লাইলাতুল কদর পেতে বিশ্বনবি যেভাবে চেষ্টা করেছেন


মুমিন মুসলমানের তাকওয়া অর্জনের মাস রমজান। এ মাসের রোজা পালন, তারাবিহ আদায় এবং লাইলাতুল কদর পাওয়ার উদ্দেশ্যে নামাজ পড়ায় আল্লাহ তাআলা রোজাদারের বিগত জীবনের গোনাহ মাফ করে দেন বলে হাদিসে ঘোষণা দিয়েছেন। হাদিসে এসেছে-

হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনযে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে সাওয়াবের আশায় লাইলাতুল কদরে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করেতার বিগত জীবনের গোনাহ মাফ করে দেয়।' (বুখারিমুসলিম)

গোনাহ থেকে মুক্তি লাভ করা ছাড়াও এ মাসে আল্লাহ তাআলা বান্দাকে হেদায়েত দান করেন। যা মানুষের জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। আল্লাহ তাআলা বলেন-

‘রমজান হলো সেই মাসযাতে নাজিল হয়েছে আল-কুরআন। যা মানুষের জন্য হেদায়েত এবং সঠিক পথের যাত্রীদের জন্য সুস্পষ্ট পথ নির্দেশক এবং (ন্যায় ও অন্যায়ের) পার্থক্য বিধানকারী।’ (সুরা কুরআন : আয়াত ১৮৫)

পুরো রমজান মাসে একটি রাত 'লাইলাতুল কদর'। তা আবার রমজানের শেষ দশকে। কিন্তু এ মর্যাদার রাত কোনটি? মানুষ কিভাবে এটি নির্ণয় করবে। প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ মর্যাদার রাত পেতে কী করেছিলেন? এ রাতের ইবাদত সম্পর্কেই বা কী নসিহত করেছিলেন?

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সুনির্দিষ্ট কোনো দিনক্ষণ উল্লেখ করেন নাই। তবে তিনি লাইলাতুল কদর পাওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা সাধনা করেছেনবসেছেন ইতেকাফে। মর্যাদার এ রাত লাভে তিনি যে রীতি অনুসরণ করেছেন। তাহলো-

হজরত আবু সাঈদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন-

> আমি কদরের রাত পেতে (রমজানের) প্রথম দশদিন ইতেকাফ করলাম।

> এরপর (রমজানের) মধ্যবর্তী দশদিন ইতেকাফ করলাম।

অতপর ওহির মাধ্যমে আমাকে জানানো হল যে-

> তা (লাইলাতুল কদর রমজানের) শেষ দশ দিনে (নিহিত)।

সুতরাং তোমাদের যে ইতেকাফ পছন্দ করবে, সে যেন (রমজানের শেষ দশকে) ইতেকাফ করে। ফলে, মানুষ তার সঙ্গে ইতেকাফ করলো।’ (মুসলিম)

এ রাতের মর্যাদা এত অধিক যেতা বর্ণনা করে আল্লাহ তাআলা একটি স্বতন্ত্র সুরা নাজিল করলেন। আল্লাহ তাআলা বলেন-

‘নিশ্চয়ই আমি একে নাজিল করেছি শবে কদরে। (হে রাসুল!) শবে কদর সম্পর্কে আপনি জানেন কি? শবে কদর হলো এক হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। এতে (এ রাতে) প্রত্যেক কাজের জন্য ফেরেশতাগণ ও রূহ (জিবরিল আমিন) তার পালনকর্তার নির্দেশে অবতীর্ণ হয়। এটা নিরাপদ, শান্তি। যা ফজর হওয়ার সময় পর্যন্ত অব্যাহত থাকে।’ (সুরা কদর)

যে কারণে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মৃত্যুর আগ পর্যন্ত প্রত্যেক রমজানের শেষ দশকে ইতেকাফ করতেন। হাদিসে এসেছে-

হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেনরাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত শেষ দশ দিন ইতেকাফ করেছেন।’ (বুখারি)

উল্লেখ্য, লাইলাতুল কদরের সম্ভাব্য গুরুত্বপূর্ণ রাতগুলো যথা ক্রমে তুলে ধরা হলো-

- ২৭ তারিখের সম্ভাবনা বেশি। তারপর যে বেজোড় রাতগুলোর সম্ভাবনা বেশি তাহলো-

- দ্বিতীয় : ২৫ রমজানের রাত।

- তৃতীয় : ২৯ রমজানের রাত।

- চতুর্থ : ২৩ রমজানের রাত।

- পঞ্চম : ২১ রমজানের রাত।

লাইলাতুল কদর লাভের নিয়েতে শেষ দশকের প্রতি রাতের দোয়া

এ রাতটি পাওয়ার জন্য রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমজানের শেষ দশকে ইবাদতের নিয়তে মসজিদে ইতেকাফে অতিবাহিত করতেন। যাতে কোনোভাবে শবে কদর থেকে বঞ্চিত হতে না হয়। শবে কদরের বিশেষ দোয়া প্রসঙ্গে হাদিসের একটি গুরুত্বপূর্ণ বর্ণনা রয়েছে। আর তাহলো-

হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেনএকবার আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলাম- হে আল্লাহর রাসুল! (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আপনি বলে দিনআমি যদি লাইলাতুল কদর কোন রাতে হবে তা জানতে পারিতাতে আমি কী (দোয়া) পড়বো?

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনতুমি বলবে-

اللَّهُمَّ إِنَّكَ عُفُوٌّ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّي

উচ্চারণ : 'আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুয়্যুনতুহিব্বুল আফওয়াফাফু আন্নি।’

অর্থ : হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমাশীল; ক্ষমা করতে ভালোবাসেন; অতএব আমাকে ক্ষমা করে দিন। (মুসনাদে আহমাদ, ইবনে মাজাহ, তিরমিজি, মিশকাত)

হাদিসের আলোকে বুঝা যায় যে, রমজানের শেষ দশকেই লাইলাতুল কদর নিহিত। সুতরাং লাইলাতুল কদর লাভে রমজানের শেষ দশকে তা সন্ধান করা। রাত জেগে ইবাদত-বন্দেগি করা।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে লাইলাতুল কদর লাভে আজীবন চেষ্টা সাধনায় আত্মনিয়োগ করার তাওফিক দান করুন। লাইলাতুল কদরের নিয়তে বেজোড় রাতগুলোতে না ঘুমিয়ে ইবাদত-বন্দেগি করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/পিআর

No comments

Powered by Blogger.