কসম করা প্রসঙ্গে মহানবী (সা.)-এর কড়া হুঁসিয়ারি
কসম
করা প্রসঙ্গে মহানবী (সা.)-এর কড়া হুঁসিয়ারি
আমাদের
সমাজে অনেককেই দেখা যায় মায়ের কসম, বাবার কসম, কুরআন ছুয়ে কসম, মসজিদ ছুয়ে কসম, সন্তানের
মাথায় হাত রেখে কসম, এছাড়াও অনেক ভাবে কসম করতে দেখা যায়।
এ প্রসঙ্গে রাসুল (সা.) বলেনঃ ”যে বেক্তি আল্লাহ্ ব্যাতিত অন্যের নামে কসম করে সে শিরক করলো।” (হাদিসঃ তিরমিজি, আবুদাউদ, মিশকাত হা/২৯৬)
এ প্রসঙ্গে রাসুল (সা.) বলেনঃ ”যে বেক্তি আল্লাহ্ ব্যাতিত অন্যের নামে কসম করে সে শিরক করলো।” (হাদিসঃ তিরমিজি, আবুদাউদ, মিশকাত হা/২৯৬)
যারা
এই ভুলগুলো করেছেন তাদের আজকেই আগের ভুলগুলোর জন্য তওবা করে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে
হবে। আর আল্লাহকে বলতে হবে জিবনেও আর আমি এইসব কসম করবোনা। যদি সত্যি সত্যি কোন ব্যাপারে
আপনি সত্যবাদী হন তাহলে শুধুমাত্র ‘আল্লাহ কসম’ করবেন। এবং অবশ্যই সেটা যেন সত্যি বিষয়ে হয়,
নতুবা আপনি কবিরা গুনাহ করলেন যেটা তওবা ছাড়া ক্ষমা হবেনা এবং এর জন্য কাফফারা দিতে
হবে। আল্লাহ্ আমাদের ক্ষমা করুন… আমীন।
আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নামে কসম করা
আল্লাহ তা‘আলা তাঁর সৃষ্টির মধ্য হতে যার নামে ইচ্ছা কসম করতে পারেন। কিন্তু সৃষ্টির জন্য আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে কসম করা জায়েয নেই। তা সত্ত্বেও অনেক মানুষের মুখেই নির্বিবাদে গায়রুল্লাহর নামে কসম উচ্চারিত হয়। কসম মূলতঃ এক প্রকার সম্মান, যা আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ পাওয়ার যোগ্য নয়। ইবনু ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,
أَلاَ إِنَّ اللهَ يَنْهَاكُمْ أَنْ تَحْلِفُوا بِآبَائِكُمْ، مَنْ كَانَ حَالِفًا بِاللهِ فَلْيَحْلِفْ بِاللهِ أَوْ لِيَصْمُتْ-
‘সাবধান! নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা তোমাদেরকে তোমাদের পিতৃপুরুষের নামে শপথ করতে নিষেধ করেছেন। কারো যদি শপথ করতেই হয়, তবে সে যেন আল্লাহর নামে শপথ করে অথবা চুপ থাকে’।[1]
ইবনু ওমর (রাঃ) বর্ণিত আরেকটি হাদীছে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, مَنْ حَلَفَ بِغَيْرِ اللهِ فَقَدْ أَشْرَكَ ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নামে কসম করল, সে শিরক করল’।[2]
অপর এক হাদীছে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, مَنْ حَلَفَ بِالْأَمَانَةِ فَلَيْسَ مِنَّا ‘যে আমানত বা গচ্ছিত দ্রব্যের নামে কসম করে, সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়’।[3]
সুতরাং কা‘বা, আমানত, মর্যাদা, সাহায্য, অমুকের বরকত, অমুকের জীবন, নবীর মর্যাদা, অলীর মর্যাদা, পিতা-মাতা ও সন্তানের মাথা ইত্যাদি দিয়ে কসম খাওয়া নিষিদ্ধ।
কেউ যদি আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে কসম করে তবে তার কাফফারা হ’ল কালেমা ত্বাইয়েবা ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’ পাঠ করা। যেমন ছহীহ হাদীছে এসেছে-
مَنْ حَلَفَ فَقَالَ فِىْ حَلِفِهِ بِاللاَّتِ وَالْعُزَّى . فَلْيَقُلْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ-
‘যে ব্যক্তি শপথ করতে গিয়ে লাত ও উযযার নামে শপথ করে বসে, সে যেন বলে, ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’।[4]
উল্লিখিত অবৈধ শপথের ধাঁচে কিছু শিরকী ও হারাম কথা কতিপয় মুসলমানের মুখে উচ্চারিত হ’তে শোনা যায়। যেমন বলা হয়, ‘আমি আল্লাহ ও আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করছি’। ‘আল্লাহ আর আপনার উপরই ভরসা’। ‘এটা আল্লাহ ও তোমার পক্ষ হতে হয়েছে’। ‘আল্লাহ ও আপনি ছাড়া আমার আর কেউ নেই’। ‘আমার জন্য উপরে আল্লাহ আর নীচে আপনি আছেন’। ‘উপরে খোদা, নীচে হুদা’। ‘আল্লাহ ও অমুক যদি না থাকত’।[5] ‘আমি ইসলাম থেকে মুক্ত বা ইসলামের ধার ধারি না’। ‘হায় কালের চক্র, আমার সব শেষ করে দিল’। ‘এখন আমার দুঃসময় চলছে’। ‘এ সময়টা অলুক্ষণে’। ‘সময় বিশ্বাসঘাতকতা করেছে’ ইত্যাদি।
উল্লেখ্য, সময়কে গালি দিলে সময়ের স্রষ্টা আল্লাহকেই গালি দেয়া হয় বলে হাদীছে কুদসীতে এসেছে।[6] সুতরাং সময়কে গালি দেওয়া নিষিদ্ধ।
আল্লাহ ব্যতীত অন্যের সাথে عبد বা দাস অর্থবোধক শব্দ এ পর্যায়ে পড়ে। যেমন আবদুল মসীহ, আবদুর রাসূল, আবদুন নবী, আবদুল হুসাইন, গোলাম রাসূল ইত্যাদি।
আধুনিক কিছু শব্দ ও পরিভাষাও রয়েছে যা তাওহীদের পরিপন্থী। যেমন ইসলামী সমাজতন্ত্র, ইসলামী গণতন্ত্র, জনগণের ইচ্ছাই আল্লাহর ইচ্ছা, দশ যেখানে আল্লাহ সেখানে, দ্বীন আল্লাহর দেশ সকল মানুষের, বিপ্লবের নামে শপথ করে বলছি, খাঁটি আরব হওয়ার নামে শপথ করে বলছি ইত্যাদি।
কোন রাজা-বাদশাহকে ‘শাহানশাহ’ বা ‘রাজাধিরাজ’ বলাও হারাম (শাহজাহান ও জাহাঙ্গীরও এ পর্যায়ভুক্ত)। একইভাবে কোন মানুষকে ‘কাযীউল কুযাত’ বা ‘বিচারকদের উপরস্থ বিচারক’ বলা যাবে না। কেননা ‘কাযীউল কুযাত’ একমাত্র আল্লাহ।
কোন কাফির বা মুনাফিকের ক্ষেত্রে সম্মানসূচক ‘সাইয়িদ’ তথা ‘জনাব’ বা অন্য ভাষার অনুরূপ কোন শব্দ ব্যবহার করাও সিদ্ধ নয়।
আফসোস, অনুশোচনা ও বিরাগ প্রকাশের জন্য ‘যদি এটা করতাম তাহলে ওটা হত না’, ‘হে আল্লাহ! তুমি চাইলে আমাকে ক্ষমা করো’ এ জাতীয় কথা বলাও বৈধ নয়। কারণ এমন কথা বললে শয়তানের খপ্পরে পড়ে যেতে হয়।
No comments