থেকে পৃথিবী অসংখ্যবার রূপ বদলিয়েছে। কিন্তু কোন যুগেই ইসলাম মানব জীবনের প্রশ্নাবলীর সমাধানে অপরাগ থাকেনি। এতে কোনরূপ পরিবর্তন বা পরিমার্জনের প্রয়োজন পড়েনি। কোথাও যদি দেখা গিয়ে থাকে যে ইসলাম জীবনসঙ্গ ত্যাগ করেছে, তাহলে তা ইসলামের অনুসারীদের ত্রুটি ও অলসতার ফল। আজ আমাদের বিশ্বকে সভ্যতার চরম উন্নতির বিশ্বকে চন্দ্র বিজয়ের বিশ্বকে একমাত্র মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর আনিত জীবনবিধানই মুক্তি দিতে পারে।
—
– শায়খ লিয়াকত আলী আব্দুস সবুর
সম্পাদানা : আব্দুল্লাহ শহীদ আব্দুর রহমান
No comments