যে আমল করলে অভাব মোচন হয়

ইসলাম এমন এক শান্তির ধর্ম যেখানে সবকিছুর সমাধান বিদ্যমান। একজন মানুষ কেবল তখনই শান্তির ধর্মের প্রকৃত অনুসারী হতে পারে যখন সে আল্লাহর সব নির্দেশাবলির ওপর আমল করে চলে। আল্লাহর নির্দেশাবলির ওপর পরিপূর্ণ আমল করলে রিজিকেরও ঘাটতি হতে পারে না। মূলত আমাদের নিজেদের ভুলের জন্যই সংসারে অভাব-অনটন দেখা দেয়। সংসারে সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য হালাল জীবিকার গুরুত্ব অপরিসীম। কেননা ইবাদত কবুলের পূর্বশর্তই হলো হালাল জীবিকা উপার্জন করা।

রিজিকের মালিক হলেন আল্লাহ। তিনি যাকে চান প্রভূত রিজিক দান করেন। আমাদের কাজ হলো তার নির্দেশ অনুযায়ী পরিশ্রম করে হালাল উপার্জন করা। যেভাবে আল্লাহ ইরশাদ করেন-

তুমি বলনিশ্চয় আমার রব যার জন্য চান রিজিক সম্প্রসারিত করে দেন এবং সংকুচিতও করে দেন কিন্তু অধিকাংশ লোক তা জানে না।’ (সুরা সাবা : আয়াত ৩৬)

হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, হে আদম সন্তান, আমার ইবাদতের জন্য তুমি ঝামেলামুক্ত হও, আমি তোমার অন্তরকে প্রাচুর্য দিয়ে ভরে দেব এবং তোমার দারিদ্র্য ঘুচিয়ে দেব। আর যদি তা না কর, তবে তোমার হাত ব্যস্ততায় ভরে দেব এবং তোমার অভাব দূর করব না।’ (তিরমিজি, মুসনাদে আহমদ ইবনে মাজাহ)

যেহেতু রিজিকে বরকতের মালিক আল্লাহ, তাই আমাদের কাজ হলো হালাল উপার্জনের জন্য চেষ্টা-প্রচেষ্টা করা আর আল্লাহর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করা। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-

আর যখন তোমাদের রব ঘোষণা দিলেন, ‘যদি তোমরা শুকরিয়া আদায় করতবে আমি অবশ্যই তোমাদের বাড়িয়ে দেবআর যদি তোমরা অকৃতজ্ঞ হওনিশ্চয় আমার আযাব বড় কঠিন।’ (সুরা ইবরাহিম: আয়াত )

অভাব মোচনে যে দোয়া পড়ব-

অভাবমুক্ত হতে আল্লাহ তাআলা আমাদের একটি দোয়া শিখিয়েছেন। অভাব মোচনে দোয়াটি আমরা বেশি বেশি পাঠ করব। আর তাহলো-

اللَّهُمَّ رَبَّنَا أَنزِلْ عَلَيْنَا مَآئِدَةً مِّنَ السَّمَاء تَكُونُ لَنَا عِيداً لِّأَوَّلِنَا وَآخِرِنَا وَآيَةً مِّنكَ وَارْزُقْنَا وَأَنتَ خَيْرُ الرَّازِقِينَ

আল্লাহুম্মা রাব্বানা আনযিল আলাইনা মাইদাতাম মিনাস্সামায়ি তাকুনু লানা ঈদাল্লি আউয়্যালিনা ওয়া আখিরিনা ওয়া আয়াতাম মিনকা ওয়ারযুকনা ওয়া আনতা খায়রুর রাযিকিন।’ (সুরা মায়েদা: আয়াত ১১৪)

অর্থ : ‘হে আমাদের প্রভু-প্রতিপালক আল্লাহ! তুমি আকাশ থেকে আমাদের জন্য খাবার ভরতি খাঞ্চা অবতীর্ণ কর যেন তা আমাদের প্রথম অংশের জন্য আর আমাদের শেষ অংশের জন্য আনন্দোৎসব হবে এবং তোমার পক্ষ থেকে একটি নিদর্শন হয়। তুমি আমাদেরকে রিজিক দান কর। প্রকৃতপক্ষে তুমিই উত্তম রিজিকদাতা।

বিখ্যাত তাবেয়ি হজরত মাকহুল রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, ‘যে ব্যক্তি বাক্যগুলো সাতবার বলবে আল্লাহ তাআলা তার সত্তরটি অভাব দূর করবেন। (তন্মধ্যে) সবচেয়ে হাল্কা বিপদ হলো মানুষের অভাব। দোয়াটি হলো-

لاَ حَوْلَ وَلا قُوَّةَ إِلاَّ بِاللهِ ، وَلا مَلْجَأَ مِنَ اللهِ إِلاَّ إلَيْهِ

অর্থ : 'আল্লাহর সাহায্য ছাড়া গোনাহ থেকে বিরত থাকা এবং নেক আমলে মশগুল হওয়া সম্ভব না। আল্লাহ তাআলার কাছ থেকে পালিয়ে যাওয়ার কোনো জায়গা নেই। তার কাছেই আশ্রয় গ্রহণ করতে হবে।

ইস্তেগফারে অভাব মোচন হয়-

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিআল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি নিয়মিত ইসতেগফার করবে আল্লাহ তাআলা তার সব সংকট থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন, সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিজিকের সংস্থান করে দেবেন।’ (আবু দাউদ ইবনে মাজাহ)

আসলে আমাদের মাঝে যখন অভাব দেখা দেয় তখন আল্লাহর দিকে ঝুঁকি কিন্তু অভাব দূর হওয়া মাত্রই আল্লাহকে ভুলে যাই আর কৃপণতা দেখাই। বিষয়েই আল্লাহ ইরশাদ করেন-

মানুষকে দুর্বলমনা করে সৃষ্টি করা হয়েছে। বিপদ স্পর্শ করলে সে ঘাবড়ে যায়। আর স্বাচ্ছন্দ্য আসলে কার্পণ্য শুরু করে।’ (সুরা মাআরিজ : আয়াত ১৯-২১)

চাইব কেবল আল্লাহর কাছেই

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অভাব প্রাচুর্যের ব্যাপারে আল্লাহর কাছে পানাহ চাইতেন।’ (আবু দাউদ)

হজরত আবদুল্লাহ ইবন মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি অভাবে পতিত হয়, অতপর তা সে মানুষের কাছে সোপর্দ করে (অভাব দূরিকরণে মানুষের ওপর নির্ভরশীল হয়), তার অভাব মোচন করা হয় না। পক্ষান্তরে যে অভাবে পতিত হয়ে এর প্রতিকারে আল্লাহর ওপর নির্ভরশীল হয় তবে অনিতবিলম্বে আল্লাহ তাকে তরিৎ বা ধীর রিজিক দেবেন।’ (তিরমিজি মুসনাদ আহমদ)

আত্মীয়র সম্পর্ক বজায় রাখলে অভাব মোচন হয়-

হজরত আনাস ইবনে মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি তিনি ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি কামনা করে তার রিজিক প্রশস্ত করে দেয়া হোক এবং তার আয়ু দীর্ঘ করা হোক সে যেন তার আত্মীয়দের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখে।’ (বুখারি মুসলিম)

মহান আল্লাহ তাআলা আমাদের রিজিকে প্রভূত বরকত দিন এবং তার সন্তুষ্টির চাদরে আবৃত করে নিন। কুরআন-সুন্নাহর দিকনির্দেশনাগুলো যথাযথ মেনে চলার তাওফিক দিন। আমিন।

No comments

Featured Post

চাকরি লাভের আমল, রিজিকে বরকত লাভের দোয়া

রিজিকে বরকত লাভে যেভাবে দোয়া করেছেন ঈসা ( আ .)

Powered by Blogger.