প্রশ্নঃ ৪০. জিলহজ্জ মাসের প্রথম দিন থেকে কুরবানির পশু জবেহ করা পযন্ত নখ, চুল কাটা যাবে না। এটা কি ঠিক?
প্রশ্নঃ ৪০. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, ১. জিলহজ্জ মাসের প্রথম দিন থেকে কুরবানির পশু জবেহ করার আগ পযন্ত নখ কাটা যাই না।এটা কি ঠিক?হাদিস সহ জানতে চাই।২।চুল কাটার বিষয়ে জানতে চাই।স্বামীর অনুমতি নিয়ে সাম নের একটু খানি চুল ছোট করে কাটা যাবে কি?
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
১- ইতিমধ্যে এ বিষয়ে উত্তর দেয়া হয়েছে ।
উত্তরটি নিচে রেফারেন্স উত্তরে সংযুক্ত করা হল।
২- মহিলাদের চুলের ক্ষেত্রে শরীয়তের মৌলিক নীতিমালা হল : ১. মহিলারা চুল লম্বা রাখবে। হাদীস শরীফ থেকে জানা যায় যে, উম্মাহাতুল মুমিনীন রা. চুল লম্বা রাখতেন। ২. এ পরিমাণ খাটো করবে না যে, পুরুষের চুলের মতো হয়ে যায়। হাদীস শরীফে পুরুষের সাদৃশ্য অবলম্বনকারিনী মহিলার প্রতি অভিসম্পাত করা হয়েছে। ৩. চুল কাটার ক্ষেত্রে বিজাতীয়দের অনুকরণ করবে না। কারণ হাদীসে বিজাতীয়দের অনুকরণ করতে নিষেধ করা হয়েছে। অতএব যে মহিলার চুল এত লম্বা যে, কিছু অংশ কাটলে পুরুষের চুলের সাথে সাদৃশ্য হবে না তার জন্য ঐ পরিমাণ কাটা জায়েয হবে। পক্ষান্তরে যার চুল তত লম্বা নয়; বরং অল্প কাটলেই কাঁধ সমান হয়ে যাবে এবং পুরুষের বাবরী চুলের মতো দেখা যাবে তার জন্য অল্প করেও কাটার অনুমতি নেই।
আর প্রয়োজনে মহিলাদের চুলের অগ্রভাগ সামান্য কাটতে পারবে। তবে এত বেশি পরিমাণ কাটা যাবে না, যার ফলে পুরুষের বাবরি চুলের মত হয়ে যায়। তদ্রপ বিজাতীয় নারীদের মত কোনো ফ্যাশন কাটিংও জায়েয নয়। হাদীসে এ ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা এসেছে। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত-
لَعَنَ رَسُولُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ المُتَشَبِّهِينَ
مِنَ الرِّجَالِ بِالنِّسَاءِ، وَالمُتَشَبِّهَاتِ مِنَ النِّسَاءِ بِالرِّجَالِ.
নারীর সাদৃশ্য গ্রহণকারী পুরুষদের উপর এবং পুরুষের সাদৃশ্য গ্রহণকারী নারীদের উপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অভিসম্পাত করেছেন। (সহীহ বুখারী, হাদীস ৫৮৮৫)
অন্য এক হাদীসে এসেছে- مَنْ تَشَبّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ.
যে ব্যক্তি ভিন্ন জাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করবে সে তাদের অন্তর্ভুক্ত হবে। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৪০২৭)
-হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাদ্দুর ৪/২০৩; রদ্দুল মুহতার ৬/৪০৭; ইমদাদুল আহকাম ৪/৩৫৪
সহীহ বুখারী ২/৮৭৪; জামে তিরমিযী ১/১০৩; সহীহ মুসলিম ১/১৪৮; তাকমিলা ফাতহুল মুলহিম ১/৪৭২; আলমুফাসসাল ফী আহকামিল মারআতি ওয়াল বায়তিল মুসলিম ৩/৪০০; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৩৭৭; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাদ্দুর ৪/২০৩; আলফাতাওয়াল মারআহ, শায়খ ইবনে বায পৃ. ১৬৫ আদ্দুররুল মুখতার ৬/৪১৬
والله اعلم بالصواب
উত্তর দিয়েছেনঃ হাফেয মাওলানা শুআইব মাহদী মাহী
রেফারেন্স উত্তর:
প্রশ্নঃ ৭৪১১. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, কোরবানির দিন চুল কাটতে নেই কেন
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
'কোরবানির দিন চুল কাটতে নেই' কথাটি এভাবে বলা উচিত নয়। এটা সহীহ নয়।
বরং যিলহজ্ব মাসের প্রথম দশকে চুল, নখ ইত্যাদি না কাটার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
কোরবানির দিন নিজের কুরবানী সম্পন্ন হওয়ার পর নখ, চুল কাটবে। হাদীসে বিষয়টি স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে। নিম্নে বিস্তারিত পেশ করা হল।
জিলহজ মাসের প্রথম দশকের একটি বিশেষ আমল হল- যিলহজ্বের চাঁদ ওঠা থেকে নিয়ে কুরবানী করা পর্যন্ত নখ-চুল না কাটা। এতে একদিকে হাজ্বী সাহেবানের সাথে একরকম সাদৃশ্য প্রকাশ পায়। পাশাপাশি এর জন্য রয়েছে বিশেষ ফযীলতও। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়সাল্লাম ইরশাদ করেন-
إِذَا رَأَيْتُمْ هِلَالَ ذِي الْحِجّةِ، وَأَرَادَ أَحَدُكُمْ أَنْ
يُضَحِّيَ، فَلْيُمْسِكْ عَنْ شَعْرِهِ وَأَظْفَارهِ.
যখন যিলহজ্বের দশক শুরু হবে তখন তোমাদের মধ্যে যে কুরবানী করবে সে যেন তার চুল নখ না কাটে। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৯৭৭; জামে তিরমিযী, হাদীস ১৫২৩
এই হাদীসের উপর ভিত্তি করে ফকীহগণ কুরবানীকারীর জন্য নখ-চুল না কাটাকে মুস্তাহাব বলেছেন। তাই যিলকদ মাসেই চুল-নখ কেটে যিলহজ্বের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা চাই। যাতে তা বেশি লম্বা হয়ে না যায়, যা সুন্নতের খেলাফ।
অতএব যিলহজ্ব আগমনের পূর্বেই নখ-চুল কেটে ছেটে পরিপাটি হয়ে থাকা বাঞ্ছনীয়।
যারা কুরবানী করবেন তারা এ আমলের প্রতি তো যত্নবান হবেনই।
আর বিভিন্ন বর্ণনা ও সাহাবা-তাবেয়ীগনের আমলের নিরিখে এ-ও বুঝে আসে যে, যারা কুরবানী করবেন না তারাও এ ফযীলতপূর্ণ আমলে শরীক হতে পারেন। এমনকি এসময় বাচ্চাদের চুল-নখ কাটা থেকে বিরত থাকাও ভালো; যা সাহাবা-তাবেয়ীনের আমল থেকে বোঝা যায়।
১- আব্দুল্লাহ বিন আমর ইবনুল আস রা. থেকে বর্ণিত-
أَنّ رَسُولَ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ قَالَ لِرَجُلٍ: أُمِرْتُ
بِيَوْمِ الْأَضْحَى عِيدًا جَعَلَهُ اللهُ عَزَّ وَجَلّ لِهَذِهِ الْأُمّةِ،
فَقَالَ الرّجُلُ: أَرَأَيْتَ إِنْ لَمْ أَجِدْ إِلّا مَنِيحَةً أُنْثَى
أَفَأُضَحِّي بِهَا؟ قَالَ: لَا، وَلَكِنْ تَأْخُذُ مِنْ شَعْرِكَ، وَتُقَلِّمُ
أَظْفَارَكَ، وَتَقُصّ شَارِبَكَ، وَتَحْلِقُ عَانَتَكَ، فَذَلِكَ تَمَامُ
أُضْحِيَّتِكَ عِنْدَ اللهِ عَزّ وَجَلّ.
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমাকে কুরবানীর দিবসে ঈদ (পালনের) আদেশ করা হয়েছে, যা আল্লাহ এ উম্মতের জন্য নির্ধারণ করেছেন। এক সাহাবী আরজ করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! যদি আমার কাছে শুধু একটি মানীহা থাকে (অর্থাৎ অন্যের থেকে নেওয়া দুগ্ধ দানকারী উটনী) আমি কি তা কুরবানী করব? নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, না, তবে তুমি চুল, নখ ও মোঁচ কাটবে এবং নাভীর নিচের পশম পরিষ্কার করবে। এটাই আল্লাহর দরবারে তোমার পূর্ণ কুরবানী বলে গণ্য হবে। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ২৭৮৯; সুনানে নাসায়ী, হাদীস ৪৩৬৫
এই হাদীসে যেহেতু কুরবানীর দিন চুল-নখ কাটার কথা আছে তাহলে এর আগে না কাটার দিকে ইঙ্গিত বুঝা যায়।
২. ওলীদ বিন মুসলিম বলেন, আমি মুহাম্মাদ বিন আজলানকে যিলহজ্বের দশকে চুল কাটা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তখন তিনি বললেন, আমাকে নাফে রাহ. বলেছেন-
أَنّ ابْنَ عُمَرَ، مَرّ بِامْرَأَةٍ تَأْخُذُ مِنْ شَعْرِ ابْنِهَا فِي
أَيّامِ الْعَشْرِ فَقَالَ: لَوْ أَخّرْتِيهِ إِلَى يَوْمِ النّحْرِ كَانَ
أَحْسَنَ.
আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. এক নারীর নিকট দিয়ে অতিক্রম করছিলেন। মহিলাটি যিলহজ্বের দশকের ভেতর তার সন্তানের চুল কেটে দিচ্ছিল। তখন তিনি বললেন, যদি ঈদের দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে তবে বড় ভাল হত। -মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদীস ৭৫২০
৩. এ সম্পর্কে আরেকটি বর্ণনা হল-
قال مسدد وحدثنا المعتمر بن سليمان التيمي سمعت أبي يقول: كان ابن سيرين
يكره إذا دخل العشر أن يأخذ الرجل من شعره حتى يكره أن يحلق الصبيان في العشر.
মুতামির ইবনে সুলাইমান আততাইমী বলেন, আমি আমার পিতাকে বলতে শুনেছি, ইবনে সীরীন রাহ. যিলহজ্বের দশকে চুল কাটা অপছন্দ করতেন। এমনকি এই দশকে ছোট বাচ্চাদের মাথা মুণ্ডন করাকেও অপছন্দ করতেন। -আল মুহাল্লা, ইবনে হাযম ৬/২৮
(মাসিক আলকাউসার, দ্রষ্টব্য: সহীহ মুসলিম হাদীস : ১৯৭৭; সুনানে আবু দাউদ হাদীস : ২৭৯১; সুনানে নাসাঈ হাদীস : ৪৩৬২-৪৩৬৪; মিরকাত ৩/৩০৬; বাযলুল মাজহূদ ১৩/১২; শরহুল মুহাযযাব ৮/৩৬২; আলইনসাফ ৪/১০৯; আশশরহুল কাবীর ২/৩০০
সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ২৭৮৯; সুনানে নাসায়ী, হাদীস ৪৩৬৫; মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদীস ৭৫২০; আল মুহাল্লা, ইবনে হাযম ৬/২৮)
والله اعلم بالصواب
উত্তর দিয়েছেনঃ হাফেয মাওলানা শুআইব মাহদী মাহী
No comments