যে ৩ ব্যক্তি কেয়ামতের দিন বিশেষ নেয়ামত লাভ করবে

আল্লাহ তাআলা মানুষকে তার ইবাদত করার জন্য সৃষ্টি করেছেন। যারা আল্লাহর বিধান আনুগত্যে ইবাদত-বন্দেগি করবে, তারা হবে সফলকাম। তাদের মধ্যে অনেককে আল্লাহ তাআলা বিশেষ বিশেষ মর্যাদা দান করবেন।

এমন অনেক বান্দা রয়েছেন যারা ছোট ছোট আমলের মাধ্যমে অনেক বড় সফলতা লাভ করবেন। প্রিয়নবি হাদিসে পাকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে শ্রেণীর লোকের ইবাদত তার ফলাফলের বিবরণ প্রদান করেছেন।

আল্লাহর দরবারে বিশেষ নেয়ামত লাভে সে শ্রেণীর লোকের কাজ মর্যাদার বিবরণ তুলে ধরা হলো-

মেশক আম্বরের স্তম্ভে অবস্থান
হজরত ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ধরণের লোক কেয়ামতের দিন মেশক আম্বরের টিলার ওপর অবস্থান করবে। প্রথম এবং শেষ যুগের মানুষ তাদের অবস্থা দেখে হিংষা পোষণ করবে। তারা হলো-
-
যে ব্যক্তি প্রতিটি রাত-দিনে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের জন্য আহ্বান (মুয়াজ্জিন) করবে।
-
যে ব্যক্তি কোনো সম্প্রদায়ের (নামাজের) ইমামতি করে এবং তারা তার (ওই ইমামের) ওপর সন্তুষ্ট থাকে।
-
যে গোলাম আল্লাহর হক আদায় করে এবং মালিকের হকও (কর্মস্থলের দায়িত্ব যথাযথ) আদায় করে।’ (তিরমিজি)

আল্লাহর ভালোবাসা লাভ
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তিন ব্যক্তি এমন যাদেরকে মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ তাআলা ভালোবাসেন। তারা হলো-
-
যে ব্যক্তি রাতে নামাজে দাঁড়িয়ে আল্লাহর কিতাব তেলাওয়াত করে।
-
যে ব্যক্তি (এমন) গোপনে আল্লাহর পথে ডান হাতে দান-সাদকা করেন যে, বাম হাতও তা টের পায় না। এবং
-
যে ব্যক্তি কোনো যুদ্ধাভিযান দলে শরিক হয় আর তার সঙ্গী-সাথীরা হেরে যাওয়ার পরও সে শত্রুর দিকে অগ্রসর হয়। অর্থাৎ যুদ্ধের ময়দান থেকে পলায়ন করে না।’ (তিরমিজি)

অন্য হাদিসে আল্লাহর ভালোবাসা লাভকারী ব্যক্তির বর্ণনা
হজরত আবু যার রাদিয়াল্লাহু আনহুর সূত্রে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, ব্যক্তি এমন রয়েছে; যাদেরকে আল্লাহ তাআলা ভালোবাসেন। আর তিন ব্যক্তি এমন আছে যাদেরকে আল্লাহ তাআলা ঘৃণা করেন।

যাদেরকে আল্লাহ তাআলা ভালোবাসেন তাদের মধ্যে-
-
যে ব্যক্তি এমন ব্যক্তিকে দান করে, যে কোনো সম্প্রদায়ের কাছে এসে কোনো আত্মীয়তার ওসিলায় না বরং আল্লাহর ওয়াস্তে কিছু প্রার্থনা করে; আর সবাই কোনো কিছু দান না ওই ব্যক্তিকে ফিরিয়ে দেয়। তখন তাদের মাঝ থেকে এক ব্যক্তি সবাইকে পেছনে ফেলে ওঠে দাঁড়ায় এবং ওই প্রার্থনাকারীকে এমন গোপনে দান করে যে দানগ্রহীতা আল্লাহ ছাড়া আর কেউ দান সম্পর্কে জানে না।

- এমন ব্যক্তি, এক সম্প্রদায় রাতের সফরে চলছে। শেষে ঘুম যখন তাদের সবচেয়ে প্রিয় বস্তুতে পরিণত হয় আর সবাই বালিশে মাথা রেখে দেয়; কিন্তু তখন এক ব্যক্তি নামাজে দাঁড়ায় এবং আমার কাছে কাকুতি-িমিনতি রোনাজারি করে আর আমার আয়াতসমূহ তেলাওয়াত করে।

- এমন ব্যক্তি; যে ব্যক্তি যুদ্ধাভিযানে অংশগ্রহণ করে শুত্রুর মুখোমুখি হয় এবং হেরে যায়। কিন্তু এমতাবস্থায়ও সেই ব্যক্তি শহিদ বা বিজয় লাভ না হওয়া পর্যন্ত বুক পেতে সামনে অগ্রসর হতে থাকে।

পক্ষান্তরে যে ব্যক্তিকে আল্লাহ ঘৃণা করেন তারা হলো-
-
বৃদ্ধ ব্যভিচারী।
-
অহংকারী ভিক্ষুক। এবং
-
অত্যাচারী ধনি।’ (তিরমিজি)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে পরকালের বিশেষ নেয়ামত লাভে উল্লেখিত কাজগুলো করার তাওফিক দান করুন। পরকালে আল্লাহর ভালোবাসা মর্যাদা লাভ করার তাওফিক দান করুন।

পাশাপাশি যে শ্রেণীর মানুষের প্রতি আল্লাহ তাআলা ঘৃণা, সে সব লোকদের কর্মকাণ্ড থেকে নিজেদেরকে হেফাজত করার তাওফিক দান করুন। হাদিসের ওপর যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

চরম বিপদেও যেভাবে আল্লাহর সাহায্য লাভ করবেন

যুগে যুগে অনেক বড় বড় আল্লাহদ্রোহী নাফরমানের আগমন ঘটেছে। এমন কোনো অন্যায় মারাত্মক নাফরমানি নেই যা তারা করেনি। ফেরাউন, নমরূদ, সাদ্দাদ, কারুনসহ বর্তমান সময়েও অনেক বড় বড় ফেতনাবাজ রয়েছে যারা আল্লাহর অবাধ্যতায় লিপ্ত। যারা মানুষের ওপর চরম জুলুম অত্যাচার করছে।

অত্যাচারীদের দ্বারা নিজেদের জীবন বিসর্জনসহ যারা চমর নির্যাতন ভোগ করার পরও আল্লাহ তাআলার আনুগত্যে অটল অবিচল রয়েছে এবং ধৈর্যধারণ করেছে তাদের জন্যই দুনিয়া পরকালের সফলতা।

চরম বিপদের সময় আল্লাহর রহমতের ওপর ভরসা রাখা অনেক কঠিক কাজ। যাদের প্রতি আল্লাহর একান্ত অনুগ্রহ রয়েছে তার আনুগত্যে অটল অবিচল থাকা শুধুমাত্র তাদের দ্বারাই সম্ভব। আর তারা আল্লাহর অনুগ্রহ সাহায্য লাভে এভাবে দোয়া করে-

رَبَّنا أَفرِغ عَلَينا صَبرًا وَتَوَفَّنا مُسلِمينَ

রাব্বানা আফরিগ আলাইনা সাবরাওঁ ওয়া তাওয়াফফানা মুসলিমিন। অর্থাৎ হে আমাদের রব! আমাদের সবর (ধৈর্য) দান করো এবং তোমার আনুগত্য থাকা অবস্থায় আমাদের দুনিয়া থেকে উঠিয়ে নাও। (সুরা আল-`রাফ : আয়াত ১২৬)

আগের যুগেও যারা তাওহিদের অনুসারি ছিল তারা এভাবেই আল্লাহ তাআলার কাছে আনুগত্যের ওপর অটল থাকতে আশ্রয় চাইতেন এবং আল্লাহর অনুগ্রহ লাভ করতেন।

উল্লেখিত দোয়ার প্রেক্ষাপট
হজরত মুসা আলাইহিস সালাম যখন তাওহিদ বা একত্ববাদের আনুগত্যের দাওয়াত দেয়া শুরু করলেন তখন অত্যাচারী ফেরাউন তাকে বললেন, তুমি যদি সত্য নবি হও তবে তোমার মুজিজা দেখাও।
হজরত মুসা আলাহিস সালাম তাঁর হাতের লাঠি মাটিতে ছেড়ে দিলে তা বিরাট অজগর সাপে পরিণত হয়ে ফেরাউনের দিকে ধাবিত হয়।
ফেরাউন ভয়ে তার আসন থেকে লাফিয়ে পড়ে বলতে লাগলো- হে মুসা! (আলাইহিস সালাম) তোমার সাপকে টেনে ধর। আমি তোমার ওপর ঈমান আনলাম।
হজরত মুসা আলাইহি সালাম তার লাঠি ধরে অজগরকে থামালেন।

অতঃপর ফেরাউন হজরত মুসা আলাইহিস সালামকে বললো, হে মুসা! তুমি কে আমি কি তা বলব?
হজরত মুসা আলাইহিস সালাম বললেন, ‘হ্যাঁ’, বলুন।
তখন সে বলল, তুমিতো সেই ব্যক্তি যে আমার কাছে লালিত-পালিত হয়ে বড় হয়েছ।
অতঃপর ফেরাউন হজরত মুসা আলাইহিস সালামকে গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়ে তার সম্রাজ্যের সব জাদুকরকে সংবাদ দিলেন।

তাফসিরের সূত্র মতে,
ফেরাউন ৭০ হাজার জাদুকরকে সংবাদ দিয়েছিলেন। সে সংবাদে ১৫ হাজার মতান্তরে ৩০ হাজার জাদুকর উপস্থিত হয়েছিল। প্রত্যেকের সঙ্গে ছিল দঁড়ি এবং লাঠি।
জাদুকররা হজরত মুসা এবং তাঁর ভাই হারুন আলাইহিস সালামকে নজরবন্দি করে দঁড়ি এবং লাঠি মাঠে ফেলায় সব দঁড়ি এবং লাঠি সাপে পরিণত হলো। সাধারণ মানুষ এবং হজরত মুসা তার ভাই ভীত হলেন।
আল্লাহ তাআলা হজরত মুসা আলাইহিস সালামকে বললেন, ‘হে মুসা! আপনি ভয় করবেন না। আপনি জয় লাভ করবেন। আপনি হাতের লাঠিটি মাটিতে ফেলে দিন।
হজরত মুসা আলাইহিস সালাম যখন তার হাতের লাঠিটি মাটিতে ফেললেন। তাঁর লাঠি বিশাল বড় এক সাপে পরিণত হয়ে মাঠে কিলবিল করা সব সাপকে খেয়ে ফেলল।

জাদুকরদের সত্যতা ঘোষণা ফলাফল
জাদুকররা হজরত মুসা আলাইহিস সালামের মুজিজা দেখে নিঃসন্দেহে বিশ্বাস করল যে, তিনি আল্লাহর সত্য নবি। তারা বললো-
হজরত মুসা আলাইহিস সালাম যদি জাদুকর হতেন। তবে আমাদের সঙ্গে পারতেন না। তারা তখনই সেখানে সিজদায় লুটিয়ে পড়লেন এবং আল্লাহ হজরত মুসা আলাইহিস সালামের ওপর ঈমান আনলেন।
অবস্থা দেখে ফেরাউন জাদুকরদের বললেন- তোমরা আমার অনুমতি ব্যতিত ঈমান আনলে। পাশাপাশি তাদেরকে বিভিন্ন শাস্তির কথা বলায়- প্রচণ্ড ক্ষমতার অধিকারী ফেরাউনের অত্যাচার থেকে নিজের ঈমানকে হেফাজতের জন্য আল্লাহর কাছে সাহায্য চেয়ে উল্লেখিত দোয়া পড়েলেন।

সুতরাং মানুষের উচিত চরম অত্যাচার নির্যাতন বিপদের সময় মহান আল্লাহর কাছে তাঁরই শেখানো ভাষায় দোয়া করা। নিজেদের ঈমানকে হেফাজত করা। আল্লাহর আনুগত্যে অটল অবিচল থাকা।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কুরআনের নির্দেশিত ঘোষণা দোয়া তার কাছে সাহায্য লাভের তাওফিক দান করুন। চরম বিপদ মুসিবতে আল্লাহর আনুগত্যে চলার তাওফিক দান করুন। আমিন।

No comments

Powered by Blogger.