সুন্দর ও গুরুত্বপূর্ণ কিছু দোয়া যার মাধ্যমে সকল চাওয়া পাওয়া পূরন হবে

দোয়া ইবাদতের মগজ।মহান আল্লাহর কাছে দোয়ার চেয়ে অধিক সম্মানিত কোনো কিছু নেই’ (ইবনে মাজাহ: ৩৮২৯) ইসলামে দোয়া একটি স্বতন্ত্র ইবাদত। সাহাবি নোমান বিন বাশির (রা.) এর সূত্রে বর্ণিত, রাসুল (.) বলেছেন, ‘দোয়াই ইবাদত।’ (আবু দাউদ: ১৪৮১)

অহংকার করে যারা এই ইবাদত ছেড়ে দেয় তাদের উদ্দেশ্যে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব। অহংকারবশত যারা আল্লাহর ইবাদত করে না, তারা লাঞ্ছিত অবস্থায় জাহান্নামে প্রবেশ করবে।’ (সুরা মুমিন: ৬০)

ভাগ্য পরিবর্তনে দোয়া অসামান্য ভূমিকা পালন করে। রাসুল (.) বলেছেন, ‘তাকদিরের বিরুদ্ধে সতর্কতা কোনো কাজেই আসবে না। যা ঘটেছে যা ঘটতে পারেতা থেকে শুধু দোয়াই পারে নিষ্কৃতি দিতে। কোনো কোনো দুর্দশার সঙ্গে মোকাবেলা করে বিচার দিন পর্যন্ত লড়াই করতে থাকে দোয়া।’ (তাবরানি আউসাত: ১৫১৯)

নিচে পাঠকদের জন্য সুন্দর গুরুত্বপূর্ণ কিছু দোয়া তুলে ধরা হলো।

) শ্রেষ্ঠ দোয়া: رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ ‘রাব্বানা আতিনা ফিদ্ দুনইয়া হাসানাহ, ওয়াফিল আখিরাতি হাসানাহ, ওয়াকিনা আজাবান্নার।অর্থ: ‘হে আমার প্রভু! আমাকে দুনিয়াতে সুখ দান কর, আখেরাতেও সুখ দান কর এবং আমাকে জাহান্নাম থেকে বাঁচাও।’ (সুরা বাকারা: ২০১‍) ফজিলত: দোয়াকে সর্বশ্রেষ্ঠ দোয়া বলা হয়ে থাকে। নবী কারিম (.) দোয়াটি সবচেয়ে বেশি পাঠ করতেন। (সহিহ মুসলিম: ৭০১৬)

) জান্নাত প্রার্থনা জাহান্নাম থেকে বাঁচার দোয়া: اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الْجَنَّةَ وَأَعُوذُ بِكَ مِنَ النَّارِ ‘আল্লাহুম্মা ইন্নী আসআলুকাল জান্নাতা ওয়াআউজুবিকা মিনান্না-র।অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে জান্নাত চাই এবং জাহান্নাম থেকে আপনার কাছে আশ্রয় চাই’ (আবু দাউদ: ৭৯৩) আনাস (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি বার আল্লাহর কাছে জান্নাত চায়, জান্নাত তখন বলে, ‘হে আল্লাহ! এই ব্যক্তিকে জান্নাতে প্রবেশ করাও। পক্ষান্তরে যে ব্যাক্তি বার জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি চেয়ে দোয়া করে, জাহান্নাম বলে, ‘হে আল্লাহ এই ব্যক্তিকে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি দাও।’ (তিরমিজি: ২৫৭২ তাহকিককৃত, জান্নাতের বিবরণ অধ্যায়)

) দোয়া ইউনুস: لَا إِلَـٰهَ إِلَّا أَنتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنتُ مِنَ الظَّالِمِينَ ‘লা ইলাহা ইল্লা আংতা, সুবহানাকা ইন্নি কুংতু মিনাজ জ্বলিমিন।অর্থ: ‘তুমি ছাড়া সত্য কোনো উপাস্য নেই; তুমি পুতঃপবিত্র, নিশ্চয় আমি জালিমদের দলভুক্ত’ (সুরা আম্বিয়া: ৮৭) ফজিলত: রাসুলুল্লাহ (.) বলেন, মাছের পেটে ইউনুস (.) এই দোয়া পড়ে আল্লাহকে ডেকেছিলেন এবং মুক্তি পেয়েছিলেন। যদি কোনো মুসলিম বিপদে পড়ে এই দোয়া পাঠ করে, আল্লাহ তা কবুল করবেন।’ (আহমদ, তিরমিজি, মেশকাত: ২২৯২)

) তাওবার দোয়া: أَسْتَغْفِرُ اللَّهَ الَّذِي لاَ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ الْحَىُّ الْقَيُّومُ وَأَتُوبُ إِلَيْهِ ‘আস্তাগফিরুল্লা-হাল্লাজি লা ইলা-হা ইল্লা হুওয়াল হাইয়ুল ক্বাইয়ূমু ওয়া আতূবু ইলাইহি।অর্থ: ‘আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। যিনি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। যিনি চিরঞ্জীব বিশ্বচরাচরের ধারক। আর আমি তাঁর দিকেই ফিরে যাচ্ছি (তাওবা করছি)ফজিলত:  রাসুলুল্লাহ (.) ইরশাদ করেছেন, হে মানুষ! তোমরা আল্লাহর কাছে তাওবা করো। কেননা আমি তাঁর কাছে দৈনিক ১০০ বার করে তাওবা করি। (মুসলিম, মেশকাত: ২৩২৫)

) ঋণমুক্তির দোয়া: اللهم اكْفِنِي بِحَلَالِكَ عن حَرَامِكَ ، وَأَغْنِنِي بِفَضْلِكَ عَمَّنْ سِوَاكَ ‘আল্লাহুম্মাকফিনি বি হালালিকা আন হারামিকা, ওয়া আগনিনি বিফাদলিকা আম্মান সিওয়াক।অর্থ: ‘হে আল্লাহ! হারামের পরিবর্তে তোমার হালাল রুজি আমার জন্য যথেষ্ট করো। আর তোমাকে ছাড়া আমাকে কারো মুখাপেক্ষী করো না এবং স্বীয় অনুগ্রহ দিয়ে আমাকে স্বচ্ছলতা দান করো।ফজিলত: আলী (রা.)-কে রাসুলুল্লাহ (.) এই দোয়া শিখিয়েছেন। আলী (রা.) বলেন, এই দোয়া পাঠ করলে আল্লাহই ঋণমুক্তির ব্যাপারে দায়িত্ব নেবেন, যদি ঋণ পর্বতসমানও হয়।’ (তিরমিজি: ৩৫৬৩; মুসনাদ আহমদ: ১৩২১)

) দীনদার স্ত্রী সন্তান লাভের দোয়া: رَبَّنَا هَبْ لَنَا مِنْ أَزْوَاجِنَا وَذُرِّيَّاتِنَا قُرَّةَ أَعْيُنٍ وَاجْعَلْنَا لِلْمُتَّقِينَ إِمَامًا ‘রাব্বানা হাবলানা মিন আজওয়াজিনা ওয়া জুররি-ইয়্যাতিনা কুররাতা আয়ুনিওঁ-ওয়াজআলনা লিল মুত্তাকিনা ইমামা।অর্থ: ‘হে আমার প্রভু! স্ত্রী সন্তানদের দ্বারা আমার চোখ শীতল করো। আমাকে পরহেজগারদের আদর্শ করো। (সুরা ফোরকান: ৭৪) ফজিলত: দীনদার স্ত্রী সন্তান লাভের জন্য নিয়মিত কোরআনে বর্ণিত এই দোয়া পাঠ করলে আল্লাহ তাআলা তাঁর ইচ্ছা পূরণ করবেন ইনশাআল্লাহ।

) রিজিক বৃদ্ধির দোয়া: اللَّهُ لَطِيفٌ بِعِبَادِهِ يَرْزُقُ مَنْ يَشَاءُ وَهُوَ الْقَوِيُّ الْعَزِيزُ ‘আল্লাহু লাতীফুম্ বি-ইবাদিহি ইয়ারজুকু মাইয়্যাশায়ু, ওয়া হুয়াল কাভিয়্যুল আজিজ।অর্থ: আল্লাহ নিজের বান্দাদের প্রতি মেহেরবান। তিনি যাকে ইচ্ছা রিজিক দান করেন। তিনি প্রবল, পরাক্রমশালী। (সুরা শুরা: ১৯) ফজিলত: যে ব্যক্তি প্রতিদিন সকালে নিয়ম করে, একনিষ্ঠতার সঙ্গে ৭০ বার আয়াত পড়বে, সে সর্বদা রিজিকের সঙ্কট থেকে হেফাজতে থাকবে ইনশাআল্লাহ।

) সন্তানের দীনদারির জন্য দোয়া: رَبِّ اجْعَلْنِي مُقِيمَ الصَّلاَةِ وَمِن ذُرِّيَّتِي رَبَّنَا وَتَقَبَّلْ دُعَاء ‘রাব্বিজ আলনী মুকীমাস সালা-তি ওয়ামিন জুররিয়্যাতি, রাব্বানা ওয়া তাকাব্বাল দুয়াঅর্থ: হে আমার প্রতিপালক! আমাকে নামাজ আদায়কারী করুন এবং আমার বংশধরদের মধ্য থেকেও। হে আমার প্রতিপালক! আমার প্রার্থনা কবুল করুন। (সুরা ইবরাহিম: ৪০)

) কঠিন কাজ সহজ হওয়ার দোয়া: يَا حَيُّ يَا قَيُّومُ بِرَحْمَتِكَ أَسْتَغِيثُ ‘ইয়া হাইয়ু ইয়া ক্বাইয়ূমু বিরাহমাতিকা আস্তাগিছ।অর্থ: হে চিরঞ্জীব! হে বিশ্বচরাচরের ধারক! আমি তোমার রহমতের আশ্রয় প্রার্থনা করছি।ফজিলত: আনাস (রা.) বলেন, ‘যখন রাসুলুল্লাহ (.)-এর ওপর কোনো কাজ কঠিন হয়ে দেখা দিত, তখন তিনি দোয়াটি পড়তেন।’ (তিরমিজি মেশকাত: ২৪৫৪)

১০) উত্তম জীবন যাপনের দোয়াاَللَّهُمَّ اِنِّى أَسْألُكَ الْهُدَى وَالتُّقَى وَالْعَفَافَ وَالْغِنَى ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকাল হুদা; ওয়াত তুক্বা; ওয়াল আফাফা; ওয়াল গেনা।অর্থ: ‘হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে হেদায়াত কামনা করি এবং আপনার ভয় তথা তাকওয়া কামনা করি এবং আপনার কাছে সতীত্ব তথা নৈতিক পবিত্রতা কামনা করি এবং সম্পদ তথা সামর্থ্য বা সচ্ছলতা কামনা করি।’ (মুসলিম: ২৭২১; তিরমিজি: ৩৪৮৯; ইবনে মাজাহ: ৩৮৩২; মুসনাদে আহমদ: ৩৬৮৪, ৩৮৯৪) ফজিলত: রাসুলুল্লাহ (.) এই দোয়াটি করতেন, যেখানে মানুষের জীবনের সকল চাওয়াই নিহিত রয়েছে।

১১) লেখাপড়ায় ভালো করার দোয়া
এক) رَبِّ زِدْنِي عِلْمًا ‘রাব্বি যিদনী ইলমা’  অর্থ: ‘হে আমার প্রতিপালক! আমার জ্ঞান বৃদ্ধি করো’ (সুরা তোয়াহা: ১১৪)
দুই) رَبِّي يَسِّرْ وَلاَ تُعَسِّرْ وَتَمِّمْ بِالْخَیْر `রব্বি ইয়াসসির ওয়ালা তুআসসির ওয়াতাম্মিম বিল খাইরঅর্থ:  ‘হে আমার প্রতিপালক! তুমি সহজ করে দাও, কঠিন করো না এবং কল্যাণের সাথে সমাপ্ত করে দাও।’ (বায়হাকি কুবরা: ৭০০৩, ১১২৯৯)
তিন) اللَّهُمَّ فَقِّهْنِي فِي الدِّينِ ‘আল্লাহুম্মা ফাক্কিহনি ফিদ দীনঅর্থ: হে আল্লাহ! আমাকে দীনের জ্ঞান দান করুন।’ (বুখারি: ১৪৩)

১২) মা-বাবার জন্য দোয়া: رَّبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرًا ‘রাব্বির হামহুমা কামা রব্বায়ানি সগীরা।অর্থ: ‘হে আমার রব, তাদের উভয়ের প্রতি রহম করো, যেমন তারা আমাকে শৈশবকালে লালন-পালন করেছেন।’ (সুরা বনি ইসরাইল: ২৪) পবিত্র কোরআনে বর্ণিত আরেকটি দোয়া হলো—رَبَّنَا اغْفِرْ لِي وَلِوَالِدَيَّ وَلِلْمُؤْمِنِينَ يَوْمَ يَقُومُ الْحِسَابُ ‘রাব্বানাগ ফিরলী ওয়াল ওয়ালিদাইয়া ওয়ালিল মুমিনীনা ইয়াওমা ইয়াকুমুল হিসাব।অর্থ: ‘হে আমাদের রব, রোজ কেয়ামতে আমাকে, আমার পিতা-মাতা সকল মুমিনকে ক্ষমা করে দিন।’ (সুরা ইবরাহিম: ৪১)

১৩) ক্ষমা পাওয়ার উপযুক্ত দোয়া:  رَبَّنَا ظَلَمۡنَاۤ اَنۡفُسَنَا وَ اِنۡ لَّمۡ تَغۡفِرۡ لَنَا وَ تَرۡحَمۡنَا لَنَکُوۡنَنَّ مِنَ الۡخٰسِرِیۡنَ ‘রাব্বানা জালামনা আনফুসানা, ওয়া ইললাম তাগফির লানা ওয়া তারহামনা, লানাকু-নান্না মিনাল খাসিরিন।অর্থ: ‘হে আমাদের প্রভু, আমরা নিজেদের ওপর অন্যায় করেছি। আর যদি আপনি আমাদেরকে ক্ষমা না করেন এবং আমাদেরকে রহম না করেন তবে অবশ্যই আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হব।’ (সুরা আরাফ: ২৩)

১৪) বিজয়ী হওয়ার দোয়া رَبَّنَا اغۡفِرۡ لَنَا ذُنُوۡبَنَا وَ اِسۡرَافَنَا فِیۡۤ اَمۡرِنَا وَ ثَبِّتۡ اَقۡدَامَنَا وَ انۡصُرۡنَا عَلَی الۡقَوۡمِ الۡکٰفِرِیۡنَ রাব্বানাগ ফিরলানা জুনুবানা ওয়া ইসরাফানা ফী আমরিনা ওয়া সাব্বিত আক্কদামানা ওয়ানছুরনা আলাল কাওমিল ক্বাফিরীন।অর্থ: ‘ কথা ছাড়া তাদের আর কোনো কথা ছিল না, হে আমাদের রব! আমাদের পাপ এবং আমাদের কাজের সীমালঙ্ঘন আপনি ক্ষমা করুন, আমাদের পা সুদৃঢ় রাখুন এবং কাফের সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাদেরকে সাহায্য করুন।’ (সুরা আল ইমরান: ১৪৭)

১৫) ঈমান ঠিক রাখার দোয়া: يَا مُقَلِّبَ الْقُلُوبِ ثَبِّتْ قَلْبِي عَلَى دِينِكَ ‘ইয়া মুকাল্লিবাল কুলুবি সাব্বিত কালবি আলা দীনিকা।অর্থ: ‘হে মনের গতি পরিবর্তনকারী, আমার মনকে আপনার দীনের ওপর স্থির করুন।ফজিলত: উম্মে সালমা (রা.) বর্ণনা করেন, অন্তরের দৃঢ়তার জন্য রাসুল (.) এই দোয়া বেশি বেশি পড়তেন। (তিরমিজি: ৩৫২২)

১৬) ঈমানের সাথে মৃত্যুবরণ করার দোয়া: رَبَّنَا لَا تُزِغۡ قُلُوۡبَنَا بَعۡدَ اِذۡ هَدَیۡتَنَا وَ هَبۡ لَنَا مِنۡ لَّدُنۡکَ رَحۡمَۃً ۚ اِنَّکَ اَنۡتَ الۡوَهَّابُ ‘রাব্বানা লাতুযিগ কুলুবানা বাদা ইয হাদাইতানা ওয়া হাবলানা মিল্লাদুনকা রাহমাতান, ইন্নাকা আনতাল ওয়াহাব।অর্থ: হে আমাদের রব, সরল পথ দেওয়ার পর আপনি আমাদের অন্তরসমূহকে সত্য লঙ্ঘনপ্রবণ করবেন না। আর আপনার কাছ থেকে আমাদেরকে করুণা দান করুন, নিশ্চয়ই আপনি মহাদাতা। (সুরা আল ইমরান: )

আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে উল্লেখিত দোয়াগুলো মুখস্থ করার এবং নিয়মিত আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

No comments

Powered by Blogger.