জীবনে সফল হওয়ার দোয়া
জীবনে সফলতা কে না চায়। চাই তা দুনিয়া কিংবা পরকালের। এমন কোনো মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না, যারা দুনিয়া কিংবা পরকালে জীবনের সফলতা চায় না। তাইতো নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর উম্মতের সফলতায় বিশেষ কিছু উপদেশ এবং একটি দোয়া তুলে ধরেছেন। যার মাধ্যমে জীবনে সফলতা পাওয়া সুনিশ্চিত। কী সেই উপদেশ ও দোয়া?
জীবনে সফলতা পাওয়ার এই উপদেশগুলোই সেই ঐতিহাসিক উপদেশ, যে উপদেশে আলোকিত জীবন ফিরে পেয়েছিল অজ্ঞতার যুগের মানুষ। তাহলো-
১. বিভেদ সৃষ্টি না করা
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মানুষের মাঝে বিভেদ সৃষ্টি করতে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে ওই ব্যক্তিই সবচেয়ে বেশি সম্মানিত, যে ব্যক্তি আল্লাহকে বেশি ভয় করে।’
আল্লাহ তাআলা এ ঘোষণাটি নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এভাবে জানিয়েছেন, ‘হে মানুষ! আমি তোমাদের এক পুরুষ ও এক নারী থেকে সৃষ্টি করেছি; পরে তোমাদের বিভক্ত করেছি বিভিন্ন জাতি ও গোষ্ঠীতে; যাতে তোমরা একে অপরের সঙ্গে পরিচিত হতে পার। তোমাদের মধ্যে ওই ব্যক্তিই আল্লাহর কাছে বেশি মর্যাদাবান; যে সর্বাধিক আল্লাহকে ভয় করে। আল্লাহ সবকিছু জানেন এবং সব খবর রাখেন। (সুরা হুজরাত: আয়াত ১৩)
২. উন্নত চরিত্রের অধিকারী হওয়া
কুলুষমুক্ত চরিত্রের ব্যক্তিকে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঈমানদার হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেন- ‘কোনো মানুষ যদি পরিপূর্ণ ঈমানদার হতে চায়, তবে সে যেন উত্তম চরিত্র অর্জন করে।’ এ হাদিসে চরিত্রকে মানুষের শ্রেষ্ঠ সম্পদ হিসেবে তুলে ধরেছেন।
৩. মানুষের কাছে হাত পেতে না চাওয়া
নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পরিশুদ্ধ জীবনের জন্য মানুষকে নির্লোভী হতে উপদেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘সবচেয়ে বেশি সম্মানিত হতে পারবে ওই ব্যক্তি, যে মানুষের কাছে কোনো কিছু হাত পেতে চায় না।’
৪. আল্লাহর জিকিরে মশগুল থাকা
গুনাহমুক্ত পরিশুদ্ধ জীবনের জন্য নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সব সময় আল্লাহ তাআলার জিকিরের উপদেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আল্লাহর কাছে সর্বাধিক সম্মানিত ওই ব্যক্তি, যে বেশি বেশি আল্লাহর জিকির করে।’ আল্লাহ তাআলা নিজেও মানুষকে বেশি বেশি জিকির করার নির্দেশ দিয়েছেন-
‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ কর; এবং সকাল-সন্ধ্যায় আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা কর। তিনিই তোমাদের প্রতি রহম করেন এবং তাঁর ফেরেশতারাও তোমাদেরকে অন্ধকার থেকে আলোর পথ দেখানোর জন্য রহমতের দোয়া করে। তিনি মুমিনদের প্রতি দয়ালু।’ (সুরা আহজাব: আয়াত ৪১-৪৩)
৫. সব সময় অজুর সঙ্গে থাকা
জীবনে সফলতা পেতে আত্মশুদ্ধি ও পবিত্রতার বিকল্প নেই। সে কারণেই নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অজুর সঙ্গে থাকতেন এবং অন্যকেও অজুর সঙ্গে পবিত্র হয়ে থাকতে বলেছেন। এটি একটি বরকতময় কাজ। অজুর সঙ্গে থাকলে মানুষের রিজিক বেড়ে যায়। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সব সময় ওজুর সঙ্গে থাকে, আল্লাহ তাআলা তার রিজিকের প্রশস্ততা বৃদ্ধি করে দেন।’
৬. হারাম থেকে বেঁচে থাকা
হালাল জীবন যাপন এবং হারাম বর্জন যেমন ইবাদত কবুলের পূর্বশর্ত। তেমনি সফল জীবন পাওয়ার অন্যতম উপায়। কেননা হারাম বর্জনকারী ব্যক্তির চাওয়া-পাওয়া আল্লাহ তাআলা পূরণ করে দেন। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘ওই ব্যক্তির সব দোয়া (চাওয়া-পাওয়া) আল্লাহর দরবারে কবুল হয়, যে ব্যক্তি সব সময় হারাম থেকে বেঁচে থাকে।’
৭. অপবিত্রতা থেকে দ্রুত পবিত্র হওয়া
ব্যক্তি জীবনে মানুষ অপবিত্রতা থেকে দ্রুত পবিত্রতা অর্জন করে নেবে। কারণ দ্রুত পবিত্রতা অর্জনে রয়েছে কল্যাণ ও বরকত। মুমিন মুসলমানের মুক্তি ও কল্যাণে নবি সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম মানুষের ব্যক্তি জীবনের বিষয়েও উপদেশ তুলে ধরেছেন এভাবে- ‘কেয়ামতের দিন আল্লাহর দরবারে গুনাহমুক্তভাবে উপস্থিত হওয়ার (গুরুত্বপূর্ণ) আমল হলো, স্ত্রী সহবাসের পর দ্রুত পবিত্র হয়ে যাওয়া।’
৮. কারও প্রতি জুলুম না করা
এটি অনেক বড় একটি গুণ। এ গুণের কারণে পরকালে নূর নিয়ে ওঠবে। মানুষকে নিরাপদ রাখতে এবং জুলুমমুক্ত জীবনের প্রতি উৎসাহিত করতে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই বড় সুসংবাদ দিয়েছে। তিনি বলেছেন- ‘পরকালে ওই ব্যক্তি আল্লাহর নূরসহ ওঠবে; যে ব্যক্তির দ্বারা কখনও মানুষ অত্যাচিরত হবে না।’ সুতরাং কোনোভাবে কারো প্রতি জুলুম বা অত্যাচার করা যাবে না।
৯. গুরুত্বের সঙ্গে ফরজ বিধান মেনে চলা
আল্লাহমুখী জীবন গড়ার অন্যতম উপায় ফরজ বিধানসমূহ মেনে চলা। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও মানুষকে আল্লাহমুখী জীবন গড়ার উপদেশ দিয়েছেন এভাবে- ‘ওই ব্যক্তি আল্লাহর সবচেয়ে প্রিয় বান্দা হবে; যে আল্লাহর ফরজ বিধান পালনে গুরুত্বের সঙ্গে যত্নবান হয়।’
১০. সব সময় ধৈর্যধারণ করা
সবরে মেওয়া ফলে। ধৈর্যের ফল অতি মিষ্টি- এ রকম অনেক প্রবাদ বাক্য রয়েছ। জীবনে সফলতা পেতে ধৈর্যের বিকল্প নেই। সবরের প্রতি উৎসাহিত করতে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোষণা করেন- ‘দুনিয়ার বিপদাপদে যে ব্যক্তি সবর বা ধৈর্য ধারণ করবে, ওই ব্যক্তির দ্বারা জাহান্নামের আগুণ নেভানো সম্ভব হবে।’
১১. নবিজির উপদেশে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা
নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মানুষকে তিনটি উপায় নিজেদের নিয়ন্ত্রণ করতে বলেছেন। উন্নত জীবনের পথে পরিচালিত করার কথা বলেছেন। তিনি বিমেষ তিনটি উপদেশ দিয়েছেন-
> গরিব-অসহায়কে অতি গোপনে সাদকা তথা দান-সহযোগিতা করবে।
> আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখবে।
> কখনো কোনোভাবেই কারো (মানুষের) ওপর রাগ বা অভিমান করা যাবে না। সর্বাবস্থায় রাগ বর্জন করা।
১২. বেশি বেশি দোয়া করা
জীবনের সফলতায় ছোট্ট একটি দোয়ায় আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া। ছোট্ট এ দোয়াটিতে সব আবেদন চলে এসেছে। তাহলো-
اَللَّهُمَّ اِنِّى أَسْألُكَ الْهُدَى
وَالتُّقَى وَالْعَفَافَ وَالْغِنَى
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকাল হুদা; ওয়াত তুক্বা; ওয়াল আ’ফাফা; ওয়াল গেনা।
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে হেদায়েত (পরিশুদ্ধ জীবন) কামনা করি এবং আপনার ভয় তথা পরহেজগারি কামনা করি এবং আপনার কাছে সুস্থতা তথা নৈতিক পবিত্রতা কামনা করি এবং সম্পদ-সামর্থ্য (আর্থিক স্বচ্ছলতা) কামনা করি। (মুসলিম, তিরমিজি, ইবনে মাজাহ ও মুসনাদে আহমদ)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে জীবনের সফলতায় প্রতিটি ক্ষেত্রে উল্লেখিত হাদিসগুলোর উপর যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। প্রিয় নবির শেখানো দোয়ায় আল্লাহর কাছে দুনিয়া ও পরকালের কল্যাণ পেতে ধরণা দেওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।
No comments