আয়াতুল কুরসী এবং আল্লাহর স্বরূপ
আয়াতুল কুরসীর অনুবাদ: আল্লাহ, তিনি ছাড়া অন্য কোন উপাস্য নেই; তিনি চিরঞ্জীব, সবকিছুর একক ধারক-ব্যবস্থাপক (সমগ্র বিশ্বজগতসহ সকল সৃষ্টির সমস্ত প্রয়োজন পূরণকারী, সৃষ্টির সার্বিক রক্ষণাবেক্ষণকারী, সার্বক্ষণিক তদারককারী, যেভাবে ইচ্ছা এবং যেমন প্রয়োজন সেভাবে সকল সৃষ্টির নিয়ন্ত্রণকারী)। তাঁকে তন্দ্রা স্পর্শ করতে পারে না এবং নিদ্রাও নয়। আসমান ও যমীনে যা কিছু রয়েছে, সবই তাঁর। এমন কে আছে যে তাঁর অনুমতি ছাড়া তাঁর কাছে সুপারিশ করবে? তাদের সামনে কিংবা পিছনে যা কিছু রয়েছে সবই তিনি জানেন। যতটুকু তিনি ইচ্ছা করেন তা ছাড়া তাঁর জ্ঞানভাণ্ডারের কিছুই তারা আয়ত্ত করতে পারে না। তাঁর সিংহাসন (শাসনব্যবস্থা, জ্ঞান, eternal power) আসমান ও যমীনকে পরিবেষ্টন করে আছে। আর সেগুলোর রক্ষণাবেক্ষণে তিনি ক্লান্ত হননা। তিনিই সর্বোচ্চ এবং সর্বাপেক্ষা মহান। আয়াতুল কুরসী সূরা বাকারার ২৫৫ নম্বর আয়াত; এটি প্রকৃতপক্ষে একটিই আয়াত। আয়াতটিতে নয়টি যতিচিহ্ন আছে। অর্থাৎ আয়াতটি নয়টি বাক্যাংশে বিভক্ত। মূলের যতিচিহ্নগুলো বাংলা অনুবাদে দাঁড়ি দিয়ে দেখানো হয়েছে।
কুরসী শব্দের অর্থ আসন, সিংহাসন, তখত, ইত্যাদি। এটিকে আয়াতুল কুরসী বলা হয় কারণ আয়াতের শেষভাগে সিংহাসন শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে।
আয়াতুল কুরসী সম্পর্কে একটি হাদীস প্রথমে উপস্থাপন করা যাক। উবাই ইবনে ক্বা’ব বর্ণিত। একদা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, ‘হে আবুল মুনযির! আপনি কী জানেন, আল্লাহর কিতাবের মধ্যে সর্বাপেক্ষা মহান আয়াত কোনটি?’ আমি বললাম, ‘আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল (সাঃ) সর্বাধিক অবগত।’ তিনি (সাঃ) আবার বললেন, ‘হে আবুল মুনযির! আপনার বিবেচনায় আল্লাহর কিতাবের কোন আয়াতটি সবচাইতে মহান?’ আমি বললাম, ‘আল্লাহ! তিনি ছাড়া আর কোন উপাস্য নেই, তিনি চিরঞ্জীব, সবকিছুর সর্বোচ্চ ব্যবস্থাপক …..।’ অতঃপর তিনি (সাঃ) আমার বুকের উপর হাত রাখলেন এবং বললেন, ‘আপনার জন্য জ্ঞান আনন্দদায়ক হোক, হে আবুল মুনযির!’ সহীহ মুসলিম। এ হাদীসটি সম্পর্কে সহীহ মুসলিমের প্রখ্যাত ভাষ্যকার ইমাম নববী (রহঃ) বলেন, ‘এ থেকে প্রমাণিত হয় যে, কুরআন মজীদের কোন কোন আয়াত অন্য আয়াত বা আয়াতসমূহের উপর মর্যাদার অধিকারী। আয়াতুল কুরসীতে আল্লাহর মৌলিক নাম এবং গুণবাচক নামসমূহের সমস্ত বৈশিষ্ট্য সামগ্রিকভাবে বর্ণিত হয়েছে। এগুলোর উপর ভিত্তি করে পুরো কুরআন মজীদের বক্তব্য মহান আল্লাহর বাণী হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।’
আল্লাহ! তিনি ছাড়া আর কোন উপাস্য নেই: আয়াতের শুরুতেই আল্লাহ বলছেন, ‘তিনি ছাড়া আর কোন উপাস্য নেই।’ আল্লাহর সাথে অন্য কোন এক বা একাধিক উপাস্য থাকলে সমস্যা কোথায়? এ প্রশ্নের জবাব স্বয়ং আল্লাহ কুরআনের বিভিন্ন স্থানে দিয়েছেন। সূরা বনী ইসরাইলের ৪২ আয়াতে আল্লাহ বলছেন, ‘বলো, ওদের কথামত যদি তাঁর সাথে অন্যান্য উপাস্যও থাকত, তবে তারা আরশের অধিপতির সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার উপায় অন্বেষণ করত।’ সূরা আল-মু’মিনূনের ৯১ আয়াতে আল্লাহ বলছেন, ‘আল্লাহ কোন সন্তান গ্রহণ করেননি এবং তাঁর সাথে অন্য কোন উপাস্য নেই। থাকলে প্রত্যেক উপাস্য নিজ নিজ সৃষ্টি নিয়ে আলাদা হয়ে যেত এবং একজন অন্যজনের উপর প্রাধান্য বিস্তার করতে চাইত। তারা যা বলে, তা থেকে আল্লাহ পবিত্র।’ একইভাবে আল-আম্বিয়ার ২২ আয়াতে বলছেন, ‘যদি আসমান ও যমীনে আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন উপাস্য থাকত, তবে উভয়েই ধ্বংস হয়ে যেত। অতএব তারা যা বলে, তা থেকে আরশের অধিপতি আল্লাহ পবিত্র, মহান।’ আল্লাহর সাথে যদি এক বা একাধিক উপাস্য থাকতো, তাহলে তাদের মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব, আধিপত্য বিস্তারের দ্বন্দ্ব, ভৌগলিক-রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক-সামাজিক প্রভাব বিস্তারের দ্বন্দ্ব অনিবার্য হয়ে উঠতো। উপাস্যরা শক্তিতে পরস্পর তুলনীয় হলে এসব দ্বন্দ্বের অনিবার্য পরিণতি হতো সকল উপাস্যের সমূল বিনাশ।
আল্লাহর সাথে প্রতিদ্বন্দ্বী অন্য কোন উপাস্য থাকলে দ্বন্দ্ব-সংঘাত অনিবার্য হয়ে উঠতো। সেটি না হয় বুঝা গেলো; কিন্তু সন্তান থাকলে অসুবিধা কী; আল্লাহ কেন বলেন তিনি কোন সন্তান গ্রহণ করেন নি? পিতা-পুত্র সম্পর্কের প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে পিতার চাইতে পুত্রের বয়স কম হবে। অর্থাৎ পিতা-পুত্র দু’জনই সময়ের সুতায় গাঁথা। তাদের জীবনের শুরু আছে, অতএব শেষও আছে। সন্তানের জন্ম হবে; শৈশব-কৈশোর-তারুণ্য অতিক্রম করে একসময় যৌবনে পদার্পন করবে। সময়ের সাথে সাথে তার ক্রমাগত মনো-দৈহিক পরিবর্তন হতে থাকবে। কালের বিবর্তনের সাথে সন্তানের মধ্যে পরিবর্তন যদি অনিবার্য হয়, তাহলে পিতার ক্ষেত্রেও অনুরূপ পরিণতি অবশ্যম্ভাবী। দোর্দণ্ডপ্রতাপ পিতা ক্রমান্বয়ে যৌবন অতিক্রম করে প্রৌঢ়ত্ব-বার্ধক্যের দিকে ধাবিত হবে এবং তার অমিতবিক্রম তেজ ক্রমান্বয়ে নিঃশেষিত হতে থাকবে। এমন পরিস্থিতিতে সন্তান কর্মহীন চুপচাপ বসে থাকবে না মোটেই। সে হীনবল পিতার দায়িত্বভার ক্রমান্বয়ে নিজের কাঁধে তুলে নিতে থাকবে। সময়ের সাথে সাথে যে উপাস্যের মনোদৈহিক পরিবর্তন ঘটে, যৌবন ছাড়িয়ে প্রৌঢ়ত্ব-বার্ধক্য বরণ করে, সে উপাস্যের উপাসনা একজন মুসলিম করে না। বরং একজন মুসলিম ঐ আল্লাহর উপাসনা করে, যিনি চিরঞ্জীব (বাকারা: ২৫৫, আলে-ইমরান:২); তিনিই প্রথম, তিনিই শেষ (হাদীদ: ৩); তিনি কাউকে জন্ম দেন নি এবং তাঁকে কেউ জন্ম দেয় নি (ইখলাস: ৩); যিনি চিরঞ্জীব মৃত্যু যাঁকে স্পর্শ করে না, তোমরা তাঁর উপরই নির্ভর করো (ফুরকান: ৫৮)। স্পষ্টতঃ যখন মহাবিশ্ব বলে কিছু ছিল না, তখনও আল্লাহ বর্তমান ছিলেন। আবার যখন সবকিছু ধ্বংস হয়ে যাবে তখনও আল্লাহ বর্তমান থাকবেন। সময়ের তিনিই স্রষ্টা; সময়ের বিবর্তন তিনিই ঘটান; তিনি নিজে সময়-নিরপেক্ষ। সুতরাং তিনি কালের স্পর্শ থেকে পবিত্র।
তিনি চিরঞ্জীব (হ্বাইউ): আল্লাহকে কেউ জন্ম দেন নি; তিনিই মৃত্যু এবং জন্ম সৃষ্টি করেছেন যাতে মানুষের মধ্যে কে কর্মে শ্রেষ্ঠ, তা পরীক্ষা করতে পারেন (আল-মুলক: ২)। তিনিই সৃষ্টি করেন এবং সৃষ্টির বিনাশ ঘটান। জন্ম এবং মৃত্যুর যিনি স্রষ্টা, তিনি নিজে স্বভাবতঃই জন্ম-মৃত্যুর উর্ধ্বে। তিনি সদা-বর্তমান; মৃত্যু তাঁকে স্পর্শ করতে পারে না। আল্লাহ বলেন, ‘তিনি চিরঞ্জীব, তিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। অতএব, তাঁর কাছেই প্রার্থনা করো বিশুদ্ধ-চিত্তে, নিবেদিতপ্রাণ হয়ে। সমস্ত প্রশংসা বিশ্বজগতের পালনকর্তা আল্লাহর জন্য (মু’মিন: ৬৫)’। আল্লাহ চিরঞ্জীব; অর্থাৎ যখন মহাবিশ্ব বলে কিছুই ছিলনা তখনো তিনি ছিলেন। আবার যখন সবকিছুর বিনাশ ঘটবে তখনও তিনি থাকবেন। তাঁর কোন শুরু নেই, কোন শেষ নেই; তিনি আদি, তিনিই অন্ত। আল্লাহ ‘হ্বাইউল ক্বাইউম’। আল্লাহর সুন্দর নামসমূহের মধ্যে এ দু’টি নামকে অতি মহান হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে। বলা হয় আল্লাহর ‘হাইউ’ নামটির মধ্যে জীবনের সকল গুণাবলীর সমন্বয় ঘটেছে। তিনি কেবল ‘চিরঞ্জীব’ নন, একই সাথে তিনি সর্বদ্রষ্টা, সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞাত এবং সকল জ্ঞানের আধার। এ সবই বস্তুতঃ মহান আল্লাহর ‘চিরঞ্জীব’ বৈশিষ্ট্য থেকে উদ্ভূত।
তিনি একক ধারক-ব্যবস্থাপক (ক্বাইউম): মহাবিশ্বসহ যাবতীয় সৃষ্টিকে যিনি ধারণ এবং রক্ষণাবেক্ষণ করে চলেছেন, তিনিই ‘আল-ক্বাইউম’। মহাবিশ্ব এবং অন্তর্গত সকল সৃষ্টির প্রতি মুহূর্তের যাবতীয় ব্যবস্থাপনা প্রতিনিয়ত যিনি করে চলেছেন তিনিই ‘আল-ক্বাইউম’। প্রত্যেক সৃষ্টির প্রতি মুহূর্তের কর্মকাণ্ডের উপর সার্বক্ষণিক তদারকি করে চলেছেন। জড়-জগত এবং জীব-জগতের প্রত্যেকের প্রতি মুহূর্তের প্রতিটি প্রয়োজন নিজস্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী পূরণ করে চলেছেন এবং নির্ধারিত পরিণতির দিকে প্রত্যেককে পরিচালিত করে চলেছেন। সূরা আল-হাদীদের ১ থেকে ৬ আয়াতে আল্লাহ নিজের পরিচয় জানিয়েছেন এভাবে, (১) তিনি সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী এবং তিনি সর্বজ্ঞ (২) আসমান ও জমিনের তিনিই একচ্ছত্র মালিক এবং তিনিই জন্ম ও মৃত্যু সৃষ্টি করেছেন। (৩) তিনি আদি এবং তিনিই অন্ত; তিনি ব্যক্ত এবং তিনি অব্যক্ত; সকল বিষয় তিনি সম্যক অবগত (৪) ভূতলের গভীরতম প্রদেশে অথবা আসমানের সর্বোচ্চ চূড়ায় যা কিছুই ঘটুক, সবই আল্লাহ জানেন। মানুষ যেখানেই থাকুক না কেন, তিনি তার সাথে আছেন। মানুষ যা কিছু করে, আল্লাহ তা সবই দেখেন। (৫) আসমান ও জমিনের সার্বভৌমত্ব তাঁরই; তাঁর কাছেই আছে সকল বিষয়ের মীমাংসা (৬) মানুষের বুকের গভীরে লুক্কায়িত সকল তথ্যই আল্লাহ জ্ঞাত। সূরা আল-আন-আম-এর ৫৯ আয়াতে আল্লাহ আরো বলেন, তাঁর কাছেই অদৃশ্য জগতের চাবি রয়েছে। তিনি ছাড়া আর কেউ তা জানে না। জলে-স্থলে যা-কিছু আছে, তা তিনিই জানেন। তাঁর অজ্ঞাতসারে কোন পাতা ঝরে না; মৃত্তিকার অন্ধকারে কোন শস্যকণা অঙ্কুরিত হয় না এবং কোন আর্দ্র অথবা শুষ্ক দ্রব্য নেই, যা কিতাবে সুস্পষ্টভাবে উল্লিখিত নেই।
জড় বা জীব, প্রতিটি সৃষ্টির সার্বক্ষণিক ব্যবস্থাপক, রক্ষণাবেক্ষণকারী হওয়ার যে সব দাবী, সেগুলোই পূরণ করছে সূরা আল-হাদীদে উদ্ধৃত মহান আল্লাহর গুণাবলীসমূহ। একই সময়ে তিনি প্রতিটি সৃষ্টির সাথে রয়েছেন। স্থান-কাল নির্বিশেষে প্রত্যেক সৃষ্টির প্রার্থনা-আহ্বানে সাড়া দিচ্ছেন। একই সাথে প্রতিটি সৃষ্টির উপর তিনি সার্বক্ষণিক নজর রাখছেন; প্রত্যেক সৃষ্টির প্রতি মুহূর্তের অবস্থা সম্পর্কে তিনি অবগত। যা কিছু মানুষের অন্তরে আছে এবং যা কিছু মানুষ বলে বা করে, সবকিছুই মহান আল্লাহ জানেন, তিনি সর্বজ্ঞ। যা কিছু আসমানে, যা কিছু জমিনে এবং যা কিছু মাটির গভীরে, সমস্তই তিনি জ্ঞাত। তিনিই নির্ধারণ করেন কখন কোথায় কার জন্ম হবে; কখন কোথায় কার জন্য মৃত্যু অবধারিত। মহাবিশ্বের সূচনালগ্নে যে সক্ষমতা নিয়ে সৃষ্টিজগতের প্রতিটি বস্তুর ব্যবস্থাপনা-রক্ষণাবেক্ষণ করছিলেন, একই সক্ষমতা নিয়ে তিনি বিরাজমান থাকবেন যেদিন তিনি মহাবিশ্বকে ধ্বংসস্তুপে পরিণত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন।
তাঁকে তন্দ্রা স্পর্শ করতে পারে না, নিদ্রাও নয়: সূরা আল-কাসাসের ৭৩ আয়াতে আল্লাহ বলছেন, ‘তিনিই স্বীয় রাহমাতে তোমাদের জন্যে রাত ও দিন সৃষ্টি করেছেন, যাতে রাত্রিতে তোমরা বিশ্রাম গ্রহণ করতে পার ও দিনে তাঁর অনুগ্রহ সন্ধান করতে পার এবং যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।’ সূরা ফুরকানের ৪৭ আয়াতে আল্লাহ বলছেন, ‘তিনিই তো তোমাদের জন্যে রাত্রিকে করেছেন আবরণ, নিদ্রাকে বিশ্রাম এবং দিনকে করেছেন তোমাদের জন্য পুনরুজ্জীবন, পুনরুত্থান।’ এ ছাড়াও পবিত্র কুরআনের আরো কয়েকটি স্থানে নিদ্রার প্রয়োজনীয়তা কথা উল্লিখিত হয়েছে। আল্লাহ দিন দিয়েছেন তাঁর অনুগ্রহ তথা জীবিকা অনুসন্ধানের জন্য এবং রাত দিয়েছেন ঘুমের মাধ্যমে দিনের ক্লান্তি দূর করার জন্য। পরিশ্রম শেষে বিশ্রাম এবং দিনশেষে রাত্রিকালে নিদ্রা আল্লাহর সকল সৃষ্টির জন্য শ্বাস-প্রশ্বাসের মতোই অত্যাবশ্যক। গবেষণায় পরিলক্ষিত হয়েছে যে, কেবল একদিন নির্ঘুম থাকলে মানব-শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের স্বাভাবিক ক্রিয়া ব্যাহত হতে থাকে। একাধিক্রমে তিনদিন বা তার বেশি নিদ্রাহীন অবস্থায় থাকলে মানুষের দৃষ্টিভ্রম বা অলীক বস্তু দৃষ্টিতে উপস্থিত হতে থাকে। নির্ঘুম দিনের সংখ্যা বাড়তে থাকলে ক্রমান্বয়ে মাথাব্যথা, রক্তচাপ বৃদ্ধিসহ অন্যান্য অনেক উপসর্গ দেখা দিতে থাকে। এগার দিন না ঘুমিয়ে থাকার ফলে মৃত্যুবরণ করার উদাহরণও আছে। মানুষের মতো উদ্ভিদসহ অপরাপর সকল প্রাণীর জন্য ঘুম অত্যাবশ্যক। এক সময় ধারণা করা হতো পিঁপড়ারা ঘুমায় না; কিন্তু এখন প্রমাণিত হচ্ছে পিঁপড়াও ঘুমায়।
আল্লাহ জানাচ্ছেন তিনি তন্দ্রাচ্ছন্ন হন না এবং তাঁর নিদ্রার প্রয়োজনও হয় না। অর্থাৎ তিনি ক্লান্ত হন না এবং তাঁর বিশ্রামের প্রয়োজন নেই। লক্ষণীয়, আয়াতের শেষে আল্লাহ নিজেই বলছেন, ‘আর সেগুলোর (মহাবিশ্বের) রক্ষণাবেক্ষণে তিনি ক্লান্ত হন না’। তিনি সর্বক্ষণ বিভিন্ন কর্মে নিয়োজিত রয়েছেন। সূরা আর-রাহমানের ২৯ আয়াতে আল্লাহ নিজের সম্বন্ধে আরো বলেন, ‘প্রতিদিনই (প্রতি মুহূর্তে) তিনি বিশাল কর্মযজ্ঞে ব্যস্ত থাকেন।’ এটি সহজেই অনুমেয় যে, ঘন্টায় প্রায় ১১০০ মাইল বেগে ঘূর্ণায়মান পৃথিবী যদি এক মুহূর্তের জন্যও যদি থেমে যায়, তাহলে নিমেষের মধ্যেই পৃথিবীর সমস্ত কিছু বিধ্বস্ত হয়ে যাবে। সুতরাং মহান আল্লাহর এক মুহূর্তের জন্য বিরামের বিশ্রামের অবকাশ নেই। কিতাবী ধর্মদ্বয়ের একটির অনুসারীরা প্রতি সপ্তাহের শনিবার ছুটি উপভোগ করে, কারণ মহাপ্রভু ছয়দিনে মহাবিশ্ব সৃষ্টির পর একদিন (শনিবার) বিশ্রাম গ্রহণ করেছিলেন (জেনেসিস ২:২)। অপর ধর্মের অনুসারীরা রবিবার ছুটি উপভোগ করে, কারণ ছয়দিনে মহাবিশ্ব সৃজন শেষে মহাপ্রভু রবিবার বিশ্রাম গ্রহণ করেছিলেন (মার্ক ১৬:২)।
আসমান ও যমীনে যা কিছু রয়েছে, সবই তাঁর; এমন কে আছে যে তাঁর অনুমতি ছাড়া তাঁর কাছে সুপারিশ করবে? আসমান ও যমীনে জড় বা জীব যা কিছু আছে, সবই মহান আল্লাহর সৃষ্টি। সকল সৃষ্টির তিনি একক মালিক। তিনি তাঁর আপন ইচ্ছানুযায়ী তাদের প্রত্যেককে নির্দিষ্ট পরিণতির দিকে চালিত করে চলেছেন। তাঁর ইচ্ছা কিংবা আনুগত্যের বাইরে যাওয়া কোন সৃষ্টির পক্ষেই সম্ভব নয়। প্রত্যেক সৃষ্টির অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যৎ সবই তিনি সম্পূর্ণরূপে জ্ঞাত। তাঁর সৃষ্টি কিংবা অধীনস্থদের মধ্য থেকে কেউ নিজের বা অন্য কারো জন্য কোন বিষয়ে আল্লাহর কাছে কোন প্রকার সুপারিশ করার ব্যাপারে সম্পূর্ণ অক্ষম। বিশেষভাবে নির্বাচিত কাউকে আল্লাহ স্বয়ং সুপারিশের অনুমতি দিলে কেবল ঐ নির্বাচিতের পক্ষেই সুপারিশ করা সম্ভব।
তাদের সামনে কিংবা পিছনে যা কিছু রয়েছে সবই তিনি জানেন: এ আয়াতাংশটির বিভিন্ন ব্যাখ্যা প্রদান করা হয়ে থাকে। সর্বাধিক সংখ্যক পণ্ডিতের ব্যাখ্যানুযায়ী, যা কিছু মানুষের সামনে আছে অর্থাৎ মানুষের গোচরীভূত এবং যা কিছু মানুষের পেছনে অর্থাৎ অগোচরে, সবই আল্লাহ জানেন। এর আরো ব্যাখ্যা হতে পারে যে, মানুষের সামনে যা কিছু দৃশ্যমান তা সবই যেমন আল্লাহ জ্ঞাত, ঠিক তেমনি যা কিছু মানুষের কাছে অদৃশ্য তাও মহান আল্লাহ সম্যক জ্ঞাত। অতীতে যা কিছু ঘটেছে, তা সবই আল্লাহ জ্ঞাত এবং যাকিছু ভবিষ্যতে ঘটবে, তাও মহান আল্লাহ জানেন।
যতটুকু তিনি ইচ্ছা করেন তা ছাড়া তাঁর জ্ঞানভাণ্ডারের কিছুই তারা আয়ত্ত করতে পারে না: মহান আল্লাহ মহাবিশ্বের প্রতিটি জড় এবং জীবের অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যৎ সম্পর্কে সম্পূর্ণরূপে ওয়াকেবহাল। পক্ষান্তরে মানুষ কেবল ঘটমান বর্তমান এবং অতীতের টুকরো টুকরো স্মৃতি ছাড়া আর কিছুই জানে না। এক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম রয়েছে অবশ্য। বিশেষভাবে নির্বাচিত কাউকে আল্লাহ তাঁর জ্ঞানভাণ্ডার থেকে কোন বিষয়ে বিশেষ জ্ঞান দান করলে ঐ নির্বাচিত জন অন্যান্য সাধারণ মানুষের চাইতে বিশেষ বিষয়ে অনেক বেশি জ্ঞানী হবেন। জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় ব্যুৎপত্তি অর্জনের মাধ্যমে জ্ঞানসাধকগণের বিভিন্ন আবিস্কার, বিভিন্ন পদ্ধতি উদ্ভাবন, বিভিন্ন তত্ব-উপাত্ত উপস্থাপন বস্তুতঃ মহান আল্লাহ কর্তৃক বিশেষভাবে প্রদত্ত জ্ঞানেরই ফল। সূরা লুকমানের শেষ আয়াতে (৪৩), মানুষের জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা এবং আল্লাহর জ্ঞানের অসীমতার সুন্দর বর্ণনা রয়েছে, ‘নিশ্চয় কেয়ামতের জ্ঞান কেবল আল্লাহর কাছেই রয়েছে। তিনিই বৃষ্টি বর্ষণ করেন এবং তিনিই জানেন যা মাতৃগর্ভে আছে। কেউ জানে না আগামীকাল সে কী উপার্জন করবে এবং কেউ জানে না কোন দেশে সে মৃত্যুবরণ করবে। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সর্ববিষয়ে সম্যক জ্ঞাত।’
তাঁর সিংহাসন (কুরসী) আসমান ও জমীনকে পরিবেষ্টন করে আছে: কুরসী শব্দের আভিধানিক অর্থ সিংহাসন, আসন, চেয়ার, ইত্যাদি। আসমান থেকে জমীন পর্যন্ত বিস্তৃত একটি কল্পনাতীত সিংহাসনে আল্লাহ আসীন হয়ে আছেন এমন ধারণা সাধারণ বোধের অগম্য। এটিই বরং সহজেই বোধগম্য যে, আল্লাহ তাঁর কুদরাত, শক্তি, ক্ষমতা, বিশালত্ব, শাসনব্যবস্থা, ইত্যাদি দিয়ে মহাবিশ্বসহ প্রত্যেক জড় এবং জীবকে প্রতিনিয়ত পরিবেষ্টন করে আছেন। আল্লাহর কুদরাত, তাঁর বিশালত্ব, শক্তি এবং ক্ষমতা অনুধাবনের জন্য আমরা সূরা ঝুমার-এর ৬৭ আয়াতের দিকে দৃষ্টি দিতে পারি। আয়াতটিতে আল্লাহ বলছেন, ‘তারা আল্লাহকে যথার্থরূপে বোঝেনি। কেয়ামতের দিন পৃথিবী থাকবে তাঁর হাতের মুঠোয় এবং আসমানসমূহ ভাঁজ করা অবস্থায় থাকবে তাঁর ডান হাতে। তিনি পবিত্র; আর এরা যাকে শরীক করে, তা থেকে তিনি অনেক উর্ধ্বে।’ সূরা আস-সাজদাহর ৫ আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘তিনি আসমান থেকে পৃথিবী পর্যন্ত যাবতীয় বিষয় পরিচালনা করেন, অতঃপর তা তাঁর কাছে পৌঁছায় এমন এক দিনে, যার পরিমাণ তোমাদের গণনায় হাজার বছরের সমান।’ আয়াতটি স্পষ্টভাবে জানায়, আল্লাহ স্বয়ং আসমান থেকে জমীন পর্যন্ত সকল কার্যাবলী পরিচালনা করেন। কুরসী শব্দটি বস্তুতঃ আসমান-জমীনের সকল বিষয়ে আল্লাহতা’য়ালার প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণের ইঙ্গিতবাহী।
আর সেগুলোর রক্ষণাবেক্ষণে তিনি ক্লান্ত হননা: আমরা আগেই জেনেছি আল্লাহকে তন্দ্রা স্পর্শ করতে পারে না এবং নিদ্রাও নয়। সুতরাং স্বাভাবিকভাবেই তাঁকে ক্লান্তিও স্পর্শ করে না। এ আয়াতাংশটিও সুনির্দিষ্টভাবে প্রমাণ করে যে, কুরসী শব্দটি সিংহাসন অর্থে নয়, বস্তুতঃ আসমান-জমিনসহ অন্তর্গত প্রতিটি বস্তুর উপর তাঁর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ এবং তাদের সার্বক্ষণিক রক্ষণাবেক্ষণ অর্থেই ব্যবহৃত হয়েছে।
তিনিই সর্বোচ্চ এবং সর্বাপেক্ষা মহান: আল্লাহ জ্ঞানে, ক্ষমতায়, মর্যাদায় বা শক্তিতে নয় কেবল, প্রতিটি গুণের ক্ষেত্রে তিনি অতুলনীয় এবং সর্বোচ্চ অবস্থানে বিরাজমান। তাঁর সমান নয়, কাছাকাছি অবস্থানেও অন্য কেউ বা অন্য কিছু থাকতে পারে না। আমরা পৃথিবীতে বসবাসকারীরা পুরো পৃথিবীটাকে একসাথে দেখি না। ভূপৃষ্ঠ থেকে যত উপরে উঠি পৃথিবীর তত বেশি অংশ দৃশ্যমান হতে থাকে। তাও আবার যে অংশে দিন সে অংশটুকুই কেবল দৃশ্যমান হয়। সূর্যের আলোবঞ্চিত অবশিষ্ঠ অর্ধেক মানবিক দৃষ্টিতে অদৃশ্যই থেকে যায়। মহাবিশ্বসহ এর অন্তর্গত প্রতিটি জড় ও জীবের সার্বক্ষণিক ব্যবস্থাপনা-তত্বাবধায়নকারী মহান আল্লাহ সবকিছুকেই একই সাথে দেখেন। আলো কিংবা অন্ধকার আল্লাহর দৃষ্টিকে প্রভাবিত করে না। আল্লাহ সর্বোচ্চ বলতে আমরা ধারণা করতে পারি, সকল সৃষ্টির ব্যবস্থাপনা-তত্বাবধায়ন ক্রিয়া সার্বক্ষণিকভাবে চলমান রাখার এটাই দাবী যে, আল্লাহর স্থায়ী অবস্থান তাঁর সৃষ্টিসমূহের বাইরে, অর্থাৎ মহাবিশ্বের উর্ধ্বে। অর্থাৎ অবস্থানগত দিক থেকেও আল্লাহ সর্বোচ্চ; তিনি সবকিছুর উর্ধ্বে। একইসাথে তিনি সবচাইতে মহান।
আল্লাহর স্বরূপ বিশ্লেষণ: আমরা জানলাম আল্লাহ চিরঞ্জীব; তিনি আদি, তিনিই অন্ত। জন্ম এবং মৃত্যুর তিনিই স্রষ্টা। সুতরাং জন্ম-মৃত্যুর উর্ধ্বে তিনি। তিনি সদা-বর্তমান; তিনি কারো ঔরসজাত নন এবং কেউ তাঁর ঔরসজাত নয়। সুতরাং তিনি সময় তথা কালোত্তীর্ণ। আমাদের সূর্যকেন্দ্রিক সৌরজগতে বিভিন্ন গ্রহে দিনের দৈর্ঘ্য বৃহষ্পতিতে সর্বনিম্ন ১০ ঘন্টা এবং শুক্রে সর্বোচ্চ ৫৮৩২ ঘন্টা। মহাবিশ্বে বিরাজমান বিভিন্ন সৌরজগতের গ্রহপুঞ্জগুলোতে দিনের দৈর্ঘ্য বিভিন্ন রকমের। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ জানাচ্ছেন, ‘মানুষের গণনার হাজার বছর সমান আল্লাহর গণনার একদিন মাত্র (সূরা হাজ্জ্ব: ৪৭)।’ সূরা আল-মা’রিজের ৪ আয়াতে আল্লাহ আরো জানাচ্ছেন, ‘ফেরেশতা এবং রূহ আল্লাহর দিকে উর্ধ্বগামী হয় এমন একদিনে, যে দিনের দৈর্ঘ্য মানুষের গণনায় পঞ্চাশ হাজার বছরের সমান।’ আমরা আরো জেনেছি, দিনরাত্রির আবর্তন হয় এমন গ্রহে আল্লাহর সৃষ্টিকুল কর্মের ভারে ক্লান্ত হয়ে পড়ে। ফলে তারা রাত্রিবেলায় ঘুমিয়ে ক্লান্তি দূর করে। পক্ষান্তরে তন্দ্রা আল্লাহকে স্পর্শ করতে পারে না এবং নিদ্রাও নয়। মহাবিশ্বের সকল বিষয়ের সার্বক্ষণিক ব্যবস্থাপনা তাঁকে ক্লান্ত করে না। ক্রমবর্ধমান মহাবিশ্বের অগণিত সৌরজগতের অসংখ্য গ্রহ উপগ্রহ বিভিন্ন গতিতে ঘূর্ণায়মান। সময়ের মহান স্রষ্টা আল্লাহতা’য়ালা এগুলো গতি এবং দিনরাত্রির দৈর্ঘ্য নির্ধারণ করেন। সুতরাং মহান আল্লাহ সময়েরও উর্ধ্বে; সময় তাঁকে স্পর্শ করে না।
মহান আল্লাহ হচ্ছেন আল-ক্বাইউম; অর্থাৎ তিনি মহাবিশ্বসহ সকল জীব এবং জড়ের সার্বক্ষণিক ধারক-ব্যবস্থাপক। মহাবিশ্বের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত তিনি একই সাথে সবার সাথে আছেন এবং যাবতীয় বিষয়াদি তিনি নিরন্তর পরিচালনা করে চলেছেন। পৃথিবীর মানুষ বা অন্য কোন সৃষ্টি যখন যে স্থানে বসে আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করুক না কেন, আল্লাহ প্রত্যেকের প্রার্থনায় সাড়া দিয়ে থাকেন। একই সাথে তিনি সমস্ত কিছু দেখেন। একই সাথে তিনি সমস্ত কিছু শোনেন। যা কিছু তাঁর সৃষ্টির অন্তরে আছে তা যেমন তিনি জানেন, তেমনি যা কিছু অন্তরের বাইরে তাও তিনি জানেন। একই সাথে তিনি আপন সিদ্ধান্তনুযায়ী আবশ্যক সমস্ত কর্ম সম্পাদন করে চলেছেন।
এখন প্রশ্ন, আল্লাহতা’য়ালার অবস্থান কোথায়? তিনি কী তাঁরই সৃষ্টি ক্রমবর্ধমান মহাবিশ্বের অভ্যন্তরে অবস্থান করেন? মহাবিশ্বের ভিন্ন ভিন্ন গ্রহে দিনের দৈর্ঘ্য ভিন্ন ভিন্ন রকম। আবার দিন-রাত্রির আবর্তন যেখানে হয়, সেখানে অবস্থানকারীরা রাত্রিবেলায় ক্লান্তিহরণের লক্ষ্যে নিদ্রামগ্ন হয়ে পড়ে। দিনের আলোতে দৃষ্টিসীমার মধ্যে অনেক কিছু সেখানে দৃশ্যমান হলেও রাতের অন্ধকার সেখানে সবকিছু ঢেকে ফেলে। মহান আল্লাহ, যিনি একই সাথে সবকিছু দেখেন, শোনেন, জানেন এবং সমস্ত কর্ম সম্পাদন করেন, নিশ্চয়ই তাঁর ত্রিমাত্রিক সৃষ্টি মহাবিশ্বের অভ্যন্তরে অবস্থান করেন না। তিনি ত্রিমাত্রিক স্থানের উর্ধ্বে; ফলে তিনি একই সাথে সমস্ত কর্ম সম্পাদন করতে সক্ষম হন। আবার তিনি, চতুর্থ মাত্রা, সময়েরও উর্ধ্বে; ফলে তিনি একই সাথে সকল স্থানে অবস্থান করতে পারেন। গতি স্থান এবং সময়ের উপর নির্ভরশীল। কিন্তু আল্লাহ স্থান এবং কালের উর্ধ্বে। স্থান অতিক্রমের জন্য কাল গণনার বিষয়টি তাঁর সৃষ্টির ক্ষেত্রেই কেবল প্রযোজ্য কেবল। সুতরাং তিনি গতিরও উর্ধ্বে। আল্লাহ স্বয়ং সকল শক্তির আধার (আয়াতাংশ, বাকারাহ: ১৬৫); আল্লাহ ছাড়া কারো কোন শক্তি নেই (আয়াতাংশ, কাহাফ: ৩৯)। আল্লাহ স্থান অতিক্রম করেন না বা স্থান অতিক্রমে সময় ব্যয় করেন না। আপন শক্তি এবং ক্ষমতাবলেই তিনি একই সাথে সকল সময়ে সকল স্থানে বিরাজ করেন।
লেখক: মুহাম্মদ জামালুদ্দীন
No comments