আমি কি তোমাদের উপরে সাতটি সুদৃঢ় সৃষ্টি করিনি — আন-নাবা

আমি কি তোমাদের উপরে সাতটি সুদৃঢ় সৃষ্টি বানাইনি? একটি উজ্জ্বল প্রদীপ তৈরি করিনি? —আন-নাবা ১২-১৩

আমি কি তোমাদের উপরে কি সাতটি সুদৃঢ় সৃষ্টি বানাইনি?

মহাকাশে এমন সব সৃষ্টি আল্লাহ تعالى তৈরি করে রেখেছেন, যাদের বিশালত্ব আমাদের কল্পনার সীমার বাইরে। আমাদের সূর্য এত বড় যে, এর ভেতরে তের লক্ষ পৃথিবী ঢুকিয়ে দেওয়া যাবে। সূর্য থেকে মাঝে মাঝে আগুনের ফুলকি ছিটকে বের হয়, যেগুলোর একেকটার আকৃতি কয়েক পৃথিবীর সমান। আর সূর্য তেমন কোনো বড় নক্ষত্রও নয়। এমন সব দানবাকৃতির নক্ষত্র মহাবিশ্বে ছড়িয়ে আছে, যাদের ভেতরে দশ কোটি সূর্য এঁটে যাবে। এখন পর্যন্ত জানা সবচেয়ে বড় নক্ষত্রটি পঞ্চাশ কোটি সূর্যের সমান![৪৩৮]

নক্ষত্রই একমাত্র বড় সৃষ্টি নয় মহাবিশ্বের আরও বিশাল সৃষ্টি আছে, যেগুলোর আকৃতি আমাদের চিন্তার সীমা পেরিয়ে যায় কয়েকশ কোটি নক্ষত্র, গ্রহ, লক্ষ নীহারিকা, লক্ষ কৃষ্ণগহ্বর সহ আরও অনেক অজানা সৃষ্টি নিয়ে বিশালাকার এক একটি গ্যালাক্সি তৈরি হয় প্রতিটি গ্যালাক্সি নিজেই যেন একেকটি প্রকাণ্ড সৃষ্টিজগত অথচ, এরকম বিশালাকার গ্যালাক্সি মহাবিশ্বে একটি-দুটি নয়, কয়েকশ কোটি পাওয়া গেছে, যেগুলোর প্রত্যেকটির ভেতরেই সুবিশাল জগত রয়েছে

আল্লাহ تعالى বলছেন এই সাতটি সৃষ্টি হলো شداد শিদাদ, যার অর্থ কঠোর, ভীষণ, দৃঢ়। সুরাহ আত-তাহরিম- ৬৬: জাহান্নামের ফেরেশ্তাদেরকে শিদাদ বলা হয়েছে, কারণ তারা ভীষণ কঠোর সত্তা। তাদের ভেতরে আমাদের জন্য কোনো দয়া-মায়া-সহানুভূতি নেই। মহাকাশে আমাদের মাথার উপরেও যেন এরকম ভীষণ শক্তিশালী, কঠোর সৃষ্টি রয়েছে, যারা যেকোনো সময় আমাদের ধ্বংস করে দিতে পারে

আমরা যদি মহাবিশ্বের দিকে তাকাই, তাহলে আসলেই একটা রণক্ষেত্র দেখতে পাবো। প্রতিদিন বিশালাকৃতির নক্ষত্রগুলো ভীষণ বিস্ফোরণে চৌচির হয়ে আশেপাশের হাজার হাজার গ্রহ ধূলিসাৎ করে দিচ্ছে, অন্যান্য নক্ষত্রকে ভেঙ্গে ফেলছে। অনেক সময় কিছু নক্ষত্র থেকে এমন তীব্র রেডিয়েশন তীরের মতো ছুটে আসে যে, তার সামনে যা- পরে, তা- পুড়ে ছাই হয়ে যায়

মহাকাশে কোটি কোটি কৃষ্ণগহ্বর রয়েছে, যেগুলোর আকর্ষণ বলয়ের মধ্যে কিছু পড়লে তা আর ফিরে আসে না, চিরদিনের জন্য ভেতরে পড়ে হারিয়ে যায় কৃষ্ণগহ্বর প্রতি নিয়ত আস্ত গ্রহ, নক্ষত্র গিলে খেয়ে ফেলছে শুধু তাই না, এরা এতই ভয়ংকর যে, এরা একে অন্যকেও খেয়ে ফেলে আরও বড় হয়ে যায়

বেশিরভাগ গ্যালাক্সির কেন্দ্রে রয়েছে এক প্রকাণ্ড কৃষ্ণগহ্বর এগুলো তার চারপাশ থেকে প্রতি নিয়ত বিপুল পরিমাণের পদার্থ খেয়ে ফেলছে তারপর একসময় এগুলো থেকে প্রচণ্ড বেগে এমন তীব্র বিচ্ছুরণ বেরিয়ে আসে যে, তার উজ্জ্বলতা মহাবিশ্বের সবকিছুর উজ্জ্বলতাকে ম্লান করে মহাবিশ্বের অন্য প্রান্ত থেকেও তা দেখা যায় এই তীব্র বিচ্ছুরণের পথে যা পড়ে, তা- ধ্বংস হয়ে যায় পদার্থ বিজ্ঞানের যাবতীয় সূত্র ভেঙ্গে এগুলো ১০ লক্ষ-কোটি ডিগ্রি কেলভিন তাপমাত্রার রেডিয়েশন মহাশূন্যে ছুড়ে দেয় [৪৩৯]

মঙ্গল এবং বৃহস্পতি গ্রহের মাঝামাঝি কক্ষপথে ১১ থেকে ১৯ লক্ষ গ্রহাণু ঘুরে বেড়াচ্ছে এগুলো মাঝে মধ্যেই একটা আরেকটার সাথে বাড়ি খেয়ে কক্ষচ্যুত হয়ে পৃথিবীর দিকে ভীষণ বেগে ধেয়ে আসে প্রতি বছর প্রায় একশটি গ্রহাণু পৃথিবীর পাশ দিয়ে উড়ে যায় এগুলোর একটাও যদি পৃথিবীতে আছড়ে পড়ে, তাহলে কয়েকটি পারমানবিক বোমার সমান বিস্ফোরণ হবে ২০১৮ সালে এমন এক বিরাট গ্রহাণু পৃথিবীর পাশ দিয়ে চলে গিয়েছিল, যা পৃথিবীতে পড়লে ১৮৫টি হিরোশিমা এটম বোমার সমান বিস্ফোরণ ঘটতো [৪৪০]

আল্লাহ تعالى মহাকাশে ভীষণ সব সৃষ্টি করেছেন, যার ব্যাপকতা ধারণা করা মানুষের মস্তিষ্কের পক্ষে অসম্ভব। মানুষ যত মহাকাশ নিয়ে গবেষণা করে নিত্য নতুন আবিষ্কার করছে, তত মানুষ উপলব্ধি করছে যে, পৃথিবী গ্রহটা এবং এর উপরে থাকা কোটি কোটি মানুষ, মহাবিশ্বের প্রেক্ষাপটে তুচ্ছ একটা ব্যাপার। আমরা নিজেদেরকে যতই গুরুত্বপূর্ণ মনে করি, মহাকাশে আমাদের অস্তিত্ব একটি ধূলিকণার থেকেও নগণ্য

আমি কি একটি উজ্জ্বল প্রদীপ তৈরি করিনি?

প্রতিদিন আকাশে সূর্য উঠে চারিদিক দিনের আলোয় আলোকিত করে, তারপর একসময় তা ডুবে যায়। আকাশে জ্বলতে থাকা শান্ত, স্থির এই উজ্জ্বল আলোর বলটিকে দেখে আপাতত দৃষ্টিতে তেমন জটিল কিছু মনে হয় না। অথচ এই সূর্যের মধ্যে এত জটিলতা এবং হাজারো অজানা রহস্য রয়েছে যে, বিজ্ঞানের কয়েকটি শাখা নিবেদিত হয়েছে শুধুই সূর্য নিয়ে গবেষণা করার জন্য। প্রতি বছর বিলিয়ন ডলার খরচ হচ্ছে সূর্য নিয়ে গবেষণা করে এর রহস্যগুলোকে সমাধান করার চেষ্টায়। কারণ মানবজাতির যাবতীয় ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনীতি, প্রযুক্তি, উন্নয়ন, সমৃদ্ধিসবকিছুই কোনো না কোনোভাবে সূর্যের সাথে জড়িত। সূর্য আছে দেখেই পৃথিবীতে প্রাণের উৎপত্তি হয়েছে এবং প্রতিই মুহূর্তে প্রাণ টিকে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় প্রায় সব শক্তি আসছে সূর্য থেকে

মানুষ বিপুল খরচ করে সবচেয়ে উজ্জ্বল যে বৈদ্যুতিক বাতিটি বানাতে পেরেছে, তা একটা ফুটবল মাঠকে দিনের আলোর মতো আলোকিত করতে পারে। এখনো মানুষের ক্ষমতা হয়নি এমন উজ্জ্বল একটি আলোর উৎস তৈরি করার, যা একটি পুরো শহরকে দিনের আলোর মতো আলোকিত করে রাখতে পারে। অথচ সূর্যের আলোতে শত দেশ, বিশাল সমুদ্র আলোকিত হয়ে যায়। পনেরো কোটি কিলোমিটার দূরে থেকেও সূর্য এই বিপুল পরিমাণের শক্তি সরবরাহ করতে পারে

সূর্য এক ঘণ্টায় পৃথিবীকে যে পরিমাণের শক্তি দেয়, তা পুরো মানবজাতির এক বছরের শক্তি উৎপাদনের সমান। পৃথিবীর সব দেশে যত স্কুল, কলেজ, অফিস, বাড়ি, কারখানা, এসি ইত্যাদি আছে, তা পুরো একবছরে যত শক্তি খরচ করে, সেটা প্রতি এক ঘণ্টায় সূর্য থেকে পৃথিবীতে এসে পৌঁছায়।[৪৮২] এই বিপুল পরিমাণ শক্তি ব্যবহার করে প্রকৃতিতে বিশাল সব প্রক্রিয়া হয়। এই বিপুল শক্তি সমুদ্রের লবণাক্ত পানি ফুটিয়ে বাষ্প করে মেঘ তৈরি, আবহাওয়া পরিবর্তন, পানি চক্র, বায়ু চলাচল, ঝড়, বৃষ্টি, কোটি-কোটি গাছের সালোক সংশ্লেষণ, তার থেকে বেশি সামুদ্রিক জীবের শক্তির যোগান দেওয়া ইত্যাদি হাজারো ঘটনা ঘটায়। সূর্য হচ্ছে পুরো পৃথিবীর বেশিরভাগ প্রাকৃতিক ঘটনা ঘটানোর জন্য প্রয়োজনীয় শক্তির উৎস

আজকে আমাদের মূল যে দুটি জ্বালানির উৎস রয়েছে: তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাস দুটোই ঘুরে ফিরে শেষ পর্যন্ত এসেছে সূর্য থেকে। কারণ মৃত ক্ষুদ্র প্রাণী এবং গাছপালা লক্ষ কোটি বছর ধরে মাটির গভীরে জমতে জমতে এবং মাটির গভীর স্তরের প্রচণ্ড চাপ এবং উত্তাপে প্রক্রিয়া করে প্রাকৃতিক গ্যাস এবং তেল তৈরি করে। এই ক্ষুদ্র প্রাণী এবং গাছপালাগুলো বেঁচে থাকতে সূর্যের শক্তিকে নিজেদের ভেতরে জমা করে রাখত। তারপর তারা মাটির গভীর স্তরে জমে প্রাকৃতিক গ্যাস এবং তেল হয়ে সূর্যের শক্তিকে ভূগর্ভে আটকে ফেলে। তারপর তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাস ভূগর্ভ থেকে বের হয়ে যখন আগুন তৈরি হয়, তখন সেই জমে থাকা সূর্যের শক্তিই তাপ হিসেবে বের হয়ে আসে। আজকে আমরা যেভাবেই আগুন জ্বালাই, তা আসলে কোনো না কোনোভাবে সূর্য থেকে আসা শক্তি

মানবজাতির জন্য যত শক্তি দরকার, তার পুরোটাই আহরণ করা সম্ভব সাহারা মরুভূমির মাত্র % অংশে সৌরকোষ বসিয়ে সৌর শক্তি আহরণ করে। মানুষের আর কাঠ-তেল-গ্যাস-কয়লা বা অন্য কোন ধরনের শক্তির খুব একটা প্রয়োজন হবে না সভ্যতাকে টিকিয়ে রাখার জন্য। শুধুই সৌরশক্তি দিয়ে মানুষের যাবতীয় জ্বালানীর প্রয়োজন মেটানো সম্ভব। সৌরশক্তি হচ্ছে সবচেয়ে নির্মল শক্তির উৎস। এর থেকে প্রায় কোনোই বর্জ্য উৎপন্ন হয় না। তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাস যখন প্রায় শেষ হয়ে যাবে, তখন এই সৌরশক্তিই মানব সভ্যতাকে টিকিয়ে রাখবে। [৪৮৩] [৪৮৪]

সূর্য হচ্ছে একটা প্রকাণ্ড হাইড্রোজেন বোমা, যা এখন পর্যন্ত তৈরি সবচেয়ে শক্তিশালী পারমাণবিক বোমা। অথচ এটি কখনো হঠাৎ করে প্রচণ্ড শক্তি নির্গত করে না, অথবা হঠাৎ করে শক্তি দেওয়া কমিয়ে দেওয়া না। যদি সূর্যের এই নিরবিচ্ছিন্ন একই পরিমাণের শক্তি সরবরাহে এক শতাংশও এদিক-ওদিক হতো, তাহলে প্রকৃতিতে ভয়ংকর সব ঘটনা ঘটতো। একই সাথে, সূর্য হচ্ছে প্রাণের বিকাশের জন্য আদর্শ আকৃতি এবং উজ্জ্বলতার। এটি মহাকাশের অন্যান্য বহু তারার মতো তীব্র উজ্জ্বল নয়, যারা তীব্র রেডিয়েশন দেয়, যা প্রাণ ধ্বংস করে দেয়। আবার এর তীব্রতা অন্যান্য বহু তারার মতো এত কমও নয় যে, তা মানুষের মতো জটিল প্রাণের বিকাশের জন্য যথেষ্ট নয়। একইসাথে এর আকৃতিও মাঝামাঝি: খুব বেশি বড়ও নয়, আবার কমও নয়

সূর্যের নানা রহস্য

সূর্যকে আল্লাহ تعالى ঠিক এমন দূরত্বে রেখেছেন, যেন পৃথিবীর আকাশে এর আকৃতি হুবহু চাঁদের আকৃতির সমান হয়। একারণেই পূর্ণ সূর্য গ্রহণ হতে পারে। এর জন্য কয়েকটি ব্যাপার কাকতালীয়ভাবে মিলে যেতে হয়েছেসূর্যের আকৃতি এবং পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্ব এমন হওয়া, যেন তা চাঁদের আকৃতি এবং পৃথিবী থেকে চাঁদের দূরত্ব-এর একই অনুপাতে হয়। যার কারণে আকাশে চাঁদ এবং সূর্য হুবহু একই আকৃতিতে দেখা যায়, যদিও কিনা সূর্য চাঁদের থেকে শত কোটি গুণ বড়

সূর্যের আরেকটি রহস্য হলো: এর বিভিন্ন স্তরের তাপমাত্রা। সূর্যের কেন্দ্রের তাপমাত্রা প্রায় ২৭ মিলিয়ন ডিগ্রি কেল্ভিন। সেটা হওয়াটা স্বাভাবিক, কারণ সূর্য হচ্ছে একটা প্রকাণ্ড পারমাণবিক চুল্লি। স্বাভাবিকভাবেই কেন্দ্র থেকে যত দূরত্বে যাওয়া হবে, তাপমাত্রা তত কমতে থাকবে। একারণে সূর্যের পৃষ্ঠের তাপমাত্রা কমে হয় ১০ হাজার ডিগ্রি। সূর্যের পৃষ্ঠ থেকে আরও দূরে যেতে থাকলে স্বাভাবিকভাবেই তাপমাত্রা কমতে কমতে হাজার ডিগ্রি হয়, কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার হলোআরও দূরে গেলে, সূর্যের আকাশের প্রান্তে এসে তাপমাত্রা না কমে উল্টো অনেক বেড়ে গিয়ে হয় মিলিয়ন ডিগ্রি! কীভাবে প্রান্তের তাপমাত্রা সূর্যের পৃষ্ঠের তাপমাত্রা থেকে এত বেশি হতে পারে, তা জ্যোতির্বিজ্ঞানের অন্যতম একটি রহস্য। [৪৮৫] [৪৮৬]

সূর্যের বয়স নিয়ে এক বিরাট রহস্য রয়েছে। বিজ্ঞানের সূত্রগুলো প্রয়োগ করলে সূর্যের বয়স হওয়া উচিত বিলিয়ন বছর, যা বিবর্তনের মাধ্যমে প্রাণ সৃষ্টির জন্য প্রয়োজন। কিন্তু তাহলে এত বছর পর সূর্যের উজ্জ্বলতা আমরা যা দেখছি, তার থেকে ৪০ ভাগ বেশি হওয়ার কথা। যদি সত্যিই তা হতো, তাহলে প্রচণ্ড গরমে পুরো পৃথিবী মরুভূমি হয়ে যেত। কিন্তু তা হয়নি। আজকে সূর্যের যে উজ্জ্বলতা রয়েছে, তা অনুসারে বিলিয়ন বছর আগে, যখন প্রাণ সৃষ্টি হচ্ছিল, তখন সূর্যের উজ্জ্বলতা ৩০ ভাগ কম থাকার কথা। যার অর্থ পুরো পৃথিবী তখন বরফে ঢাকা থাকার কথা। এরকম পৃথিবীতে আজকের মতো প্রাণ তৈরি হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।এই সমস্যার সমাধান এখনো হয়নি। কীভাবে যেন সূর্যের উজ্জ্বলতাকে কয়েক বিলিয়ন বছর পর্যন্ত মোটামুটি একই রকম রাখা হয়েছে, যেন পৃথিবীর তাপমাত্রায় কোনো ব্যাপক পরিবর্তন না আসে এবং পৃথিবীতে জটিল প্রাণের বিকাশ হতে পারে।[৪৮৭]

সূর্যের আরেকটি বড় রহস্য হলো: সূর্যের মতো আরও ৭৭টি তারার উপর গবেষণা করে দেখা গেছে, সূর্যের মধ্যে লিথিয়াম মৌল অস্বাভাবিকভাবে কম। কীভাবে সূর্য এত বিপুল পরিমাণে লিথিয়াম হারিয়ে ফেলল, তার কোনো গ্রহণযোগ্য তত্ত্বও এখনো আবিষ্কার হয়নি।[৪৮৮]

সূর্য হচ্ছে মানুষের দেখা সবচেয়ে সুষম গোলাকৃতির মহাজাগতিক বস্তু। সৌরজগতের গ্রহগুলোও সূর্যের মতো এত সুষম গোলাকার নয়। যদি সূর্যকে একটি বলের সমান আকারে নিয়ে আসা হয়, তাহলে এর উত্তর-দক্ষিণ এবং পূর্ব-পশ্চিমের ব্যবধান হবে এক চুলের ব্যাসের থেকেও কম। মানুষ ফ্যাক্টরিতে যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে এত সুষম গোলক তৈরি করতে পারে। কীভাবে প্রকৃতিতে এত সুষম একটি গোলক তৈরি হলোতা একটি রহস্য। সূর্য সৃষ্টির যত তত্ত্ব বিজ্ঞানীরা বের করেছেন, তার কোনোটাই এমন হওয়া সমর্থন করে না। বরং যাবতীয় তত্ত্ব অনুসারে সূর্য কিছুটা চ্যাপ্টা হওয়ার কথা ছিল। [৪৮৯]

সূর্যের গঠন, উজ্জ্বলতা, স্থিরতা, সক্রিয়তা ইত্যাদি লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে, সূর্যকে যেন বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছে পৃথিবীতে প্রাণের বিকাশের জন্য। বিশেষ করে মানুষের মতো জটিল প্রাণ একদিন পৃথিবীতে আসবে, এর জন্য সূর্য এবং পৃথিবীর মধ্যে বহু ব্যাপার সূক্ষ্ম হিসেব করে ঠিক করা হয়েছে। একারণেই কুরআনে আল্লাহ تعالى আমাদেরকে বার বার সূর্যের কথা ভাবতে বলেন। তিনি বিশেষভাবে বলেন যে, তিনিইআমাদেরকেসূর্য দিয়েছেন। মানুষ সূর্য নিয়ে যত গবেষণা করছে, তত এর সম্পর্কে রহস্যময় ব্যাপার আবিষ্কার করছে, যেগুলো নাস্তিক বিজ্ঞানীদেরকে ধাঁধায় ফেলে দিচ্ছে যে, সূর্যকে যেন বিশেভাবে পরিকল্পনা করে সৃষ্টি করা হয়েছে

ওমর আল জাবির

No comments

Powered by Blogger.