সব প্রয়োজন ও আশা পূরণে যে দোয়া পড়বেন
হেদায়েত পাওয়ার মাস রমজান। এ মাসে আল্লাহ তাআলার রহমত ও হেদায়েতস্বরূপ নাজিল করা হয়েছে কুরআন। যাতে রয়েছে মানুষের সব সমস্যার সমাধান। আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণে উপায়। রমজানের আজকের দিনে কুরআনের হেদায়েত ও সব আশা আকাঙ্ক্ষা পূরণে যে দোয়া পড়বেন মুমিন রোজাদার-
اَللَّهُمَّ اهْدِنِيْ
فِيْهِ لِصَالِحِ الْأَعْمَالِ، وَاقْضِ لِيْ فِيْهِ الْحَوَائِجَ وَالْآَمَالَ،
يَا مَنْ لَا يَحْتَاجُ إِلَى التَّفْسِيْرِ وَالسُّؤَالِ، يَا عَالِمًا بِمَا
فِيْ صُدُوْرِ الْعَالَمِيْنَ، صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَآلِهِ الطَّاهِرِيْنَ
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মাহদিনি ফিহি লি-সালিহিল আমালি; ওয়া আক্বদি লি ফিহিল হাওয়ায়িঝা ওয়াল আমালা; ইয়া মান লা ইয়াহতাঝু ইলাত তাফসিরি ওয়াস সুওয়ালি; ইয়া আলিমান বিমা ফি সুদুরিল আ’লামিনা; সাল্লি আলা মুহাম্মাদিন ওয়া আলিহিত ত্বাহিরিন।’
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমাকে সৎকাজের দিকে পরিচালিত কর। (হে মহান সত্ত্বা) যার কাছে প্রয়োজনের কথা বলার ও ব্যাখ্যা দেওয়ার দরকার হয় না। আমার সব প্রয়োজন ও আশা-আকাঙ্খা পূরণ করে দাও। হে সমস্ত দুনিয়ার রহস্যজ্ঞানী! হজরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তাঁর পবিত্র বংশধরদের ওপর রহমত বষর্ণ করুন।’
আশা পূরণে কুরআনের দোয়া
মানুষের মনে সব আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণে আল্লাহর একান্ত প্রিয় বান্দা হওয়ার বিকল্প নেই। আর তা ক্ষমা প্রার্থনার মাধ্যমেই সম্ভব। আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমে ক্ষমা প্রার্থনা অনেক দোয়া তুলে ধরেছেন। তাহলো-
> رَبِّ اغْفِرْ
وَارْحَمْ وَأَنْتَ خَيْرُ الرَّاحِمِيْنَ
উচ্চারণ : 'রাব্বিগফির ওয়ারহাম ওয়া আংতা খাইরুর রাহিমিন।'
অর্থ : ‘হে আমার প্রভু! (আমাকে) ক্ষমা করুন এবং (আমার উপর) রহম করুন; আপনিই তো সর্বশ্রেষ্ঠ রহমকারী।' (সুরা মুমিনুন : আয়াত ১১৮)
> رَبَّنَا آمَنَّا فَاغْفِرْ لَنَا وَارْحَمْنَا
وَأَنتَ خَيْرُ الرَّاحِمِينَ
উচ্চারণ : 'রাব্বানা আমান্না ফাগফিরলানা ওয়ারহামনা ওয়া আংতা খাইরুর রাহিমিন।'
অর্থ : 'হে আমাদের পালনকর্তা! আমরা বিশ্বাস স্থাপন করেছি। অতএব তুমি আমাদেরকে ক্ষমা কর ও আমাদের প্রতি রহম কর। তুমি তো দয়ালুদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ দয়ালু।' (সুরা মুমিনুন : আয়াত ১০৯)
> رَبِّ إِنِّيْ ظَلَمْتُ نَفْسِيْ فَاغْفِرْ
لِيْ
উচ্চারণ : 'রাব্বি ইন্নি জ্বালামতু নাফসি ফাগফিরলি।'
অর্থ : '(হে আমার) প্রভু! নিশ্চয়ই আমি নিজের উপর জুলুম করে ফেলেছি, অতএব আপনি আমাকে ক্ষমা করুন।' (সুরা কাসাস : আয়াত ১৬)
> رَبَّنَا إِنَّنَا آمَنَّا فَاغْفِرْ لَنَا
ذُنُوْبَنَا وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ
উচ্চারণ : 'রাব্বানা ইন্নানা আমান্না ফাগফিরলানা জুনুবানা ওয়া ক্বিনা আজাবান নার।'
অর্থ : হে আমাদের রব! নিশ্চয়ই আমরা ঈমান এনেছি, সুতরাং তুমি আমাদের গোনাহ ক্ষমা করে দাও এবং আমাদেরকে জাহান্নামের আযাব থেকে রক্ষা কর।' (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১৬)
> رَبَّنَا ظَلَمْنَا أَنْفُسَنَا وَإِنْ لَّمْ
تَغْفِرْ لَنَا وَتَرْحَمْنَا لَنَكُونَنَّ مِنَ الْخَاسِرِيْنَ
উচ্চারণ : 'রাব্বানা জ্বালামনা আংফুসানা ওয়া ইল্লাম তাগফিরলানা ওয়া তারহামনা লানাকুনান্না মিনাল খাসিরিন।'
অর্থ : ‘হে আমাদের প্রভু! আমরা নিজেদের প্রতি জুলুম করেছি। যদি আপনি আমাদেরকে ক্ষমা না করেন এবং আমাদের প্রতি দয়া না করেন, তবে আমরা অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে যাবো।' (সুরা আরাফ : আয়াত ২৩)
> رَبَّنَا اغْفِرْ لِيْ وَلِوَالِدَيَّ
وَلِلْمُؤْمِنِيْنَ يَوْمَ يَقُوْمُ الْحِسَابُ
উচ্চারণ : 'রাব্বানাগফিরলি ওয়া লিওয়ালিদাইয়্যা ওয়া লিলমুমিনিনা ইয়াওমা ইয়াকুমুল হিসাব।'
অর্থ : হে আমাদের প্রভু! যেদিন হিসাব কায়েম হবে, সেদিন তুমি আমাকে, আমার বাবা-মাকে ও মুমিনদেরকে ক্ষমা কর।' (সুরা ইবরাহিম : আয়াত ৪১)
> سَمِعْنَا وَأَطَعْنَا غُفْرَانَكَ رَبَّنَا
وَإِلَيْكَ الْمَصِيْرُ
উচ্চারণ : 'সামিনা ওয়া আত্বানা গুফরানাকা রাব্বানা ওয়া ইলাইকাল মাছির।'
অর্থ : ‘আমরা (আপনার বিধান) শুনলাম এবং মেনে নিলাম। হে আমাদের রব! আমাদের ক্ষমা করুন। আপনার দিকেই তো (আমাদের) ফিরে যেতে হবে।’ (সুরা আল-বাকারাহ : আয়াত ২৮৫)
> رَبَّنَا وَلاَ تُحَمِّلْنَا مَا لاَ طَاقَةَ
لَنَا بِهِ وَاعْفُ عَنَّا وَاغْفِرْ لَنَا وَارْحَمْنَا أَنتَ مَوْلاَنَا
فَانصُرْنَا عَلَى الْقَوْمِ الْكَافِرِينَ
উচ্চারণ : 'রাব্বানা ওয়া লা তুহাম্মিলনা মা লা ত্বাক্বাতা লানা বিহি ওয়াফু আন্না ওয়াগফিরলানা ওয়ারহামনা আংতা মাওলানা ফাংছুরনা আলাল ক্বাওমিল কাফিরিন।'
অর্থ : 'হে আমাদের রব! যে বোঝা বহন করার সাধ্য আমাদের নেই, সে বোঝা আমাদের উপর চাপিয়ে দিয়ো না। আমাদের পাপ মোচন করুন। আমাদের ক্ষমা করুন এবং আমাদের প্রতি দয়া করুন। তুমিই আমাদের প্রভু।' (সুরা বাকারাহ : আয়াত ২৮৬)
> رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا وَلِإِخْوَانِنَا
الَّذِيْنَ سَبَقُوْنَا بِالْإِيْمَانِ
উচ্চারণ : 'রাব্বানাগফিরলানা ওয়ালি ইখওয়ানিনাল্লাজিনা সাবাকুনা বিল ঈমানি।'
অর্থ : ‘হে আমাদের প্রভু! আমাদের ক্ষমা করুন এবং যারা আমাদের আগে যারা ঈমান নিয়ে মৃত্যুবরণ করেছে, তাদেরকেও ক্ষমা করুন।' (সুরা হাশর : আয়াত ১০)
> رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا ذُنُوْبَنَا
وَإِسْرَافَنَا فِيْ أَمْرِنَا وَثَبِّتْ أَقْدَامَنَا وَانْصُرْنَا عَلَى
الْقَوْمِ الْكَافِرِيْنَ
উচ্চারণ : 'রাব্বানাগফিরলানা জুনুবানা ওয়া ইসরাফানা ফি আমরিনা ওয়া ছাব্বিত আক্বদামানা ওয়াংছুরনা আলাল ক্বাওমিল কাফিরিন।'
অর্থ : ‘হে আমাদের প্রভু! আমাদের ভুল-ত্রুটিগুলো ক্ষমা করে দিন। আমাদের কাজের মধ্যে যেখানে তোমার সীমালঙ্ঘন হয়েছে, তা মাফ করে দিন। আমাদের কদমকে অবিচল রাখুন এবং অবিশ্বাসীদের মোকাবেলায় আমাদের সাহায্য করুন।' (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১৪৭)
> رَبَّنَا فَاغْفِرْ لَنَا ذُنُوْبَنَا
وَكَفِّرْ عَنَّا سَيِّئَاتِنَا وَتَوَفَّنَا مَعَ الْأَبْرَارِ
উচ্চারণ : 'রাব্বানা ফাগফিরলানা জুনুবানা ওয়া কাফফির আন্না সায়্যিআতিনা ওয়া তাওয়াফফানা মাআল আবরার।'
অর্থ : 'হে আমাদের প্রভু! সুতরাং আমাদের গোনাহগুলো ক্ষম করুন। আমাদের ভুলগুলো দূর করে দিন এবং সৎকর্মশীল লোকদের সাথে আমাদের শেষ পরিণতি দান করুন।' (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১৯৩)
মুমিন মুসলমানের উচিত, সেজদায় গিয়ে তাসবিহ পড়ে কিংবা শেষ বৈঠকে তাশাহহুদ ও দরূদ পড়ার পর নিজেদের গোনাহ থেকে মুক্তির জন্য কুরআনে বর্ণিত এ দোয়াগুলো বেশি বেশি পড়া।
রোজাদারের মনে রাখা জরুরি-
রমজানের দ্বিতীয় দশকে আল্লাহ ক্ষমা লাভে অস্রু বিসর্জনের বিকল্প নেই। আল্লাহর কাছে ঈমানদার রোজাদারের চোখের পানির মূল্য অনেক। ঈমানদার যদি আল্লাহর ক্ষমা লাভে অস্রু বিসর্জন দিতেই পারে তবে সে পানি মাটিতে পরার আগেই আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেবেন। তাদের মনের সব আশা-আখাঙ্ক্ষা পূরণ করে নেবেন।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে তার রহমতের ওসিলায় দুনিয়ার যাবতীয় অন্যায় ও খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকার তাওফিক দান করুন। কল্যাণ ও আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণে তাওবা-ইসতেগফার ও ক্ষমা প্রার্থনার তাওফিক দান করুন। আমিন। আমিন।
No comments