এক্সিডেন্ট
أَوَلَمْ يَرَ
الَّذِينَ كَفَرُوا
أَنَّ السَّمَاوَاتِ
وَالْأَرْضَ كَانَتَا
رَتْقًا فَفَتَقْنَاهُمَا
وَجَعَلْنَا مِنَ
الْمَاءِ كُلَّ
شَيْءٍ حَيٍّ
أَفَلاَ يُؤْمِنُونَ-
‘অবিশ্বাসীরা কি দেখে না যে, নভোমন্ডল ও ভূমন্ডল একত্রিত ছিল। অতঃপর আমি উভয়কে পৃথক করে দিলাম এবং পানি দ্বারা সকল প্রাণবান বস্ত্তকে সৃষ্টি করলাম। এরপরও কি তারা বিশ্বাস স্থাপন করবে না?’ (আম্বিয়া ২১/৩০)।
প্রাচীন বিজ্ঞানীদের
অনেকের ধারণা
ছিল, এ
পৃথিবী ও
এর মধ্যেকার
সবকিছু এক্সিডেন্টের
সৃষ্টি। এটি
কোন পূর্ব
পরিকল্পিত সৃষ্টি
নয় এবং
এর কোন
সৃষ্টিকর্তা ছিল
না। আসলে
কি তাই?
আধুনিক বিজ্ঞানের
তত্ত্ব অনুযায়ী
আদিতে যখন
পদার্থের অস্তিত্ব
ছিল না
এবং ছিল
না কোন
বস্ত্ত, শক্তি
বা সময়ের
অস্তিত্ব, সে
সময় হঠাৎ
সংঘঠিত হয়
এক মহা
বিস্ফোরণ। যার
মধ্য দিয়ে
সৃষ্টি হয়
বস্ত্ত, শক্তি
ও সময়।
বিস্ফোরণের সেই
ক্ষণটিকে বিজ্ঞানীগণ
বলেন, শূন্য
সময় বা
Time Zero। যে
সূক্ষ্ম বিন্দুতে
মহাবিশ্বের জন্ম
হয়েছিল, তাকে
বিজ্ঞানের পরিভাষায়
আদি অগ্নিগোলক
বা Primordial Fire-ball বলা
হয়। সেখানে
অজ্ঞাত কোন
উৎস থেকে
সহসা বিপুল
পরিমাণ শক্তির
সমাবেশ ও
তার ঘনায়ন
ঘটে। সেই
সূক্ষ্ম বিন্দুটিই
ছিল আদি
মহাবিশ্ব। যা
সম্প্রসারিত হ’তে
হ’তে
মানুষের কল্পনার
অতীত আজকের
মহা আকৃতি
ধারণ করেছে।
যা ক্রমাগতভাবে
বিস্তৃত হয়ে
চলেছে। কুরআনের
ভাষায়, ‘আমরা
নিজ হাতে
আকাশ নির্মাণ
করেছি। আর
আমরা অবশ্যই
এর সম্প্রসারণকারী’ (যারিয়াত
৫১/৪৭)।
অথচ এই
মহাবিশ্ব ছিল
অস্তিত্বহীন একটি
মহাবিন্দু তুল্য।
বিজ্ঞানীরা যার
স্বীকৃতি দিয়েছেন।
এজন্যেই আল্লাহ
বলেন, ‘তিনিই
নভোমন্ডল ও
ভূমন্ডলকে অনস্তিত্ব
হ’তে
অস্তিত্বে আনয়নকারী।
যখন তিনি
কোন বিষয়ে
সিদ্ধান্ত নেন,
তখন তাকে
বলেন, হও!
অতঃপর তা
হয়ে যায়’ (বাক্বারাহ
২/১১৭)।
দূর অতীতে
মহাশূন্যে হঠাৎ
এক্সিডেন্টের ফলে
যে মহা
বিস্ফোরণ ঘটেছিল।
যার ফলে
মহাশূন্যে বিচ্ছিন্ন
টুকরা সমূহের
একটি হ’ল
‘পৃথিবী’ নামক
আমাদের এই
ছোট্ট গ্রহ।
একে বিজ্ঞানের
পরিভাষায় বিগ
ব্যাং মতবাদ
(Big-Bang Theory) বলে। একদম
শূন্য থেকে
সৃষ্টি বিষয়ক
এই বিগ-ব্যাং
মতবাদ, যা
স্টিডি স্টেট
(Steady State)-বাদী পদার্থ
বিজ্ঞানীদের অনমনীয়
যিদ ও
বিরোধিতার কারণেই
গ্রহণযোগ্যতা পায়নি।
যাদের ধারণা
মতে মহাবিশ্বের
কোন শুরু
ছিল না।
বরং অনাদিকাল
হ’তে
এভাবেই অবস্থান
করছে। সময়ের
ব্যাপ্তিতে আপনা
থেকেই পদার্থ
তৈরী হ’ত
এবং তা
মহাবিশ্বের শূন্যস্থানকে
ভরে দিত।
সেকারণ আমরা
সৃষ্টিকে সর্বদা
অপরিবর্তনশীল দেখতে
পাই’।
যদিও এই
ধারণার পিছনে
তারা বিজ্ঞান
ভিত্তিক কোন
যুক্তি দাঁড়
করাতে পারেননি।
অতঃপর ১৯২৭
সালে প্রথম
বিগ-ব্যাং
থিওরী পেশ
করেন বেলজিয়াম
পদার্থবিদ জর্জ
ল্যামেইট্র (১৮৯৪-১৯৬৬
খৃ.)।
অকাট্য তথ্য-উপাত্তের
ফলে যা
বিজ্ঞানীগণ সবাই
মেনে নিতে
বাধ্য হন।
অথচ দেড়
হাযার বছর
পূর্বেই পৃথিবীর
মানুষ মরু
আরবের একজন
নিরক্ষর নবীর
মুখ দিয়ে
উক্ত তথ্য
জানতে পেরেছে (আম্বিয়া
৩০)। ফালিল্লাহিল
হাম্দ। কিন্তু
আরবের ‘জ্ঞানের
পিতা’ বলে
পরিচিত আবু
জাহলরা সেকালে
এর অর্থ
বুঝেনি, একালের
‘জ্ঞানের পিতা’-রাও
বুঝেনি। সে
যুগের অবিশ্বাসীরা
বলেছিল, ‘দুনিয়ার
এই জীবনই
আমাদের জীবন।
আমরা এখানেই
মরি ও
বাঁচি। প্রকৃতিই
আমাদের ধ্বংস
করে। বস্ত্ততঃ
এ ব্যাপারে
তাদের কোনই
জ্ঞান নেই।
তারা কেবল
ধারণা প্রসূত
কথা বলে’ (জাছিয়াহ
৪৫/২৪)।
‘যখন তাদের
বলা হ’ত,
আল্লাহর ওয়াদা
সত্য এবং
ক্বিয়ামত আসবেই।
এতে কোন
সন্দেহ নেই,
তখন তোমরা
বলে থাক,
আমরা জানিনা
ক্বিয়ামত কি
বস্ত্ত। আমরা
মনে করি
এটা একটি
ধারণা মাত্র
এবং এ
বিষয়ে আমরা
নিশ্চিত নই’ (জাছিয়াহ
৪৫/৩২)।
বিগ-ব্যাং
থিওরী প্রতিষ্ঠিত
হওয়ার পর
দু’টি
মহাসত্য আত্মপ্রকাশ
করে। যার
প্রথমটি হ’ল
আদি মহাবিশ্ব
মূলতঃ শূন্য
হ’তে
সৃষ্টি হয়েছে।
ইতিপূর্বে যার
কোন অস্তিত্ব
ছিল না।
দ্বিতীয়তঃ অতীন্দ্রিয়
কোন মহা
শক্তিশালী ও
মহাবিজ্ঞ অদৃশ্য
সত্তার মাধ্যমেই
কেবল এটি
সম্ভব হয়েছে’।[1]
নিঃসন্দেহে তিনিই
হ’লেন
‘আল্লাহ’।
যিনি এক
ও অমুখাপেক্ষী।
যার কোন
শরীক নেই।
আমাদেরকে গল্প
শুনিয়ে বিশ্বাস
করানো হয়
যে, বিশ্বলোকসহ
আমরা যারা
মহাশূন্যে ঝুলন্ত
এই পৃথিবীর
বাসিন্দা, সবাই
এক্সিডেন্টের সৃষ্টি।
ছোটবেলায় দাদী-নানীর
কোলে বসে
রূপকথার কাহিনী
শুনতাম। জিনের
আত্মাটা নাকি
ছোট্ট কৌটার
মধ্যে আটকিয়ে
পুকুরের গভীরে
কাদার মধ্যে
পুঁতে রাখা
হ’ত।
অতঃপর জিনকে
দিয়ে যা
খুশী করানো
হ’ত।
আমাদের বিশ্বাসকেও
অনুরূপ কৌটার
মধ্যে ভরে
অজ্ঞাত কল্পনার
জগতে চালান
করে দিয়ে
আমাদেরকে নিয়ে
খেলছেন একদল
মানুষ। যারা
দু’ভাগে
বিভক্ত।-
একদল যারা
আল্লাহর অস্তিত্বকে
অস্বীকার করেন।
অন্যদল আল্লাহর
অস্তিত্বকে স্বীকার
করেন। কিন্তু
তারা কোন
ধর্মে বিশ্বাস
করেন না
এবং তারা
ক্বিয়ামতে বিশ্বাসী
নন।
প্রথম দলের
বক্তব্য হ’ল
: পৃথিবীটা এক্সিডেন্টের
সৃষ্টি। আর
এটি হ’ল
প্রাকৃতিক বিষয়।
আর আমরা
যা দেখা
যায় ও
অনুভব করা
যায়, তা
ব্যতীত অন্য
কিছুতে বিশ্বাস
করি না।
যদি আল্লাহর
অস্তিত্ব থাকত,
তাহ’লে
তিনি নিজে
আমাদের নিকট
দেখা দিতেন’
যাতে আমরা
তার উপর
বিশ্বাস আনতে
পারি। হ্যাঁ!
দূর অতীতে
মূসার কওম
তাঁর কাছে
এরূপ দাবীই
করেছিল। ফলে
তাদেরকে আল্লাহ
সেখানেই ধ্বংস
করে দিয়েছিলেন।
পরে মূসার
আবেদনে আবার
তাদের জীবিত
করেছিলেন (বাক্বারাহ
২/৫৫-৫৬)।
এরা ছিল
মূসার কওমের
সত্তুরজন শীর্ষ
নেতা।
এযুগেও অবিশ্বাসী
ও বস্ত্তবাদী
নেতারা এরূপ
উদ্ভট দাবী
করে থাকেন।
যদিও কোন
সুস্থ জ্ঞানের
মানুষ এরূপ
দাবী করতে
পারে না।
এ পৃথিবীতে
কোন কর্মই
কি কর্তা
ব্যতীত সম্পন্ন
হচ্ছে? এক্সিডেন্ট
কি কোন
দৃঢ় বিধান
তৈরী করতে
পারে? আর
যদি প্রকৃতিই
পৃথিবীকে সৃষ্টি
করে থাকে,
তাহ’লে
প্রকৃতিকে কে
সৃষ্টি করল?
তাতে কিভাবে
এসব নিয়ম-কানূন
তৈরী হ’ল?
এজন্যই তো
আল্লাহ বলেছেন,أَمْ
خُلِقُوا مِنْ
غَيْرِ شَيْءٍ
أَمْ هُمُ
الْخَالِقُونَ ‘তারা
কি কোন
কিছু ছাড়াই
সৃষ্টি হয়েছে,
না তারা
নিজেরাই (নিজেদের)
স্রষ্টা?’ (তূর
৫২/৩৫)।
যদি কেউ
বলে যে,
সে একটি
পণ্য বোঝাই
জাহায দেখেছে,
যে হঠাৎ
কোন কর্তা
ছাড়াই বোঝাই
হয়েছে। অতঃপর
নাবিক ছাড়াই
সাগরে চলছে,
তাহ’লে
কি কেউ
তাকে বিশ্বাস
করবে? যদি
কেউ একটি
বড় কাঁচের
পাত্র মাটিতে
ফেলে দেয়
এবং তা
ভেঙ্গে চূর্ণ
হয়ে যায়,
তাহ’লে
কি তা
থেকে ছোট
ছোট পানির
গ্লাস বের
হবে? যদি
কেউ কোন
একটা গাছের
পাতায় কয়েক
প্রকার রং
লাগিয়ে দেয়,
তাহ’লে
তাতে কি
অনন্য সুন্দর
কোন দৃশ্য
তৈরী হবে?
কোন ফুলের
পাতায় সুগন্ধি
ছিটিয়ে দিলে
কি সেটা
গোলাপ ফুল
হবে? তাহ’লে
অবিশ্বাসীদের ধারণা
কি হবে
এই সুন্দর
নিয়মবদ্ধ পৃথিবী
ও সৌরলোক
সম্বন্ধে? যার
প্রতিটি বস্ত্ত
নিজস্ব রীতিতে
ও অনন্য
গতিতে সুশৃংখলভাবে
চলছে? কেউ
যদি একাকী
কোন নির্জন
ভূমিতে ভ্রমণে
যায় এবং
এক পর্যায়ে
ঘুমিয়ে যায়।
অতঃপর ক্ষুধার্ত
অবস্থায় জেগে
উঠে দেখে
যে, পাশেই
খাদ্য ও
পানীয় ভর্তি
দস্তরখান প্রস্ত্তত,
তাহ’লে
সে কি
তা থেকে
খাওয়ার জন্য
হাত বাড়াতে
পারবে, যতক্ষণ
না নিজের
মধ্যে প্রশ্ন
আসে, কে
এই খাদ্য
হাযির করল?
তাহ’লে
কি জবাব
হবে এই
সুন্দর সৃষ্টিজগত
সম্পর্কে, যাকে
আমাদের সৃষ্টির
পূর্বেই আমাদের
অভ্যর্থনা ও
সেবার জন্য
সৃষ্টি করা
হয়েছে এবং
সেখানে সূর্য,
চন্দ্র, নক্ষত্ররাজিসহ
নভোমন্ডল ও
ভূমন্ডল সৃষ্টি
করা হয়েছে।
আর প্রত্যেকটি
বস্ত্তর রয়েছে
নিজস্ব নিয়ম
ও শৃংখলা।
রয়েছে নিজস্ব
কর্মরীতি। যা
কেউ ভঙ্গ
করে না।
রয়েছে নিজস্ব
গতিপথ। যা
কেউ অতিক্রম
করে না।
তাহ’লে
বিশাল সৃষ্টিজগত
কি কোন
স্রষ্টা ছাড়াই
সৃষ্টি হয়েছে?
কোন পরিচালক
ছাড়াই পরিচালিত
হচ্ছে? এক্সিডেন্ট
কি কোন
বিধি-বিধান
তৈরী করতে
পারে? কোন
কিছু সুশৃংখলভাবে
পরিচালনা করতে
পারে?
আমরা বিদ্যুতের
অস্তিত্ব স্বীকার
করি। কিন্তু
আমরা কি
তা দেখি?
আমরা যদি
কোন ঘরে
বসে থাকি।
যেখানে বৈদ্যুতিক
বাতি জ্বলছে
ও পাখা
চলছে। এ
সময় যদি
কেউ বলে
ওঠে, বিদ্যুৎ
আছে কি?
তখন লোকেরা
কি জবাব
দিবে? তারা
কি বলবে
না যে,
তুমি একটা
আস্ত পাগল!
তুমি কি
দেখ না
আলো জ্বলছে
পাখা ঘুরছে?
এভাবে সর্বত্র
আমরা ক্রিয়া
দেখে কর্তাকে
স্বীকার করি।
তাহ’লে
সৃষ্টি দেখে
কেন সৃষ্টিকর্তা
আল্লাহকে স্বীকার
করব না?
যদি বলি
বিদ্যুৎ রয়েছে
আবরণে ঢাকা
ক্যাবলের মধ্যে।
তারপর যদি
কেউ আবরণটা
খুলে দেখতে
যায়, তাহ’লে
কি সে
বিদ্যুৎ দেখতে
পাবে? আর
যদি তাতে
স্পর্শ করে,
তাহ’লে
তার অবস্থা
তখন কি
হবে?
এ যুগের
বিস্ময় হ’ল
ইন্টারনেট। কিন্তু
আমরা কি
তার ভিতরের
বিদ্যুতের খেলা
দেখতে পাই?
আমরা কি
মধ্যাকর্ষণ শক্তি,
চৌম্বকতত্ব, এক্সরে,
লেজার রশ্মি,
শব্দতরঙ্গ ও
বায়ু তরঙ্গকে
অস্বীকার করতে
পারি? যা
ব্যতীত আমরা
এক মিনিট
দুনিয়ায় বসবাস
করতে পারি
না। আমরা
দেখি ও
শুনি। কিন্তু
আমরা কি
জানি চোখ
কিভাবে দেখে
বা কান
কিভাবে শোনে?
আমরা কথা
বলি। কিন্তু
আমরা কি
জানি, কিভাবে
দু’ঠোট,
জিহবা ও
মুখগহবরে শব্দ
ও বাক্য
তৈরী হয়?
আমরা ক্বিয়ামতকে
অস্বীকার করি।
কিন্তু আমাদের
দৈনিক নিদ্রায়
মৃত্যু হয়
ও জাগরণে
ক্বিয়ামত হয়,
সেটা কি
চিন্তা করি?
নিদ্রা ও
জাগরণের কোনটারই
ক্ষমতা কি
আমাদের আছে?
দৈনিক আমাদের
দেহের অভ্যন্তরে
রক্ত কণিকা
সমূহের মৃত্যু
ও নবজন্মে
সর্বদা মৃত্যু
ও পুনরুত্থানের
খেলা চলছে,
তা কি
আমরা ভেবে
দেখি? এজন্যেই
তো আল্লাহ
বলেছেন, ‘আর
সে আমাদের
সম্পর্কে নানাবিধ
উপমা দেয়।
অথচ সে
নিজের সৃষ্টি
বিষয়ে ভুলে
যায়। সে
বলে, কে
হাড্ডিগুলিকে জীবিত
করবে যখন
তা পচে-গলে
যাবে’? ‘তুমি
বলে দাও,
ওগুলিকে তিনিই
জীবিত করবেন
যিনি প্রথমবার
সৃষ্টি করেছিলেন।
আর তিনি
প্রত্যেক সৃষ্টি
সম্পর্কে সুবিজ্ঞ’ (ইয়াসীন
৩৬/৭৮-৭৯)।
আমাদের অনুভূতি
ও অনুধাবন
শক্তি সৃষ্টি
জগতের সবকিছু
দেখতে ও
অনুভব করতে
সক্ষম হয়
না এবং
হবেও না
কোনদিন। তাহ’লে
কিভাবে আমরা
তাকে দেখতে
পাব, যিনি
এগুলিকে সৃষ্টি
করেছেন ও
প্রত্যেককে স্ব
স্ব রীতি
ও গতিতে
চলার ক্ষমতা
দিয়েছেন এবং
পথ প্রদর্শন
করেছেন। যার
বাইরে যাবার
ক্ষমতা কারও
নেই। আমরা
হাঁস-মুরগীর
মত দু’পায়ে
চলি। গরু-ছাগল-হাতি-বাঘ
সবাই চারপায়ে
চলে। ইচ্ছা
করলেই কি
আমরা চারপায়ে
চলতে পারব?
আল্লাহর এই
রীতি পাল্টানোর
ক্ষমতা কি
আমাদের আছে?
আমরা আমাদের
সৃষ্টিকর্তাকে দেখি
না, কিন্তু
তার সৃষ্টিকে
দেখি। সর্বত্র
তাঁর নিদর্শন
দেখি। কিন্তু
তাঁকে দেখতে
পাই না
এবং পাবোও
না কোনদিন
দুনিয়াতে। সেকথাই
আল্লাহ বলেছেন,لاَ
تُدْرِكُهُ الْأَبْصَارُ
وَهُوَ يُدْرِكُ
الْأَبْصَارَ وَهُوَ
اللَّطِيفُ الْخَبِيرُ-
‘কোন দৃষ্টি
তাঁকে (দুনিয়াতে)
বেষ্টন করতে
পারে না।
বরং তিনিই
সকল দৃষ্টিকে
পরিবেষ্টন করেন।
তিনি অতীব
সূক্ষ্মদর্শী এবং
ভিতর-বাহির
সকল বিষয়ে
বিজ্ঞ’ (আন‘আম
৬/১০৩)।
অবিশ্বাসীরা আল্লাহকে
প্রকাশ্যে দেখতে
চায়। যদি
তাকে দেখেই
নাও, তাহ’লে
পরীক্ষা হবে
কিসে? যদি
কেউ আগে-ভাগেই
রেজাল্ট জেনে
নেয়, তাহ’লে
সে পরীক্ষা
দেবে কেন?
সেকারণ ঈমানের
মূল ভিত্তিই
হ’ল
অদৃশ্যে বিশ্বাস।
বিজ্ঞানের ভিত্তিও
কি তাই
নয়? বিজ্ঞানের
নিত্য-নতুন
আবিষ্কার কি
একথা প্রমাণ
করে না
যে, তারা
আগে বিষয়টি
জানতেন না।
বিজ্ঞানীরা স্রেফ
অনুমানের ভিত্তিতে
গবেষণা করেন।
অতঃপর ভাগ্যক্রমে
কখনো এমনকিছু
পেয়ে যান,
যা ইতিপূর্বে
তাদের ধারণাতেও
ছিল না।
এ যুগের
কম্পিউটার, মোবাইল
ও ইন্টারনেট
অনুরূপ বিস্ময়কর
আবিষ্কার নয়?
অতএব বিজ্ঞান
নিশ্চিতভাবে অদৃশ্যে
বিশ্বাসের উপর
নির্ভরশীল। বরং
তা অন্ধকারে
পথ হাতড়ানোর
মত একটা
বিষয়। যা
আল্লাহ আগেই
বলেছেন যে,
‘তিনি শিক্ষা
দিয়েছেন মানুষকে
যা সে
জানতো না’ (‘আলাক্ব
৯৬/৫)।
অতএব অদৃশ্য
থাকাটাই বিজ্ঞান
গবেষণার ভিত্তি।
সবকিছু দৃশ্যমান
থাকলে পৃথিবীতে
গবেষণা ও
উন্নয়ন বলে
কিছু থাকত
না। সবকিছু
স্থবির হয়ে
পড়ত। অমনিভাবে
অদৃশ্য থেকে
আল্লাহ সবকিছু
করছেন, দেখছেন
ও শুনছেন;
এই বিশ্বাসই
মানুষকে সর্বদা
ভীত রাখে
ও সঠিক
পথে চলতে
উদ্বুদ্ধ করে।
একেই বলে
‘ঈমান বিল
গায়েব’।
এক্ষণে যদি
কেউ আল্লাহকে
স্বীয় চর্মচক্ষুতে
দুনিয়াতেই দেখে
ফেলে, তাহ’লে
আর ঈমানের
কি ফায়েদা
থাকল? কেউ
কি বলবে
যে, আমি
সূর্যে, চন্দ্রে,
বা রাত্রি
ও দিনে
বিশ্বাসী? যা
সে প্রতিদিন
দেখছে। মনে
রাখা উচিৎ
যে, আল্লাহ
দর্শন হ’ল
বান্দার জন্য
সবচেয়ে বড়
নে‘মত।
এ নে‘মতের
অধিকারী কেবল
তারাই হবে,
যারা পরকালে
জান্নাতী হবে।
অবিশ্বাসী কপট
বিশ্বাসী, মুশরিক
ও ফাসেকরা
কি তাকে
দেখতে পাবে?
দুনিয়াতেও তারা
ছিল অন্ধ,
আখেরাতেও তারা
হবে অন্ধ’ (ত্বোয়াহা
২০/১২৪)।
আল্লাহ বলেন,كَلاَّ
إِنَّهُمْ عَنْ
رَبِّهِمْ يَوْمَئِذٍ
لَمَحْجُوبُونَ ‘কখনই
না। তারা
সেদিন তাদের
প্রতিপালকের দর্শন
হ’তে
বঞ্চিত থাকবে’ (মুত্বাফফেফীন
৮৩/১৫)।
অথচ উচ্চ
মর্যাদাশীল মুমিনগণ
তাঁকে জান্নাতে
স্পষ্ট দেখবেন।
যেমন আল্লাহ
বলেন,وُجُوهٌ
يَوْمَئِذٍ نَاضِرَةٌ،
إِلَى رَبِّهَا
نَاظِرَةٌ- ‘সেদিন
অনেক চেহারা
উজ্জ্বল হবে’।
‘তারা তাদের
প্রতিপালকের দিকে
তাকিয়ে থাকবে’ (ক্বিয়ামাহ
৭৫/২২-২৩)।
কারণ তারা
দুনিয়াতে তার
প্রতি বিশ্বাসী
ছিল। আখেরাতেও
তারা উক্ত
বিশ্বাসের প্রতিদান
পাবে।
অবিশ্বাসীরা বলে,
আল্লাহকে সৃষ্টি
করেছে কে?
আমরা বলব,
এটি হ’ল
শয়তানী ওয়াসওয়াসা।
এ বিষয়ে
আল্লাহর রাসূল
(ছাঃ) আমাদেরকে
আগেই সাবধান
করে গিয়েছেন।
তিনি বলেন,
তোমাদের কেউ
এরূপ বললে
বা তোমাদের
মনে এরূপ
খটকার উদ্রেক
হলে তোমরা
বল,آمَنْتُ
بِاللهِ وَرُسُلِهِ
‘আমি বিশ্বাস
স্থাপন করলাম
আল্লাহ ও
তাঁর রাসূলগণের
উপর’।[2]
এছাড়া তোমরা
সূরা ইখলাছ
পাঠ কর
এবং বাম
দিকে তিনবার
থুক মারো।
আর শয়তান
থেকে আল্লাহর
আশ্রয় চেয়ে
বল আঊযুবিল্লাহি
মিনাশ শায়ত্বানির
রজীম’।[3]
একবার কিছু
লোক এসে
বলল, হে
আল্লাহর রাসূল!
আমাদের অন্তরে
মাঝে-মধ্যে
ভয়ংকর সব
কথা আসে,
যা বলতে
সংকোচ হয়।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)
বললেন, তোমাদের
মধ্যে এরূপ
সংকোচ আসে
কি? তারা
বলল, হ্যাঁ।
তিনি বললেন,
এটাই হ’ল
ঈমানের স্পষ্ট
নিদর্শন (ذَاكَ
صَرِيحُ الإِيمَانِ)।[4]
এর বিপরীত
হ’ল
মুনাফিকগণ। যারা
মুখে ঈমান
প্রকাশ করে।
কিন্তু অন্তরে
কুফরী লুকিয়ে
রাখে। এদের
সম্বন্ধে আল্লাহ
বলেন, يَوْمَ
تُبْلَى السَّرَائِرُ،
فَمَا لَهُ
مِنْ قُوَّةٍ
وَلَا نَاصِرٍ-
‘যেদিন গোপন
বিষয়াদি পরীক্ষিত
হবে’।
‘সেদিন তার
কোন শক্তি
থাকবে না
বা কোন
সাহায্যকারী থাকবে
না’ (আত-তারেক
৮৬/৯-১০)।
তিনি আরও
বলেন,أَفَلاَ
يَعْلَمُ إِذَا
بُعْثِرَ مَا
فِي الْقُبُوْرِ،
وَحُصِّلَ مَا
فِي الصُّدُوْرِ،
إِنَّ رَبَّهُمْ
بِهِمْ يَوْمَئِذٍ
لَخَبِيْرٌ- ‘সে
কি জানে
না, যখন
কবরে যা
আছে তা
উত্থিত হবে?’
‘এবং বুকের
মধ্যে যা
লুক্কায়িত ছিল
সব প্রকাশিত
হবে?’ ‘নিশ্চয়ই
তাদের প্রতিপালক
সেদিন তাদের
কি হবে
সে বিষয়ে
সম্যক অবহিত’ (‘আদিয়াত
১০০/৯-১১)।
যদি আমরা
তর্কের খাতিরে
কাউকে মেনে
নেই যে,
তিনি আল্লাহকে
সৃষ্টি করেছেন,
তখন তো
অবিশ্বাসীরা পুনরায়
বলবে যে,
তাকে কে
সৃষ্টি করেছে?
এভাবে বলতেই
থাকবে। কিন্তু
কতক্ষণ বলবে?
কত দূর
বলবে? এক
সময় গিয়ে
তাকে থামতেই
হবে। অর্থাৎ
এক পর্যায়ে
যেকোন জ্ঞানী
ব্যক্তিকে বলতেই
হবে যে,
একজন সৃষ্টিকর্তা
অবশ্যই আছেন,
যাকে কেউ
সৃষ্টি করেনি।
যিনি প্রথম।
যার পূর্বে
কেউ নেই।
যদি কেউ
১০০ থেকে
পিছন দিকে
গণতে থাকে,
তাহ’লে
এক পর্যায়ে
তাকে এক-য়ে
গিয়ে থামতে
হবে। কেননা
তারপরে তো
আর কিছু
নেই। নিশ্চিতভাবে
তিনিই হ’লেন
আল্লাহ। যিনি
এক ও
অদ্বিতীয়। যার
কোন শরীক
নেই। যিনি
সবকিছু সৃষ্টি
করেছেন। তাঁকে
কেউ সৃষ্টি
করেনি। لَمْ
يَلِدْ وَلَمْ
يُولَدْ، وَلَمْ
يَكُنْ لَهُ
كُفُوًا أَحَدٌ-
‘তিনি (কাউকে)
জন্ম দেননি
এবং তিনি
(কারও) জন্মিত
নন’।
‘আর তাঁর
সমতুল্য কেউ
নেই’ (ইখলাছ
১১২/৩-৪)।
দ্বিতীয় হ’ল
ঐসব লোক,
যারা আল্লাহর
অস্তিত্বকে স্বীকার
করে। কিন্তু
কোন ধর্ম
বিশেষ করে
আল্লাহ প্রেরিত
ধর্ম ইসলামকে
স্বীকার করে
না। তারা
বলে, ধর্ম
পালনই সকল
প্রকার অধোগতি,
দারিদ্র্য, রোগ-পীড়া,
সামাজিক বিশৃংখলা
ও যুলুম-অত্যাচারের
কারণ ইত্যাদি
ইত্যাদি। তারা
বিচার দিবসে
বিশ্বাস করে
না।
তাহ’লে
কি একথা
বলতে হবে
যে, আল্লাহ
আমাদের সৃষ্টি
করেছেন কেবল
খেলাচ্ছলে? তিনি
আমাদের কর্মসমূহের
হিসাব নিবেন
না? তাহ’লে
ন্যায়বিচার কোথায়
থাকল? বস্ত্তবাদীরা
কি ধারণা
করেন যে,
সৎ ও
অসৎ সবাই
সমান? সংশোধনবাদী
ও ধ্বংসবাদী
উভয়ে এক?
যালেম ও
মযলূম কি
তাহ’লে
সমান? হত্যাকারী
ও নিহত
ব্যক্তি কি
এক? তিনি
পাগল সৃষ্টি
করেছেন বুদ্ধিমানদের
উপদেশ হাছিলের
জন্য। প্রতিবন্ধী
সৃষ্টি করেছেন
স্বাস্থ্যবানদের পরীক্ষা
গ্রহণের জন্য।
অভাবগ্রস্ত সৃষ্টি
করেছেন সম্পদশালীদের
কৈফিয়ত নেওয়ার
জন্য। কেননা
এ পৃথিবীর
সবকিছুর মালিকানা
আল্লাহর। মানুষ
কেবল তাঁর
হুকুম মত
এগুলি ব্যবহারকারী
মাত্র। অতএব
এটা অবশ্যই
আল্লাহ সম্পর্কে
মন্দ ধারণা
এবং তিনি
পৃথিবী খেলাচ্ছলে
বা যুলুম
বশতঃ সৃষ্টি
করেছেন বলে
মিথ্যা অপবাদ
মাত্র। যেখানে
দুনিয়ার রাজা-বাদশাহদের
সম্পর্কে এরূপ
কথা বলা
যায় না,
সেখানে রাজাধিরাজ
আল্লাহ সম্পর্কে
কিভাবে এরূপ
কথা বলা
যায়? সেকারণ
ক্বিয়ামতের দিন
আল্লাহ বলবেন,أَفَحَسِبْتُمْ
أَنَّمَا خَلَقْنَاكُمْ
عَبَثًا وَأَنَّكُمْ
إِلَيْنَا لاَ
تُرْجَعُونَ- فَتَعَالَى
اللهُ الْمَلِكُ
الْحَقُّ لاَ
إِلَهَ إِلاَّ
هُوَ رَبُّ
الْعَرْشِ الْكَرِيمِ-
‘তোমরা কি
ভেবেছিলে যে,
আমরা তোমাদেরকে
বৃথা সৃষ্টি
করেছি এবং
তোমরা আমাদের
কাছে ফিরে
আসবে না?’
‘অতএব মহামহিম
আল্লাহ যিনি
যথার্থ অধিপতি।
তিনি ব্যতীত
কোন উপাস্য
নেই। তিনি
মহান আরশের
মালিক’ (মুমিনূন
২৩/১১৫-১৬)।
ইসলাম বিরোধীরা
মুসলিম রাষ্ট্রগুলিতে
বিশৃংখলা, যুলুম,
পশ্চাদপদতা ও
দারিদ্রে্যর অভিযোগ
করে থাকে
এবং ধর্মকে
অস্বীকারকারী মতবাদকে
সংশোধনবাদী, দারিদ্র্য
বিমোচনকারী ও
কুসংস্কারের অন্ধকার
দূরীভূতকারী মতবাদ
বলে প্রচার
করে থাকে।
যার মধ্যে
আমরা এখন
বসবাস করছি।
কিন্তু এজন্য
ধর্মসমূহকে দায়ী
করা একেবারেই
অন্যায়। তাহ’লে
কি ধর্ম
পরিত্যাগের মাধ্যমে
আমাদের অনগ্রসরতা,
যুলুম ও
দারিদ্র্য দূর
হবে? আমেরিকা,
ফ্রান্স, জার্মানী
এবং অন্যান্য
পাশ্চাত্য দেশের
বহু মানুষ
ইসলাম কবুল
করেছে। এতে
তাদের অবস্থা
পাল্টে কি
তারা হতদরিদ্র,
রোগী ও
অনগ্রসর হয়ে
গেছে? ধরে
নিলাম পুরা
মুসলিম জাতি
ধর্ম ত্যাগ
করে পাশ্চাত্যের
অনুসারী হ’ল,
তাহ’লে
কি তাদের
অবস্থার পরিবর্তন
ঘটবে? তাদের
অধোগতি কি
অগ্রগতিতে রূপ
নেবে? তাদের
দারিদ্র্য কি
প্রাচুর্যে পরিণত
হবে? তাদের
উপর যুলুম
কি ন্যায়বিচারে
পরিবর্তিত হবে?
তখন মযলূমদের
পক্ষ হ’তে
কে যালেমদের
কাছ থেকে
তাদের অধিকার
আদায় করে
নিবে? তারা
ন্যায়বিচার না
পেলে কার
কাছে গিয়ে
অভিযোগ পেশ
করবে? আর
কিসের জন্য
অভাবগ্রস্ত, রোগী
ও মযলূম
এ দুনিয়াতে
ধৈর্যধারণ করবে?
যখন সে
জানে যে,
সে সত্বর
মৃত্যুবরণ করবে
এবং (অবিশ্বাসীদের
ধারণা মতে)
সে পরকালে
তার অভাব,
রোগ ও
যুলুমের কোন
প্রতিকার পাবে
না। অথচ
অন্যেরা সম্পদে,
স্বাস্থ্যে ও
শান্তিতে সচ্ছল
অবস্থায় বসবাস
করছে?
ঐসব জাতির
অবস্থা কেমন
হবে যারা
কোন ধর্ম
মানেনা, যা
আল্লাহর সাথে
ভালোবাসার বন্ধনে
আবদ্ধ? যারা
আল্লাহর শাস্তির
ভয় করে
না বা
তাঁর নিকট
থেকে ছওয়াব
আশা করে
না? তখন
কি তাদের
নিকট সব
বস্ত্ত বৈধ
হয়ে যাবে
না? যতদূর
মানুষ গোপনে
আইন বাঁচিয়ে
করতে পারে?
কে তখন
মানুষের জান,
মাল ও
ইযযতের নিরাপত্তার
দায়িত্ব নেবে?
এরূপ সমাজে
কি মিথ্যা,
প্রতারণা, মদ্যপান,
ব্যভিচার বাধাহীন
গতিতে ছড়িয়ে
পড়বে না?
সেখানে মানুষের
আচরণ বিধি
নিয়ন্ত্রণের কেউ
থাকবে না
কেবল তাদের
মনগড়া আইনটুকু
ব্যতীত। যেখান
থেকে তারা
সহজে গা
বাঁচাতে পারে।
হে নাছারাগণ!
তোমাদের কাছে
আমরা একটি
প্রশ্ন রাখতে
চাই, যারা
নাস্তিক্যবাদের আড়ালে
মুখ লুকিয়ে
আছ। কেননা
বিগত যুগের
ন্যায় এ
যুগের অবিশ্বাসীদের
সাথে শরীক
হয়ে তোমরাও
ইসলামের বিরুদ্ধে
মিথ্যা অপবাদ
দিয়ে থাক।
অথচ তোমরা
ভালভাবেই জানো
যে, পাশ্চাত্যের
উন্নতি তাদের
খৃষ্টধর্মের শিক্ষার
উপরে দন্ডায়মান
নয়। যদি
তাই হ’ত,
তাহ’লে
আফ্রিকার দেশগুলিতে
বহু মানুষ
খৃষ্টান হওয়া
সত্ত্বেও তারা
পশ্চাদপদ অবস্থায়
রয়েছে। বরং
এটা তোমরা
ভালভাবেই জানো
যে, পাশ্চাত্য
সভ্যতা দাঁড়িয়ে
আছে ইসলামী
সভ্যতার উপর।
যারা মুসলমানদের
জ্ঞান-বিজ্ঞান
চুরি করেছে।
তাদের রক্ত
শোষণ করেছে
ও তাদের
সম্পদসমূহ লুট
করেছে। যেমন
তোমরা জানো
যে মুসলিম
রাষ্ট্রগুলির উপর
যেসব বিপদ
আপতিত হয়েছে,
সবই ঐসব
দেশে সাম্রাজ্যবাদীদের
অব্যাহত যুলুমের
কারণে এবং
ইসলামী খেলাফত
ধ্বংস হওয়ার
কারণে। সেই
সাথে ইসলামী
খেলাফতকে টুকরা
টুকরা করে
ভাগ-বাটোয়ারা
করে নেওয়ার
কারণে। আর
চিন্তাশীল মাত্রই
জানেন যে,
মুসলিমদের অধিকাংশ
তাদের দ্বীনের
যথাযথ অনুসারী
নয়। আর
এটাই হ’ল
তাদের অধঃপতনের
মূল কারণ।
অতএব যদি
তোমাদের কথা
সঠিক হ’ত
যে, ইসলামই
অনগ্রসরতা, রোগ-পীড়া
ও দারিদ্রে্যর
মূল কারণ,
তাহ’লে
তো তাদের
অবস্থা আরও
উন্নত হওয়ার
কথা তাদের
ধর্ম থেকে
দূরে থাকার
কারণে? তাই
নয় কি?
চুরি-ডাকাতি
ও খুনের
মত বড়
বড় পাপগুলি
ঐসব দেশে
বেশী হয়,
যারা ইসলাম
কবুল করেনি
অথবা যারা
ইসলামের অনুশাসন
মানে না।
এমনকি আমেরিকা
(যারা সেরা
ধনী রাষ্ট্র
বলে পরিচিত)
পৃথিবীতে গাড়ী
দুর্ঘটনায় শীর্ষে
অবস্থান করছে
তাদের মদ্যপানের
কারণে। সারা
বিশ্বে সন্ত্রাস
ও রক্তপাত
ছড়িয়ে দেওয়ার
জন্য তাদেরকেই
সবচেয়ে বেশী
দায়ী করা
হয়। বরং
এটাই প্রমাণিত
সত্য যে,
‘দারিদ্র্য মানুষকে
অপরাধপ্রবণ বানায়’
কথাটি ভিত্তিহীন
ও ডাহা
মিথ্যা। আন্তর্জাতিক
পুলিশ কমিশনের
রিপোর্ট অনুযায়ী
১৯৫২ সালে
ভারতে এক
লক্ষ মানুষের
মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য
অপরাধের সংখ্যা
ছিল ১৬৫।
অথচ সেসময়
গ্রেট বৃটেনে
সমসংখ্যক লোকদের
মধ্যে অনুরূপ
অপরাধের সংখ্যা
ছিল ১৩২২’ (মহাসত্যের
সন্ধানে ৪৬
পৃ.)।
বর্তমানের অবস্থা
তো আরও
করুণ!
অতএব হে
সভ্যতাগর্বীরা! তোমাদের
রবের দোহাই
দিয়ে আমাদের
জানাও, তোমরা
কি পড়েছ
বা শুনেছ
কোন আয়াত
বা হাদীছ
বা কোন
ফিক্বহী রায়,
যা উৎসাহ
দিয়েছে বিজ্ঞানের
বিরুদ্ধে এবং
রোগের চিকিৎসা
ও তা
প্রতিরোধের বিরুদ্ধে?
অথবা হুকুম
দিয়েছে যুলুম,
জবরদখল ও
প্রভুত্ব কায়েমের
জন্য? অথবা
হালাল রূযী
উপার্জনের চেষ্টার
বিরুদ্ধে? ইসলামের
দিকে সম্পর্কিত
কিছু লোক
যারা যালেম,
স্বৈরাচারী ও
গরীবের অংশ
ভক্ষণকারী, ইসলামের
বিধানসমূহের প্রতি
তাদের আনুগত্য
পরিমাপ করুন!
বহু মুসলমান,
যারা যুলুম,
ফাসাদ, ঘুষ,
হত্যা, চুরি-ডাকাতি
ইত্যাদি নোংরা
কাজে লিপ্ত,
দ্বীন থেকে
তাদের দূরত্ব
পরিমাপ করুন!
তোমরা কি
ভুলে গেছ
যে, ইতিপূর্বে
যখন বিজ্ঞান
ও গীর্জার
মধ্যে মুখোমুখি
অবস্থা ছিল,
তখন খৃষ্টানরা
অনেক বিজ্ঞানীকে
হত্যা করেছিল।
এমনকি তারা
আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞানের
জনক বলে
খ্যাত গ্যালিলিও
(১৫৬৪-১৬৪২
খৃ.) সম্পর্কে
বলেছিল, যখন
তিনি তাঁর
আবিষ্কৃত টেলিস্কোপ
যন্ত্রটিকে আরও
উন্নত করলেন
এবং পৃথিবী
থেকে সৌরলোকে
প্রথমবারের মতো
অনেক নতুন
জিনিস তিনি
দেখতে পেলেন
যা এর
আগে আর
কারো চোখে
ধরা পড়েনি।
তিনি সূর্যের
চারপাশে কয়েকটি
বিন্দুর আবর্তন
দেখে নিশ্চিত
হ’লেন
যে, কোপার্নিকাসের
(১৪৭৩-১৫৪৩
খৃ.) তত্ত্বই
সঠিক ছিল
যে, পৃথিবী
সূর্যের চারপাশে
ঘুরছে। তাঁর
এ গবেষণাটি
প্রকাশ করার
জন্য বহুবার
তিনি রোমে
গেলেন পোপের
অনুমতি নিতে।
শেষ পর্যন্ত
১৬২৪ সালে
পোপের কাছ
থেকে অনুমতিও
পেলেন। কিন্তু
এই গবেষণাটি
ছিল মিসরীয়
বিজ্ঞানী টলেমীর
(৯৮-১৬৮
খৃ.) ‘সূর্য
পৃথিবীর চারপাশে
ঘোরে’ মতবাদের
বিরোধী। ফলে
১৬৩২ সালে
তাঁর উক্ত
গবেষণা প্রকাশিত
হওয়ার সাথে
সাথে সারা
ইউরোপে হৈ
চৈ পড়ে
যায়। অতঃপর
তাঁকে ধর্ম
বিরোধী আখ্যায়িত
করে গ্রেফতার
করা হয়।
এরপর জীবনের
শেষ চার
বছর নিজ
বাড়ীতে অন্তরীণ
ও নিঃসঙ্গ
অবস্থায় এই
মহাবিজ্ঞানী অন্ধ
হয়ে মৃত্যুবরণ
করেন। তাঁর
উপরে এমন
অপবাদও দেওয়া
হয় যে,
তিনি নাকি
চান যে,
তাঁর আবিষ্কৃত
টেলিস্কোপ দিয়ে
তিনি আল্লাহকে
দেখবেন’।
এরপর ফরাসী
বিপ্লব সংঘটিত
হয়। যা
বিজ্ঞান ও
বিজ্ঞানীদের উপর
গীর্জার প্রাধান্য
শেষ করে
দেয়।
এর বিপরীতে
ইসলামে জ্ঞান-বিজ্ঞান
শিক্ষার প্রতি
ব্যাপকভাবে উৎসাহিত
করা হয়েছে।
যেমন মহান
আল্লাহ স্বীয়
নবীকে অধিক
জ্ঞান অর্জনের
জন্য প্রার্থনা
করার নির্দেশ
দিয়ে বলেন,
رَبِّ زِدْنِي
عِلْمًا ‘হে
আল্লাহ! তুমি
আমার জ্ঞান
বৃদ্ধি কর’ (ত্বোয়াহা
২০/১১৪)।
কুরআনের প্রথম
আয়াতই নাযিল
হয়েছে ‘তুমি
পড়’ বলে।
যেমন আল্লাহ
বলেন,اقْرَأْ
بِاسْمِ رَبِّكَ
الَّذِي خَلَقَ،
خَلَقَ الْإِنْسَانَ
مِنْ عَلَقٍ،
اقْرَأْ وَرَبُّكَ
الْأَكْرَمُ، الَّذِي
عَلَّمَ بِالْقَلَمِ،
عَلَّمَ الْإِنْسَانَ
مَا لَمْ
يَعْلَمْ- ‘পড়
তোমার প্রভুর
নামে যিনি
সৃষ্টি করেছেন’।
‘সৃষ্টি করেছেন
মানুষকে জমাট
রক্তপিন্ড হ’তে’।
‘পড়। আর
তোমার পালনকর্তা
বড়ই দয়ালু’।
‘যিনি কলমের
মাধ্যমে শিক্ষা
দান করেছেন’।
‘শিক্ষা দিয়েছেন
মানুষকে যা
সে জানতো
না’ (‘আলাক্ব
৯৬/১-৫)।
এছাড়াও বহু
আয়াত ও
হাদীছ রয়েছে,
যেখানে ইলম,
আমল, রোগ
প্রতিরোধ, চিকিৎসা,
হালাল উপার্জন
ইত্যাদি সম্পর্কে
বর্ণিত হয়েছে।
…
উদাহরণ স্বরূপ
আল্লাহ বলেন,قُلْ
سِيرُوا فِي
الْأَرْضِ فَانْظُرُوا
كَيْفَ بَدَأَ
الْخَلْقَ ثُمَّ
اللهُ يُنْشِئُ
النَّشْأَةَ الْآخِرَةَ
إِنَّ اللهَ
عَلَى كُلِّ
شَيْءٍ قَدِيرٌ-
‘বল, তোমরা
পৃথিবীতে ভ্রমণ
কর। অতঃপর
দেখ কিভাবে
তিনি সৃষ্টিকর্ম
শুরু করেছেন।
অতঃপর আল্লাহ
পরবর্তী সৃষ্টি
করবেন। নিশ্চয়ই
আল্লাহ সকল
বস্ত্তর উপরে
ক্ষমতাশালী’ (আনকাবূত
২৯/২০)।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)
বলেছেন, তোমাদের
কেউ সকালে
রশি নিয়ে
পাহাড়ের দিকে
বেরিয়ে যাক,
অতঃপর কাঠ
কুড়িয়ে এনে
বিক্রি করুক
এবং তা
থেকে সে
ভক্ষণ করুক
ও ছাদাক্বা
করুক, সেটাই
তার জন্য
উত্তম হবে
মানুষের কাছে
চাওয়া থেকে’ (ছহীহুল
জামে‘ হা/৫০৪০)।
এ ধরনের
বহু আয়াত
ও হাদীছ
বর্ণিত হয়েছে।
কিন্তু অবিশ্বাসী
বা মিথ্যাবাদীরা
কি এসব
কথা শুনতে
পায়? যাদের
চোখ থাকতেও
চোখ নেই,
কান থাকতেও
কান নেই,
হৃদয় থাকতেও
বুঝ নেই-
এরা তো
আল্লাহর ভাষায়
চতুষ্পদ জন্তু
বা তার
চাইতে অধম (আ‘রাফ
৭/১৭৯)।
অতএব ‘ধ্বংস
হৌক কল্পনার
অনুসারীরা। যারা
তাদের অজ্ঞতায়
বেহুঁশ’।
‘যারা তাচ্ছিল্যভরে
জিজ্ঞেস করে
বিচার দিবস
কবে হবে’?
‘হ্যাঁ, সেটা
সেদিন হবে,
যেদিন তাদের
আগুনে ঝলসানো
হবে’ (যারিয়াত
৫১/১০-১৩)।
অতএব হে
স্বপ্নচারীরা ‘তোমরা
দৌড়াও আল্লাহর
দিকে… এবং
তোমরা আল্লাহর
সাথে কাউকে
শরীক করো
না… (যারিয়াত
৫১/৫০-৫১)।
মনে রেখ
‘ক্বিয়ামত আসবেই’।
‘তাকে ঠেকানোর
ক্ষমতা কারু
নেই’ (তূর
৫২/৭-৮)।
‘সেদিন অবিশ্বাসীদের
জাহান্নামের দিকে
ধাক্কিয়ে নেওয়া
হবে এবং
বলা হবে
এটাই হ’ল
সেই আগুন
যাকে তোমরা
মিথ্যা বলতে’।
‘এখন বল,
এটা কি
জাদু না
বাস্তব? নাকি
তোমরা দেখতে
পাচ্ছ না’!
‘এতে প্রবেশ
কর। অতঃপর
ধৈর্য ধর
বা না
ধর দু’টিই
সমান। (দুনিয়ায়)
তোমরা যা
করতে এটা
তারই প্রতিফল’ (তূর
৫২/১৩-১৬)।
আল্লাহ বলেন,
তারা ভাবছে
সেটা অনেক
দূরে। অথচ
আমরা দেখছি
ওটা অতীব
নিকটে’ (মা‘আরেজ
৭০/৬-৭)।
হ্যাঁ! মৃত্যু
যেকোন সময়
তোমাকে ধরে
ফেলবে। তোমার
রূহটা বেরিয়ে
যাবে। আর
তখনই শুরু
হবে তোমার
অবিশ্বাসের শাস্তি।
দুনিয়ায় যত
অন্যায় কর্মের
মন্দ প্রতিফল’ (তূর
৫২/১৬)।
কারণ যখনই
বান্দার মৃত্যু
হয়, তখনই
তার ক্বিয়ামত
শুরু হয়ে
যায়।
যারা ধর্ম
মানেন না
তাদের যুক্তি,
বিশ্ব চলে
প্রকৃতির নিয়মে।
অথচ প্রকৃতি
একটা বাস্তব
বিষয়। এটা
তো কোন
ব্যাখ্যা নয়।
যেমন বৈশাখে
কাঠফাটা রোদে
অনেকে বলেন,
প্রকৃতি রূদ্র
রূপ ধারণ
করেছে। কিন্তু
প্রকৃতি কার
হুকুমে ও
কার বিধান
মতে চলছে,
তার উত্তর
কোথায়? দূর
থেকে চলন্ত
রেলগাড়ী দেখে
যদি কেউ
দাবী করে
যে, রেলগাড়ীটা
প্রাকৃতিক নিয়মে
চলছে। এর
কোন চালক
নেই। তখন
ব্যাপারটা কেমন
হবে? যদি
কেউ বলে
ডিমে তা
দিলে ২১
দিনে বাচ্চা
ফুটে বেরিয়ে
আসে। এটাই
প্রাকৃতিক নিয়ম।
অথচ খোসার
মধ্যে ডিমের
মরা কুসুমটাকে
জীবন্ত বাচ্চায়
পরিণত করে
কে? কোন
ছিদ্র না
থাকা সাত্ত্বেও
খোসার ভিতরে
বাচ্চাটি আলো-বাতাস
পেল কিভাবে।
কে ওর
দেহে পুষ্টি
এনে দিল?
অতঃপর সে
বড় হয়ে
নিজে নিজে
কিভাবে খোসা
ভেঙে বেরিয়ে
এল? কে
তাকে তার
মা চিনিয়ে
দিল? এক্ষণে
রেলগাড়ীর জন্য
যখন আপনি
চালককে অস্বীকার
করেন না,
তখন ডিম
ফোটা বাচ্চার
জন্য আপনি
কেন আল্লাহকে
স্বীকার করতে
পারেন না?
আপনি দৈনিক
নদীতে জোয়ার-ভাটা
দেখছেন, আপনি
বলবেন, ওটা
তো চাঁদের
আকর্ষণে হয়ে
থাকে। কিন্তু
নদী ও
চাঁদ এ
দু’য়ের
মধ্যে আকর্ষণ
সৃষ্টি হ’ল
কিভাবে? দু’লক্ষ
চল্লিশ হাযার
মাইল দূরত্বে
এই আকর্ষণ
কে সৃষ্টি
করল, তার
জবাব কি?
ধার্মিকরা বলেন,
আল্লাহ। কিন্তু
নাস্তিক-বস্ত্তবাদীরা
কি বলবেন?
নিশ্চয়ই তাদের
কোন জবাব
নেই, স্রেফ
হঠকারিতা ব্যতীত।
প্রকৃতির সর্বত্র
একটা সুনির্দিষ্ট
নিয়ম-রীতি
রয়েছে, যা
অপরিবর্তনীয়। সূর্য
পূর্বদিকে ওঠে
ও পশ্চিমে
ডোবে। পিছে
পিছে দিন-রাত্রির
আগমন-নির্গমন
ঘটে। কেউ
কাউকে ধরতে
পারে না।
কিন্তু কে
এইসব সৃষ্টিকে
নিয়মবদ্ধ করল?
প্রাণহীন প্রকৃতির
মধ্যে এই
ধর্ম কে
সৃষ্টি করল?
জড়জগতে ধর্ম
থাকলে মানবজগতে
কেন থাকবে
না? মানুষের
দেহ ধর্ম
মেনে চলে।
তার শৈশব,
কৈশোর, যৌবন,
পৌঢ়ত্ব, বার্ধক্য
সবই সেই
ধর্মের অধীনস্ত।
কেবল তার
জ্ঞানজগতটা স্বাধীন।
তাই সে
ধর্মকে অস্বীকার
করে। আর
এখানেই তার
জ্ঞানের পরীক্ষা
হয়।
আমরা সর্বদা
মানবিক মূল্যবোধের
কথা বলি।
কেননা সেটা
ব্যতীত সমাজ
অচল। সেই
মূল্যবোধ রক্ষার
জন্য দিনের
পর দিন
নতুন নতুন
আইন তৈরী
হচ্ছে। সরকার
পদ্ধতির পরিবর্তন
হচ্ছে। জনপ্রতিনিধিত্বমূলক
শাসন চলছে।
কিন্তু সবই
প্রহসনে পরিণত
হচ্ছে। একটা
কারখানাকে একটা
সুইচ টিপলেই
সচল করা
যায়। কিন্তু
একজন মানুষকে
তা করা
যায় না।
কেননা মানুষ
তার স্বাধীন
চিন্তায় চলে।
সেজন্য চাই
একটি প্রেরণা।
যা তার
মূল্যবোধকে ধরে
রাখবে ও
উজ্জীবিত করবে।
আর সেটাই
হ’ল
ধর্ম। সে
ধর্ম যদি
আল্লাহ প্রেরিত
হয় এবং
সে যদি
তার যথার্থ
অনুসারী হয়,
তাহ’লে
সে হয়
সবচেয়ে সুন্দর
মানুষ। সমাজ
ও সভ্যতা,
মানুষ ও
পশু-পক্ষী
সবাই তার
কাছে নিরাপদ।
আর যদি
সেটা ধর্মের
নামে অন্যকিছু
হয়, তাহ’লে
তা হয়
মূল্যবোধ বিপর্যয়ের
উৎস। যা
স্রেফ ক্ষতির
কারণ হয়।
অতএব শাস্তি
দিয়ে বা
নিজেদের মনগড়া
আইন দিয়ে
মূল্যবোধ রক্ষা
করা যায়
না। বরং
প্রকৃত আল্লাহভীতি
ও আল্লাহর
বিধানের যথার্থ
অনুসৃতির মাধ্যমেই
কেবল মানবিক
মূল্যবোধ রক্ষিত
হ’তে
পারে। যেভাবে
প্রাকৃতিক বিধান
যথাযথভাবে রক্ষিত
হয়ে চলেছে।
লেনিন ধর্মের
প্রতি বিদ্রূপ
করে বলেছিলেন,
‘আমাদের মতে
আকাশ মার্গে
স্বর্গ রচনার
পরিবর্তে পৃথিবীর
বুকে স্বর্গ
রচনাই অধিক
গুরুত্বপূর্ণ কাজ’।
কিন্তু দীর্ঘদিনের
অভিজ্ঞতা প্রমাণ
করে দিয়েছে
যে, ধুলির
ধরণীতে ‘স্বর্গ
রচনা’ কেবল
তাদের পক্ষেই
সম্ভব, যারা
নিজেদেরকে আকাশমন্ডলে
স্বর্গ রচনার
যোগ্য করে
গড়ে তোলে।
আর ‘আকাশমন্ডলে
স্বর্গ রচনা
যাদের লক্ষ্য
নয়, তারা
‘ঊর্ধ্বে গগন
আর নিম্নে
ধরণীতল’ কোথাও
স্বর্গ রচনা
করতে সক্ষম
হয় না।
বরং তারা
সর্বত্র কেবল
নরকই রচনা
করে’।
‘আর
এটা নিতান্তই
বাস্তব যে,
পরকালীন জীবনে
শুভ প্রতিফল
লাভের নিশ্চিত
আশায় কোটি
কোটি মানুষ
নিজেদের হৃদয়াবেগের
স্বতঃস্ফূর্ত প্রেরণার
তীব্র তাকীদে
ন্যায়ের পথে
চলেছে এবং
সেখানকার অনন্ত
শাস্তি ও
আযাবের ভয়ে
সকল প্রকার
পাপ ও
অন্যায় থেকে
বিরত রয়েছে।
শুধু তাই
নয়, সত্য
ও ন্যায়ের
আদর্শ প্রতিষ্ঠার
জন্য হাযারো
মানুষ অবলীলাক্রমে
জীবন বিসর্জন
দিয়েছে শুধু
এই প্রেরণায়
যে, এর
প্রতিদান স্বরূপ
তারা পরকালে
আল্লাহর নিকট
অশেষ ছওয়াব
ও উচ্চ
মর্যাদা লাভ
করবে। কিন্তু
বস্ত্তবাদী মতবাদে
বিশ্বাসী ব্যক্তি
ও সমাজ
এ ধরনের
কোন দৃষ্টান্ত
পেশ করতে
পারবে কি?
কখনোই তা
সম্ভব নয়।
দুর্নীতি আর
চরিত্রহীনতার সর্বপ্লাবী
পংকে আকণ্ঠ
নিমজ্জিত এই
সমাজেও ন্যায়ের
পথে অবিচল
হয়ে চলতে
যদি কাউকে
দেখতে পাওয়া
যায়, তাহ’লে
তা যে
সেই প্রাচীন
ধর্মমতেরই প্রভাবের
ফল, তাতে
কোন সন্দেহ
থাকতে পারে
না। কেননা
বস্ত্তবাদ মানুষকে
চরম স্বার্থপর
ও দায়িত্বহীন
করা ছাড়া
আর কিছুই
করতে পারে
না। বস্ত্তবাদের
এই বিষাক্ত
ফল সারা
দুনিয়ার মানুষকে
আজ এক
মারাত্মক বিষে
জর্জরিত করে
তুলেছে। এই
শতকের প্রায়
সব চিন্তাশীল
মানুষই সেজন্যে
উদ্বিগ্ন ও
দুশ্চিন্তাগ্রস্ত।… অতএব
নিছক বিভীষিকা
সৃষ্টিকারী আইন
বা সরকারী
হুমকি-ধমকি,
আর জীবন
মানের উন্নয়ন
ও প্রলোভন
দ্বারা মানুষের
জীবনে সুখ-শান্তি
আনয়ন করা
সম্ভব নয়।
বস্ত্তবাদের লীলাক্ষেত্র
যেসব দেশ,
সেখানকারও বহু
জ্ঞানী ব্যক্তি
আজ এই
মর্মান্তিক সত্য
হাড়ে হাড়ে
অনুভব করছেন’।[5]
অতএব ইহকালীন
সফলতা ও
পরকালীন মুক্তি
কেবল মাত্র
ধর্মের ভিত্তিতেই
সম্ভব।
অতএব মানুষ
কি ভেবেছে
আল্লাহ তাকে
মৃত্যুর পর
জীবিত করতে
সক্ষম নন? (ক্বিয়ামাহ
৭৫/৪০)।
সে কি
ভেবেছে তাকে
সারা জীবনের
কর্মের হিসাব
দিতে হবে
না? সে
কি মনে
করে তাকে
বিনা হিসাবে
এমনিতেই ছেড়ে
দেওয়া হবে? (ক্বিয়ামাহ
৭৫/৩৬)।
আদৌ নয়!
সে এক্সিডেন্ট
বশতঃ দুনিয়াতে
আসেনি। সে
এসেছে মহান
সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর
মহতী পরিকল্পনার
অংশ হিসাবে
এবং তাকে
আল্লাহ নিজ
হাতে সৃষ্টি
করেছেন’ (ছোয়াদ
৩৮/৭৫)।
আর তার
জন্যই সৃষ্টি
করেছেন নভোমন্ডল
ও ভূমন্ডলের
সবকিছু (বাক্বারাহ
২/২৯)।
সবকিছুকেই তিনি
মানুষের অনুগত
করে দিয়েছেন (লোকমান
৩১/২০)।
আর তাকে
করেছেন সৃষ্টির
সেরা (বনু
ইস্রাঈল ১৭/৭০)।
অতএব মানুষ
এক্সিডেন্টের সৃষ্টি
নয়। সে
মুক্তকচ্ছ ভবঘুরে
নয়। তাকে
তার সৃষ্টিকর্তার
কাছে ফিরে
যেতে হবে
এবং সেখানে
যালেম তার
শাস্তি পাবে
ও মযলূম
তার যথার্থ
প্রতিদান পাবে।
অতএব মিথ্যার
মরীচিকা থেকে
হে অবিশ্বাসী
ও কপট
বিশ্বাসীরা ফিরে
এস বিশ্বাসের
আলোকোজ্জ্বল রাজপথে।
আল্লাহ আমাদের
সুপথ প্রদর্শন
করুন- আমীন!
[1]. আল-কুরআন
দ্য চ্যালেঞ্জ
(মহাকাশ পর্ব-১)
পৃ. ২৭৭-৮০।
[2]. মুসলিম
হা/১৩৪
(২১৩) ‘ঈমান’
অধ্যায়।
[3]. আবুদাঊদ
হা/৪৭২২;
মিশকাত হা/৭৫
‘ওয়াসওয়াসা’ অনুচ্ছেদ;
ছহীহাহ হা/১১৮।
[4]. মুসলিম
হা/১৩২
‘ঈমান’ অধ্যায়।
[5]. মাওলানা আব্দুর রহীম, মহাসত্যের সন্ধানে পৃ. ৫০-৫১।
No comments