নবীজী (সাঃ.) কি হাত তুলে দোয়া করতেন?
দুই হাত তুলে দোয়া করা সুন্নত। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অনেক সময় দুই হাত তুলে দোয়া করতেন। বিশেষ কিছু মুহূর্তে তিনি দুই হাত তুলে দোয়া করেছেন মর্মে হাদিসের বর্ণনা থেকে প্রমাণ পাওয়া যায়। ইমাম বুখারি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি তাঁর গ্রন্থে সেসব সময় ও স্থানগুলো তুলে ধরেছেন। এমনকি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দোয়া করার সময় কত উপরে দুই হাত ওঠাতেন, তা-ও হাদিসে বর্ণিত হয়েছে এভাবে-
হজরত আবু মুসা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুই হাত এতটুকু তুলে দোয়া করতেন যে, আমি তাঁর বগলের ফর্সা রং দেখেতে পেয়েছি।’ (বুখারি)
নবিজি (সা.) যেসব সময় দুই হাত তুলে দোয়া করতেন
নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সুনির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রে ও সময় দুই হাত তুলে দোয়া করতেন। যা হাদিসের সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনায় ওঠেছে এসেছে। তাহলো-
১. বৃষ্টি চেয়ে দোয়া
> হজরত আনাস ইবনে মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সময় একবছর দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। সে সময় একদিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খুতবাহ দেওয়ার সময় এক বেদুঈন উঠে দাঁড়াল এবং আরজ করলো- হে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! বৃষ্টি না হওয়ার কারণে সম্পদ (ফসল) ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে, পরিবার পরিজন অনাহারে মরছে। আপনি আমাদের জন্য দোয়া করুন। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে দুই হাত তুলে দোয়া করলেন। সে (দোয়ার) সময় আকাশে কোনো মেঘ ছিল না।
(রাবী বলেন) আল্লাহর কসম করে বলছি! তিনি (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাত না নামাতেই পাহাড়ের মত মেঘের খণ্ড এসে একত্র হয়ে গেলো এবং তাঁর মিম্বর থেকে নামার সঙ্গে সঙ্গেই ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টি পড়তে লাগলো। এভাবে দিনের পর দিন ক্রমাগত পরবর্তী জুমা পর্যন্ত (বৃষ্টি) হতে থাকলো। এরপর পরবর্তী জুমার দিনে সেই বেদুঈন অথবা অন্য কেউ দাঁড়িয়ে বললো- হে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! অতি বৃষ্টিতে আমাদের বাড়ি-ঘর ভেঙ্গে পড়ে যাচ্ছে, ফসল ডুবে যাচ্ছে । অতএব আপনি আল্লাহর কাছে আমাদের জন্য দোয়া করুন। তখন তিনি দুই হাত তুললেন এবং বললেন-
'হে আল্লাহ! আমাদের পার্শ্ববর্তী এলাকায় বৃষ্টি দাও, আমাদের এখানে নয়। এ সময় তিনি স্বীয় অঙ্গুলি দ্বারা মেঘের দিকে ইশারা করেছিলেন। ফলে সেখান থেকে মেঘ কেটে গেলো।’ (বুখারি)
হজরত আনাস ইবনে মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, একবার জুমার দিন এক বেদুঈন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে উপস্থিত হয়ে বললো- হে আল্লার রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! (বৃষ্টির অভাবে গৃহপালিত পশুগুলো মারা যাচ্ছে। মানুষ খতম হয়ে যাচ্ছে। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দোয়ার জন্য হাত উঠালেন। আর লোকেরাও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে হাত উঠালো। বর্ণনাকারী বলেন, আমরা মসজিদ থেকে বের হওয়ার আগেই বৃষ্টি আরম্ভ হয়ে গেলো। এমনকি পরবর্তী জুমা পর্যন্ত বৃষ্টি হতে থাকলো। তখন একলোক রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছে এসে বললো- হে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! রাস্তা-ঘাট অচল হয়ে গেল।’ (বুখারি)
২. অতিবৃষ্টির সময় তা বন্ধের জন্য দোয়া
হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, পরবর্তী জুমায় ঐ দরজা দিয়েই এক ব্যক্তি প্রবেশ করলো (তখন) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-দাঁড়িয়ে খুতবাবস্থায় ছিলেন। এরপর লোকটি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে বললো, হে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সম্পদ ধ্বংস হয়ে গেলো এবং রাস্তা-ঘাট বন্ধ হয়ে গেলো। আপনি আল্লাহর কাছে দোয়া করুন, আল্লাহ বৃষ্টি বন্ধ করে দেবেন।
রাবি হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজের দুই হাত তুলে বললেন- ‘হে আল্লাহ! আমাদের কাছে থেকে বৃষ্টি সরিয়ে নিন, আমদের উপর বৃষ্টি বর্ষণ করবেন না। হে আল্লাহ! অনাবাদী জমিতে, উঁচু জমিতে উপত্যকায় এবং ঘন বৃক্ষের উপর বৃষ্টি বর্ষণ করুন।’ (বুখারি)
৩. চন্দ্র ও সূর্যগ্রহণের সময় দোয়া
হজরত আব্দুর রহমান ইবনু সামুরাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জীবদ্দশায় এক সময় তীর নিক্ষেপ করছিলাম। হঠাৎ দেখি সূর্যগ্রহণ লেগেছে। আমি তীরগুলো নিক্ষেপ করলাম এবং বললাম, আজ সূর্যগ্রহণে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অবস্থান লক্ষ্য করবো। এরপর আমি তাঁর কাছে পৌঁছলাম। তখন তিনি দুই হাত তুলে দোয়া করছিলেন এবং তিনি 'আল্লাহু আকবার', 'আল হামদুলিল্লাহ', 'লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ' বলছিলেন। শেষ পর্যন্ত সূর্য প্রকাশ হয়ে গেলো। এপর তিনি দুইটি সুরা পড়লেন এবং দুই রাকাত নামাজ আদায় করলেন।’ (মুসলিম)
৪. উম্মাতের জন্য দোয়া
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, একবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুই হাত তুলে সুরা ইবরাহিমের ৩৫ নং আয়াত পাঠ করেন-
وَإِذْ قَالَ إِبْرَاهِيمُ رَبِّ اجْعَلْ هَـذَا
الْبَلَدَ آمِنًا وَاجْنُبْنِي وَبَنِيَّ أَن نَّعْبُدَ الأَصْنَامَ
‘হে পালনকর্তা, এ শহরকে শান্তিময় করে দিন এবং আমাকে ও আমার সন্তান-সন্তুতিকে মূর্তি পূজা থেকে দূরে রাখুন।’
(নবিজি বলতে থাকেন) আমার উম্মাত, আমার উম্মাত এবং কাঁদতে থাকেন। তখন আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে জিবরিল! তুমি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে যাও এবং জিজ্ঞাসা করো, কেন তিনি কাঁদেন?
এরপর জিবরিল আলাইহিস সালাম তাঁর কাছে এসে কাঁন্নার কারণ জানতে চাইলেন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে বললেন, আল্লাহ তাআলা তা অবগত আছেন। এরপর আল্লাহ তাআলা জিবরিল আলাইহিস সালামকে বললেন, ‘যাও, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলো যে, আমি তার উপর এবং তার উম্মতের উপর সন্তুষ্ট আছি। আমি তার অকল্যাণ করবো না।’ (মুসলিম)
৫. কবর জিয়ারতের সময় দোয়া
> হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, একবার রাতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমার কাছে ছিলেন। শোয়ার সময় চাদর রাখলেন এবং জুতা খুলে পায়ের নিচে রেখে শুয়ে পড়লেন। তিনি অল্প সময় এ খেয়ালে থাকলেন যে, আমি ঘুমিয়ে পড়েছি। এরপর ধীরে চাদর ও জুতা নিলেন এবং ধীরে দরজা খুলে বেরিয়ে পড়লেন এবং দরজা বন্ধ করে দিলেন। তখন আমিও কাপড় পরে চাদর মাথায় দিয়ে তাঁর পেছনে চললাম। তিনি ‘বাকিউল গারকাদ’ (জান্নাতুল বাকি) পৌছলেন এবং দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকলেন। এরপর তিন তিন বার হাত তুলে দোয়া করলেন।’ (মুসলিম)
হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, কোনো এক রাতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বের হলেন, আমি বারিরা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে পাঠালাম, তাঁকে দেখার জন্য যে, তিনি কোথায় যান। তিনি জান্নাতুল বাকিতে গেলেন এবং পার্শ্বে দাঁড়ালেন। এরপর হাত তুলে দোয়া করলেন। তারপর ফিরে আসলেন। বারিরাও ফিরে আসলো এবং আমাকে খবর দিল। আমি সকালে তাঁকে জিজ্ঞাসা করলাম, হে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি গত রাতে কোথায় গিয়েছিলেন? তিনি বললেন, জান্নাতুল বাকিতে গিয়েছিলাম কবরবাসীর জন্য দোয়া করতে।’ (বুখারি, মুসলম)
৬. কারো জন্য ক্ষমা চাওয়ার লক্ষ্যে দোয়া
আউতাসের যুদ্ধে আবু আমেরের তীর লাগলে তিনি নিজ ভাতিজা আবু মুসার মাধ্যমে বলে পাঠান যে, আপনি আমার পক্ষ থেকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -কে সালাম পৌঁছে দেবেন এবং (আমার জন্য) ক্ষমার দোয়া করতে বলবেন।
আবু মুসা আশআরি রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসুলুল্লাহর কাছে এ সংবাদ পৌঁছালে তিনি পানি নিয়ে ডাকলেন এবং ওজু করলেন। এরপর হাত তুলে দোয়া করলেন-
'হে আল্লাহ! উবাইদ ও আবু আমেরকে ক্ষমা করে দাও।
রাবি বলেন- এ সময়ে আমি তাঁর বগলের শুভ্রতা দেখলাম। তিনি বললেন, 'হে আল্লাহ! কেয়ামতের দিন তুমি তোমার সৃষ্ট মানুষের অনেকের উর্ধ্বে তাকে স্থান দিও।’ (বুখারি)
৭. হজে পাথর নিক্ষেপের সময় দোয়া
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু ৩টি জামারায় ৭টি পাথর খণ্ড নিক্ষেপ করতেন এবং প্রতিটি পাথর নিক্ষেপের সঙ্গে তাকবির বলতেন। প্রথম দুই জামারায় পাথর নিক্ষেপের পর কেবলামুখী হয়ে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে দুই হাত তুলে দোয়া করতেন। তবে তৃতীয় জামারায় পাথর নিক্ষেপের পর দাঁড়াতেন না। শেষে বলতেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -কে এগুলো এভাবেই পালন করতে দেখেছি।’ (বুখারি)
৮. যুদ্ধক্ষেত্রে দোয়ার সময়
হজরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বদরের যুদ্ধে মুশরিকদের দিকে লক্ষ্য করে দেখলেন, তাদের সংখ্যা এক হাজার। আর তাঁর সাথীদের সংখ্যা মাত্র তিনশত ঊনিশ জন। তখন তিনি কেবলামুখী হয়ে দুই হাত তুলে দোয়া করতে লাগলেন। এ সময় তিনি বলছিলেন-
'হে আল্লাহ! তুমি আমাকে সাহায্য করার ওয়াদা করেছো। হে আল্লাহ! তুমি যদি এই জামাতকে আজ ধ্বংস করে দাও, তাহলে এই জমিনে তোমাকে ডাকার মত আর কেউ অবশিষ্ট থাকবে না।’
এভাবে তিনি উভয় হাত তুলে কেবলামুখী হয়ে প্রার্থনা করতে থাকলেন। এ সময় তাঁর কাঁধ থকে চাদর পড়ে গেল। আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু তখন চাদরটি কাঁধে তুলে দিয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে জড়িয়ে ধরে বললেন- ‘হে আল্লাহর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনার প্রতিপালক প্রার্থনা কবুলে যথেষ্ট। নিশ্চয়ই তিনি আপনার সঙ্গে কৃত ওয়াদা পূরণ করবেন।’ (মুসলিম)
৯. কোনো গোত্রের জন্য দোয়ার সময়
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, একবার আবু তুফাইল রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছে গিয়ে বললো, হে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! দাউস গোত্রও অবাধ্য এবং অবশীভূত হয়ে গেছে, আপনি তাদের জন্য আল্লাহর কাছে বদ-দোয়া করুন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কেবলামুখী হলেন এবং দুই হাত তুলে বললেন-
‘হে আল্লাহ! তুমি দাউস গোত্রকে হেদায়াত দান কর এবং তাদেরকে সঠিক পথে নিয়ে আস।’ (বুখারি, মুসলিম, আদাবুল মুফরাদ)
১০. সাফা-মারওয়া সায়ির সময় দোয়া
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কায় প্রবেশ করলেন এবং পাথরের কাছে এসে পাথর চুম্বন করলেন, বাইতুল্লাহ তাওয়াফ করলেন এবং সাফা পাহাড়ে এসে তার উপর উঠলেন। এরপর তিনি বাইতুল্লাহর দিকে লক্ষ্য করে দুই হাত তুলে আল্লাহকে ইচ্ছামত স্মরণ করতে লাগলেন এবং দোয়া করতে লাগলেন।’ (আবু দাউদ, মিশকাত)
১১. কুনুতে নাজেলার সময়
হজরত আবু ওসামা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুনুতে নাজেলায় হাত তুলে দোয়া করেছিলেন। (বুখারি)
১২. হজরত খালিদের (রা.) জন্য দোয়া
> রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খালেদ ইবনু ওয়ালিদকে বনি জাযিমার বিরুদ্ধে এক অভিযানে পাঠালেন। খালেদ তাদেরকে ইসলামের দাওয়াত দিলেন। তারা এ দাওয়াত গ্রহণ করে নিল। কিন্তু ‘ইসলাম গ্রহণ করেছি'- এ কথা না বলে তারা বলতে লাগল- 'আমরা নিজেদের ধর্ম ত্যাগ করেছি'; 'আমরা নিজেদের ধর্ম ত্যাগ করেছি।’
তখন খালেদ তাদের হত্যা ও বন্দী করতে লাগলেন এবং বন্দীদের আমাদের প্রত্যেকের হাতে সমর্পণ করতে থাকলেন। একদিন খালেদ আমাদের প্রত্যেককে নিজ নিজ (অধীনস্ত) বন্দীকে হত্যা করার নির্দেশ দিলেন।
আমি বললাম, আল্লাহর কসম! আমি নিজের বন্দীকে হত্যা করবো না এবং আমার সাথীদের কেউই তার বন্দীকে হত্যা করবে না। অবশেষে আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের খেদমতে উপস্থিত হলাম এবং তাঁর কাছে উক্ত ঘটনা বর্ণনা করলাম। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজ হাত তুলে দোয়া করলেন-
'হে আল্লাহ! খালেদ যা করেছে তার দায় থেকে আমি মুক্ত। এ কথা তিনি দুই বার বললেন।’ (বুখারি)
> হজরত ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুই হাত তুলে দোয়া করেছেন- ‘হে আল্লাহ! খালিদ যা করেছে; আমি তা থেকে অসন্তোষ প্রকাশ করছি।’ (বুখারি)
১৩. ভুল মন্তব্য শুনে দোয়া
হজরত আবু হুমায়েদ সায়েদি রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, একবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইবনু লুত্ববিইয়াহ নামক 'আসাদ' গোত্রের এক ব্যক্তিকে জাকাত আদায়ের জন্য কর্মচারী নিযুক্ত করলেন। তখন সে জাকাত নিয়ে মাদিনায় ফিরে এসে বললো, এ অংশ আপনাদের প্রাপ্য জাকাত, আর এ অংশ আমাকে হাদিয়া স্বরূপ দেওয়া হয়েছে।
এ কথা শুনে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ভাষণ দানের জন্য দাঁড়ালেন এবং প্রথমে আল্লাহর গুণগান বর্ণনা করলেন। এরপর বললেন, আমি তোমাদের কোনো ব্যক্তিকে সেসব কাজের জন্য কর্মচারী নিযুক্ত করি, যেসব কাজের দায়িত্ব আল্লাহ তাআলা আমার উপর সমর্পণ করেছেন। এরপর তোমাদের সে ব্যক্তি এসে বলে যে, এটা আপনাদের প্রাপ্য জাকাত, আর এটা আমাকে হাদিয়াস্বরূপ দেওয়া হয়েছে। সে কেন তার বাবা-মার ঘরে বসে থাকল না? দেখা যেত কে তাকে হাদিয়া দিয়ে যায়।
আল্লাহর কসম! যে ব্যক্তি এর কোনো কিছু গ্রহণ করবে, সে নিশ্চয়ই কেয়ামতের দিন তা আপন ঘাড়ে বহন করে উপস্থিত হবে। যদি আত্মসাৎকৃত বস্তু উট হয়, উটের ন্যায় 'চি চি' করবে, যদি গরু হয় তবে 'হাম্বা হাম্বা' করবে। আর যদি ছাগল-ভেড়া হয়, তবে 'ম্যা ম্যা' করবে।
এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজের দুই হাত তুললেন, তাতে আমরা তাঁর বগলের শুভ্রতা প্রত্যক্ষ করলাম। তিনি বললেন-
'হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই তোমার নির্দেশ পৌঁছে দিলাম। হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আমি পৌঁছে দিলাম।’ (বুখারি)
১৪. কষ্ট বা গালি দেওয়ার প্রতিকারে দোয়া
হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে হাত তুলে দোয়া করতে দেখেন। তিনি দোয়ায় বলছিলেন, নিশ্চয়ই আমি মানুষ। কোন মুমিনকে গালি বা কষ্ট দিয়ে থাকলে তুমি আমাকে শাস্তি প্রদান করো না।’ (আদাবুল মুফরাদ)
আরও পড়ুন-
ফরয নামাযের পর হাত তুলে মুনাজাত প্রসঙ্গে
No comments