১১১. সূরা লাহাব -এর তাফসীর

সূরা লাহাব

(স্ফুলিঙ্গ)

সূরা ফাতেহার পরে মক্কায় অবতীর্ণ

সূরা ১১১, আয়াত , শব্দ ২৯, বর্ণ ৮১

بِسْمِ اللہِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِیْمِ

পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে (শুরু করছি)

() ধ্বংস হৌক আবু লাহাবের দুহাত এবং ধ্বংস হৌক সে নিজে

تَبَّتْ يَدَا أَبِي لَهَبٍ وَتَبَّ

() তার কোন কাজে আসেনি তার ধন-সম্পদ যা কিছু সে উপার্জন করেছে

مَا أَغْنَى عَنْهُ مَالُهُ وَمَا كَسَبَ

() সত্বর সে প্রবেশ করবে লেলিহান অগ্নিতে

سَيَصْلَى نَارًا ذَاتَ لَهَبٍ

() এবং তার স্ত্রীও; যে ইন্ধন বহনকারিণী

وَامْرَأَتُهُ حَمَّالَةَ الْحَطَبِ

() তার গলদেশে খর্জুরপত্রের পাকানো রশি

فِي جِيدِهَا حَبْلٌ مِنْ مَسَدٍ

[আবু লাহাব ছিলেন রাসূল (ছাঃ)-এর চাচা নিকটতম শত্রু প্রতিবেশী। তার স্ত্রী ছিলেন আবু সুফিয়ানের বোনআওরা বিনতে হারব উম্মে জামীল।]

বিষয়বস্ত্ত :

() রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর ধ্বংস কামনা করে চাচা আবু লাহাব যে অভিশাপ দিয়েছিলেন, তার জওয়াব (- আয়াত) () আবু লাহাবের স্ত্রী উম্মে জামীলের নিকৃষ্টতম শত্রুতার মন্দ পরিণতি বর্ণনা ( - আয়াত)

শানে নুযূল :

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, যখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর উপর আয়াত নাযিল وَأَنْذِرْ عَشِيْرَتَكَ الْأَقْرَبِيْنَ ‘আর তুমি তোমার নিকটতম আত্মীয়-পরিজনকে সতর্ক কর’ (শোআরা ২৬/২১৪), তখন আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) সে যুগের নিয়ম অনুযায়ী একদিন সকালে ছাফা পাহাড়ের চূড়ায় উঠে সকলের উদ্দেশ্যে বিপদসংকেতমূলক ভাষায় ডাক দিয়ে বলেনيا صَباحاه (প্রত্যুষে সকলে সমবেত হও!) এভাবে রাসূল (ছাঃ) বিভিন্ন গোত্রের নাম ধরে ধরে ডাকতে থাকলেন। অতঃপর সবাই হাযির লে তিনি বলেন, أَرَأَيْتُمْ لَوْ أَخْبَرْتُكُمْ أَنَّ الْعَدُوَّ يُصَبِّحُكُمْ أَوْ يُمَسِّيكُمْ أَمَا كُنْتُمْ تُصَدِّقُونِى؟ قَالُوا بَلَى- আমি যদি বলি এই পাহাড়ের অপর পার্শ্বে একদল শত্রুসেনা তোমাদের উপরে সকালে বা সন্ধ্যায় হামলার জন্য অপেক্ষা করছে, তাহলে কি তোমরা আমার কথা বিশ্বাস করবে না? সকলে সমস্বরে বলে উঠলো, অবশ্যই করব। কেননা, مَا جَرَّبْنَا عَلَيْكَ إِلاَّ صِدْقًا ‘আমরা এযাবত তোমার কাছ থেকে সত্য ব্যতীত কিছুই পাইনি তখন রাসূল (ছাঃ) বললেন, فَإِنِّىْ نَذِيْرٌ لَكُمْ بَيْنَ يَدَىْ عَذَابٍ شَدِيْدٍ ‘আমি ক্বিয়ামতের কঠিন আযাবের প্রাক্কালে তোমাদের নিকটে সতর্ককারী রূপে আগমন করেছি অতঃপর তিনি আবেগময় কণ্ঠে সকলের উদ্দেশ্যে বললেন,

يَا مَعْشَرَ قُرَيْشٍ أَنْقِذُوْا أَنْفُسَكُمْ مِنَ النَّارِ، يَا بَنِىْ كَعْبِ بْنِ لُؤَىٍّ أَنْقِذُوْا أَنْفُسَكُمْ مِنَ النَّارِ، يَا بَنِىْ عَبْدِ مَنَافٍ أَنْقِذُوْا أَنْفُسَكُمْ مِنَ النَّارِ، يَا بَنِىْ هَاشِمٍ أَنْقِذُوْا أَنْفُسَكُمْ مِنَ النَّارِ، يَا بَنِىْ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ أَنْقِذُوْا أَنْفُسَكُمْ مِنَ النَّارِ، يَا عَبَّاسُ بْنَ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ لاَ أُغْنِى عَنْكَ مِنَ اللهِ شَيْئًا، يَا فَاطِمَةُ بِنْتَ مُحَمَّدٍ أَنْقِذِىْ نَفْسَكِ مِنَ النَّارِ، فَإِنِّىْ لاَ أَمْلِكُ لَكُمْ مِنَ اللهِ شَيْئاً غَيْرَ أَنَّ لَكُمْ رَحِماً سَأَبُلُّهَا بِبَلاَلِهَا –

হে কুরায়েশগণ! তোমরা নিজেদেরকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাও! হে বনু কা বিন লুআই! তোমরা নিজেদেরকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাও! হে বনু আবদে মানাফ! তোমরা নিজেদেরকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাও! হে বনু হাশেম! তোমরা নিজেদেরকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাও! হে বনু আব্দিল মুত্ত্বালিব! তোমরা নিজেদেরকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাও! হে আববাস বিন আব্দুল মুত্ত্বালিব! আমি আল্লাহর আযাব থেকে তোমার কোনই কাজে আসব না। হে মুহাম্মাদের কন্যা ফাতেমা! তুমি নিজেকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাও! কেননা আমি তোমাদের কাউকে আল্লাহর পাকড়াও তে রক্ষা করতে পারব না তবে তোমাদের সঙ্গে আত্মীয়তার যে সম্পর্ক রয়েছে, তা আমি (দুনিয়াতে) সদ্ব্যবহার দ্বারা সিক্ত করব অন্য বর্ণনায় এসেছে, يَا فَاطِمَةُ بِنْتَ مُحَمَّدٍ سَلِيْنِىْ مَا شِئْتِ مِنْ مَالِىْ وَلاَ أُغْنِى عَنْكِ مِنَ اللهِ شَيْئًا ‘হে মুহাম্মাদের কন্যা ফাতেমা! তুমি আমার মাল-সম্পদ থেকে যা খুশী নাও। কিন্তু আল্লাহর পাকড়াও তে আমি তোমাকে রক্ষা করতে পারব না[1] অন্য বর্ণনায় এসেছেإلا ان تقولوا لآ اله الا الله ‘তবে যদি তোমরা বল লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ (আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই)[2]

রাসূল (ছাঃ)-এর এই মর্মস্পর্শী আবেদন গর্বোদ্ধত চাচা আবু লাহাবের অন্তরে দাগ কাটেনি। তিনি চিৎকার দিয়ে রাসূল (ছাঃ)-এর মুখের উপর বলে দিলেন تَبًّا لَكَ سَائِرَ الْيَوْمِ ، أَلِهَذَا جَمَعْتَنَا؟ ‘সকল দিনে তোমার উপর ধ্বংস আপতিত হৌক! এজন্য তুমি আমাদের জমা করেছ’? বলেই তিনি উঠে যান। অতঃপর অত্র সূরাটি নাযিল হয়[3] কথিত আছে যে, এই সময় আবু লাহাব রাসূল (ছাঃ)-কে পাথর মারতে উদ্যত হন। কিন্তু আল্লাহ তাকে প্রতিরোধ করেন’ (কুরতুবী; আর-রাহীক্ব ৮৬ পৃ:)

আবু লাহাব কথাটি তাচ্ছিল্য করে বলেছিলেন। কেননা আখেরাতে জবাবদিহিতার কথা তাদের আগেই জানা ছিল। কিন্তু এটি তাদের কাছে অতীব তুচ্ছ বিষয় ছিল। দুনিয়া তাদেরকে গ্রাস করেছিল আখেরাত থেকে বেপরওয়া করেছিল

উল্লেখ্য যে, রাসূল (ছাঃ)-এর আপন চাচাদের মধ্যে তিন ধরনের মানুষ ছিলেন। . যারা তাঁর উপরে ঈমান এনেছিলেন তাঁর সাথে জিহাদ করেছিলেন। যেমন হামযাহ আববাস (রাঃ) . যারা তাঁকে সাহায্য করেছিলেন। কিন্তু জাহেলিয়াতের উপর মৃত্যুবরণ করেন। যেমন আবু তালিব। . যারা শুরু থেকে মৃত্যু অবধি শত্রুতা করেন। যেমন আবু লাহাব

আবু লাহাবের পরিচয় :

আবু লাহাব ছিলেন কুরায়েশ নেতা আব্দুল মুত্ত্বালিবের দশজন পুত্রের অন্যতম। নাম আব্দুল ওযযা। অর্থ, ওযযা দেবীর গোলাম। লালিমাযুক্ত গৌরবর্ণ সুন্দর চেহারার অধিকারী হওয়ায় তাকেআবু লাহাববা অগ্নিস্ফুলিঙ্গওয়ালা বলা ত। তার আসল নাম কুরআনে উল্লেখ করা হয়নি। কেননা তা ছিল তাওহীদের সাথে সরাসরি সাংঘর্ষিক। আল্লাহ তার আবু লাহাব উপনামটি কুরআনে উল্লেখ করেছেন। কেননা এর মধ্যে তার চিরস্থায়ী জাহান্নামী হবার দুঃসংবাদটাও লুকিয়ে রয়েছে

আবু লাহাব ছিলেন রাসূল (ছাঃ)-এর সেই প্রিয় চাচা যিনি () তাঁর জন্মের খবর শুনে আনন্দে আত্মহারা হয়ে সর্বত্র দৌড়ে গিয়ে লোকদের নিকট খবরটি পৌঁছে দেন যে, তার মৃত ছোট ভাই আব্দুল্লাহর বংশ রক্ষা হয়েছে। আর এই সুখবরটি প্রথম তাকে শুনানোর জন্য তিনি কৃতজ্ঞতা স্বরূপ দাসী ছুওয়াইবাকে মুক্ত করে দেন[4] () তিনি ছিলেন মক্কায় রাসূল (ছাঃ)-এর নিকটতম প্রতিবেশী () তার দুই ছেলে উৎবা উতাইবার সাথে নবুঅতপূর্বকালে রাসূল (ছাঃ)-এর দুই মেয়ে রুক্বাইয়া উম্মে কুলছূমের বিবাহ হয়[5]

এত আন্তরিকতাপূর্ণ সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও সবকিছু তীব্র বিদ্বেষপূর্ণ সম্পর্কে পরিবর্তিত হয়ে যায় রাসূল (ছাঃ)-এর নবুঅত লাভের পর। আবু লাহাব কখনোই তার ভাতিজার সুনাম-সুখ্যাতি নবুঅত লাভের মত উচ্চ মর্যাদা অর্জনের বিষয়টি মেনে নিতে পারেননি। যেমন মেনে নিতে পারেননি অন্যতম বংশীয় চাচা আবু জাহল তার সাথীরা। ফলে শুরু হয় শত্রুতা। তার পক্ষে সম্ভব কোনরূপ শত্রুতাই তিনি বাকী রাখেননি। যেমন, () আবু লাহাব তার দুছেলেকে তাদের স্ত্রীদের তালাক দিতে বাধ্য করেন। এই দুমেয়েই পরবর্তীতে একের পর এক হযরত ওছমান (রাঃ)-এর সাথে বিবাহিতা হন। () রাসূল (ছাঃ)-এর দ্বিতীয় পুত্র আব্দুল্লাহ, যার লকব ছিল ত্বাইয়েব ত্বাহের, মারা গেলে আবু লাহাব খুশীতে বাগবাগ হয়ে সবার কাছে গিয়ে বলেন মুহাম্মাদ এখনআবতারঅর্থাৎ লেজকাটা নির্বংশ হয়ে গেল। সেযুগে কারু পুত্রসন্তান না থাকলে এরূপই বলা ত। একথারই প্রতিবাদে সূরা কাওছার নাযিল হয় এবং আল্লাহ স্বীয় রাসূলকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেনإِنَّ شَانِئَكَ هُوَ الْأَبْتَرُ ‘নিশ্চয়ই তোমার শত্রুই নির্বংশ () হজ্জের নিরাপদ মওসুমে রাসূল (ছাঃ) বহিরাগত হাজীদের তাঁবুতে গিয়ে তাওহীদের দাওয়াত দিতেন। তখন আবু লাহাব তাঁর পিছু নিতেন এবং লোকদের ভাগিয়ে দিতেন এই বলে যে,يَا أَيُّهَا النَّاسُ لاَ تُطِيْعُوْهُ فَإِنَّهُ صَابِئٌ كَذَّابٌ ‘হে লোকসকল! তোমরা এর আনুগত্য করো না। কেননা সে ধর্মত্যাগী, মহা মিথ্যুক এমনকি যুল-মাজায (ذو المجاز) নামক বাজারে যখন তিনি লোকদের বলছিলেনقُوْلُوْا لآ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ تُفْلِحُوْا ‘তোমরা বলো লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ তাহলে তোমরা সফলকাম হবেতখন আবু লাহাব পিছন থেকে তাঁকে লক্ষ্য করে পাথর ছুঁড়ে মারছিলেন। যাতে রাসূল (ছাঃ)-এর পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত রক্তাক্ত হয়ে যায়[6]

আবু লাহাবের স্ত্রী :

নাম : ‘আওরা (العوراء) অথবা আরওয়া (أروى) বিনতে হারব ইবনে উমাইয়া। উপনাম : উম্মে জামীল। কুরায়েশ নেতা আবু সুফিয়ানের বোন। ট্যারাচক্ষু হওয়ার কারণে তাকেআওরা’ (عوراء) বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। ইবনুলআরাবী তাকে عوراء أم قبيح বাট্যারাচক্ষু সকল নষ্টের মূলবলেন (কুরতুবী) কুরায়েশদের নেতৃস্থানীয় মহিলাদের অন্যতম এই মহিলা রাসূল (ছাঃ)-এর বিরুদ্ধে সকল প্রকার চক্রান্তে দুষ্কর্মে তার স্বামীর পূর্ণ সহযোগী ছিলেন (ইবনু কাছীর) সর্বদা রাসূল (ছাঃ)-এর বিরুদ্ধে গীবত, তোহমত চোগলখুরীতে লিপ্ত থাকতেন। কবি হওয়ার সুবাদে ব্যঙ্গ কবিতার মাধ্যমে তার নোংরা প্রচারণা অন্যদের চাইতে বেশী ছিল। চোগলখুরীর মাধ্যমে সংসারে ভাঙ্গন ধরানো সমাজে অশান্তির আগুন জ্বালানো দুমুখো ব্যক্তিকে আরবরা حَمَّالَةُ الْحَطَبِ ইন্ধন বহনকারী বা খড়িবাহক বলত। সে হিসাবে এই মহিলাকে কুরআনে উক্ত নামেই আখ্যায়িত করা হয়েছে। নিকটতম প্রতিবেশী হওয়ার সুযোগে উক্ত মহিলা রাসূল (ছাঃ)-এর যাতায়াতের পথে বা তাঁর  বাড়ীর দরজার মুখে কাঁটা ছড়িয়ে বা পুঁতে রাখতেন। যাতে রাসূল (ছাঃ) কষ্ট পান

সূরা লাহাব নাযিল লে রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে উক্ত মহিলা হাতে প্রস্তরখন্ড নিয়ে রাসূল (ছাঃ)-কে মারার উদ্দেশ্যে কাবা চত্বরে গমন করেন। কিন্তু আল্লাহর ইচ্ছায় রাসূল (ছাঃ) সামনে থাকা সত্ত্বেও তিনি তাঁকে দেখতে পাননি। অবশেষে রাসূল (ছাঃ)-এর পাশে দাঁড়ানো আবুবকরের কাছে তার মনের ঝাল মিটিয়ে বলেন, আবুবকর! তোমার সাথী নাকি আমাকে ব্যঙ্গ করেছে? আল্লাহর কসম, যদি আমি তাকে পেতাম, তাহলে এই পাথর দিয়ে তার মুখে মারতাম। আল্লাহর কসম! আমি একজন কবি। বলেই তিনি রাগতঃস্বরে কবিতা পাঠ করেন-

مُذَمَّمًا عَصَيْنَا + وأمْرَهُ أبَيْنَا + ودِينَهُ قَلَيْنَا

নিন্দিতের আমরা নাফরমানী করিতার নির্দেশ আমরা অমান্য করিতার দ্বীনকে আমরা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করি উল্লেখ্য যে, কুরায়েশ নেতারা রাসূল (ছাঃ)-কেমুহাম্মাদ’ (প্রশংসিত)-এর বদলেমুযাম্মাম’ (নিন্দিত) নামে আখ্যায়িত করেছিল এবং নামে তারা তাঁকে গালি দিত[7]

আবু লাহাবের পরিণতি :

বদর যুদ্ধে পরাজয়ের দুঃসংবাদ মক্কায় পৌঁছবার সপ্তাহকাল পরে আবু লাহাবের গলায় গুটিবসন্ত দেখা দেয় এবং তাতেই সে মারা পড়ে। সংক্রমণের ভয়ে তার ছেলেরা তাকে ছেড়ে চলে যায়। কুরায়েশরা এই ব্যাধিকে মহামারী হিসাবে দারুণ ভয় পেত। তিনদিন পরে লাশে পচন ধরলে কুরায়েশ-এর এক ব্যক্তির সহায়তায় আবু লাহাবের দুই ছেলে লাশটি মক্কার উচ্চভূমিতে নিয়ে যায় এবং সেখানেই একটি গর্তে লাঠি দিয়ে ফেলে পাথর চাপা দেয়[8]অহংকারী যালেমের পতন এভাবেই হয়। কুরআনের কথাই সত্য প্রমাণিত হয়। তার মাল-সম্পদ সন্তান-সন্ততি তার কোন কাজে আসেনি

তাফসীর :

() تَبَّتْ يَدَا أَبِيْ لَهَبٍ وَّتَبَّ ‘ ধ্বংস হৌক আবু লাহাবের দুহাত এবং ধ্বংস হৌক সে নিজে

تَبَّ تَبَابًا অর্থ خسر، خاب، هلك ‘ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া, নিরাশ হওয়া, ধ্বংস হওয়া ইত্যাদি। التباب অর্থ الخسار ‘ধ্বংস হওয়া যেমন আল্লাহ বলেন, وَمَا كَيْدُ فِرْعَوْنَ إِلاَّ فِي تَبَابٍ ‘আর ফেরাঊনের ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়েছিল পুরোপুরি’ (গাফের/মুমিন ৪০/৩৭)

আবু লাহাব যে ভাষায় আল্লাহর রাসূলের ধ্বংস কামনা করেছিল, ঠিক সেই ভাষায় অত্র আয়াতে তার ধ্বংস কামনা করা হয়েছে। আবু লাহাব রাসূল (ছাঃ)-কে বলেছিল تَبًّا لَكَ ‘তোমার ধ্বংস হৌক একইভাবে তাকে বলা হয়েছে تَبَّتْ يَدَا أَبِيْ لَهَبٍ وَّتَبَّ ‘আবু লাহাবের দুহাত ধ্বংস হৌক এবং ধ্বংস হৌক সে নিজে এখানে দুহাত বলার উদ্দেশ্য এই যে, মানুষ মূলতঃ দুহাত দিয়েই সব কাজ করে থাকে। তাছাড়া আরবদের পরিভাষায় বস্ত্তর একটি অংশকে পূর্ণ বস্ত্ত হিসাবে বুঝানো হয় এবং ব্যক্তির দুহাত দ্বারা মূলব্যক্তিকে বুঝানো হয়। যেমন আল্লাহ বলেনذَلِكَ بِمَا قَدَّمَتْ يَدَاكَ وَأَنَّ اللهَ لَيْسَ بِظَلاَّمٍ لِّلْعَبِيْدِ ‘এটা তোমার দুহাতের কর্মফল। আর আল্লাহ বান্দাদের প্রতি যুলুম করেন না’ (হজ্জ ২২/১০) অন্যত্র তিনি বলেনيَوْمَ يَنْظُرُ الْمَرْءُ مَا قَدَّمَتْ يَدَاهُ وَيَقُوْلُ الْكَافِرُ يَا لَيْتَنِيْ كُنْتُ تُرَاباً- ‘যেদিন মানুষ প্রত্যক্ষ করবে যা তার দুহাত অগ্রিম প্রেরণ করেছে এবং কাফের বলবে, হায় আফসোস! আমি যদি মাটি তাম’! (নাবা ৭৮/৪০) উভয় আয়াতেই দুহাতকেব্যক্তিহিসাবে গণ্য করা হয়েছে। অনুরূপভাবে আলোচ্য আয়াতেওআবু লাহাবের দুই হাত ধ্বংস হৌকঅর্থ আবু লাহাব ধ্বংস হৌক!

()  مَا أَغْنَى عَنْهُ مَالُهُ وَمَا كَسَبَ ‘কোন কাজে আসেনি তার মাল-সম্পদ এবং যা সে উপার্জন করেছে অর্থাৎ যেসব ধন-সম্পদ সে তার পিতা থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছে এবং যা সে নিজে উপার্জন করেছে, কোন কিছুই তার কাজে আসেনি এবং তার ধ্বংস সে ঠেকাতে পারেনি

ইবনু আববাস (রাঃ) অন্যান্য বিদ্বানগণ বলেনوَمَا كَسَبَ অর্থ তার সন্তানাদি। যেমন মা আয়েশা (রাঃ) বর্ণিত হাদীছে রাসূল (ছাঃ) বলেন, إِنَّ أَطْيَبَ مَا أَكَلَ الرَّجُلُ مِنْ كَسْبِهِ وَإِنَّ وَلَدَهُ مِنْ كَسْبِهِ- ‘মানুষ যা নিজে উপার্জন করে সেটাই তার সর্বাধিক পবিত্র খাদ্য। আর তার সন্তান তার উপার্জনের অংশ[9]অর্থাৎ আবু লাহাবের মাল সন্তানাদি তার কোন কাজে আসেনি। শুধু তাই নয়, তার সম্মান পদমর্যাদা এবং শক্তি ক্ষমতা কোনটাই কোন কাজে লাগেনি। আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যখন স্বীয় কওমকে ঈমানের দাওয়াত দেন আখেরাতে আযাবের ভয় দেখান, তখন আবু লাহাব তাচ্ছিল্য ভরে বলেছিল, إذا كان ما يقول ابن أخي حقا، فإني أفتدي نفسي يوم القيامة من العذاب بمالي وولدي- ‘আমার ভাতিজার কথা যদি সঠিক হয়, তাহলে আমি ক্বিয়ামতের দিন আমার ধন-সম্পদ সন্তানাদির বিনিময়ে নিজেকে মুক্ত করে নেব অত্র আয়াতে তার জওয়াব এসেছে (ইবনু কাছীর) উল্লেখ্য যে, মক্কায় গোপন দাওয়াতের তিন বছরে যে ৪০-এর অধিক ব্যক্তি ইসলাম কবুল করেন, ইবনু মাসঊদ ছিলেন তাদের অন্যতম। অতঃপর নবুঅতের চতুর্থ বর্ষে ছাফা পাহাড়ে অত্র দাওয়াতের ঘটনা ঘটে। আবু লাহাবের সন্তানদের ইবনু আববাস (রাঃالكسب الخبيث বা নষ্ট উপার্জনবলে অভিহিত করেন (কুরতুবী)

() سَيَصْلَى نَاراً ذَاتَ لَهَبٍ ‘সত্বর সে প্রবেশ করবে লেলিহান অগ্নিতে

অর্থাৎ ভয়ংকর দাহিকাশক্তিসম্পন্ন চূড়ান্তভাবে উত্তপ্ত জাহান্নামে সে প্রবেশ করবে। صَلَى يَصْلَى صَلْيًا ‘প্রবেশ করা যেমন আল্লাহ বলেনثُمَّ إِنَّهُمْ لَصَالُوا الْجَحِيْمِ- ‘অতঃপর তারা অবশ্যই জাহান্নামে প্রবেশ করবে’ (মুত্বাফফেফীন ৮৩/১৬) إِلاَّ مَنْ هُوَ صَالِ الْجَحِيْمِ ‘কেবল তাদের ব্যতীত যারা জাহান্নামে প্রবেশ করবে’ (ছাফফাত ৩৭/১৬৩) ذَاتَ لَهَبٍ অর্থ ذات اشتعال وتلهّب وإحراق شديد ‘জোশ স্ফুলিঙ্গওয়ালা এবং প্রচন্ড দাহিকাশক্তি সম্পন্ন’ (কুরতুবী, ইবনু কাছীর) আয়াতে سَيَصْلَى ‘সত্বর সে প্রবেশ করবেবলা হয়েছে। অথচ তা ক্বিয়ামতের পরে ঘটবে। এখানে س এসে تحقيق বানিশ্চয়তাঅর্থে। অর্থাৎনিশ্চয়ই সে প্রবেশ করবে দুনিয়ার হিসাবে ক্বিয়ামত দূরের হলেও আখেরাতের হিসাবে তা খুবই নিকটবর্তী। ঘুমন্ত মানুষ সারারাত ঘুমিয়ে উঠে যেমন বলে এইমাত্র ঘুমালাম। পুনরুত্থান দিবসে মানুষের ভাবনা সম্পর্কে আল্লাহ বলেনكَأَنَّهُمْ يَوْمَ يَرَوْنَهَا لَمْ يَلْبَثُوا إِلاَّ عَشِيَّةً أَوْ ضُحَاهَا ‘সেদিন যখন তারা এটা দেখবে, তখন তাদের মনে হবে, তারা (দুনিয়াতে) একটি রাত্রি বা একটি দিনের অধিক অবস্থান করেনি’ (নাযেআত ৭৯/৪৬) আল্লাহ বলেন, إِنَّهُمْ يَرَوْنَهُ بَعِيْدًا- وَنَرَاهُ قَرِيْبًا- ‘তারা দিনকে (ক্বিয়ামতকে) অনেক দূরে মনে করেকিন্তু আমরা তা দেখছি নিকটে’ (মাআরিজ ৭০/-)

বিদআতীরা তাদের আবিষ্কৃত মীলাদুন্নবীর মজলিসে জাল হাদীছ বলে থাকে যে, রাসূল (ছাঃ)-এর জন্মগ্রহণে খুশী হওয়ার কারণে প্রতি সোমবার আবু লাহাবের উপর জাহান্নামের শাস্তি মওফূফ করা হয়। তাছাড়া অন্যদিন জাহান্নামে আযাব লেও তার শাহাদাত অঙ্গুলিটি আযাবমুক্ত থাকে। কেননা সে রাসূল জন্মের খবরে খুশী হয়ে আঙ্গুলটি উঁচু করে দৌড়ে সবাইকে সুসংবাদটি পৌঁছে দিয়েছিল নিঃসন্দেহে এগুলি বিদআতীদের উদ্ভট কল্পনা ব্যতীত কিছুই নয়। এবিষয়ে কুফরী অবস্থায় চাচা আববাস-এর একটি স্বপ্নের কথা বলা হয়, যার কোন ছহীহ ভিত্তি নেই

ইবনু কাছীর বলেন, বিদ্বানগণ বলেন যে, সূরাটি রাসূল (ছাঃ)-এর নবুঅতের অন্যতম দলীল। কেননা আবু লাহাব তার স্ত্রী প্রকাশ্যে বা গোপনে মৃত্যু অবধি কখনো ঈমান আনেনি। বরং কাফের অবস্থাতেই উভয়ের মৃত্যু হয়েছে। অত্র আয়াতে যার ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে। উল্লেখ্য যে, সূরাটি আবু লাহাবের মৃত্যুর দশ বছর পূর্বে নাযিল হয়

শিক্ষণীয় বিষয় এই যে, কুরায়েশ নেতাদের নির্যাতিত হাবশী গোলাম বেলাল ইসলামের বরকতে মহা সম্মানিত ল। আর ইসলাম গ্রহণ না করায় সম্মানিত কুরায়েশনেতা আবু লাহাব অসম্মানিত জাহান্নামী ল। ফরয নফল ছালাতসমূহে মুসলমান যতবার এই সূরা পাঠ করে, ততবার প্রতি হরফে দশটি করে নেকী পায়। অথচ তাতে আবু লাহাব তার স্ত্রীর প্রতি অভিশাপ ধ্বংসের কথা বলা হয়। আল্লাহ আমাদেরকে ইসলামের দ্বারা মর্যাদামন্ডিত করুন-আমীন!

() وَامْرَأَتُهُ حَمَّالَةَ الْحَطَبِ ‘এবং তার স্ত্রীও; যে ইন্ধন বহনকারিণী

অর্থাৎ আবু লাহাবের স্ত্রীও তার স্বামীর সাথে একইভাবে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। حَمَّالَةُ الْحَطَبِ অর্থইন্ধন বহনকারী আগুন জ্বালানোর ইন্ধন হিসাবে যেসব খড়িকাঠ জমা করা হয়। আরবরা দুমুখো, চোগলখোর গীবতকারীদের এই নামে আখ্যায়িত করত। কেননা এর দ্বারা ব্যক্তি, পরিবার সমাজে দ্রুত অশান্তির আগুন জ্বলে ওঠে। ইবনু আববাস, মুজাহিদ, ক্বাতাদাহ, সুদ্দী প্রমুখ বলেন যে, আবু লাহাবের স্ত্রী রাসূল (ছাঃ)-এর পিছনে নিন্দা চোগলখুরী করে এই আগুন জ্বালানোর কাজটিই করত’ (কুরতুবী) উক্ত মহিলাউম্মে জামীলউপনামে পরিচিত ছিল। যার অর্থসুন্দরের মা অথচ প্রকৃত অর্থে সে ছিল أم قبيح অর্থাৎনষ্টের মূল তাই কুরআন তার উপনাম বাদ দিয়ে حَمَّالَةَ الْحَطَبِ ‘খড়ি বহনকারিণীবলে তার চোগলখুরীর বৈশিষ্ট্য ফুটিয়ে তুলেছে

ক্বাতাদাহ অন্যান্য বিদ্বানগণ বলেন, সে সর্বদা রাসূল (ছাঃ)-এর দরিদ্রতাকে তাচ্ছিল্য করত। অথচ প্রচুর ধন-সম্পদ থাকা সত্ত্বেও সীমাহীন কৃপণতার কারণে সে নিজে কাঠ বহন করত। ফলে কৃপণ হিসাবে লোকেরা তাকে তাচ্ছিল্য করত। এত ধন-সম্পদ তাদের কোন কাজে আসেনি। ইবনু যায়েদ যাহহাক বলেন, সে কাঁটাযুক্ত ঘাস লতাগুল্ম বহন করে এনে রাসূল (ছাঃ) ছাহাবীদের চলার পথে ছড়িয়ে দিত (কুরতুবী) ইবনু জারীর বক্তব্যকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন (ইবনু কাছীর)

() فِيْ جِيْدِهَا حَبْلٌ مِّن مَّسَدٍ ‘তার গলদেশে খর্জুরপত্রের পাকানো রশি অর্থাৎ খেজুরপাতা দিয়ে পাকানো রশি দিয়ে কাঁটাযু্ক্ত লতাগুল্ম বেঁধে ঘাড়ে করে বা গলায় ঝুলিয়ে সে বহন করে আনত। হাসান বাছরী বলেন, ‘মাসাদ ইয়ামনে উৎপন্ন এক প্রকার গাছের পাকানো রশি। আবু ওবায়দা বলেন, পশমের রশি (কুরতুবী) তানতাভী বলেন, কঠিনভাবে পাকানো রশি, যা গাছের ছালপাতা দিয়ে বা চামড়া দিয়ে বা অন্যকিছু দিয়ে তৈরী তে পারে (তানতাভী) যাহহাক অন্যান্যগণ বলেন, ‘ রশিই ক্বিয়ামতের দিন তার জন্য আগুনের রশি হবে সাঈদ ইবনুল মুসাইয়িব বলেন, আবু লাহাবের স্ত্রীর মণিমুক্তাখচিত বহু মূল্যবান একটি কণ্ঠহার ছিল। যেটা দেখিয়ে সে লোকদের বলতوَاللاَّتِ وَالْعُزَّى لَأُنْفِقَنَّهَا فِي عَدَاوَةِ مُحَمَّدٍ- ‘লাত ওযযার কসম! এটা আমি অবশ্যই ব্যয় করব মুহাম্মাদের শত্রুতার পিছনে কণ্ঠহারই তার জন্য ক্বিয়ামতের দিন আযাবের কণ্ঠহার হবে’ (কুরতুবী)

কুরায়েশ বংশের একজন সম্মানিত ধনশালী ব্যক্তি হওয়া সত্ত্বেও ইসলাম ইসলামের নবীর বিরুদ্ধে নিকৃষ্টতম আচরণ করায় আল্লাহ আবু লাহাবের স্ত্রীকে নিম্নশ্রেণীরকাঠ কুড়ানীমহিলাদের সাথে তুলনা করেছেন’ (তানতাভী)

আবু লাহাবের স্ত্রীর পরিণতি :

মুররাহ আল-হামদানী বলেন, আবু লাহাবের স্ত্রী উম্মে জামীল প্রতিদিন কাঁটাযুক্ত ঝোপের বোঝা এনে মুসলমানদের চলার পথে ছড়িয়ে দিত। ইবনু যায়েদ যাহহাক বলেন, সে রাতের বেলা একাজ করত। একদিন সে বোঝা বহনে অপারগ হয়ে একটা পাথরের উপরে বসে পড়ে। তখন ফেরেশতা তাকে পিছন থেকে টেনে ধরে এবং সেখানেই তাকে শেষ করে দেয়’ (কুরতুবী)

বস্ত্ততঃ আবু লাহাব উম্মে জামীলের মত ধনশালী পুঁজিপতি দুশমনরা সে যুগেও যেমন ইসলামের শত্রুতায় তাদের যথাসর্বস্ব ব্যয় করেছে, যুগেও তেমনি তারা তা করে যাচ্ছে। সেদিন যেমন আবু লাহাব তার স্ত্রী গীবত-তোহমত অপপ্রচারের মাধ্যমে শত্রুতা করেছিল, আজও তেমনি ইসলামের প্রকৃত খাদেমদের বিরুদ্ধে শত্রুরা বিশ্বব্যাপী প্রিন্ট ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় অপপ্রচার চালাচ্ছে। আধুনিক জাহেলী মতবাদসমূহের সাথে আপোষকারী শৈথিল্যবাদী মুসলিম নেতাদের তারামডারেটবা উদার বলে প্রশংসা করছে। পক্ষান্তরে ইসলামের নিষ্ঠাবান অনুসারীদের তারাফান্ডামেন্টালিস্টবা মৌলবাদী বলে গালি দিচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে নানা অপবাদ মিথ্যা প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছে। সেই সাথে দুর্বল নতজানু সরকারগুলোকে দিয়ে দেশে দেশে দ্বীনদার মুসলমানদের উপরে মিথ্যা মামলা জেল-যুলুমসহ নানাবিধ নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে

সেযুগে যেমন আল্লাহর ইচ্ছায় আবু লাহাবদের সকল ষড়যন্ত্র নস্যাৎ হয়ে গিয়েছিল, এযুগেও তেমনি ইসলামের প্রকৃত অনুসারীদের বিরুদ্ধে যাবতীয় চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র ব্যর্থকাম হবে ইনশাআল্লাহ। অতএব হে মানুষ! ফিরে এসো প্রকৃত ইসলামের পথে। দীপ্ত শপথ নিয়ে, নির্ভীকচিত্তে। এগিয়ে চল জান্নাতের পানে

সারকথা :

ইসলামের অভ্রান্ত সত্যকে প্রকাশ করার জন্য যুগোপযোগী মাধ্যম সমূহকে কাজে লাগাতে হবে। যেভাবে রাসূল (ছাঃ) সেযুগের নিয়ম অনুযায়ী ছাফা পাহাড়ে উঠে নিজ সম্প্রদায়ের লোকদের দাওয়াত দিয়েছিলেন। সেদিনের আবু লাহাবের উম্মে জামীলের ন্যায় ইসলামের প্রকাশ্য অপ্রকাশ্য শত্রু চিরকাল থাকবে এবং তারা অবশ্যই জাহান্নামী হবে। কিন্তু আল্লাহর নিকটে মযলূম মুমিনরাই প্রকৃত বিজয়ী এবং যালেমরা সর্বদা পরাজিত



[1]. বুখারী হা/২৭৫৩; মুসলিম হা/২০৪, ২০৬; আহমাদ হা/৮৭১১; মিশকাত হা/৫৩৭৩রিক্বাক্বঅধ্যায়-২৬, ‘সতর্ক করা ভয় প্রদর্শন করাঅনুচ্ছেদ-

[2]. বায়হাক্বী, দালায়েলুন নবুঅত /৬৪

[3]. বুখারী হা/৪৭৭০, ৪৯৭১; মুসলিম হা/২০৮; তিরমিযী হা/৩৩৬৩; কুরতুবী হা/৬৫১২; মিশকাত আলবানী হা/৫৩৭২

[4]. আল-বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ /২৭৩; আলবানী, ছহীহ সীরাতুন নববিইয়াহ পৃ: ১৫

[5]. আর-রাহীক্বুল মাখতূম পৃ: ৮৬

[6]. আহমাদ হা/১৬০৬৬; ছহীহ ইবনু হিববান হা/৬৫৬২; দারাকুৎনী হা/২৯৫৭ সনদ ছহীহ, ‘ক্রয়-বিক্রয়অধ্যায়; কুরতুবী হা/৬৫১৩; তাফসীর ইবনু কাছীর; আর-রাহীক্ব পৃঃ ৮২

[7]. সীরাতে ইবনে হিশাম /৩৫৫-৫৬; ফাৎহুল বারী /৬১০ প্রভৃতি; কুরতুবী, ইবনু কাছীর

[8]. সীরাতে ইবনে হিশাম /৬৪৬; বায়হাক্বী দালায়েলুন নবুঅত /১৪৫-১৪৬; আল-বিদায়াহ /৩০৯; আর-রাহীক্ব পৃঃ ২২৫-২৬; কুরতুবী

[9]. আবুদাঊদ হা/৩৫৩০; ইবনু মাজাহ হা/২২৯০; মিশকাত হা/২৭৭০ক্রয়-বিক্রয়অধ্যায়

No comments

Featured Post

দোয়া-ই নুর- Doya e Nur

Powered by Blogger.