ঈছালে ছওয়াব : একটি তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ (১)
ঈছালে ছওয়াব : একটি তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ (১)
ঈছালে ছওয়াব’ (ايصال ثواب) ফারসী শব্দ। আরবীতে হবে ‘ঈছালুছ ছওয়াব’ (ايصال الثواب)। তবে এক্ষেত্রে আরবীতে অন্য শব্দ বেশী ব্যবহৃত হয়। যেমন ইহ্দাউছ ছওয়াব (إهداء الثواب)। এর আভিধানিক অর্থ হ’ল ছওয়াব পৌঁছানো। পরিভাষায় ঈছালে ছওয়াব হ’ল কোন নেক আমল করে তার ছাওয়াব মৃত ব্যক্তিকে দান করা। কষ্টার্জিত আমলের ছওয়াব যে কাউকে দান করা হয় না। এটি সাধারণত তাকেই দান করা হয়, যার প্রতি মহববত ও আন্তরিকতা আছে। প্রিয়জন আখেরাতের পথিক হয়ে গেলে তার জন্য এমন কিছু করা মানুষের স্বভাবজাত আগ্রহ, যা তার শান্তি-সফলতার পক্ষে সহায়ক হবে, তার জন্য আল্লাহর রহমত ও করুণা লাভের মাধ্যম হবে। ফলে আল্লাহ তার গোনাহ মাফ করে দিবেন, মর্যাদা উঁচু করবেন এবং সুখে-শান্তিতে ভরিয়ে তুলবেন।
সকল প্রকার আমল অন্যের জন্য করা যায় না এবং এর ছওয়াবও দান
করা যায় না। কেবল ততটুকু করা যাবে যতটুকু কুরআন ও ছহীহ হাদীছে বর্ণিত হয়েছে।
সাধারণত শারীরিক ইবাদতের ক্ষেত্রে ঈছালে ছওয়াব হয় না। তবে শারীরিক ইবাদতের
ক্ষেত্রেও কিছু পর্যায়ে ঈছালে ছওয়াব হ’তে পারে, যা ছহীহ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত। কতিপয় বিদ্বান
শারীরিক ইবাদতের ব্যাপারে বিশেষ ক্ষেত্রে বর্ণিত হাদীছের উপর কিয়াস করে সকল প্রকার
ইবাদতে ঈছালে ছওয়াবকে সম্পৃক্ত করেন, যা সঠিক নয়। কারণ ইবাদত তাওক্বীফী যা
কেবল কুরআন ও ছহীহ হাদীছ দ্বারা সাব্যস্ত হয়। তাছাড়া তাদের ক্বিয়াস যদি ছহীহ হ’ত তাহ’লে
সে ব্যাপারে ছাহাবী ও তাবেঈগণের আমল থাকত। তাদের আমল না থাকাটাই সেটি বাতিল কিয়াস
বলে গণ্য হবে। আমরা সে ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করব। মৃত
আত্মীয়ের জন্য জীবিতদের করণীয় সম্পর্কে হাদীছে বর্ণিত হয়েছে, আবু উসাইদ (রাঃ)
বলেন,بَيْنَا نَحْنُ عِنْدَ رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم إِذَا جَاءَهُ رَجُلٌ مِنْ بَنِى سَلِمَةَ فَقَالَ : يَا رَسُولَ اللهِ! هَلْ بَقِىَ مِنْ بِرِّ أَبَوَىَّ شَىْءٌ أَبَرُّهُمَا بِهِ بَعْدَ مَوْتِهِمَا قَالَ : نَعَمِ الصَّلاَةُ عَلَيْهِمَا وَالاِسْتِغْفَارُ لَهُمَا وَإِنْفَاذُ عَهْدِهِمَا مِنْ بَعْدِهِمَا وَصِلَةُ الرَّحِمِ الَّتِى لاَ تُوصَلُ إِلاَّ بِهِمَا وَإِكْرَامُ صَدِيقِهِمَا- ‘আমরা একদা নবী করীম (ছাঃ)-এর নিকটে উপস্থিত ছিলাম। এ সময়
বনু সালমা গোত্রের এক ব্যক্তি এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আমার পিতা-মাতার
মৃত্যুর পর তাদের সাথে সদ্ব্যবহার করার কোন অবকাশ আছে কি? তিনি বলেন, হ্যাঁ, উপায়
আছে। (১) তাদের জন্য দো‘আ করা, (২) তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা, (৩)
তাদের প্রতিশ্রুতিসমূহ পূর্ণ করা (৪) তাদের আত্মীয়-স্বজনের সাথে সদ্ব্যবহার করা,
যারা তাদের মাধ্যমে তোমারও আত্মীয় (৫) তাদের বন্ধু-বান্ধবদের সম্মান করা’।[1] পিতা-মাতার মৃত্যুর পরও তাদের প্রতি সদাচরণের কিছু
দৃষ্টান্ত তুলে ধরা হয়েছে। পিতা-মাতার মৃত্যুর পর করণীয় হ’ল- তাদের জানাযার ছালাত আদায় করা, তাদের জন্য ক্ষমা
প্রার্থনা করা, তাদের মৃত্যুর পর তাদের অঙ্গীকার পূর্ণ করা, তাদের মাধ্যমে সৃষ্ট
আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা এবং তাদের প্রিয় মানুষদের শ্রদ্ধা করা। ছালাত দ্বারা
উদ্দেশ্য জানাযার ছালাত অথবা দো‘আ
করা। হানাফী বিদ্বান আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (রহঃ) বলেন, ছালাত দ্বারা উদ্দেশ্য
হ’ল তাদের জন্য আল্লাহর
রহমতের দো‘আ করা। ইসতিগফার
দ্বারা উদ্দেশ্য হ’ল
তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা। তাদের অঙ্গীকার পূর্ণ করা অর্থ হ’ল তাদের অছিয়ত বাস্তবায়ন করা। তাদের কারণে সৃষ্ট আত্মীয়তার
বন্ধন অটুট রাখার অর্থ হ’ল
নিকটাত্মীয়ের প্রতি ইহ্সান করা।[2] যে সকল বিষয়ে ঈছালে ছওয়াব শরী‘আত সম্মত সেগুলো নিম্নে আলোকপাত করা হ’ল।-
মৃত ব্যক্তির কৃত আমলসমূহ দ্বারা সে কবরে উপকৃত হবে :
মৃত ব্যক্তির এমন কিছু আমল রয়েছে যা জীবিত অবস্থায় করেছিল
মরার পরও তার ছওয়াব তার আমলনামায় যোগ হ’তে থাকে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,إِذَا مَاتَ الإِنْسَانُ انْقَطَعَ عَنْهُ عَمَلُهُ إِلاَّ مِنْ ثَلاَثَةٍ إِلاَّ مِنْ صَدَقَةٍ جَارِيَةٍ أَوْ عِلْمٍ يُنْتَفَعُ بِهِ أَوْ وَلَدٍ صَالِحٍ يَدْعُو لَهُ- ‘যখন কোন মানুষ মারা যায়, তখন তার তিনটি আমল ব্যতীত সকল আমল
বন্ধ হয়ে যায় (১) ছাদাক্বা জারিয়াহ, (২) উপকারী ইলম এবং (৩) সৎ সন্তান যে তার জন্য
দো‘আ করে’।[3]
অন্য বর্ণনায় রাসূল (ছাঃ)
বলেছেন,سَبْعٌ يَجْرِيْ لِلْعَبْدِ أَجْرُهُنَّ بَعْدَ مَوْتِهِ وَهُوَ فِي قَبْرِهِ: مَنْ عَلَّمَ عِلْمًا، أَوْ أَجْرَى نَهَرًا، أَوْ حَفَرَ بِئْرًا، أَوْ غَرَسَ نَخْلًا، أَوْ بَنَى مَسْجِدًا، أَوْ تَرَكَ وَلَدًا يَسْتَغْفِرُ لَهُ مِنْ بَعْدِ مَوْتِهِ، أَوْ وَرَّثَ مُصْحَفًا- ‘মৃত্যুর পর কবরে থাকা
অবস্থায় বান্দার সাতটি আমল জারী থাকে। (১) দ্বীনী ইলম শিক্ষা দান করা (২) নদী-নালা
প্রবাহিত করা (৩) কূপ খনন করা (৪) খেজুর তথা ফলবান বৃক্ষ রোপণ করা (৫) মসজিদ
নির্মাণ করা (৬) এমন সন্তান রেখে যাওয়া, যে পিতার মৃত্যুর পর তার জন্য ক্ষমা
প্রার্থনা করে (৭) কুরআন বিতরণ করা/কুরআনের ওয়ারিছ রেখে যাওয়া’।[4] অন্যত্র রাসূল (ছাঃ)
বলেন,إِنَّ مِمَّا يَلْحَقُ الْمُؤْمِنَ مِنْ عَمَلِهِ وَحَسَنَاتِهِ بَعْدَ مَوْتِهِ عِلْمًا عَلَّمَهُ وَنَشَرَهُ وَوَلَدًا صَالِحًا تَرَكَهُ وَمُصْحَفًا وَرَّثَهُ أَوْ مَسْجِدًا بَنَاهُ أَوْ بَيْتًا لاِبْنِ السَّبِيلِ بَنَاهُ أَوْ نَهْرًا أَجْرَاهُ أَوْ صَدَقَةً أَخْرَجَهَا مِنْ مَالِهِ فِى صِحَّتِهِ وَحَيَاتِهِ يَلْحَقُهُ مِنْ بَعْدِ مَوْتِهِ، ‘মুমিনের মৃত্যুর পর তার আমল
ও পুণ্যকর্মসমূহ হ’তে নিশ্চিতভাবে যা এসে তার সাথে মিলিত হয় তা হ’ল- সেই ইলম, যা সে শিক্ষা
করে প্রচার করেছে অথবা নেক সন্তান যাকে রেখে সে মারা গেছে অথবা কুরআন মজীদ যা সে
মীরাছরূপে ছেড়ে গেছে অথবা মসজিদ যা সে নিজে নির্মাণ করে গেছে অথবা মুসাফিরখানা যা
সে মুসাফিরদের সুবিধার্থে নির্মাণ করে গেছে অথবা পানির নালা যা সে (সেচ ইত্যাদির
উদ্দেশ্যে) প্রবাহিত করে গেছে অথবা ছাদাক্বাহ যা সে নিজের মাল থেকে তার সুস্থ ও
জীবিতাবস্থায় বের (দান) করে গেছে। এসব কর্মের ছওয়াব তার মৃত্যুর পরও তার সাথে এসে
মিলিত হবে’।[5] অন্যত্র রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,أَرْبَعَةٌ تَجْرِىْ عَلَيْهِمْ أُجُوْرُهُمْ بَعْدَ الْمَوْتِ مُرَابِطٌ فِىْ سَبِيْلِ اللهِ وَمَنْ عَمِلَ عَمَلاً أُجْرِىَ لَهُ مِثْلُ مَا عَمِلَ وَرَجُلٌ تَصَدَّقَ بِصَدَقَةٍ فَأَجْرُهَا لَهُ مَا جَرَتْ وَرَجُلٌ تَرَكَ وَلَداً صَالِحاً فَهُوَ يَدْعُو لَهُ، ‘যে চারটি বিষয়ের ছওয়াব
প্রাপ্তি মানুষের মৃত্যুর পরও অব্যাহত থাকে। ১. আল্লাহর রাস্তায় সীমান্ত প্রহরা,
২. ব্যক্তির এমন (মাসনূন) আমল যা অন্যেরাও অনুসরণ করে, ৩. এমন ছাদাক্বাহ যা সে
স্থায়ীভাবে জারী করে দিয়েছে, ৪. এমন নেক সন্তান রেখে যাওয়া যে তার জন্য দো‘আ করে’।[6] প্রখ্যাত তাবেঈ আতা বিন
রাবাহ (রহঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন,يُقْضَى عَنِ الْمَيِّتِ أَرْبَعٌ الْعِتْقُ وَالصَّدَقَةُ وَالْحَجُّ وَالْعُمْرَةُ. ‘মৃতের পক্ষ হ’তে চারটি কাজ করণীয়- গোলাম
আযাদ করা, ছাদাক্বা করা, হজ্জ করা এবং ওমরা করা’।[7]
উল্লেখ্য যে, সৎ সন্তান দো‘আ না করলেও তার সৎ কর্মের
ছওয়াব পিতা-মাতা পাবেন বলে একদল বিদ্বান উপরোক্ত হাদীছের ব্যাখ্যায় অভিমত ব্যক্ত
করেছেন।[8]
জীবিতদের দান মৃতদের জন্য
কল্যাণকর হওয়া আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের কাছে একটি স্বীকৃত
বিষয়। মৌলিক দিক থেকে তাদের মধ্যে এ ব্যাপারে কোন মতভেদ নেই; মতভেদ শুধু ব্যাখ্যার
ক্ষেত্রে। তাদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে শুধু মু‘তাযিলা সম্প্রদায় তা
অস্বীকার করেছে। এদের মতে জীবিতদের দান করা কোন আমলই মৃত ব্যক্তির জন্য কল্যাণকর
নয়, দো‘আ-ইস্তিগফার ও ছাদাক্বাও নয়।
এই দৃষ্টিভঙ্গি কুরআন, সুন্নাহ ও মুসলিম উম্মাহর ইজমা বিরোধী, যা বাতিল।[9] এজন্য
এর উপর কোন মন্তব্য না করে সরাসরি ঈছালে ছওয়াবের বৈধ ও সুন্নাত সম্মত পদ্ধতিগুলো
আলোচনা করা হ’ল।
ঈছালে ছাওয়াবের কিছু
পদ্ধতি :
এক. দো‘আ করা :
ইবাদতের সারনির্যাস হচ্ছে
আল্লাহর কাছে পরিপূর্ণ আত্মসমর্পণ এবং চূড়ান্ত বিনয় ও মুখাপেক্ষিতা প্রকাশ করা। আর
এটা দো‘আর মধ্যে সর্বোত্তমরূপে
প্রকাশিত হয়। দো‘আ অর্থ ডাকা, প্রার্থনা করা ও আহবান করা।
নিজেকে অসহায় ও নিঃস্ব মনে করে দু’হাত প্রসারিত করার চেয়ে বিনয়
আর কী হ’তে পারে? তাই দো‘আর গুরুত্ব অসীম। হাদীছে দো‘আকে ইবাদত বলা হয়েছে। মহান
আল্লাহর নিকট দো‘আর চাইতে অধিক মর্যাদাপূর্ণ বিষয় আর কিছু
নেই।[10] ইসলামী ভ্রাতৃত্বের একটি সাধারণ হক্ব হ’ল, আপন-পর জীবিত-মৃত
নির্বিশেষে সকল মুসলিম ভাইয়ের জন্য দো‘আ করা। আর যারা মৃত্যুবরণ
করেছেন তারা যেহেতু কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছেন তাই দো‘আ তাদের জন্য বিশেষভাবে
কাম্য। আর কারো অনুপস্থিতিতে তার জন্য দো‘আ করলে দো‘আ কবুল হয়। রাসূল (ছাঃ)
বলেন,دَعْوَةُ الْمَرْءِ الْمُسْلِمِ لأَخِيهِ بِظَهْرِ الْغَيْبِ مُسْتَجَابَةٌ عِنْدَ رَأْسِهِ مَلَكٌ مُوَكَّلٌ كُلَّمَا دَعَا لأَخِيْهِ بِخَيْرٍ قَالَ الْمَلَكُ الْمُوَكَّلُ بِهِ آمِيْنَ وَلَكَ بِمِثْلٍ، ‘মুসলমান ব্যক্তি তার ভাইয়ের
অনুপস্থিতিতে তার জন্য দো‘আ করলে তা কবুল হয়। তার মাথার কাছে একজন
ফেরেশতা নিয়োজিত থাকেন, যখন সে তার ভাইয়ের জন্য দো‘আ করে তখন নিয়োজিত ফেরেশতা
বলে থাকেন আমীন এবং তোমার জন্যও অনুরূপ’।[11] দো‘আ জীবিত-মৃত সকলের জীবনে
কল্যাণ বয়ে আনতে পারে। এটি কুরআন ও ছহীহ হাদীছ দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত। দো‘আর কারণে ব্যক্তির মর্যাদা
বৃদ্ধি পায়। হাদীছে এসেছে,
عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم إِنَّ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ لَيَرْفَعُ الدَّرَجَةَ لِلْعَبْدِ الصَّالِحِ فِى الْجَنَّةِ فَيَقُولُ : يَارَبِّ أَنَّى لِى هَذِهِ فَيَقُولُ بِاسْتِغْفَارِ وَلَدِكَ لَكَ-
আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘আল্লাহ তা‘আলা জান্নাতে তাঁর কোন নেক
বান্দার মর্যাদা বাড়িয়ে দিবেন। এ অবস্থা দেখে সে (নেক বান্দা) বলবে, হে আমার রব!
আমার এ মর্যাদা কিভাবে হ’ল? তখন আল্লাহ তা‘আলা বলবেন, তোমার জন্য তোমার
সন্তান-সন্ততির মাগফিরাত কামনা করার কারণে’।[12]
দো‘আ মৃতদের জন্য উপকারে আসার
ব্যাপারে দলীলসমূহ :
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,وَالَّذِيْنَ جَاءُوْا مِنْ بَعْدِهِمْ يَقُوْلُوْنَ رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا وَلِإِخْوَانِنَا الَّذِينَ سَبَقُونَا بِالْإِيمَانِ وَلَا تَجْعَلْ فِي قُلُوبِنَا غِلًّا لِلَّذِينَ آمَنُوا رَبَّنَا إِنَّكَ رَءُوفٌ رَحِيمٌ- ‘(আর এই সম্পদ তাদের জন্য)
যারা তাদের পরে এসেছে। যারা বলে, হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদের এবং আমাদের ভাইদের
ক্ষমা কর, যারা আমাদের পূর্বে ঈমান এনেছে। আর ঈমানদারগণের বিরুদ্ধে আমাদের অন্তরে
কোন বিদ্বেষ রেখো না। হে আমাদের প্রতিপালক! নিশ্চয়ই তুমি স্নেহশীল ও পরম দয়ালু’ (হাশর ৫৯/১০)।
এখানে পূর্ববর্তী মুমিনদের
জন্য (যাতে জীবিত ও মৃত সকলই আছেন) দো‘আ করার প্রশংসা করা হয়েছে।
এছাড়াও ইবরাহীম (আঃ) ও নূহ (আঃ) তাদের পিতা-মাতা ও মৃত-জীবিত সকল মুমিনের জন্য দো‘আ করেছেন (ইবরাহীম
১৪/৪১; নূহ ৭১/২৮)। আল্লাহ তা‘আলা বিশ্বনবী মুহাম্মাদ
(ছাঃ)-কে সকল নর-নারীর জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করার আদেশ করেছেন। আল্লাহ বলেন,فَاعْلَمْ أَنَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا الله وَاسْتَغْفِرْ لِذَنْبِكَ وَلِلْمُؤْمِنِيْنَ وَالْمُؤْمِنَاتِ وَالله يَعْلَمُ مُتَقَلَّبَكُمْ وَمَثْوَاكُمْ، ‘অতএব তুমি জেনে রাখ যে,
আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। আর তুমি ক্ষমা প্রার্থনা কর তোমার ও মুমিন
নর-নারীদের জন্য। বস্ত্ততঃ আল্লাহ ভালভাবেই জানেন তোমাদের চলাফেরা ও আশ্রয়
সম্পর্কে’ (মুহাম্মাদ ৪৭/১৯)।
আসমানের ফেরেশতারাও সকল
মুমিন নর-নারীর জন্য ক্ষমা প্রাথর্না করে, যা জীবিত-মৃত সকলকে শামিল করে। আল্লাহ
তা‘আলা বলেন,
الَّذِينَ يَحْمِلُونَ الْعَرْشَ وَمَنْ حَوْلَهُ يُسَبِّحُونَ بِحَمْدِ رَبِّهِمْ وَيُؤْمِنُونَ بِهِ وَيَسْتَغْفِرُونَ لِلَّذِينَ آمَنُوا رَبَّنَا وَسِعْتَ كُلَّ شَيْءٍ رَحْمَةً وَعِلْمًا فَاغْفِرْ لِلَّذِينَ تَابُوا وَاتَّبَعُوا سَبِيلَكَ وَقِهِمْ عَذَابَ الْجَحِيمِ – رَبَّنَا وَأَدْخِلْهُمْ جَنَّاتِ عَدْنٍ الَّتِي وَعَدْتَهُمْ وَمَنْ صَلَحَ مِنْ آبَائِهِمْ وَأَزْوَاجِهِمْ وَذُرِّيَّاتِهِمْ إِنَّكَ أَنْتَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ – وَقِهِمُ السَّيِّئَاتِ وَمَنْ تَقِ السَّيِّئَاتِ يَوْمَئِذٍ فَقَدْ رَحِمْتَهُ وَذَلِكَ هُوَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ-
‘যারা আরশ বহন করে এবং যারা
তার চারপাশে আছে, তারা তাদের পালনকর্তার প্রশংসাসহ পবিত্রতা ঘোষণা করে ও তাঁর
প্রতি ঈমান রাখে। আর তারা মুমিনদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে বলে, হে আমাদের
প্রতিপালক! তোমার অনুগ্রহ ও জ্ঞান সবকিছুতে পরিব্যাপ্ত। অতএব যারা তওবা করে ও
তোমার রাস্তায় চলে তাদেরকে তুমি ক্ষমা করো এবং জাহান্নামের আযাব থেকে রক্ষা কর! হে
আমাদের প্রতিপালক! আর তাদের তুমি প্রবেশ করাও চিরস্থায়ী বসবাসের জান্নাতসমূহে, যার
প্রতিশ্রুতি তুমি তাদের দিয়েছ। আর তাদের বাপ-দাদা, স্বামী-স্ত্রী ও
সন্তান-সন্ততিদের মধ্যে যারা সৎকর্ম করেছে তাদেরকেও। নিশ্চয়ই তুমি তো পরাক্রমশালী
ও প্রজ্ঞাময় এবং তুমি তাদেরকে মন্দ কাজসমূহ থেকে রক্ষা কর। আর যাকে তুমি মন্দ কাজ সমূহ
থেকে রক্ষা করলে তাকে তো তুমি ক্বিয়ামতের দিন (জান্নাতে প্রবেশ করানোর মাধ্যমে)
অনুগ্রহ করলে। আর সেটাই হ’ল মহা সফলতা’ (গাফের ৪০/৭-৯)।
এ দো‘আগুলোতে জীবিত-মৃত সকল
মুমিনদের জন্য দো‘আ করা হয়েছে।
দো‘আ মৃতের পক্ষে কল্যাণকর
হওয়ার সবচেয়ে বড় দলীল হ’ল জানাযার ছালাত। জানাযার ছালাত মূলত দো‘আ। জানাযার ছালাতে আল্লাহর
রাসূল (ছাঃ) যেসব দো‘আ করতেন সেগুলো থেকেই তা পরিষ্কার। এজন্য
নিষ্ঠার সাথে দো‘আ করা একান্ত যরূরী। রাসূল (ছাঃ) মাইয়েতের জন্য
নিষ্ঠার সাথে প্রার্থনা করতে বলেছেন। তিনি বলেন, إِذَا صَلَّيْتُمْ عَلَى الْمَيِّتِ فَأَخْلِصُوا لَهُ الدُّعَاءَ، ‘তোমরা যখন মাইয়েতের জন্য
জানাযার ছালাত আদায় করবে তখন তার জন্য নিষ্ঠার সাথে দো‘আ করবে’।[13]
ওছমান বিন আফফান (রাঃ) থেকে
বর্ণিত, নবী করীম (ছাঃ) মৃতের দাফনকার্য সম্পন্ন করে কবরের পাশে দাঁড়িয়ে বলতেন,إِسْتَغْفِرُوْا لِأَخِيْكُمْ وَسَلُوا اللهَ لَهُ التَّثْبِيْتَ فَإِنَّهُ اَلْآنَ يُسْأَلُ، ‘তোমরা তোমাদের ভাইয়ের জন্য
ক্ষমা প্রার্থনা কর এবং তার দৃঢ় থাকার জন্য আল্লাহর নিকটে দো‘আ কর। কেননা সত্বর সে
জিজ্ঞাসিত হবে’।[14] অতএব এ সময় প্রত্যেকের নিম্নোক্তভাবে দো‘আ করা উচিত। যেমন, اَللَّهُمَّ اغْفِرْلَهُ وَثَبِّتْهُ ‘আল্লা-হুম্মাগফিরলাহূ ওয়া
ছাবিবতহু’। অর্থঃ ‘হে আল্লাহ! আপনি তাকে ক্ষমা
করুন ও তাকে দৃঢ় রাখুন’।[15] অথবা اَللَّهُمَّ ثَبِّتْهُ بِالْقَوْلِ الثَّابِتِ ‘আল্লা-হুম্মা ছাবিবতহু বিল
ক্বাউলিছ ছা-বিত’। (হে আল্লাহ! আপনি তাকে কালেমা শাহাদত দ্বারা
সুদৃঢ় রাখুন)। এই সময় ঐ ব্যক্তি দো‘আর ভিখারী। আর জীবিত মুমিনের
দো‘আ মৃত মুমিনের জন্য খুবই
উপকারী।
কবর যিয়ারতকালীন কবরস্থ
ব্যক্তিদের জন্য দো‘আ করা যায়। আয়েশা (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর
রাসূল (ছাঃ), আমি কিভাবে তাদের জন্য দো‘আ করব? তিনি বললেন, তুমি
বলবে,
اَلسَّلاَمُ عَلَى أَهْلِ الدِّيَارِ مِنَ الْمُؤْمِنِيْنَ وَالْمُسْلِمِيْنَ، وَيَرْحَمُ اللهُ الْمُسْتَقْدِمِيْنَ مِنَّا وَالْمُسْتَأْخِرِيْنَ، وَإِنَّا إِنْ شَآءَ اللهُ بِكُمْ لَلاَحِقُوْنَ-
উচ্চারণ : আস্সালা-মু ‘আলা আহলিদ দিয়া-রি মিনাল মু’মিনীনা
ওয়াল মুসলিমীনা; ওয়া
ইয়ারহামুল্লা-হুল মুস্তাক্বদিমীনা মিন্না ওয়াল মুস্তা’খিরীনা; ওয়া ইন্না
ইনশা-আল্লা-হু বিকুম লালা-হেকূন।
অনুবাদ : ‘মুমিন ও মুসলিম কবরবাসীদের
উপরে শান্তি বর্ষিত হৌক। আমাদের অগ্রবর্তী ও পরবর্তীদের উপরে আল্লাহ রহম করুন!
আল্লাহ চাহে তো আমরা অবশ্যই আপনাদের সাথে মিলিত হ’তে যাচ্ছি’।[16]
রাসূল (ছাঃ) ‘বাকীউল গারক্বাদ’ কবরস্থানে গিয়ে দীর্ঘ সময়
ধরে দো‘আ করেছেন। আয়েশা (রাঃ) বলেন,
আমি কি তোমাদেরকে আমার ও রাসূল (ছাঃ)-এর পক্ষ থেকে সংঘটিত ঘটনা বর্ণনা করব না?
তারা বলল, হ্যাঁ। তিনি বললেন, একদা রাতে রাসূল (ছাঃ) আমার নিকটে ছিলেন। তিনি রাতে
শোয়ার সময় তাঁর চাদর রাখলেন এবং জুতা খুলে দু’পায়ের নিকটে রাখলেন। অতঃপর
তিনি তার কাপড়ের এক পার্শ্ব বিছানায় বিছিয়ে শুয়ে পড়লেন। অল্প সময় এ খেয়ালে থাকলেন
যে, আমি ঘুমিয়ে পড়েছি। অতঃপর ধীরে সতর্কতার সাথে চাদর নিলেন, জুতা পরলেন এবং দরজা
খুলে বেরিয়ে পড়লেন অতঃপর আস্তে করে দরজা বন্ধ করলেন। তখন আমিও কাপড় পরে চাদর
গুছিয়ে মাথায় দিয়ে তার পিছনে চললাম। তিনি ‘বাক্বীউল গারক্বাদে’ পৌঁছলেন এবং দীর্ঘ সময়
দাঁড়িয়ে থাকলেন। অতঃপর তিনবার হাত উঠিয়ে দো‘আ করলেন’।১৫ সেখানে
তিনি সকল কবরবাসীর মাগফিরাতের জন্য দো‘আ করেছিলেন।
জানাযার ছালাত ও কবর
যিয়ারতের বাইরেও নবী করীম (ছাঃ) মৃত ব্যক্তির জন্য দো‘আ করেছেন। উম্মে সালামা
(রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আবু সালামা (রাঃ)-এর কাছে গেলেন।
তখন তার চোখ দু’টো উল্টে ছিল। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তার চোখ বন্ধ করে দিলেন
এবং বললেন, রূহ্ যখন নিয়ে যাওয়া হয়, তখন চোখ তৎপ্রতি অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। এ
কথা শুনে তার পরিবারের লোকেরা উচ্চৈঃস্বরে কেঁদে উঠলে রাসূল (ছাঃ) বললেন, তোমরা
নিজেদের জন্য অমঙ্গলজনক কোন দো‘আ কর না। কেননা ফেরেশতাগণ তোমাদের কথার উপর
আমীন বলে থাকেন। অতঃপর তিনি বললেন,اللهمَّ اغْفِرْ لأَبِى سَلَمَةَ وَارْفَعْ دَرَجَتَهُ فِى الْمَهْدِيِّينَ وَاخْلُفْهُ فِىْ عَقِبِهِ فِى الْغَابِرِيْنَ وَاغْفِرْ لَنَا وَلَهُ يَا رَبَّ الْعَالَمِيْنَ وَافْسَحْ لَهُ فِىْ قَبْرِهِ وَنَوِّرْ لَهُ فِيْهِ، ‘হে আল্লাহ! আপনি আবূ সালমাকে
মাফ করে দিন। হেদায়াত প্রাপ্তদের মধ্যে তাকে উচ্চ মর্যাদা দান করুন এবং তার পিছনে
যারা রয়ে গেল তাদের মধ্যে আপনি প্রতিনিধি হন। হে জগৎ সমূহের প্রতিপালক! আপনি
আমাদেরকে ও তাকে ক্ষমা করুন। তার কবর প্রশস্ত করে দিন এবং তার জন্য কবরকে আলোকিত
করুন’।[17]
আউত্বাসের যুদ্ধে আবু আমেরকে
তীর লাগলে তিনি স্বীয় ভাতিজা আবু মূসার মাধ্যমে বলে পাঠান যে, আপনি আমার পক্ষ থেকে
রাসূল (ছাঃ)-কে সালাম পৌঁছে দিবেন এবং আমার জন্য ক্ষমা চাইতে বলবেন। অতঃপর তার
কাছে বলা হ’ল, আবু মূসা আশ‘আরী (রাঃ) বলেন, নবী করীম
(ছাঃ) পানি চাইলেন এবং ওযূ করলেন। অতঃপর দু’হাত তুলে প্রার্থনায় বললেন, اَللَّهُمَّ اغْفِرْ لِعُبَيْدٍ أَبِى عَامِرٍ اَللَّهُمَّ اجْعَلْهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَوْقَ كَثِيْرٍ مِنْ خَلْقِكَ مِنَ النَّاسِ- ‘হে আল্লাহ! আপনি ছোট বান্দা
আবু আমেরকে ক্ষমা করে দিন। হে আল্লাহ! ক্বিয়ামতের দিন আপনি তাকে আপনার সৃষ্টি
মানুষের অনেকের ঊর্ধ্বে করে দিন’।৮ (রাবী বলেন) এ সময়ে আমি
তাঁর বগলের শুভ্রতা দেখলাম।
উপরোক্ত আয়াত ও হাদীছগুলো
থেকে স্পষ্ট হয়ে গেল যে, দো‘আ জীবিত ও মৃত সকলের জন্য কল্যাণকর। দো‘আ করলে এর দ্বারা মৃতরাও
উপকৃত হয়।
দুই. ছাদাক্বা :
আল্লাহ তা‘আলা কাউকে সচ্ছল ও কাউকে
অসচ্ছল করেছেন। তবে সবার রিযিকের দায়িত্ব তাঁর হাতে। কিন্তু তা বান্দা পর্যন্ত
পৌঁছার উপায় সকলের ক্ষেত্রে এক নয়। বরং বয়স, পরিবেশ ও পরিস্থিতির ভিন্নতায় তা
বিভিন্ন হয়ে থাকে। একটি উপায় হ’ল ছাদাক্বা বা দান-খয়রাত। এটা অনেক ফযীলত ও
ছওয়াবের কাজ। তবে এর একমাত্র উদ্দেশ্য হ’তে হবে আল্লাহর সন্তুষ্টি
অর্জন। এ নিয়তে সামান্য ছাদাক্বাও মূল্যবান। এছাড়া অন্য কোন উদ্দেশ্যে বিশাল
ছাদাক্বাও মূল্যহীন। রাসূল (ছাঃ) বলেন,سَبَقَ دِرْهَمٌ مِائَةَ أَلْفِ دِرْهَمٍ. قَالُوْا وَكَيْفَ قَالَ: كَانَ لِرَجُلٍ دِرْهَمَانِ تَصَدَّقَ بِأَحَدِهِمَا وَانْطَلَقَ رَجُلٌ إِلَى عُرْضِ مَالِهِ فَأَخَذَ مِنْهُ مِائَةَ أَلْفِ دِرْهَمٍ فَتَصَدَّقَ بِهَا، ‘এক দিরহাম এক লক্ষ দিরহামের
উপর প্রাধান্য পেয়ে গেছে। ছাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! সেটা
কিভাবে? তিনি বললেন, এক ব্যক্তির শুধুমাত্র দু’টি দিরহামই রয়েছে সেখান থেকে
সে একটি দিরহাম নিল এবং ছাদাক্বা করে দিল। আরেক ব্যক্তির অগণিত মাল রয়েছে, সেখান
থেকে সে এক লক্ষ দিরহাম নিল এবং ছাদাক্বা করে দিল’।[18] অন্য বর্ণনায় রয়েছে, ‘এক ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ
করার সময় দেখল যে, তার দরজার উপর লেখা রয়েছে, একটি ছাদাক্বা তার দশগুণ হয়, আর
অন্যকে ঋণ প্রদান করলে তা আঠারো গুণ হয়’।[19]
এই ছাদাক্বা জীবিতদের মত
মৃতদের জন্যও করা যায় এবং এর ছওয়াব তাদের কাছে পৌঁছে। আর দানকারীও দান করার জন্য
ছওয়াব পাবে। ইমাম নববী (রহঃ) বলেন,أَنَّ الدُّعَاءَ يَصِلُ ثَوَابُهُ إِلَى الْمَيِّتِ وَكَذَلِكَ الصَّدَقَةُ وَهُمَا مُجْمَعٌ عَلَيْهِمَا، ‘নিশ্চয়ই দো‘আর ছওয়াব মৃত ব্যক্তির কাছে
পৌঁছে। এমনিভাবে ছাদাক্বার ছওয়াবও। এ দু’টি সর্বসম্মত বিষয়’।[20] তাছাড়া ছাদাক্বা একটি
ফযীলত পূর্ণ ইবাদত। রাসূল (ছাঃ) বলেন,إِنَّ الصَّدَقَةَ لَتُطْفِئُ عَلَى أَهْلِهَا حَرَّ الْقُبُورِ، وَإِنَّمَا يَسْتَظِلُّ الْمُؤْمِنُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فِيْ ظِلِّ صَدَقَتِهِ، ‘নিশ্চয়ই ছাদাক্বা তার দাতা
থেকে কবরের আগুনকে ঠান্ডা করে দিবে এবং মুমিন ক্বিয়ামতের দিন তার ছাদাক্বার
ছায়াতলে অবস্থান করবে।[21] অন্য হাদীছে এসেছে,الصَدَقَةُ تُطفِىءُ الخَطِيئَةَ كَمَا يُطفِىء الماءُ النارَ، ‘ছাদাক্বা গুনাহসমূহ মিটিয়ে
দেয় যেমন পানি আগুনকে নিভিয়ে দেয়’।[22] অন্যত্র রাসূল (ছাঃ) বলেন, صَدَقَةُ السِّرِّ تُطْفِئُ غَضَبَ الرَّبِّ، ‘গোপনে ছাদাক্বা প্রদান রবের
ক্রোধকে মিটিয়ে দেয়’।[23]
পিতা-মাতার জন্য সন্তানের
দান-ছাদাক্বা করা উত্তম আমল। এতে দানকারীও ছওয়াব পাবে। আয়েশা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন,أَنَّ رَجُلاً قَالَ لِلنَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم إِنَّ أُمِّىَ افْتُلِتَتْ نَفْسُهَا وَإِنِّى أَظُنُّهَا لَوْ تَكَلَّمَتْ تَصَدَّقَتْ فَلِىَ أَجْرٌ أَنْ أَتَصَدَّقَ عَنْهَا قَالَ نَعَمْ- ‘জনৈক ব্যক্তি নবী করীম
(ছাঃ)-কে বললেন, আমার মায়ের আকস্মিক মৃত্যু ঘটে, কিন্তু আমার বিশ্বাস তিনি
(মৃত্যুর পূর্বে) কথা বলতে সক্ষম হ’লে কিছু ছাদাক্বা করে যেতেন।
এখন আমি তাঁর পক্ষ হ’তে ছাদাক্বা করলে আমি এর ছওয়াব পাব কি? তিনি
বললেন, হ্যাঁ’।[24]
হাফেয ইবনু হাজার আসক্বালানী
(রহঃ) বলেন, অত্র হাদীছের বাহ্যিক অর্থ থেকে বুঝা যায়, তিনি কথা বলতে সক্ষম হননি
তাই ছাদাক্বাও দেননি। সাঈদ বিন সা‘দ বিন উবাদাহ হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, সা‘দ বিন ওবাদাহ নবী করীম
(ছাঃ)-এর সাথে কোন এক যুদ্ধে গমন করলেন। এরই মধ্যে সা‘দের মায়ের মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে
আসল। তখন তাকে বলা হ’ল- আপনি অছিয়ত করুন। তিনি বললেন, কিসের অছিয়ত
করব। ধন-সম্পদ যা আছে তাতো সা‘দের। সা‘দ ফিরে আসার পূর্বেই তিনি
মারা গেলেন। সা‘দ ফিরে আসলে বিষয়টি তাকে বলা হ’ল। তখন তিনি বললেন, হে
আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আমি তার পক্ষ থেকে ছাদাক্বা করলে এতে তার উপকার হবে কি? তিনি
বললেন, হ্যাঁ। সা‘দ (রাঃ) বললেন, অমুক অমুক বাগান তার জন্য
ছাদাক্বাহ। তিনি বাগানটির নাম উল্লেখ করেছিলেন’।[25]
মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে
ছাদাক্বা করলে মৃতের ছওয়াব হবে, বিশেষ করে ছাদাক্বাটি যখন মৃত ব্যক্তির সন্তান
করবে তখন আরো বেশী ছওয়াব হবে। সুতরাং সন্তানের পক্ষ থেকে এই কাজগুলো পিতা-মাতার
জন্য আঞ্জাম দেওয়া হ’লে পিতা-মাতা ছওয়াবতো পাবেনই পাশাপাশি দানকারী
সন্তানও ছওয়াব পাবেন।
হাদীছটি থেকে আরো বুঝা যায়
যে, যিনি বা যারা হঠাৎ মারা গেলেন তাদের পক্ষ থেকে ছাদাক্বা করা মুস্তাহাব। অন্য
বর্ণনায় রয়েছে, আয়েশা (রাঃ) বলেন,أَنَّ امْرَأَةً قَالَتْ يَا رَسُولَ اللهِ إِنَّ أُمِّىَ افْتُلِتَتْ نَفْسُهَا وَلَوْلاَ ذَلِكَ لَتَصَدَّقَتْ وَأَعْطَتْ أَفَيُجْزِئُ أَنْ أَتَصَدَّقَ عَنْهَا فَقَالَ النَّبِىُّ صلى الله عليه وسلم نَعَمْ فَتَصَدَّقِى عَنْهَا- ‘জনৈক মহিলা বলল, হে আল্লাহর
রাসূল! আমার মা হঠাৎ মারা গেছেন। তিনি এভাবে মারা না গেলে ছাদাক্বা ও দান করে
যেতেন। এখন আমি যদি তার পক্ষ থেকে ছাদাক্বা করি তবে তিনি কি এর ছওয়াব পাবেন? নবী
করীম (ছাঃ) বললেন, হ্যাঁ, তুমি তার পক্ষ থেকে ছাদাক্বা কর’।[26] যেমন অন্য হাদীছে
এসেছে, ইবনু আববাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন,أَنَّ سَعْدَ بْنَ عُبَادَةَ، قَالَ : يَا رَسُولَ اللهِ إِنَّ أُمِّي تُوُفِّيَتْ، وَأَنَا غَائِبٌ، فَهَلْ يَنْفَعُهَا إِنْ تَصَدَّقْتُ عَنْهَا بِشَيْءٍ؟ قَالَ : نَعَمْ، قَالَ : فَإِنِّي أُشْهِدُكَ أَنَّ حَائِطِي الَّذِي بِالْمِخْرَافِ صَدَقَةٌ عَنْهَا، ‘সা‘দ ইবনু ওবাদাহ (রাঃ)-এর মা
মারা গেলে তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আমার মা আমার অনুপস্থিতিতে মারা
যান। আমি যদি তাঁর পক্ষ থেকে কিছু ছাদাক্বা করি, তাহ’লে কি তাঁর কোন উপকারে আসবে?
তিনি বললেন, হ্যাঁ। সা‘দ (রাঃ) বললেন, তাহ’লে আমি আপনাকে সাক্ষী করছি
আমার মিখরাফ নামক বাগানটি তাঁর জন্য ছাদাক্বা করলাম’।[27]
অন্য বর্ণনায় এসেছে, সা‘দ বিন ওবাদাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বললেন, আমি
রাসূল (ছাঃ)-কে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! إِنَّ أُمَّ سَعْدٍ مَاتَتْ فَأَىُّ الصَّدَقَةِ أَفْضَلُ قَالَ : الْمَاءُ. قَالَ فَحَفَرَ بِئْرًا وَقَالَ هَذِهِ لأُمِّ سَعْدٍ. ‘উম্মে সা‘দ (আমার মা) মারা গেছেন।
অতএব তার জন্য কোন ছাদাক্বা সবচেয়ে উত্তম হবে? তিনি বললেন, পানি। বর্ণনাকারী বলেন,
সুতরাং সা‘দ (রাঃ) একটি কুয়া খনন করে বললেন, এটি সা‘দের মায়ের জন্য ছাদাক্বা’।[28]
আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল
আছ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, أَنَّ الْعَاصَ بْنَ وَائِلٍ نَذَرَ فِى الْجَاهِلِيَّةِ أَنْ يَنْحَرَ مِائَةَ بَدَنَةٍ وَأَنَّ هِشَامَ بْنَ الْعَاصِ نَحَرَ حِصَّتَهُ خَمْسِينَ بَدَنَةً وَأَنَّ عَمْراً سَأَلَ النَّبِىَّ صلى الله عليه وسلم عَنْ ذَلِكَ فَقَالَ أَمَّا أَبُوكَ فَلَوْ كَانَ أَقَرَّ بِالتَّوْحِيدِ فَصُمْتَ وَتَصَدَّقْتَ عَنْهُ نَفَعَهُ ذَلِكَ ‘আছ ইবনে ওয়ায়েল জাহেলী যুগে
একশত উট যবেহ করার মানত করেছিল। অতঃপর (তার ছেলে) হিশাম বিন আ‘ছ তার পক্ষ থেকে ৫০টি উট
যবেহ করে। (বাকী ৫০টি অপর ছেলে আমর যবেহ করতে চান।) এ ব্যাপারে তিনি নবী করীম (ছাঃ)-কে
জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, তোমার পিতা যদি তাওহীদে বিশ্বাস করত আর তুমি তার পক্ষ
থেকে ছিয়াম রাখতে বা ছাদাক্বা করতে, তবে এটি তার উপকারে আসত’।[29] ইমাম নববী (রহঃ) বলেন,وَفِي هَذَا الْحَدِيثِ جَوَازُ الصَّدَقَةِ عَنْ الْمَيِّتِ وَاسْتِحْبَابُهَا وَأَنَّ ثَوَابَهَا يَصِلُهُ وَيَنْفَعُهُ وَيَنْفَعُ الْمُتَصَدِّقَ أَيْضًا وَهَذَا كُلُّهُ أَجْمَعَ عَلَيْهِ الْمُسْلِمُونَ ‘এই হাদীছে মৃতের পক্ষ থেকে
ছাদাক্বা করা জায়েয ও মুস্তাহাব হওয়ার ব্যাপারে দলীল রয়েছে। আর এর ছওয়াব মৃতের
নিকট পৌঁছে এবং এতে সে উপকৃত হয়, উপকৃত হয় ছাদাক্বাকারীও। আর এসকল বিষয়ে
মুসলামানদের ঐক্য রয়েছে।[30]
উক্ত হাদীছের ব্যাখ্যায়
আল্লামা নাছিরুদ্দীন আলবানী (রহঃ) বলেন, ‘আর ছাদাক্বা ও ছাওমের
ছওয়াব মুসলিম পিতা মাতার মৃত্যুর পর তাদের আমলনামায় যোগ হওয়ার ব্যাপারে দলীল
রয়েছে। তারা অছিয়ত করুক বা না করুক। কারণ সন্তান পিতা-মাতারই উপার্জন। তাছাড়া এটি
আল্লাহ তা‘আলার বাণী, ‘মানুষ কিছুই পায় না তার
চেষ্টা ব্যতীত’ এর মধ্যে শামিল। অর্থাৎ সন্তান পিতার চেষ্টার অংশ। ফলে
সন্তান যে সৎ কর্ম করবে তা পিতারই অংশ।[31]
তিনি আরো বলেন, ‘আর জেনে রাখুন, এ বিষয়ে
বর্ণিত সকল হাদীছে এসেছে বিশেষভাবে সন্তানের পক্ষ থেকে পিতা-মাতার জন্য। সুতরাং
নিকটাত্মীয়ের পক্ষ থেকে সকল মৃতের জন্য ছওয়াব প্রেরণ করার দলীল গ্রহণ করা বিশুদ্ধ
নয়। যেমন ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) অধ্যায় রচনা করেছেন ‘মৃতদের জন্য নিকটাত্মীয়দের
ছওয়াব বখশানো অধ্যায়’। কারণ উক্ত দাবী দলীল অপেক্ষা ব্যাপক। আর এমন
কোন দলীল আসেনি যে, জীবিতদের হাদিয়াকৃত সাধারণ সৎ আমলসমূহ ব্যাপকভাবে মৃতদের উপকৃত
হওয়ার প্রমাণ বহন করে। তবে বিশেষভাবে যে সকল বিষয়ে হাদীছ বর্ণিত হয়েছে তা ব্যতীত’।[32]
ইমাম নববী (রহঃ) এ প্রসঙ্গে
বলেন, ‘যে পিতা-মাতার সাথে
সদ্ব্যবহার করতে চায় সে যেন তাদের পক্ষ থেকে ছাদাক্বা করে। ছাদাক্বা মাইয়েতের কাছে
পৌঁছে এবং তার উপকারে আসে। এতে কোন দ্বিমত নেই। আর এ পদ্ধতি সঠিক। আর আবুল হাসান
মাওয়ারদী বছরী তার আল-হাভী কিতাবে কতক আহলে কালাম থেকে যে কথা বর্ণনা করেছেন যে,
মাইয়েতের কাছে কোন ছওয়াব পৌঁছে না, সেটা সম্পূর্ণ বাতিল ও ভুল। কিতাব-সুন্নাহ ও
উম্মাহর ইজমা বিরোধী। সুতরাং তা সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য’।[33]
উল্লেখ্য যে, পিতা-মাতা যদি
ছাদাক্বা করার ব্যাপারে অছিয়ত না করে এবং সন্তান ছাদাক্বা না করে তাতে সন্তান
গুনাহগার হবে না। বিশেষ করে সন্তান দরিদ্র হ’লে। কারণ দরিদ্র নিজেই
সম্পদের মুখাপেক্ষী। এক্ষেত্রে সে দো‘আ করবে। ওক্ববা ইবনু আমের হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন,
أَنَّ غُلَامًا أَتَى النَّبِيَّ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللهِ، إِنَّ أُمِّي مَاتَتْ وَتَرَكَتْ حُلِيًّا، أَفَأَتَصَدَّقُ بِهِ عَنْهَا؟ قَالَ: أُمُّكَ أَمَرَتْكَ بِذَلِكَ؟ قَالَ: لَا قَالَ: فَأَمْسِكْ عَلَيْكَ حُلِيَّ أُمِّكَ
‘জনৈক বালক এসে রাসূল
(ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আমার মা মারা গেছেন এবং একটি
অলংকার রেখে গেছেন। আমি সেটি তার পক্ষ থেকে ছাদাক্বা করে দিব? তিনি বললেন, তোমার
মা কি সে বিষয়ে নির্দেশ দিয়েছেন। সে বলল, না। তিনি বললেন, তাহ’লে তোমার মায়ের অলংকারটি
তোমার জন্য রেখে দাও’।[34] শায়খ আলবানী (রহঃ) বলেন, বালকটি দরিদ্র
হওয়ায় রাসূল (ছাঃ) তাকে সে সম্পদটি রেখে দিতে বলেন। কারণ মৃতের পক্ষ থকে ছাদাক্বা
করা মুস্তাহাব।[35]
[চলবে]
– মুহাম্মাদ আব্দুর রহীম
গবেষণা সহকারী, হাদীছ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, রাজশাহী।
[1]. আবূদাঊদ হা/৫১৪২;
মিশকাত হা/৪৯৩৬; ইবনু হিববান হা/৪১৮, ইবনু হিববান, হাকেম, যাহাবী, হুসাইন সুলাইম
আসাদ এর সনদকে ছহীহ ও জাইয়েদ বলেছেন (হাকেম হা/৭২৬০; মাওয়ারিদুয যাম‘আন হা/২০৩০)। তবে শায়খ
আলবানী ও শু‘আইব আরনাউত্ব যঈফ বলেছেন। তবে এর সনদ যঈফ হ’লেও মর্ম ছহীহ।[2]. মিরক্বাত
হা/৪৯৩৬-এর ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য।
[3]. মুসলিম হা/১৬৩১; মিশকাত
হা/২০৩।
[4]. মুসনাদে বাযযার
হা/৭২৮৯; ছহীহুত তারগীব হা/৭৩; ছহীহুল জামে‘ হা/৩৬০২।
[5]. ইবনু মাজাহ হা/২৪২; মিশকাত
হা/২৫৪; ছহীহুত তারগীব হা/৭৭, ১১২।
[6]. আহমাদ হা/২২৩০১; ছহীহুত
তারগীব হা/১১৪।
[7]. মুছান্নাফে ইবনু আবী
শায়বাহ হা/১২০৮৫।
[8]. আলবানী, আহকামুল
জানায়েয ১/৭৬।
[9]. নববী, শারহু মুসলিম
১/৯০।
[10]. তিরমিযী হা/২৯৬৯,
৩৩৭০; মিশকাত হা/২২৩০, ২২৩২; ছহীহুত তারগীব হা/১৬২৯।
[11]. মুসলিম হা/২৭৩৩;
মিশকাত হা/২২২৮; ছহীহাহ হা/১৩৩৯।
[12]. ইবনু মাজাহ হা/৩৬৬০;
মিশকাত হা/২৩৫৪; ছহীহাহ হা/১৫৯৮।
[13]. আবূদাঊদ হা/৩১৯৯; ইবনু
মাজাহ হা/১৪৯৭; মিশকাত হা/১৬৭৪; ছহীহুল জামে‘ হা/৬৬৯।
[14]. আবূদাঊদ হা/৩২২১;
মিশকাত হা/১৩৩ ‘ঈমান’ অধ্যায়-১, ‘কবর আযাবের প্রমাণ’ অনুচ্ছেদ-৪।
[15]. আবূদাঊদ, হাকেম,
হিছনুল মুসলিম, দো‘আ নং ১৬৪।
[16]. মুসলিম হা/৯৭৪; মিশকাত
হা/১৭৬৭ ‘জানায়েয’ অধ্যায়-৫, ‘কবর যিয়ারত’ অনুচ্ছেদ-৮।
[17]. মুসলিম হা/৯২০;
আবুদাউদ হা/৩১১৮; মিশকাত হা/১৬১৯।
[18]. নাসাঈ হা/২৫২৭; ছহীহুল
জামে‘ হা/৩৬০৬; ছহীহুত তারগীব
হা/৮৮৩।
[19]. সিলসিলা ছহীহাহ
হা/৩৪০৭; ছহীহুল জামে‘ হা/৯০০।
[20]. শারহু মুসলিম ১১/৮৫।
[21]. তাবারানী কাবীর
হা/৭৮৮; ছহীহাহ হা/৩৪৮৪।
[22]. ছহীহুত তারগীব
হা/৮৬৬-৬৮, ৯৮৩, ২২৪২।
[23]. ছহীহাহ হা/১৯০৮;
ছহীহুল জামে‘ হা/৩৭৬০,৩৭৬৬।
[24]. বুখারী হা/১৩৮৮;
মুসলিম হা/৯৭৪, ১০০৪; নাসাঈ হা/২০৩৭; মিশকাত হা/১৯৫০।
[25]. নাসাঈ হা/৩৬৫০; ইবনু
হিববান হা/৩৩৫৪, সনদ ছহীহ।
[26]. আবূদাউদ হা/২৮৮১।
[27]. বুখারী হা/২৭৫৬,২৭৬২;
আহমাদ হা/৩০৮০।
[28]. আবুদাউদ হা/১৬৮১;
নাসাঈ হা/৩৬৬৪; মিশকাত হা/১৯১২।
[29]. আহমাদ হা/৬৭০৪; ছহীহাহ
হা/৪৮৪।
[30]. শারহুন নববী ‘আলা মুসলিম ১১/৮৪।
[31]. ছহীহাহ হা/৪৮৪-এর
আলোচনা দ্রষ্টব্য।
[32]. ছহীহাহ হা/৪৮৪-এর
আলোচনা দ্রষ্টব্য।
[33]. শারহুন নববী আলা ছহীহ
মুসলিম ১/৮৯-৯০।
[34]. আহমাদ হা/১৭৪৭৩; মাজমা‘উয যাওয়ায়েদ হা/৪৭৬৬, ৭১৫৫;
ছহীহাহ হা/২৭৭৯।
[35]. ছহীহাহ হা/২৭৭৯-এর
আলোচনা দ্রষ্টব্য।
No comments