বিপদে আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট থাকার ফজিলত

আল্লাহ তাআলা মানুষকে তাঁর প্রতিনিধিত্ব করার জন্যই ভালোবেসে সৃষ্টি করেছেন। তাই হাসি-কান্না, সুখ-দুঃখ সর্বাবস্থায় বান্দা আল্লাহর ওপর সন্তুষ্ট থাকেন। বিপদ-মুসিবতে সন্তুষ্ট চিত্তে অবস্থানকারী বান্দাকেও মহান আল্লাহ তাআলা ভালোবাসেন।

কঠিন বিপদেও আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট থাকা বান্দারা অবলিলায় বলে থাকেন- ‘ইন্না লিল্লাহ আর আল্লাহ তাআলার দরবারেই মুসিবতের ধরণ অনুযায়ী সাওয়াবের আশা করেন।

বান্দা যখনই আল্লাহর দেয়া মুসিবতে আক্রান্ত হয়ে তা মেনে নেয়, তখনই ওই বান্দার জন্য বিপদের সমপরিমাণ সন্তুষ্টি পরিপূর্ণ সাওয়াব নির্ধারিত হয়ে যায়। হাদিসে এসেছে-
'
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- ‘নিশ্চয় মুসিবত তথা বিপদের বিনিময়ে বড় পুরষ্কার বড় পাওয়া যায়। আর নিশ্চয় আল্লাহ যখন কোনো জাতিকে ভালোবাসেন তখন তার ওপর বিপদাপদ চাপিয়ে দেন। সুতরাং (বিপদের সময়) যে সন্তুষ্ট হবে, তার জন্য সন্তুষ্টি থাকবে; আর যে অসন্তুষ্ট হবে, তার জন্য (আল্লাহর পক্ষ থেকে) অসন্তুষ্টিই থাকবে।’ (তিরমিজি)

দুনিয়ার যাবতীয় বিপদ মুসিবতে মুমিন বান্দাকে আল্লাহর দরবারে ধরণা দিতেও শিখিয়েছেন প্রিয়নবি। হাদিসে এসেছে-
- ‘
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যখন কোনো মুসলিম মুসিবতে আক্রান্ত হয়; তারপর আল্লাহ তাকে যে নির্দেশ দিয়েছেন তা বলে-
اِنَّا لِلَّهِ وَ اِنَّا اِلَيْهِ رَاجِعُوْنَ – اَللَّهُمَّ اَجِرْنِىْ فِىْ مُصِيْبَتِىْ وَ اَخْلِفْ لِىْ خَيْرًا مِنْهَا
উচ্চারণ : ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। আল্লাহুম্মা আজিরনি ফি মুসিবাতি ওয়া আখলিফলি খাইরাম মিনহা।
অর্থ : ‘আমরা আল্লাহর জন্য এবং আল্লাহর দিকেই ফিরে যাব। হে আল্লাহ! তুমি আমাকে আমার মুসিবতে সাওয়াব দান কর, আর আমার জন্য এর চেয়ে উত্তম বদলা দাও!তাহলে আল্লাহ তাআলা তাকে আগের তুলনায় উত্তম প্রতিদান এবং বদলা দান করবেন।

- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুমিন বান্দাকে আরও শিখিয়েছেন যে, যখন সে কোনো বিপদগ্রস্ত লোককে দেখবে, তখন দোয়া করবে-
اَلْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِىْ عَافَانِىْ مِمَّا ابْتَلَاكَ بِهِ – وَ فَضَّلَنِىْ عَلَى كَثِيْرٍ مِّمَنْ خَلَقَ تَفْضِيْلَا
উচ্চারণ : আলহামদুলিল্লাহিল্লাজি আফানি মিম্মানিবতালাকা বিহি; ওয়া ফাদ্দালানি আলা কাছিরিম মিম্মান খালাকা তাফদিলা।
অর্থ : সব প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি তোমাকে বিপদাক্রান্ত করেছেন; তা থেকে আমাকে নিরাপদ রেখেছেন এবং আমাকে তিনি তার মাখলুক থেকে মাখলুকের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন।তখন তাকে মুসিবত কখনো স্পর্শ করবে না।’ (তিরমিজি)

মুমিন বান্দা বিপদ-মুসিবতে ধৈর্য্যধারণের মাধ্যমে অন্যায় থেকে ফিরে থাকে গোনাহ থেকে মুক্তি পায়। আল্লাহর দরবারে সম্মানি হয়ে ওঠে। হাদিসে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বর্ণনা করেন-
কোনো মুসলিম যখন কোনো কষ্টের মুখোমুখি হয়, তখন আল্লাহ তাআলা তার গোনাহগুলো এমনভাবে ঝেড়ে ফেলে দেন, যেমন গাছের পাতাগুলো ঝরে যায়।’ (বুখারি মুসলিম)

সুতরাং মুমিন বান্দার জন্য তাদের অসুস্থতা, পেরেশানি, দুশ্চিন্তা সবই বিরাট সুসংবাদ এবং নেয়ামত। সব বিপদ আপদেও তারা কখনও আল্লাহর আনুগত্য থেকে পৃথক হয় না। কেননা আল্লাহ তাআলা বান্দাকে পরীক্ষা করার ঘোষণা দিয়েছেন কুরআনে। তিনি বলেন-
আর আমি ভালো-মন্দ দ্বারা তোমাদেরকে পরীক্ষা করে থাকি এবং আমার কাছেই তোমাদেরকে ফিরে আসতে হবে।’ (সুরা আম্বিয়া : আয়াত ৩৫)

আল্লাহ তাআলা মুমিন বান্দাকে বালা-মুসিবত, নেয়ামত, কষ্ট, সুখ, রোগ, সুস্থতা, ধন-সম্পদ অভাব, হালাল-হারাম, আনুগত্য-নাফরমানি এবং হেদায়েত গোমরাহিসহ বিভিন্নভাবে ঈমানের উচ্চ মর্যাদার পরীক্ষা নিয়ে থাকেন।

শুধু মুখে কালেমা পড়ে একজন মানুষ ঈমানের উচ্চ মর্যাদায় পৌঁছা কোনোভাবেই সম্ভব নয়; বরং যে ঈমানের দাবি করে, তাকে অবশ্যই ঈমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। কথা সমর্থনে আল্লাহ তাআলা একাধিক আয়াতে ঘোষণা করেন-

- আর নিশ্চয়ই আমি তোমাদেরকে কিছু ভয়, ক্ষুধা দ্বারা এবং কিছু সম্পদ এবং জীবনের ক্ষতি দ্বারা পরীক্ষা করব। আর তুমি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৫৫)

- আর আমি অবশ্যই তোমাদেরকে পরীক্ষা করব যতক্ষণ না আমি প্রকাশ করে দেই যে, কারা জিহাদকারী আর ধৈর্যশীল।’ (সুরা মুহাম্মদ : আয়াত ৩১)

যারা সব পরীক্ষায় আল্লাহ তাআলার প্রতি সন্তুষ্ট থাকবে; আল্লাহ তাআলাও তাদের প্রতি সন্তুষ্ট। আর তারাই হবে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনে সফলকাম।

সুতরাং বিপদ মুসবিত যত বেশিই হোক না কেন, মুমিনের জন্য তাতে চিন্তার কোনো কারণ নেই, দুনিয়ায় মুমিন বান্দার ওপর আল্লাহর পক্ষ থেকে চরম বিপদ মুসিবত দুনিয়া পরকালের কামিয়াবি লাভে বিরাট নেয়ামত পরীক্ষা। পরীক্ষায় মুমিন বান্দা ধৈর্য ধারণ করেন নাকি অধৈর্য হয়ে যান তা যাচাই করাই পরীক্ষা গ্রহণের উদ্দেশ্য।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে চরম বিপদ মুসিবতে ধৈর্যধারণ করার তাওফিক দান করুন। প্রিয়নবির শেখানো দোয়ার মাধ্যমে নিজের জন্য এবং অপরের জন্য দোয়া করার তাওফিক দান করুন। বিপদকালীন পরীক্ষা উত্তীর্ণ হয়ে দুনিয়া পরকালের কল্যাণ লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।

No comments

Powered by Blogger.