প্রশ্নঃ ১৭. যৌথ পরিবারে কার পক্ষ থেকে কুরবানী দিতে হবে?

প্রশ্নঃ ১৭আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, হযরত আমরা ভাই, চার ভাই আয় উপার্জন করি এর মধ্যে একজন বেশি উপার্জন করে,এবং টাকা তার কাছেই থাকে ব্যবসার জন্য, আমাদের বাবা মা আছে তারা বাড়ীতেই থাকে, কিন্তু আমরা সবাই একসাথে বসবাস করি থাকা- খাওয়া সব।এবং আমরা জায়গা কিনলেও বাবা মার নামে ক্রয় করা হয়,পরবর্তীতে সমান ভাবে ভাগ বন্টন হবে। আলাদা আলাদা হিসাব করলে বেশি উপার্জন কারী ভাইয়ের উপর কোরবানি ওয়াজিব হয়, বাকিদের উপর না,কিন্তু উপার্জন কারী ভাই বলে এই টাকাতে সবার হক আছে যেহেতু আমরা এখনো ভিন্ন হইনি।এখন জানার বিষয় কার নামে কোরবানি দিব। জানালে উপকৃত হব।

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم

সম্মানিত প্রশ্নকারী!

কুরবানী ওয়াজিব হওয়ার জন্য প্রধান শর্ত হলো নিসাব পরিমাণ সম্পত্তির মালিক হওয়া। যিনিই নিসাব পরিমাণ সম্পত্তির মালিক হবেন তাঁর ওপর কুরবানী ওয়াজিব হবে। তিনি যৌথ পরিবারে বসবাস করুন কিংবা আলাদা পরিবারে বসবাস করুন। যৌথ পরিবারে বসবাসকারী যদি দশজন মানুষ থাকে আর তাঁদের প্রত্যেকেরই নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকে তাহলে তাদের প্রত্যেকের পক্ষ থেকে কুরবানী করা ওয়াজিব। পক্ষান্তরে একক পরিবারে বসবাস করে যদি নিসাবের মালিক না হয় তাহলে তার ওপরও কুরবানী আবশ্যক নয়।

কুরবানীর নেসাব সম্পর্কে জানতে নিচের রেফারেন্স উত্তরটি দেখুন।

والله اعلم بالصواب

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি
বাইতুল কুরআন মাদারাসা , মোহাম্মাদপুর

রেফারেন্স উত্তর:
  • প্রশ্নঃ ৭৪০৮আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আসসালামু আলাইকুম। কুরবানী কার উপর ফরজ হয়? অনুগ্রহ করে একটু বিস্তারিত বলবেন। সদকায়ে ফিতিরের পরিমান কি এবং কার উপর ফরজ হয়?
উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم

ওয়া আলাইকুমুস সালাম,

- কুরবানী একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। সামর্থ্যবান নর-নারীর উপর কুরবানী ওয়াজিব। এটি মৌলিক ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত। আদম . থেকে সকল যুগে কুরবানী ছিল। তবে তা আদায়ের পন্থা এক ছিল না।

কুরবানীর ফযীলত

عن عائشة رضي الله تعالى عنها أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال : ما عمل آدمي من عمل يوم النحر أحب إلى الله من إهراق الدم، إنه ليأتي يوم القيامة بقرونها وأشعارها وأظلافها، وإن الدم ليقع من الله بمكان قبل أن يقع من الأرض، فطيبوا بها نفسا.

উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, কুরবানীর দিনের আমলসমূহের মধ্য থেকে পশু কুরবানী করার চেয়ে কোনো আমল আল্লাহ তাআলার নিকট অধিক প্রিয় নয়। কিয়ামতের দিন এই কুরবানীকে তার শিং, পশম ক্ষুরসহ উপস্থিত করা হবে। আর কুরবানীর রক্ত জমিনে পড়ার আগেই আল্লাহ তাআলার নিকট কবুল হয়ে যায়। সুতরাং তোমরা সন্তুষ্টচিত্তে কুরবানী কর। (জামে তিরমিযী, হাদীস : ১৪৯৩)

সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যে ব্যক্তি এই ইবাদত পালন করে না তার ব্যাপারে হাদীস শরীফে কঠোর ধমকি এসেছে,

عن أبي هريرة قال : قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : من وجد سعة لأن يضحي فلم يضح فلا يقربن مصلانا.

হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘যার কুরবানীর সামর্থ্য আছে তবুও সে কুরবানী করল না সে যেন আমাদের ঈদগাহে না আসে।’-মুসনাদে আহমদ /৩২১; মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদীস : ৭৬৩৯; আত্তারগীব ওয়াত্তারহীব /১৫৫

কার উপর কুরবানী ওয়াজিব

মাসআলা : প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থমস্তিষ্ক সম্পন্ন প্রত্যেক মুসলিম নর-নারী, যে ১০ যিলহজ্ব ফজর থেকে ১২ যিলহজ্ব সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়ের মধ্যে প্রয়োজন-অতিরিক্ত নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হবে তার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব। টাকা-পয়সা, সোনা-রূপা, অলঙ্কার, বর্তমানে বসবাস খোরাকির প্রয়োজন আসে না এমন জমি, প্রয়োজন অতিরিক্ত বাড়ি, ব্যবসায়িক পণ্য অপ্রয়োজনীয় সকল আসবাবপত্র কুরবানীর নেসাবের ক্ষেত্রে হিসাবযোগ্য।

আর নিসাব হল স্বর্ণের ক্ষেত্রে সাড়ে সাত (.) ভরি, রূপার ক্ষেত্রে সাড়ে বায়ান্ন (৫২.) ভরি। টাকা-পয়সা অন্যান্য বস্ত্তর ক্ষেত্রে নিসাব হল সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপার মূল্যের সমপরিমাণ হওয়া। আর সোনা বা রূপা কিংবা টাকা-পয়সা এগুলোর কোনো একটি যদি পৃথকভাবে নেসাব পরিমাণ না থাকে কিন্তু প্রয়োজন অতিরিক্ত একাধিক বস্ত্ত মিলে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপার মূল্যের সমপরিমাণ হয়ে যায় তাহলেও তার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব। যেমন কারো নিকট কিছু স্বর্ণ কিছু টাকা আছে, যা সর্বমোট সাড়ে বায়ান্ন তোলা চাঁদির মূল্য সমান হয় তাহলে তার উপরও কুরবানী ওয়াজিব।

মাসআলা : একান্নভুক্ত পরিবারের মধ্যে একাধিক ব্যক্তির উপর কুরবানী ওয়াজিব হওয়ার শর্ত পাওয়া গেলে অর্থাৎ তাদের কাছে নেসাব পরিমাণ সম্পদ থাকলে তাদের প্রত্যেকের উপর ভিন্ন ভিন্ন কুরবানী ওয়াজিব।

পরিবারের যত সদস্যের উপর কুরবানী ওয়াজিব তাদের প্রত্যেককেই একটি করে পশু কুরবানী করতে হবে কিংবা বড় পশুতে পৃথক পৃথক অংশ দিতে হবে। একটি কুরবানী সকলের জন্য যথেষ্ট হবে না।

মাসআলাঃ কুরবানীর নেসাব পুরো বছর থাকা জরুরি নয়; বরং কুরবানীর তিন দিন থাকলে এমনকি ১২ তারিখ সূর্যাস্তের কিছু আগে নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়ে গেলেও কুরবানী ওয়াজিব হবে।-বাদায়েউস সানায়ে /১৯৬, রদ্দুল মুহতার /৩১২

- যাকাতের নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হলে সদকায়ে ফিতর আদায় করা ওয়াজিব। অর্থাৎ অত্যাবশ্যকীয় আসবাব সামগ্রী, ব্যবহার্য দ্রব্যাদি, বাসগৃহ ইত্যাদি বাদ দিয়ে অন্ততঃ সাড়ে বায়ান্ন তোলা তথা ৬১২.৩৬ গ্রাম রূপা অথবা সাড়ে সাত তোলা অর্থাৎ ৮৭.৪৮ গ্রাম স্বর্ণ কিংবা কিছু স্বর্ণ, কিছু রূপা কিছু টাকা সব মিলিয়ে সাড়ে বায়ান্ন তোলা তথা ৬১২.৩৬ গ্রাম রূপার সমমূল্যের (যা বর্তমান ঢাকার বাজার দর হিসেবে প্রতি ভরি রূপা ৯৩৩/= হিসেবে ৪৮,৯৮২ টাকা ৫০ পয়সা বা প্রায় ৪৯,০০০ [উনপঞ্চাশ হাজার] টাকা হয়) মাল-সম্পদ থাকলে, সদকায়ে ফিতর আদায় করা ওয়াজিব হবে। সম্পর্কে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) হতে বর্ণিত হাদীস শরীফে রয়েছে, তিনি বলেন

فرض رسول الله صلى الله عليه وسلم صدقة الفطر ، صاعا من شعير أو صاعا من تمر ، على الصغير والكبير ، والحر والمملوك

রাসূলুল্লাহ (সা.) সদকাতুল ফিতর আদায় করাকে আবশ্যক করেছেন। এর পরিমাণ হলো, এক সা যব বা এক সা খেজুর। ছোট-বড়, স্বাধীন-পরাধীন সবার ওপরই এটা আবশ্যক।” (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৫১২)

অবশ্য যাকাত ফরজ হওয়ার জন্য নিসাব পরিমাণ মাল-এর এক বছর অতিক্রান্ত হওয়া শর্ত, কিন্তু সদকায়ে ফিতরের ক্ষেত্রে সেই শর্ত নেই। বরং ঈদুল ফিতরের দিন সুবহে সাদিকের সময় পরিমাণ বা তার বেশী মালের মালিক থাকলে, তার উপর সদকায়ে ফিতর ওয়াজিব হবে। তিনি তার পক্ষ থেকে এবং তার নাবালিগ সন্তানদের কিংবা বালেগ সন্তান পাগল হলে, তার পক্ষ থেকে জনপ্রতি এক ফিতরার হিসাব ধরে (অর্থাৎ তারা যতজন হবেন, ততটি ফিতরা আদায় করতে হবে হিসেবে) ফিতরা আদায় করবেন।

বলা বাহুল্য, আপনার নিজের এবং আপনার নাবালক সন্তানদের সদকায়ে ফিতর বা ফিতরা আপনাকে আদায় করতে হবে। এমনকি আপনার যে শিশু-সন্তানটি ঈদুল ফিতরের দিন সুবহে সাদিকের পূর্বে ভূমিষ্ট হবে, তার ফিতরাও আদায় করতে হবে।

**সদাকায়ে ফিতর সম্পর্কিত হাদীসগুলো পর্যালোচনা করলে বিষয়ে মোট পাঁচ প্রকার খাদ্যের বর্ণনা পাওয়া যায়: যব, খেজুর, পনির, কিসমিস গম। পাঁচ প্রকারের মধ্যে যব, খেজুর, পনির কিসমিস দ্বারা সদকা ফিতর আদায় করতে চাইলে প্রত্যেকের জন্য এক সাদিতে হবে। আর গম দ্বারা আদায় করতে চাইলে আধাসাদিতে হবে। এটা হল ওজনের দিক দিয়ে তফাত। আর মূল্যের দিক থেকে তো পার্থক্য রয়েছেই। যেমন-

() আজওয়া (উন্নতমানের) খেজুরের মূল্য প্রতি কেজি ১০০০/- টাকা হলে একজনের সদকায়ে ফিতর দাঁড়ায় ৩২৫৬/- তিন হাজার দুই শত ছাপ্পান্ন টাকা।

() মধ্যম ধরনের খেজুর যার মূল্য প্রতি কেজি ৩০০/- টাকা হলে একজনের সদকায়ে ফিতর দাঁড়ায় ৯৭৭/- নয়শত সাতাত্তর টাকা।

() কিসমিস প্রতি কেজি ২৩০/- টাকা করে হলে একজনের সদকায়ে ফিতর দাঁড়ায় ৭৪৮/- (সাত শত আটচল্লিশ) টাকা।

) পনির প্রতি কেজি ৫০০/- টাকা করে ধরা হলে একজনের সদকায়ে ফিতর দাঁড়ায় ১৬২৮/- (এক হাজার ছয় শত আটাশ) টাকা।

) গম প্রতি কেজি ৩৫/- টাকা হিসাবে ধরা হলে একজনের সদকায়ে ফিতর দাঁড়ায় ৫৭ টাকা।

হাদীসে ৫টি দ্রব্যের যেকোনোটি দ্বারা ফিতরা আদায়ের সুযোগ দেওয়া হয়েছে যেন মুসলমানগণ নিজ নিজ সামর্থ্য সুবিধা অনুযায়ী এর যেকোনো ১টি দ্বারা তা আদায় করতে পারে। এখন লক্ষণীয় বিষয় হল, সকল শ্রেণীর লোক যদি সবচেয়ে নিম্ন মূল্য-মানের দ্রব্য দিয়েই নিয়মিত সদকা ফিতর আদায় করে তবে হাদীসে বর্ণিত অন্য চারটি দ্রব্যের হিসেবে ফিতরা আদায়ের উপর আমল করবে কে? আসলে এক্ষেত্রে হওয়া উচিত ছিল এমন যে, যে ব্যক্তি উন্নতমানের আজওয়া খেজুরের হিসাবে সদকা ফিতর আদায় করার সামর্থ্য রাখে সে তা দিয়েই আদায় করবে। যার সাধ্য পনিরের হিসাবে দেওয়ার সে তাই দিবে। এর চেয়ে কম আয়ের লোকেরা খেজুর বা কিসমিসের হিসাব গ্রহণ করতে পারে। আর যার জন্য এগুলোর হিসাবে দেওয়া কঠিন সে আদায় করবে গম দ্বারা। এটিই্ উত্তম নিয়ম। নিয়মই ছিল নবী, সাহাবা-তাবেঈন তাবে তাবেঈনের স্বর্ণযুগে। পর্যন্ত কোথাও দুর্বল সূত্রে একটি প্রমাণ মেলেনি যে, স্বর্ণযুগের কোনো সময়ে সব শ্রেণীর সম্পদশালী সর্বনিম্ন মূল্যের দ্রব্য দ্বারা সদকা ফিতর আদায় করেছেন। এখানে সংক্রান্ত কিছু বরাত পেশ করা হচ্ছে।

হাদীস

নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সর্বোত্তম দান সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি ইরশাদ করেন-

أغلاها ثمنا وأنفسها عند أهلها

দাতার নিকট যা সর্বোৎকৃষ্ট এবং যার মূল্যমান সবচেয়ে বেশি -সহীহ বুখারী, কিতাবুল ইতক /১৮৮; সহীহ মুসলিম, কিতাবুল ঈমান বাব আফযালুল আমল /৬৯

সাহাবায়ে কেরাম-এর আমল

) হযরত আবু সাঈদ খুদরী রা. বলেন,

كنا نخرج زكاة الفطر صاعًا من طعام أو صاعا من شعير أو صاعا من تمر أو صاعا من أقط أو صاعا من زبيب وذلك من صاع النبي صلى الله عليه وسلم.

আমরা সদকা ফিতর আদায় করতাম একসাখাদ্য দ্বারা অথবা একসাযব অথবা একসাখেজুর, কিংবা একসাপনির বা একসাকিসমিস দ্বারা। আর একসা’-এর ওজন ছিল নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এরসাঅনুযায়ী। -মুয়াত্তা মালেক পৃ.১২৪; আল ইসতিযকার, হাদীস ৫৮৯, /৩৪৮

হাদীসে রাসূলের যুগে এবং সাহাবাদের আমলে সদকা ফিতর কোন কোন বস্ত্ত দ্বারা আদায় করা হত তার সুস্পষ্ট বর্ণনা রয়েছে।

() হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. সারা জীবন খেজুর দ্বারাই সদকা ফিতর আদায় করেছেন। তিনি একবার মাত্র যব দ্বারা আদায় করেছেন। -আলইসতিযকার, হাদীস নং ৫৯০,/৩৫৪

ইবনে কুদামা রা.আবু মিজলাযের বর্ণনা উল্লেখ করে বলেন, বর্ণনা দ্বারা বোঝা যায় যে, সাহাবায়ে কেরাম অধিকাংশই যেহেতু খেজুর দ্বারা ফিতরা আদায় করতেন তাই ইবনে ওমর রা. সাহাবাদের তরীকা অবলম্বন করতে সারা জীবন খেজুর দ্বারাই আদায় করেছেন। প্রসঙ্গে ইবনে ওমরের ভাষ্য হল-

إن أصحابي سلكوا طريقا وأنا أحب أن أسلكه.

সাহাবীগণ যে পথে চলেছেন আমিও সে পথেই চলতে আগ্রহী।

এবার দেখা যাক মাযহাবের ইমামগণ উত্তম সদকা ফিতর হিসেবে কোনটিকে গ্রহণ করেছেন।

উত্তম সদকা ফিতর

ইমাম শাফেয়ীর মতে উত্তম হল হাদীসে বর্ণিত বস্ত্তর মধ্যে সর্বোৎকৃষ্ট সর্বোচ্চ মূল্যের দ্রব্য দ্বারা সদকা দেওয়া। অন্য সকল ইমামের মতও এমনই।

ইমাম মালিক রাহ.-এর নিকট খেজুরের মধ্যে সবচেয়ে উন্নত খেজুরআজওয়াখেজুর দেওয়া উত্তম। আজওয়া খেজুরের ন্যূনতম মূল্য ১০০০-১২০০ টাকা প্রতি কেজি।

ইমাম আহমদ রাহ.-এর নিকট সাহাবায়ে কেরামের অনুসরণে খেজুর দ্বারা ফিতরা আদায় করা ভালো। -আলমুগনী /২১৯; আওজাযুল মাসালিক /১২৮

ইমাম আবু হানীফা রাহ.-এর নিকটেও অধিক মূল্যের দ্রব্যের দ্বারা ফিতরা আদায় করা ভালো। অর্থাৎ যা দ্বারা আদায় করলে গরীবের বেশি উপকার হয় সেটাই উত্তম ফিতরা।

সাহাবায়ে কেরামের যুগে আধাসাগমের মূল্য এক সা খেজুরের সমপরিমাণ ছিল। নবী করীম সাল্লাল্লাহু্ আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে মদীনাতে গমের ফলন ছিল না বললেই চলে। পরবর্তীতে হযরত মুআবিয়া রা.-এর যুগে ফলন বৃদ্ধি পেলেও মূল্য ছিল সবচেয়ে বেশি। একাধিক বর্ণনায় এসেছে যে, সেকালে আধাসাগমের মূল্য এক সা খেজুরের সমপরিমাণ ছিল।

فلما كان زمن معاوية وكثرت الحنطة جُعِلَ نصف صاعٍ منها مثل صاع من تلك الأشياء.

হযরত মুআবিয়া রা.-এর যুগে গমের ফলন বৃদ্ধি পেলে আধাসাগমকে সদকা ফিতরের অন্যন্য খাদ্যদ্রব্যের একসা মতো গণ্য করা হত। -আলইসতিযকার /৩৫৫

ইবনুল মুনযির বলেন-

فلما كثر في زمن الصحابة رأووا أن نصف صاع منه يقوم مقام صاع من شعير.

সাহাবীদের যুগে যখন গম সহজলভ্য হল তখন তারা আধাসাগমকে একসাযবের সমতুল্য গণ্য করলেন। -ফাতহুল মুলহিম /১৫; আওজাযুল মাসালিক /১৩

তাহলে বুঝা গেল , হযরত মুআবিয়া রা.-এর যুগে গম দ্বারা সদকা ফিতর আদায়ের প্রচলন বেড়েছিল। এর কারণ হল যে, তখন গমই ছিল সর্বোৎকৃষ্ট সর্বোচ্চ মূল্যমানের খাদ্য। সময় হযরত ইবনে ওমর সাহাবাদের অনুকরণে খেজুর দ্বারাই সদকা ফিতর আদায় করতেন। তখন তাঁকে আবু মিজলায রাহ. বললেন-

إن الله قد أوسع والبر أفضل من التمر

আল্লাহ তাআলা তো এখন সামর্থ্য দিয়েছেন। আর গম খেজুরের চেয়ে অধিক উত্তম। অর্থাৎ আপনার সামর্থ্য রয়েছে বেশি মূল্যের বস্ত্ত সদকা করার। তবুও কেন খেজুর দ্বারা তা আদায় করছেন। উত্তরে তিনি বলেছিলেন, আমি সাহাবাদের অনুকরণে এমন করছি।

যাক আমাদের কথা ছিল, সাহাবায়ে কেরাম গম দ্বারা এজন্যই সদকা ফিতর আদায় করতেন যে, এর মূল্য সবচেয়ে বেশি ছিল। হাদীসে পাঁচ প্রকারের খাদ্য দ্রব্যের মধ্যে বর্তমানে গমের মূল্য সবচেয়ে কম। তাহলে যুগে সর্ব শ্রেণীর জন্য এমনকি সম্পদশালীদের জন্যও শুধুই গম বা তার মূল্য দ্বারা সদকা ফিতর আদায় করা কী করে সমীচীন হতে পারে?

বড়ই আশ্চর্য! পুরো দেশের সব শ্রেণীর লোক বছর বছর ধরে সর্বনিম্ন মূল্যের হিসেবে ফিতরা আদায় করে আসছে। মধ্যবিত্ত উচ্চবিত্ত সকলেই ফিতরা দিচ্ছে একই হিসাবে জনপ্রতি ৫৫/৬০ টাকা করে। মনে হয় সকলে ভুলেই গেছে যে, গম হচ্ছে ফিতরার ৫টি দ্রব্যের একটি (যা বর্তমানে সর্বনিম্ন মূল্যের) সুতরাং আমরা এদেশের ফিতরা আদায়কারী ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের প্রতি আহবান জানাচ্ছি তারা যেন যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী হাদীসে বর্ণিত দ্রব্যগুলোর মধ্যে তুলনামূলক উচ্চমূল্যের দ্রব্যটির হিসাবে ফিতরা আদায় করেন। পনির, কিসমিস, খেজুর কোনোটির হিসাব যেন বাদ না পড়ে। ধনীশ্রেণীর মুসলিম ভাইদের জন্য পনির বা কিসমিসের হিসাবে ফিতরা আদায় করা কোনো সমস্যাই নয়। যেখানে রমযানে ইফতার পার্টির নামে লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যয় করা হয়, ঈদ শপিং করা হয় অঢেল টাকার, সেখানে কয়েক হাজার টাকার ফিতরা তো কোনো হিসাবেই পড়ে না। যদি এমনটি করা হয় তবে যেমনিভাবে পুরো হাদীসের উপর মুসলমানদের আমল প্রতিষ্ঠিত হবে এবং একটি হারিয়ে যাওয়া সুন্নত যিন্দা করা হবে, তেমনি পদ্ধতি দারিদ্র্যবিমোচনে অনেক অবদান রাখবে। গরীব-দুঃখীগণের মুখেও হাসি ফুটে উঠবে ঈদের পবিত্র দিনে।

والله اعلم بالصواب

উত্তর দিয়েছেনঃ হাফেয মাওলানা শুআইব মাহদী মাহী

No comments

Powered by Blogger.