মুমিনের কষ্টবরণ যেভাবে কল্যাণ ও মর্যাদার
ইসলাম ও মুসলমানের জন্য বিস্ময়কর হচ্ছে যে, তার সুখ-দুঃখ উভয় অবস্থায় আল্লাহর পক্ষ থেকে কল্যাণ ও নেয়ামত লাভ করে থাকে। হাদিসে পাকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
সুখ-সচ্ছলতায় মুমিন শোকর আদায় করে ফলে তার কল্যাণ হয়। আবার দুঃখ-বিপদের মুখোমুখি হলে ধৈর্য্য ধারণ করে। ফলে এটিও তার জন্য কল্যাণকর হয়।’ (মুসলিম, ইবনে হিব্বান)
সুতরাং কোনো মুমিন বান্দা যখন আল্লাহ পথে চলে আর তাতে যদি তার সামনে কষ্ট বা বিপদ আসে এটি তার জন্য আজাব বা অভিশাপ নয় বরং এটি তার সম্মান ও মর্যাদা বৃদ্ধির কারণ। এটি নিয়ে চিন্তিত বা পেরেশানি হওয়ার কোনো কারণ নেই। প্রয়োজন শুধু আল্লাহর ওপর ভরসা করে ধৈর্যধারণ করা।
এমনকি কোনো মানুষ যদি ঈমানদার হওয়ার কারণে চরম বিপদে পড়ে নিজের জীবন বিসর্জন দিতে হয় তাতেও রয়েছে সফলতা। কেননা আল্লাহ তাআলা জান্নাতের বিনিময়ে মুমিনের জীবন খরিদ করার চুক্তি করেছেন। মুমিন সে জীবন আল্লাহর কাছেই সমর্পন করবে। কুরআনুল কারিমে আল্লাহ বলেছেন-
‘মুমিনদের মধ্যে এমন কিছু লোক রয়েছে যারা আল্লাহর সাথে করা অঙ্গীকার পূর্ণ করেছে, তাদের কেউ কেউ শাহাদাত বরণ করেছে এবং কেউ কেউ প্রতীক্ষায় আছে। তারা তাদের অঙ্গীকারে কোনো পরিবর্তন করেনি।’ (সুরা আহজাব : আয়াত ২৩)
সুতরাং ঈমানদারের জন্য যে কোনো সময় বিপদ-আপদ এমনকি মৃত্যুতেও আসতে পারে। মুমিন বান্দা সব ক্ষেত্রেই বিপদ-আপদ বরণ করে নিতে এবং ঈমানের ওপর দৃঢ় থাকতে প্রস্তত থাকবে। আর তাতেই থাকবে ঈমানদারের জন্য কল্যাণ।
সুখের সময় যেমন আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায় করবে মুমিন তেমনি কোনো বিপদের কারণে তারা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হবে না। দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হওয়া মুমিনের শান নয়। কারণ যে কোনো সময় মুমিনের অবস্থার পরিবর্তন হতে পারে।
মনে রাখতে হবে
মুমিন কখনো আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয় না। আল্লাহর ঘোষণাও এমন- ‘তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না।’ যারা আল্লাহর রহমতের ওপর অবিচল থাকে তারাই প্রকৃত ঈমানদার ও তাকওয়ার অধিকারী। আর সফলতা তাদের জন্যই সুনির্ধারিত।
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, সুখের সময় আল্লাহর কৃতজ্ঞতাজ্ঞাপন করা আর বিপদে পরিস্থিতির মোকাবেলা করার সক্ষমতা না থাকলে আল্লাহর ওপর ভরসা করে ধৈর্যধারণ করা। হাদিসের ঘোষণা অনুযায়ী তাতেই রয়েছে দুনিয়া ও পরকালের শান্তি এবং নিরাপত্তা।
প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুঃখ-কষ্ট, বিপদ-আপদ কিংবা দুশ্চিন্তা ও পেরেশানিতে উত্তীর্ণ হতে তাঁর উম্মতকে এ দোয়া পড়ার জন্য উৎসাহিত করেছেন-
حَسْبُنَا اللهُ وَنِعْمَ
الْوَكِيْل – نِعْمَ الْمَوْلِى وَ نِعْمَ النَّصِيْر
উচ্চারণ : হাসবুনাল্লাহু ওয়া নেমাল ওয়াকিল; নেমাল মাওলা ওয়া নেমান নাছির।'
অর্থ : আল্লাহ তাআলাই আমাদের জন্য যথেষ্ট, তিনিই হলেন উত্তম কাজ সম্পাদনকারী। আল্লাহ তাআলাই হচ্ছে উত্তম অভিভাবক এবং উত্তম সাহায্যকারী।’
বিশ্বব্যাপী মুসলমানের ওপর অত্যাচার-নির্যাতনে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। কারণ ঈমানদারদের হারানোর কিছু নেই। তাদের বিপদ ও দুঃখেও রয়েছে কল্যাণ, মর্যাদা ও সম্মান। বরং পরাজয় কিংবা ধ্বংস সেসব ব্যক্তিগোষ্ঠীর জন্য যারা মুসলমানদের ওপর অন্যায়ভাবে অত্যাচার ও নির্যাতন করে।
মুমিন বান্দাকে বিপদে ভয় পেলে চলবে না, মুমিনের কষ্টও সম্মান এবং মর্যাদার কারণ। তাই মুমিন বান্দা নিজেকে ঈমানি তেজে শক্তিশালী করবে। আল্লাহর কাছে হিম্মাত ও সাহায্য প্রার্থনা করবে।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সুখের সময় কৃতজ্ঞতা ও দুঃখের সময় ধৈর্যধারণ করে আল্লাহর একান্ত রহমত লাভ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
No comments