শয়তানের আক্রমণ থেকে বাঁচতে যেসব দোয়া পড়বেন

শয়তান মানুষের প্রকাশ্য দুশমন। কোরআন সুন্নাহর দিকনিদের্শনা মেনে চললে শয়তানের সব রকমের ফেতনা আক্রমণ থেকে বেঁচে থাকা যায়। শয়তানের আক্রমণ থেকে বেঁচে থাকা একেবারেই সহজ। জন্য বেশি বেশি আল্লাহর রহমত কামনা করা এবং নবিজির সুন্নত আমলের অনুসরণ করা। সেগুলো কী?

শয়তানের আক্রমণ থেকে বাঁচতে চায় না, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। চাই সে দ্বীনদার হোক কিংবা বেদ্বীন, মুসলিম হোক কিংবা অমুসলিম। সবারই একটাই চাওয়া শয়তানের আক্রমণ থেকে বেঁচে থাকা। তাই শয়তানের আক্রমণ থেকে বেঁচে থাকতে বেশি বেশি তাউজ, ইসতেগফার দোয়া পড়ার বিকল্প নেই। যা কোরআন-সুন্নার একাধিক দিকনির্দেশনায় ওঠে এসেছে। তাহলো-

তাউজ

 أَعُوذُ بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ

উচ্চারণ : 'আউজুবিল্লাহি মিনাশ শাইত্বানির রাঝিম'

 অর্থ : 'বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই।'

নিয়ম : ফেতনা বা অন্যায়ের কথা মনে উদয় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তাউজ পড়ার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে শয়তানের আক্রমণ থেকে হেফাজতের আশ্রয় চাওয়া।

ইসতেগফার পড়া

বেশি বেশি ইসতেগফার পড়লে শয়তানের আক্রমণ থেকে মুক্ত থাকে মুমিন। সে কারণে বেশি বেশি ইসতেগফারের বিকল্প নেই। তাহলো-

> أَستَغْفِرُ اللهَ

উচ্চারণ : ‘আস্তাগফিরুল্লাহ।

অর্থ : আমি আল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনা করছি।

নিয়ম : প্রতি ওয়াক্ত ফরজ নামাজের সালাম ফেরানোর পর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইসতেগফারটি বার পড়তেন।' (মিশকাত)

> أَسْتَغْفِرُ اللهَ وَأَتُوْبُ إِلَيْهِ

উচ্চারণ : ‘আস্তাগফিরুল্লাহা ওয়া আতুবু ইলাইহি।

অর্থ : আমি আল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং তাঁর দিকেই ফিরে আসছি।

নিয়ম :  ইসতেগফারটি প্রতিদিন ৭০/১০০ বার পড়া। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রতিদিন ৭০ বারের অধিক তাওবাহ ইসতেগফার করতেন।' (বুখারি)

> رَبِّ اغْفِرْ لِيْ وَتُبْ عَلَيَّ إِنَّكَ (أنْتَ) التَّوَّابُ الرَّحِيْمُ

উচ্চারণ : 'রাব্বিগ্ ফিরলি ওয়া তুব আলাইয়্যা ইন্নাকা (আংতাত) তাওয়্যাবুর রাহিম।'

অর্থ : 'হে আমার প্রভু! আপনি আমাকে ক্ষমা করুন এবং আমার তাওবাহ কবুল করুন। নিশ্চয় আপনি মহান তাওবা কবুলকারী করুণাময়।'

নিয়ম : রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মসজিদে বসে এক বৈঠকেই এই দোয়া ১০০ বার পড়েছেন।' (আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ, তিরমিজি, মিশকাত)

> أَسْتَغْفِرُ اللَّهَ الَّذِي لاَ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ الْحَىُّ الْقَيُّومُ وَأَتُوبُ إِلَيْهِ

উচ্চারণ : 'আস্তাগফিরুল্লাহাল্লাজি লা ইলাহা ইল্লা হুওয়াল হাইয়্যুল কাইয়্যুমু ওয়া আতুবু ইলাইহি।'

অর্থ : 'আমি ওই আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই, যিনি ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোনো মাবুদ নেই, তিনি চিরঞ্জীব, চিরস্থায়ী এবং তাঁর কাছেই (তাওবাহ করে) ফিরে আসি।'

নামাজের শেষ বৈঠকে  দোয়াটি বেশি বেশি পড়া-

হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবাদেরকে এই দোয়াটি এভাবে শেখাতেন, যেভাবে কুরআনের সুরা শেখাতেন। তিনি বলতেন-

اَللَّهُمَّ اِنِّىْ أعُوْذُبِكَ مِنْ عَذَابِ جَهَنَّم- وَأعُوْذُبِكَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ- وَ أَعُوْذُبِكَ مِن فِتْنَةِ الْمَسِيْحِ الدَّجَّالِ - وَ أَعُوْذُبِكَ مِن فِتْنَةِ الْمَحْيَا وَ فِتْنَةِ الْمَمَاتِ - اَللَّهُمَّ اِنِّىْ أعُوْذُبِكَ مِنْ الْمَأْثَمِ وَ الْمَغْرَم

উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন আজাবি ঝাহান্নাম। ওয়া আউজুবিকা মিন আজাবিল ক্ববর। ওয়া আউজুবিকা মিন ফিতনাতিল মাসীহিদ দাঝ্ঝাল। ওয়া আউজুবিকা মিন ফিতনাতিল মাহইয়া ওয়াল মামাত। আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল্ মাছামি ওয়া মিনাল মাগরাম।

অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে জাহান্নামের আজাব থেকে আশ্রয় চাই, কবরের আজাব হতে আশ্রয় চাই। আশ্রয় চাই দাজ্জালের ফিতনার পরীক্ষা থেকে। তোমার কাছে আশ্রয় চাই জীবন মৃত্যুর পরীক্ষা থেকে এবং তোমার কাছে আশ্রয় চাই পাপ ঋণের বোঝা থেকে।’ (বুখারি, মুসলিম, মিশকাত)

. বিশেষ করে হজরত মুসা আলাইহিস সালামের বিখ্যাত ইসতেগফার পড়া-

رَبِّ إِنِّى ظَلَمْتُ نَفْسِى فَٱغْفِرْ لِى

উচ্চারণ : ‘রাব্বি ইন্নি জলামতু নাফসি ফাগফিরলি’ (সুরা কাসাস : আয়াত ১৬)

অর্থ : হে আমার রব! নিশ্চয় আমি আমার নফসের উপর জুলুম করেছি। সুতরাং আপনি আমাকে ক্ষমা করুন।

মনে রাখতে হবে

আখেরাতের কর্মক্ষেত্র দুনিয়া। আর নেক আমল করায় কে উত্তম?- তা জানার জন্যই মহান আল্লাহ তাআলা মানুষকে দুনিয়ার পরীক্ষাগারে পাঠিয়েছেন। যেখানে শয়তান প্রতিনিয়ত মানুষকে বিপদে ফেলতে বদ্ধপরিকর। তাইতো আল্লাহ তাআলা বলেন-

যিনি সৃষ্টি করেছেন মৃত্যু জীবনযাতে তোমাদের পরীক্ষা করে দেখতে পারেনউত্তম আমল বা কর্ম সম্পাদনে কে উত্তমআর তিনি পরাক্রমশালীক্ষমাশীল।’ (সুরা মুলক : আয়াত )

সুতরাং সব মানুষের উচিত, শয়তানের ধোঁকা   আক্রমণ থেকে বাঁচতে নিয়মিত তাউজ পড়া। বেশি বেশি ইসতেগফারের আমল করা। আর তাতেই মহান আল্লাহর পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবে মানুষ।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে শয়তানের সব ধরণের আক্রমণ থেকে হেফাজত করুন। হাদিসে বর্ণিত ঘটনা স্মরণ করে অন্যায় ফেতনার সম্মুখীন হলে বেশি বেশি তাউজ পড়ে শয়তানের আক্রমণ থেকে হেফাজত থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।

No comments

Powered by Blogger.