দুধ পানে যে ৩ কাজ করতেন বিশ্বনবি

আল্লাহ তাআলার অনন্য নেয়ামতের মধ্যে দুধ একটি। এটি সব গুণসমৃদ্ধ খাবার তথা সুপারফুড। চিকিৎসাবিজ্ঞানে দুধকে সুস্বাস্থ্যের জন্য অতুলনীয় পুষ্টিগুণ সম্পন্ন খাবার হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। গৃহপালিত গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া উট থেকে পুষ্টিগুণ সম্পন্ন এসব দুধ পাওয়া যায়। সম্পর্কে কুরআনুল কারিমে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেছেন-

আর গবাদিপশুর মধ্যে তোমাদের জন্য রয়েছে শিক্ষা। তার উদরস্থিত গোবর রক্তের মধ্য থেকে পান করাই বিশুদ্ধ দুধ, যা পানকারীদের জন্য সুস্বাদু।’ (সুরা নাহল : আয়াত ৬৬)

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুধ খেতে পছন্দ করতেন। মেরাজের রাতেই এর প্রমাণ পাওয়া যায়। হজরত জিবরিল আলাইহিস সালাম মেরাজের রাতে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সামনে দুটি পানীয় পেশ করেন। তার একটি দুধ এবং অন্যটি মধু। তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালামকে যে কোনো একটি গ্রহণের কথা বলেন হজরত জিবরিল আলাইহিস সালাম। তখন তিনি পানীয় হিসেবে দুধ গ্রহণ করেন। হাদিসে এসেছে-
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘দুধ খাবার পানীয় উভয়টির জন্যই যথেষ্ট হয়।

বর্তমানে মানুষ পানীয় হিসেবে অনেক জিনিস গ্রহণ করে। অথচ পানীয় হিসেবে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অন্যতম পছন্দ ছিল দুধ। দুধ পান করা সম্পর্কে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের তিনটি সুন্নাত রয়েছে, যা বিলুপ্ত হওয়ার পথে। তাহলো-

পানীয় হিসেবে দুধ গ্রহণ করা
নিয়মিত খাদ্যতালিকায় দুধ রাখা। কেউ দুধ পান করতে দিলে বা উপহার হিসেবে দিলে তা ফেরত না দেয়া। হাদিসে এসেছে-
হজরত ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তিনটি বস্তু ফিরিয়ে দেয়া যায় না- বালিশ, সুগন্ধি তেল বা সুগন্ধি দ্রব্য এবং দুধ।’ (তিরমিজি)

আল্লামা তিবি রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, মেহমানকে বালিশ, সুগন্ধি এবং দুধ দ্বারা আপ্যায়ন করা হয়। এগুলো মেহমানের জন্য উপহার বিধায় তা ফেরত বা প্রত্যাখ্যান করা উচিত নয়।

দুধ পানের সময় বিশেষ দোয়া পড়া
খাবার গ্রহণসহ যে কোনো কাজের সময় যেমন দোয়া রয়েছে, তেমনি দুধ পানের জন্য রয়েছে বিশেষ দোয়া। দুধ পানের সময় দোয়া পড়া সুন্নাত। হাদিসে এসেছে-
হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
তোমাদের কেউ খাবার খায় সে যেন দোয়া পড়ে-
اَللَّهُمًّ بَارِكْ لَنَا فِيْهِ وَأطْعِمْنَا خَيْرًا مِّنْهُ
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফিহি, ওয়া আত্বয়িমনা খাইরাম মিনহু।
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! এতে আমাদের জন্য বরকত দান কর এবং আমাদের এর চেয়ে উত্তম খাবার দাও।

আর আল্লাহ যাকে দুধ পান করান, সে যেন দোয়া পড়ে-
اَللَّهُمَّ بَاركْ لنَا فِيْهِ وَزِدْنَا مِنْهُ
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফিহি ওয়া যিদনা মিনহু।
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! এতে আমাদের জন্য বরকত দাও এবং তা আরও বেশি করে দাও।
তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘দুধ ছাড়া আর কোনো (খাবার) জিনিস নেই, যা একই সঙ্গে খাবার পানীয় উভয়টির জন্য যথেষ্ট হয়।’ (আবু দাউদ)

হাদিসে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মতে মুহাম্মাদির জন্য দুধ পানে বিশেষ দোয়ার শিক্ষা দিয়েছেন। দুধ পানের সময় যা পড়া উম্মতে মুহাম্মাদির জন্য সুন্নাত।

দুধ পানের পর কুলি করা
দুধ পান করার সুন্নাত আমল হলো কুলি করা। মুখ পরিষ্কার করতে কুলি করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। হাদিসে এসেছে-
হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুধ পান করার পর কুলি করলেন। অতপর বললেন, ‘এর মধ্যে তৈলাক্ততা আছে।’ (বুখারি)

সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, দুধ পান সংক্রান্ত ব্যাপারে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের তিন নির্দেশনা মেনে তিনটি সুন্নাত জারি রাখা।

আল্লাহ তাআলা উম্মতে মুহাম্মাদিকে হাদিসের ঘোষণা অনুযায়ী উল্লেখিত তিনটি সুন্নাত যথাযথ পালন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

No comments

Featured Post

চাকরি লাভের আমল, রিজিকে বরকত লাভের দোয়া

রিজিকে বরকত লাভে যেভাবে দোয়া করেছেন ঈসা ( আ .)

Powered by Blogger.