ইহরাম অবস্থায় যে ভুলে হাজিদের কাফফারা দিতে হবে
হজের ফরজ কাজ আদায় করতে না পারলে কোনো কাফফারা হবে না বরং পরের বছর কাজা করতে হবে। নতুবা হজ আদায় হবে না। আর হজের ৩ ফরজ কাজ ব্যতিত অন্যান্য কাজের কোনোটি ছুটে গেলে তার জন্য ছোট ও বড় কাফফারা দিতে হবে।
হজের কাফফারা
ইহরাম অবস্থায় নিষিদ্ধ কাজ করলে কাফফারা হিসেবে দম, বুদনা বা সাদকা আদায় করতে হয়। আর তা নিষিদ্ধ কাজের ওপর নির্ভর করে নির্ধারিত হয়।
যেসব কাজে কাফফারা দিতে হবে
পূর্ণ বা আংশিক নাপাক অবস্থায় বা নারীদের হাফেজ (ঋতুস্রাব) অবস্থায় তাওয়াফে জিয়ারত করলে ‘বুদনা’ অর্থাৎ গরু বা উট কুরবানি দেয়া ওয়াজিব। তবে পবিত্র হওয়ার পর যদি ওই তাওয়াফ আদায় করা হয় তবে কোনো কাফফারা দিতে হবে না।
- কোনো নারী যদি হায়েজ-নেফাস অবস্থায় কাবা শরিফ তাওয়াফ করে; তবে ওই নারীকে আবার কাবা শরিফ তাওয়াফ করা ওয়াজিব। আর যদি কেউ ওজু ছাড়া কাবা শরিফ তাওয়াফ করে তবে তা আবার তাওয়াফ করা মোসতাহাব।
- সাফা-মারওয়ার আংশিক কিংবা পূর্ণ সাঈ বিনা কারণে ছেড়ে দেয় তবে দম বা কুরবানি দেয়া ওয়াজিব। তবে আবার সাঈ করে নিলে কুরবানি বা দম দেয়া লাগবে না।
- সাঈ’র এক, দুই, তিন চক্কর দিলে প্রতি চক্করের জন্য সাদকা দিতে হবে।
- আরাফাতের ময়দানে উপস্থিত থাকার দিন ৯ জিলহজ কেউ যদি আরাফাতের ময়দানে গিয়ে আবার ময়দান থেকে বের হয়ে যায় এবং সুর্যাস্তের আগে আবার ফিরে না আসে তবে তবে তাকে দম দিতে হবে।
- নারী কিংবা অধিক বয়স্ক নারী-পুরুষ ভীষণ ভীড়ের ভয়ে মুজদালিফায় অবস্থান করলে কোনো কাফফারা নেই। কিন্তু এ ধরনের ওজর না হলে নির্ধারিত সময়ের আগে মুজদালিফা ত্যাগের জন্য দম দেয়া ওয়াজিব।
- ১০ জিলহজ মুজদালিফা থেকে মিনায় গিয়ে বড় জামরাতে কংকর নিক্ষেপ যদি ১১ তারিখ সুবহে সাদিকের আগে সম্পন্ন না করা হয় তবে দম দিতে হবে।
- মিনায় জামরায় পাথর নিক্ষেপ না করে মাথা মুণ্ডন করলে দম দেয়া ওয়াজিব।
- কিরান ও তামাত্তু হজ আদায়কারীরা কুরবানির আগে মাথা মুণ্ডন করলে কংকর নিক্ষেপ করা ওয়াজিব।
- যারা কিরান ও তামাত্তু হজ আদায় করবে; তারা কংকর নিক্ষেপের আগে মাথা মুণ্ডন করলে দম দেয়া ওয়াজিব।
প্রয়োজনে হোক
আর
বিনা
প্রয়োজনে
অল্প
কিংবা
বেশি
পরিমাণে
ছোট-বড়
যে
কোনো
অঙ্গে
অথবা
দাড়ি,
চুল,
হাত
বা
পা
ইত্যাদিতে
সুগন্ধি
ব্যবহার
করলে
দম
দিতে
হবে।
- ইহরামকারী একদিন
একরাত
সময়
পরিমাণ
সেলাই
করা
কাপড়
পরিধান
করলে
কোরবানি
এবং
তার
চেয়ে
কম
সময়
হলে
সাদকা
দিতে
হবে।
- সেলাই করা
বা
না
করা
কাপড়
দিয়ে
মাথা
মুখের
চার
ভাগের
এক
ভাগ
ঢেকে
রাখলে
(একদিন
এক
রাতের
চেয়ে
বেশি
সময়
হলে)
কুরবানি
দিতে
হবে।
এর
চেয়ে
কম
সময়
হলে
সাদকা
দিতে
হবে।
- মাথা বা
দাড়ির
চার
ভাগের
এক
ভাগ
মুড়িয়ে
ফেললে
অথবা
দেহের
অন্য
কোনো
অংশের
চুল
ফেলে
দিলে
কুরবানি
এবং
চার
ভাগের
এক
অংশের
কম
হলে
সাদকা
দিতে
হবে।
- একই বৈঠকে
হাত-পায়ের
নখ
কাটলে
একটি
কুরবানি
দেতে
হবে।
- ছেঁড়া বা
ফেটে
যাওয়া
নখ
কেটে
ফেললে
কিংবা
নখের
আঘাতে
নিজের
হাত
বা
আঙুল
কেটে
ফেললে
কুরবানি
বা
সাদকা
কোনোটাই
দিতে
হবে
না।
কোনো নারী
বা
পুরুষ
পরস্পরকে
উত্তেজনার
সাথে
স্পর্শ
করলে
কুরবানি
দিতে
হবে।
- তাওয়াফে জিয়ারতের
আগে
স্বামী-স্ত্রী
সহবাস
করলে
হজই
বাতিল
হয়ে
যাবে।
পরের
বছর
তাওয়াফে
জিয়ারতের
নির্ধারিত
সময়ে
তা
আদায়
করতে
হবে।
তবে
হজ
বাতিল
হলেও
কুরবানি
দেয়া
ওয়াজিব
এবং
অন্য
হাজিদের
মতো
বাকি
যাবতীয়
কাজ
করে
যেতে
হবে।
- ওকুফে আরাফা
তথা
আরাফাতের
ময়দানে
অবস্থানের
পরে
ও
মাথা
মুণ্ডনের
আগে
সহবাস
করলে
হজ
বাতিল
হবে
না
বটে,
একটি
গরু
বা
উট
কুরবানি
করা
ওয়াজিব।
- ইহরাম ছাড়া
মিকাত
অতিক্রম
করা
উচিত
নয়।
মিকাতে
ফিরে
এসে
ইহরাম
বেঁধে
নেয়া
উচিত।
ফিরে
না
এসে
ইহরাম
বাঁধলে
একটি
কুরবানি
দিতে
হবে।
- সব অথবা
অধিকাংশ
তাওয়াফ
বিনা
ওজুতে
করলে
কুরবানি
দিতে
হবে।
- যদি তাওয়াফে
কুদুম
বা
বিদায়ী
তাওয়াফ
কিংবা
অর্ধেকের
কম
তাওয়াফে
জিয়ারত
বিনা
ওজুতে
করে
তবে
প্রতিটি
চক্করের
জন্য
সাদকা
দিতে
হবে।
আর
যদি
ওজুসহ
আবার
তাওয়াফ
করে,
তাহলে
দম
বা
সাদকা
কিছুই
দিতে
হবে
না।
- হাজরে আসওয়াদে
যদি
সুগন্ধি
লাগানো
থাকে
আর
তাতে
চুম্বন
করার
সময়
যদি
অধিক
পরিমাণ
সুগন্ধি
মুখে
বা
হাতে
লেগে
যায়;
তবে
ইহরামকারীর
জন্য
দম
ওয়াজিব
হবে।
আর
সুগন্ধির
পরিমাণ
কম
হলে
সাদকা
দিতে
হবে।
ইহরাম অবস্থায় মাথা, হাদ বা দাড়িতে মেহদি লাগানো নিষিদ্ধ। যদি পুরো মাথা হাত বা দাড়িতে কিংবা এক-চতুর্থাংশ পরিমাণ লাগানো হয়। আবার মেহদির রং যদি গাঢ় না হয়ে হালকা হয় তবে একটি দম দিতে হবে। আর যদি গাঢ় হয় তবে দুটি দম দিতে হবে। কিন্তু নারীদের জন্য একটি দম দেয়া ওয়াজিব। কেনা তাদের মথা ঢাকা নিষিদ্ধ নয়। হাতে মেহদি লাগানো নারী-পুরুষ প্রত্যেকের জন্যই দম ওয়াজিব।
- শরীরের পশম বা লোম যদি কেটে ফেলে বা লোমনাশক ঔষধের দ্বারা তুলে ফেলে তবে দম দিতে হবে।
- হাত বা পায়ের নখ কাটলেও দম দিতে হবে।
- ইহরাম অবস্থায় স্ত্রীকে আসক্তি সঙ্গে চুম্বন বা স্পর্শ করলে দম ওয়াজিব হবে।
- সাফা ও মারওয়ায় সাঈ না করলে দম ওয়াজিব হবে।
- মুজদালিফায় অবস্থান তরক করলে কুরবানি দিতে হবে।
- নির্ধারিত সময়ে কংকর নিক্ষেপ না করলেও দম দেয়া ওয়াজিব।
মনে রাখতে হবে
যেসব কাজে দম বা কুরবানি করা ওয়াজিব; তা হারামের সীমানার মধ্যেই জবেহ করতে হবে; গোশত সাদকা করে দিতে হবে। কাফফারার গোশত নিজে কিংবা সচ্ছল কেউ খেতে পারবে না।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সব হাজিকে হজ ও ওমরার ইহরামকালীন সময়ে উল্লেখিত কাজগুলো থেকে বিরত থাকার মাধ্যমে হজ ও ওমরা সম্পাদন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
No comments