সূরা ফাতিহার ফযীলত ও বৈশিষ্ট্য
ভূমিকা :
আল-কুরআন আল্লাহ্র বাণী, যা জিবরাঈল (আঃ) মারফত সুদীর্ঘ ২৩ বছরে আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর প্রতি অবতীর্ণ হয়। আল-কুরআনকে আল্লাহ রাববুল আলামীন সকল মানুষের সার্বিক কল্যাণ ও মুক্তির দিশারী বা পথপ্রদর্শক রূপে নাযিল করেছেন। আল-কুরআনের ভূমিকা হ’ল সূরাতুল ফাতিহা। এটিকে আবার আল-কুরআনের সারসংক্ষেপও বলা হয়। তাই সূরা ফাতিহা পবিত্র কুরআনের একটি গুরুত্বপূর্ণ সূরা। আলোচ্য নিবন্ধে এ সূরার ফযীলত ও বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আলোচনা করা হ’ল।-
সূরা আল-ফাতিহার নামকরণ : পবিত্র কুরআনের সূরাগুলোর নামকরণ আল্লাহ তা‘আলার নির্দেশিত বিষয়। মূলত এ নামগুলো গোটা সূরার নিদর্শন বা প্রতীক মাত্র। পবিত্র কুরআনের সূরাগুলোকে সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রেক্ষাপটে এবং এক সূরাকে অন্য সূরা থেকে পৃথককরণের লক্ষ্যে একটি বিশেষ নাম দেয়া হয়েছে। সূরা ফাতিহার নামও অনুরূপ একটি। যা আল্লাহ তা‘আলার নির্দেশেই রাখা হয়েছে। সূরা ফাতিহার অনেক নাম রয়েছে, যা নিম্নে আলোচনা করা হ’ল :
ইমাম বুখারী (রহঃ) বলেন, সূরাটির নাম ‘উম্মুল কিতাব’ এজন্য রাখা হয়েছে যে, এই সূরার মাধ্যমেই পবিত্র কুরআনের সংকলনকার্য শুরু করা হয়েছে এবং এই সূরা পাঠের মাধ্যমে ছালাত আদায় করা হয়ে থাকে।[1] সূরা ফাতিহাকে উম্মুল কুরআন এজন্য বলা হয়েছে যে, এটা দিয়েই কুরআন শুরু হয়েছে এবং এর মধ্যে সমস্ত ইল্ম শামিল রয়েছে’ (কুরতুবী)। ‘ফাতিহাতুল কিতাব’ ‘উম্মুল কুরআন’ ‘আস-সাব‘উল মাছানী’সহ এই সূরার অন্যূন ৩০টি নাম পবিত্র কুরআন ও বিভিন্ন হাদীছে ছহীহ ও মুরসাল সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। যেমন- ফাতিহাহ্, ফাতিহাতুল কিতাব, ফাতিহাতুল কুরআন, উম্মুল কিতাব, উম্মুল কুরআন, আসাসুল কুরআন, সূরাতুল হাম্দ, শুক্র, কাফিয়াহ, ওয়াফিয়াহ, আস-সাব‘উল মাছানী, মিন্নাহ, দু‘আ, আল-কুরআনুল ‘আযীম[2],
সাওয়াল, মুনাজাত, তাফভীয, মাসআলাহ, শিফা, শা-ফিয়াহ[3],
রুক্বিয়াহ, রা-ক্বিয়াহ, ছালাত, কান্য, নূর, ওয়াক্বিয়াহ, আল-হাম্দুলিল্লাহ, ইল্মুল ইয়াক্বীন, সূরাতুল হাম্দিল ঊলা, সূরাতুল হাম্দিল কুছরা। উল্লেখ্য, ছহীহ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত সূরা ফাতিহার নাম সমূহ হচ্ছে- (১) সূরাতুল হামদ (২) উম্মুল কুরআন (৩) উম্মুল কিতাব (৪) আস-সাব‘উল মাছানী (৫) সূরাতুছ ছালাত (৬) আল-কুরআনুল আযীম (৭) সূরাতুল ফাতিহা (৮) সূরাতুর রুকইয়া।[4] প্রকাশ থাকে যে, পবিত্র কুরআনের সূরা সমূহের এক বা একাধিক নামকরণ, মাক্কী ও মাদানী সূরার আগে পিছে সংযোজন ও আয়াত সমূহের বিন্যস্তকরণ সবকিছু ‘তাওক্বীফী’ অর্থাৎ আল্লাহ্র ‘অহি’ কর্তৃক প্রত্যাদিষ্ট ও রাসূল (ছাঃ) কর্তৃক সন্নিবেশিত, যা অপরিবর্তনীয়।[5]
সূরা ফাতিহার বৈশিষ্ট্য :
সূরা আল-ফাতিহা
কুরআনের একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ সূরা। প্রথমত এ সূরা দ্বারাই পবিত্র কুরআন মাজীদ আরম্ভ হয়েছে এবং এ সূরা দ্বারাই সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত ছালাত আরম্ভ হয়। অবতরণের দিক দিয়ে পূর্ণাঙ্গ সূরারূপে এটিই প্রথম নাযিল হয়। সূরা আলাক্ব, মুযযাম্মিল ও সূরা মুদ্দাছছিরের ক’টি আয়াত অবশ্য সূরা ফাতিহার পূর্বে অবতীর্ণ হয়েছে। কিন্তু পূর্ণাঙ্গ সূরারূপে এ সূরার অবতরণই সর্বপ্রথম।
কুরআনের অবশিষ্ট সূরাগুলো প্রকারান্তরে সূরা ফাতিহারই বিস্তারিত ব্যাখ্যা। কারণ সমগ্র কুরআন প্রধানতঃ ঈমান এবং নেক আমলের আলোচনাতেই কেন্দ্রীভূত। আর এ দু’টি মূলনীতিই এ সূরায় সংক্ষিপ্তাকারে বর্ণনা করা হয়েছে। তাই এ সূরাকে ছহীহ হাদীছে উম্মুল কুরআন, উম্মুল কিতাব, কুরআনে আযীম বলেও অভিহিত করা হয়েছে’।[6] এ সূরার আরো কিছু বৈশিষ্ট্য নিম্নে পেশ করা হ’ল।-
(১) এই সূরা কুরআনের সর্বাধিক মর্যাদামন্ডিত সূরা। তাওরাত, যবূর, ইনজীল, কুরআন কোন কিতাবে এই সূরার তুলনীয় কোন সূরা নেই।[7]
(২) এই সূরা এবং সূরায়ে বাক্বারাহ্র শেষ তিনটি আয়াত হ’ল আল্লাহ্র পক্ষ হ’তে প্রেরিত বিশেষ নূর, যা ইতিপূর্বে কোন নবীকে দেওয়া হয়নি।[8]
(৩) যে ব্যক্তি ছালাতের মধ্যে সূরা ফাতিহা পাঠ করল না, তার ছালাত অপূর্ণাঙ্গ (خِدَاجٌ)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এই কথাটি তিনবার বলেন। রাবী হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হ’ল, যখন আমরা ইমামের পিছনে থাকি? জওয়াবে তিনি বলেন, ‘তুমি তখন ওটা চুপে চুপে পড়’।[9] ইবনু কাছীর (রহঃ) বলেন, ‘এই সূরার নাম ‘ছালাত’ (الصلاة) বলা হয়েছে একারণে যে, ছালাতের জন্য এটি পাঠ করা শর্ত’ (ঐ, তাফসীর)।
(৪) আবু সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, একদা এক সফরে আমাদের এক সাথী জনৈক গোত্রপতিকে শুধুমাত্র সূরায়ে ফাতিহা পড়ে ফুঁক দিয়ে সাপের বিষ ঝাড়েন ও তিনি সুস্থ হন…[10] এজন্য এ সূরাকে রাসূল (ছাঃ) ‘রুক্বইয়াহ’ (الرُّقْيَةُ) বলেছেন।[11]
(৫) ইমাম আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মাদ বিন আহমাদ আল-কুরতুবী (মৃঃ ৬৭১হিঃ) বলেন, সূরায়ে ফাতিহাতে যে সকল ‘ছিফাত’ রয়েছে, তা অন্য কোথাও নেই। এমনকি একেই ‘আল-কুরআনুল আযীম’ বা মহান কুরআন বলা হয়েছে (হিজর ১৫/৮৭)।
এই সূরার ২৫টি কালেমা কুরআনের যাবতীয় ইল্মকে শামিল করে। এই সূরার বিশেষ মর্যাদা এই যে, আল্লাহ এটিকে নিজের ও নিজের বান্দার মধ্যে ভাগ করে নিয়েছেন। একে বাদ দিয়ে আল্লাহ্র নৈকট্য লাভ করা সম্ভব নয়। সেজন্যই একে ‘উম্মুল কুরআন’ বা ‘কুরআনের সারবস্ত্ত’ বলা হয়েছে। পবিত্র কুরআন মূলতঃ তিনটি বিষয়ে বিভক্ত। তাওহীদ, আহকাম ও নছীহত। সূরায়ে ইখলাছে ‘তাওহীদ’ পূর্ণাঙ্গভাবে থাকার কারণে তা কুরআনের এক তৃতীয়াংশের মর্যাদা পেয়েছে। কিন্তু সূরায়ে ফাতিহাতে তিনটি বিষয় একত্রে থাকার কারণে তা ‘উম্মুল কুরআন’ হওয়ার মহত্তম মর্যাদা লাভে ধন্য হয়েছে।[12]
সূরা ফাতিহার ফযীলত :
এ সূরার ফযীলত অপরিসীম। এর ফযীলত সম্পর্কে অনেক হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। তন্মধ্যে কয়েকটি এখানে পেশ করা হ’ল-
(১) উবাই ইবনু কা‘ব (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘আল্লাহ উম্মুল কুরআনের মত তাওরাত ও ইঞ্জীলে কিছু্ নাযিল করেননি। এটিকেই বলা হয়, ‘আস-সাব‘উল মাছানী’ (বারবার পঠিত সাতটি আয়াত), যাকে আমার ও আমার বান্দার মধ্যে বণ্টন করা হয়েছে। আর আমার বান্দার জন্য তাই রয়েছে, সে যা চাইবে’।[13]
(২) সাঈদ ইবনু মু‘আল্লা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি মসজিদে ছালাত আদায় করছিলেন, তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাকে ডাক দিলেন। কিন্তু তিনি তাঁর ডাকে সাড়া দিলেন না। অতঃপর ছালাত শেষে এসে বললাম, হে আল্লাহ্র রাসূল (ছাঃ)! আমি ছালাত আদায় করছিলাম। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, আল্লাহ কি বলেননি, হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের ডাকে সাড়া দাও, যখন তোমাদেরকে ডাকা হয়?’ (আনফাল ২৪)। অতঃপর আমাকে বললেন, মসজিদ থেকে তোমার বের হওয়ার পূর্বেই আমি তোমাকে অবশ্যই কুরআনের সবচেয়ে মহান সূরাটি শিক্ষা দিব। অতঃপর তিনি আমার হাত ধরলেন। যখন তিনি মসজিদ থেকে বের হ’তে চাইলেন, তখন আমি তাকে স্মরণ করিয়ে দিলাম, আপনি কি আমাকে বলেননি যে, তোমাকে আমি কুরআনের সবচেয়ে মহান সূরাটি শিক্ষা দিব? রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, সূরাটি হচ্ছে الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ এটিই সাবউল মাছানী এবং কুরআনুল আযীম যা আমাকে দেয়া হয়েছে’।[14]
(৩) আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি ছালাত আদায় করল, আর সূরা ফাতিহা পড়ল না তার ছালাত অসম্পূর্ণ, কথাটি তিনি তিনবার বলেছেন। ছালাত সম্পূর্ণ নয়। বলা হ’ল, হে আবু হুরায়রা! আমরা কোন কোন সময় ইমামের পিছনে থাকি। তিনি বললেন, আপনি মনে মনে পড়ুন। কারণ আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, আল্লাহ বলেন, আমি ছালাতকে আমার মাঝে ও আমার বান্দার মাঝে ভাগ করে দিয়েছি। অর্ধেক আমার আর অর্ধেক আমার বান্দার। আমার বান্দার জন্য তাই রয়েছে, যা সে চায়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, তোমরা সূরা ফাতিহা পড়। কোন বান্দা যখন বলে, আলহামদুলিল্লাহি রাবিবল আলামীন, তখন আল্লাহ বলেন, আমার বান্দা আমার প্রশংসা করেছে। যখন বলে, আর-রহমা-নির রহীম, তখন আল্লাহ বলেন, আমার বান্দা আমার গুণ বর্ণনা করেছে। বান্দা যখন বলে, মালিকি ইয়াউমিদ্দীন। আল্লাহ বলেন, আমার বান্দা আমার মর্যাদা বর্ণনা করেছেন। বান্দা যখন বলে, إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِيْنُ আল্লাহ বলেন, এ হচ্ছে আমার ও আমার বান্দার মাঝের কথা। আমার বান্দার জন্য তাই রয়েছে, যা সে চায়। বান্দা যখন বলে, اهْدِنَا
الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيْمَ، صِرَاطَ الَّذِيْنَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ غَيْرِ
الْمَغْضُوْبِ عَلَيْهِمْ وَلاَ الضَّالِّيْنَ আল্লাহ বলেন, এসব হচ্ছে আমার বান্দার জন্য। আমার বান্দার জন্য তাই রয়েছে, যা সে চায়’।[15]
(৪) ইবনু আববাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, নবী করীম (ছাঃ)-এর ছাহাবীগণের এক দল এক পানির কূপওয়ালাদের নিকট পৌঁছলেন, যাদের একজনকে বিচ্ছু অথবা সাপে দংশন করেছিল। কূপওয়ালাদের এক ব্যক্তি এসে বলল, আপনাদের মধ্যে কোন মন্ত্র জানা লোক আছে কি? এ পানির ধারে বিচ্ছু বা সাপে দংশন করা একজন লোক আছে। ছাহাবীগণের মধ্যে একজন (আবু সাঈদ খুদরী) গেলেন এবং কতক ভেড়ার বিনিময়ে তার উপর সূরা ফাতিহা পড়ে ফুঁক দিলেন। এতে সে ভাল হয়ে গেল এবং তিনি ভেড়াগুলি নিয়ে সাথীদের নিকট আসলেন। তারা এটা অপসন্দ করল এবং বলতে লাগল, আপনি কি আল্লাহ্র কিতাবের বিনিময় গ্রহণ করলেন? অবশেষে তারা মদীনায় পৌঁছে বললেন, হে আল্লাহ্র রাসূল (ছাঃ)! তিনি আল্লাহ্র কিতাবের বিনিময় গ্রহণ করেছেন। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, তোমরা যেসব জিনিসের বিনিময় গ্রহণ করে থাক, তার মধ্যে আল্লাহ্র কিতাব অধিকতর উপযোগী’।[16] অন্য বর্ণনায় আছে নবী করীম (ছাঃ) বললেন, ‘তোমরা ঠিক করেছ। ছাগলের একটি
ভাগ আমার জন্য রাখ’।[17]
(৫) আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ওবাই ইবনু কা‘ব (রাঃ)-এর নিকট গেলেন, এ সময় তিনি ছালাত আদায় করছিলেন। নবী করীম (ছাঃ) বললেন, হে ওবাই! তখন ওবাই (রাঃ) মুখ ফিরালেন, কিন্তু কোন সাড়া দিলেন না। অতঃপর ওবাই (রাঃ) হালকা করে ছালাত আদায় করলেন এবং রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকট ফিরে এসে বললেন, হে আল্লাহ্র রাসূল (ছাঃ)! আস-সালামু আলাইকা। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, ওয়ালাইকাস সালাম। নবী করীম (ছাঃ) বললেন, হে ওবাই! আমি যখন তোমাকে ডাকলাম, আমার ডাকে সাড়া দিতে তোমাকে বাধা দিল কে? ওবাই (রাঃ) বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ (ছাঃ)! আমি ছালাতের মধ্যে ছিলাম। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, কেন আল্লাহ অহী করে তোমাদের যা বলেছেন, তা কি তুমি পড়নি? আল্লাহ বলেন, ‘যখন আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল তোমাদের ডাকেন, তোমরা তাঁদের ডাকে সাড়া দাও’ (আনফাল ২৪)। ওবাই (রাঃ) বললেন, হ্যাঁ হে আল্লাহ্র রাসূল (রাঃ)! আল্লাহ তো এভাবেই বলেছেন, আমি আর কখনও এ কাজ করব না। নবী করীম (ছাঃ) বললেন, আমি কি তোমাদেরকে এমন একটি সূরা শিক্ষা দিব, যা (পূর্বে) কখনও নাযিল হয়নি। তাওরাতে হয়নি, যাবূরে হয়নি, ইঞ্জীলে হয়নি। অনুরূপ ফুরকান তথা কুরআন মাজীদেও নাযিল হয়নি। আমি বললাম, জি হ্যাঁ শিখিয়ে দিন হে আল্লাহ্র রাসূল (ছাঃ)! রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, আমি আশা রাখছি তুমি মসজিদ হ’তে বের হওয়ার পূর্বেই জানতে পারবে। ওবাই (রাঃ) বলেন, তারপর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আমার হাত ধরে হাদীছ বলতে লাগলেন, আর আমি বিলম্ব করছিলাম এই ভয়ে যে, তিনি কথা শেষ হওয়ার পূর্বেই দরজায় পৌঁছে যাবেন। অতঃপর আমরা যখন দরজার নিকট গেলাম, তখন আমি বললাম, হে আল্লাহ্র রাসূল (ছাঃ)! সেই সূরাটি কি যা শিক্ষা দেয়ার ইচ্ছা করেছিলেন? নবী করীম (ছাঃ) বললেন, তুমি ছালাতে কি পড়? ওবাই (রাঃ) বললেন, আমি তার সামনে উম্মুল কুরআন পড়লাম। নবী করীম (ছাঃ) বললেন, যাঁর হাতে আমার প্রাণ রয়েছে, তাঁর কসম! আল্লাহ তা‘আলা সূরা ফাতিহার মত কোন সূরা তাওরাত, যাবূর, ইঞ্জীল ও ফুরকান নামক কোন গ্রন্থে অবতীর্ণ করেননি। নিশ্চয়ই সূরা ফাতিহা হচ্ছে সাবউল মাছানী’।[18]
(৬) ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকট জিবরাঈল (আঃ) ছিলেন, হঠাৎ জিবরাঈল (আঃ) উপর দিকে এক শব্দ শুনতে পেলেন এবং চক্ষু আকাশের দিকে করে বললেন, এ হচ্ছে আকাশের একটি দরজা যা পূর্বে কোনদিন খোলা হয়নি। সে দরজা দিয়ে একজন ফেরেশতা অবতীর্ণ হ’লেন এবং রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকট এসে বললেন, ‘আপনি দু’টি নূরের সুসংবাদ গ্রহণ করুন। যা আপনাকে প্রদান করা হয়েছে। তা আপনার পূর্বে কোন নবীকে প্রদান করা হয়নি। তা হচ্ছে সূরা ফাতিহা এবং সূরা বাক্বারার শেষ দু’আয়াত। তুমি সে দু’টি হ’তে কোন অক্ষর পড়লেই তার প্রতিদান তোমাকে প্রদান করা হবে’।[19]
উপসংহার : সূরা ফাতিহার সর্বাধিক পরিচিত নাম ‘সূরাতুল ফাতিহা’। তারপরও সূরা ফাতিহার স্থান, মর্যাদা, বিষয়বস্ত্ত, ভাবভাষা, প্রতিপাদ্য বিষয় ইত্যাদির প্রতি লক্ষ্য রেখে এর বিভিন্ন নাম দেওয়া হয়েছে এবং প্রত্যেক নামের সাথেই সূরাটির সামঞ্জস্য বিদ্যমান। এই সূরাটির ফযীলত ও গুরুত্ব অপরিসীম। আল্লাহ যেন আমাদের সকলকেই সূরা ফাতিহার প্রতি আমল করে সে অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করার তাওফীক দান করেন। আমীন!
[1]. তাফসীর কুরতুবী
(বৈরুত : দারুল কিতাবিল ‘আরাবী, ১৪২৪ হিঃ/২০০৪ খৃঃ), ১/১৫০।
[2]. আহমাদ হা/৯৭৮৭, সনদ ছহীহ।
[3]. মিশকাত হা/২১৭০, সনদ যঈফ।
[4].
আব্দুস সাত্তার দেহলভী, তাফসীরে সূরায়ে ফাতিহা (করাচী : মাকতাবা আইয়ূবিয়াহ, ৪র্থ সংস্করণ, ১৩৮৫/১৯৬৫), পৃঃ ৬৮-৯২। গৃহীত : ‘খাযীনাতুল আসরার’, ‘আল-ইতক্বান’ ও ‘আদ-দীনুল খালিছ’।
[5].
মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/২০৯৮-৯৯; বুখারী হা/৪৫৩৬; তাফসীর কুরতুবী ১/৬০।
[6]. কুরতুবী ১/১৪৮-৪৯।
[7].
আহমাদ, বুখারী, তিরমিযী, মিশকাত হা/২১৪২।
[8].
মুসলিম হা/৮০৬ অধ্যায়-৬, ‘সূরা ফাতিহার ফযীলত’ অনুচ্ছেদ-৪৩, মিশকাত হা/২১২৪।
[9].
মুসলিম, নাসাঈ, মিশকাত হা/৮২৩।
[10]. বুখারী হা/৫৪০৫।
[11].
বুখারী হা/৫৭৩৬, মুসলিম হা/২২০১ ‘সালাম’ অধ্যায়; তাফসীর কুরতুবী, ইবনু কাছীর।
[12].
তাফসীর কুরতুবী ১/১৪৮-৪৯।
[13]. নাসাঈ হা/৯১৪; আহমাদ; ৮৪৬৭; তিরমিযী হা/৩১২৫; দারেমী হা/৩৩৭৩।
[14]. নাসাঈ হা/৯১৪; আবুদাঊদ হা/১৪৫৮; ইবনু মাজাহ হা/৩৭৮৫; আহমাদ হা/১৫৩০৩; দারেমী হা/১৪৯২।
[15]. মুসলিম হা/৩৯৫; আবুদাঊদ হা/৮২১; তিরমিযী হা/২৯৫৩; ইবনু মাজাহ হা/৮৩৬।
[16]. বুখারী হা/৫৪০৫।
[17]. বুখারী হা/২২৭৬; মুসলিম হা/২২০১।
[18]. তিরমিযী হা/২৮৭৫।
[19]. মুসলিম হা/৮০৬; ইবনু হিববান হা/৭৭৮।
No comments