ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান
ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান
আল্লাহ তা‘আলা মানব জাতিকে সৃষ্টি করে তাদের জন্য ইসলামকেই একমাত্র দ্বীন হিসাবে মনোনীত করেছেন। তিনি বলেন,إِنَّ الدِّيْنَ عِنْدَ اللهِ الْإِسْلاَمُ ‘নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকটে একমাত্র মনোনীত দ্বীন হ’ল ইসলাম’ (আলে ইমরান ৩/১৯)। আর ইসলামের যাবতীয় বিধি-বিধান অহী মারফত মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর উপর নাযিল করেছেন। সুতরাং অহি-র বিধানই একমাত্র চূড়ান্ত জীবন বিধান এবং তার মধ্যেই নিহিত রয়েছে সকল সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান। আর এই অহি-র মাধ্যমে মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর জীবদ্দশাতেই দ্বীন-ইসলাম পূর্ণতা লাভ করেছে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর মৃত্যুর তিন মাস পূর্বে ১০ম হিজরীর ৯ই যিলহজ্জে আরাফাতের ময়দানে ছাহাবায়ে কেরামকে নিয়ে যখন তিনি বিদায় হজ্জ পালন করেছিলেন তখন আল্লাহ তা‘আলা এই আয়াতটি অবতীর্ণ করেন, اَلْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِيْنَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِيْ وَرَضِيْتُ لَكُمُ الْإِسْلاَمَ دِيْنًا- ‘আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করলাম ও তোমাদের প্রতি আমার নে‘মত সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দ্বীন হিসাবে মনোনীত করলাম’ (মায়েদা ৫/৩)।
অত্র আয়াত প্রমাণ করে
যে, রাসূলুলল্লাহ (ছাঃ)-এর জীবদ্দশাতেই অহি-র বিধানের মাধ্যমে দ্বীন-ইসলাম পূর্ণতা
লাভ করেছে, যাতে মানুষের সার্বিক জীবনের সকল দিক ও বিভাগ পূর্ণাঙ্গরূপে বর্ণিত
হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, مَا فَرَّطْنَا فِيْ الْكِتَابِ مِنْ شَيْءٍ ‘আমি এই কিতাবে (কুরআনে)
কোন বিষয়ই লিপিবদ্ধ করতে ছাড়িনি’ (আন‘আম ৬/৩৮)।
তিনি অন্যত্র বলেন,وَنَزَّلْنَا عَلَيْكَ الْكِتَابَ تِبْيَانًا لِكُلِّ شَيْءٍ ‘আর
আমরা তোমার উপরে প্রত্যেক বিষয়ের স্পষ্ট ব্যাখ্যা স্বরূপ কিতাব (কুরআন) নাযিল
করেছি’ (নাহল
১৬/৮৯)। অত্র আয়াতের ব্যাখ্যায় ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন,لَوْ ضَاعَ لِيْ عِقَالُ بَعِيْرٍ لَوَجَدْتُهُ فِيْ كِتَابِ اللهِ ‘আমার উট বাঁধার একটি
দড়িও যদি হারিয়ে যায়, তাহ’লে আমি তা আল্লাহর
কিতাবের মধ্যে খুঁজে পাব’।[1]
অতএব বুঝা গেল, মহান
আল্লাহ কুরআনকে আমাদের নিকট পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান হিসাবে প্রেরণ
করেছেন এবং তাকে বাস্তবে রূপদান করার জন্য মুহাম্মাদ (ছাঃ)-কে নবী ও রাসূল করে
পাঠিয়েছেন। আর তিনিও আল্লাহ তা‘আলার বিধানের যথাযথ
বাস্তবায়ন করেছেন। এক্ষেত্রে সামান্যতম ত্রুটি করেননি। যেমন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)
বলেছেন,مَا تَرَكْتُ شَيْئًا مِمَّا أَمَرَكُمُ اللهُ بِهِ إِلاَّ وَقَدْ أَمَرْتُكُمْ بِهِ وَلاَ تَرَكْتُ شَيْئًا مِمَّا نَهَاكُمُ اللهُ عَنْهُ إِلاَّ وَقَدْ نَهَيْتُكُمْ عَنْهُ- ‘আল্লাহ
তা‘আলা
তোমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন এমন কোন জিনিসই আমি (বর্ণনা করতে) ছাড়িনি। আর আমি তার
হুকুম তোমাদেরকে অবশ্যই দিয়েছি। আর আমি এমন কোন জিনিসই ছাড়িনি যা আল্লাহ তা‘আলা
নিষেধ করেছেন। কিন্তু আমি তোমাদেরকে তা অবশ্যই নিষেধ করেছি’।[2]
অতএব ইসলাম একটি
পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান হওয়া সত্ত্বেও যারা ভাল কাজের দোহাই দিয়ে ইসলামের মধ্যে নতুন
নতুন ইবাদতের জন্ম দিয়েছে ও তাকে লালন করছে তাদের ভাবখানা এমন যেন ইসলাম
অপূর্ণাঙ্গ। আর এরূপ বিশ্বাস আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উপর মিথ্যারোপ করার শামিল।
ইমাম মালেক (রহঃ) বলেন,
مَن اِبْتَدَعَ فِي الإِسْلاَمِ بِدْعَةً يَرَاهَا حَسَنَةً فَقَدْ زَعَمَ أَنَّ مُحَمَّدًا خَانَ الرِّسَالَةَ، لِأَنَّ اللهَ تَعَالَى يَقُوْلُ (الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِيْنَكُمْ) فَمَا لَمْ يَكُنْ يَوْمَئِذٍ دِيْنًا فَلَيْسَ الْيَوْمَ دِيْنًا-
‘যে
ব্যক্তি ইসলামের মধ্যে বিদ‘আত সৃষ্টি করল এবং তাকে
উত্তম আমল মনে করল, সে ধারণা করল যে, মুহাম্মাদ (ছাঃ) রিসালাতে খিয়ানত করেছেন।
কেননা আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘আজ
তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে (ইসলাম) পূর্ণাঙ্গ করলাম’ (মায়েদাহ
৫/৩)। সুতরাং সে যুগে (রাসূল ছাঃ ও ছাহাবায়ে কেরামের যুগ) যা দ্বীন হিসাবে
গণ্য ছিল না, বর্তমানেও তা দ্বীন হিসাবে পরিগণিত হবে না’।[3]
সুতরাং বিশ্বাস,
কথা ও কর্মে একমাত্র অহি-র বিধানের কাছেই আত্মসমর্পণ করতে হবে। মানব রচিত কোন
বিধানকে সে কখনোই তোয়াক্কা করবে না। আর তা হবে একমাত্র মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর
নির্দেশিত পদ্ধতিতে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِيْ رَسُوْلِ اللهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ لِمَنْ كَانَ يَرْجُو اللهَ وَالْيَوْمَ الْآخِرَ وَذَكَرَ اللهَ كَثِيْرًا- ‘তোমাদের
মধ্যে যারা আল্লাহ ও আখেরাতকে ভয় করে এবং আল্লাহ্কে অধিক স্মরণ করে, তাদের জন্য
রাসূলুল্লাহর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ’ (আহযাব
৩৩/২১)। তিনি অন্যত্র বলেন, ‘রাসূল তোমাদেরকে যা দেন
তা গ্রহণ কর, আর যা থেকে নিষেধ করেন তা থেকে বিরত থাক এবং আল্লাহকেই ভয় কর।
নিশ্চয়ই আল্লাহ শাস্তি প্রদানে কঠোর’ (হাশর
৫৯/৭)।
মুহাম্মাদ শরীফুল ইসলাম
লিসান্স, মদীনা ইসলামী
বিশ্ববিদ্যালয়, সঊদী আরব।
[1]. মুহাম্মাদ আল-আমীন
আশ-শানক্বীত্বী, তাফসীরে আযওয়াউল বায়ান, সূরা নাহল ৮৯ আয়াতের ব্যাখ্যা।
[2]. সিলসিলা ছহীহাহ
হা/১৮০৩; আস-সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী হা/১৩৮২৫, ইমাম শাফেঈ, কিতাবুর রিসালাহ,
পৃঃ ১৫।
[3]. আশরাফ ইব্রাহীম কাতকাত, আল-বুরহানুল মুবীন ফিত তাছাদ্দী লিল বিদ্ই ওয়াল আবাতীল ১/৪২ পৃঃ।
No comments