রমজানে যে কারণে মুমিন আলোকিত জীবন লাভ করে
রমজান মাস মুসলিম উম্মাহর মাঝে তাকওয়ার অনুভূতি জাগ্রত করে। মুমিন মুসলমানের জীবনকে পবিত্র করে। কুরআনুল কারিমে রমজান মাসের এ রকম মর্যাদার কথাই ঘোষণা করা হয়েছে। যারা রমজানের রোজা পালন করবে তারা তাকওয়াবান হবে।
আল্লাহ বলেন,
‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে; যেমনিভাবে তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছিল। যাতে তোমরা তাকওয়াবান তথা পরহেজগারী অবলম্বন করতে পার।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৮৩)আল্লাহ তাআলার এ বাণী যে সব রোজাদার উপলব্ধি করবে তারা নব চেতনায় উজ্জীবিত হবে। আর তাতেই রোজাদার আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নৈকট্য লাভে অগ্রগামী হয়ে যাবে।
আল্লাহর নৈকট্য লাভে অগ্রগামী হতে স্বয়ং প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অন্যান্য মাসের তুলনায় রমজান মাসজুড়ে বেশি ইবাদত-বন্দেগিতে মশগুল থাকতেন। তিনি সাহাবায়ে কেরামকেও ইবাদত-বন্দেগিতে আগ্রহী হতে তাগিদ দিতেন।
কুরআনের ঘোষণা এবং প্রিয়নবির ইবাদতের আগ্রহ উদ্দীপনার কারণেই মুমিন মুসলমানের কাছে রমজান মাসের মর্যাদা ও তৎপর্য অত্যাধিক। তাইতো মুমিন মুসলমানের কর্তব্য হলো রমজানে ইবাদত-বন্দেগিতে অগ্রসর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পারস্পরিক সম্পর্ক, চাল-চলন, আচার-আচরণ, ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকরি-বাকরিসহ সর্বক্ষেত্রে সংযম পালনের চেষ্টা করা।
রমজান শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে লজ্জাজনক হারে পণ্য-সামগ্রীর দাম বাড়িয়ে দেয় একশ্রেণীর অসাধূ ব্যবসায়ী মহল। যার ফলে হয়রানি ও ক্ষতিগ্রস্ত হয় ভোক্তা ও ক্রেতা সাধরণ। ব্যবসায়ীদের উচিত, তাদের ব্যবসায়িক কাজে দ্রব্য-সামগ্রীর মূল্য নির্ধারণে সংযম ও নিয়ন্ত্রণ রাখা।
রমজান আসলেই একটা জিনিস পরিলক্ষিত হয় যে, এ মাসে মানুষ বেশি বেশি দান-সাদকা করে। মসজিদ-ইয়াতিমখানা ও গরীব-দুঃখীর মাঝে ইফতার বিলিয়ে থাকে।
আবার
অনেকে
জাকাত
আদায়
করে
থাকনে।
খোঁজ
খবর
রাখেন
দুঃস্থ,
অসহায়,
গরীব-দুঃখীর।
মানুষের
এ
সব
জনকল্যাণমূলক
আমল-ইবাদত
ও
ভালো
কাজগুলো
অসাধু
ব্যবসায়ীদের
দ্রব্য-সামগ্রীর
উর্ধ্বগতির
কারণে
ম্লান
হয়ে
যায়।
এ কারণে ব্যবসায়ীদের উচিত রমজান মাসে দ্রব্য-সামগ্রীর উর্ধ্বগতি রোধ করা। গরীব, দুঃখী, অসহায় মানুষের পাশাপাশি মধ্যবিত্ত মানুষের জন্য বাজার মূল্য স্থিতিশীল রাখা। এ কাজের ফলে রমজানে ব্যবসায়ীদের মর্যাদা যেমন বাড়বে তেমনি তারা হতে পারবে তাকওয়াবান।
রমজান মাসে মানুষের মনে আল্লাহর ভয় অর্জিত হয়। যার ফলে সমাজে চলমান সুদ, ঘুষ, অশ্লীলতা, বেহায়াপনা, ইভটিজিং ও মাদকের ভয়াবহ ছোবল থেকে সব শ্রেণী-পেশার মানুষ মুক্তি পায়। আল্লাহ তাআলার রোজা ফরজ করার উদ্দেশ্যও তাই।
মানুষের দুনিয়ার জীবন-যাপনকে সুন্দর করতে এবং দিক-নির্দেশনা দিতেই আল্লাহ তাআলা এ পবিত্র মাসে কুরআনুল কারিম নাজিল করেছেন। আর এ মাসে রোজা রাখার মাধ্যমে তাকওয়া অর্জনের নির্দেশ দিয়েছেন। যারা কুরআন বুঝবে, রোজা রাখবে তারাই হবে সফলকাম।
এ কথা ঘোষণা করে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘রমজান মাস; সেই মাস, যে মাসে পবিত্র কুরআন নাজিল হয়েছে। যা মানব জাতির জন্য পথ প্রদর্শক ও যাতে রয়েছে হেদায়েতের নিদর্শনসমূহ এবং যা হক্ব ও বাতিলের মধ্যে পার্থক্যকারী। অতএব তোমাদের যে কেউ এ মাস পাবে তাকে অবশ্যই এ মাসে রোজা রাখতে হবে।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৮৫)
আল্লাহ
তাআলা
রমজানের
রোজাকে
ফরজ
করেছেন।
ইসলামের
রোকন
হিসেবে
সাব্যস্ত
করেছেন।
যাতে
মানুষ
সত্যানুসন্ধানী হয়ে তাকওয়াবান হতে
পারে।
রমজান মানুষকে সর্বোচ্চ ধৈর্যের শিক্ষা দেয়। মানবতার সর্বোচ্চ পর্যায়ে আসীন করে। ঝগড়া-বিবাদ ও কটুক্তি থেকে বিরত রাখে। প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মানুষকে এ শিক্ষা গ্রহণের নির্দেশ দিয়ে বলেন-
‘যখন তোমাদের রোযার দিন আসে, তখন তোমরা অশ্লীল কথা ও কাজ থেকে বিরত থাকবে এবং চিৎকার-চেঁচামেচি থেকে বিরত থাকবে। কেউ যদি ঝগড়া-বিবাদে প্রবৃত্ত হয় তাহলে এ কথা বলবে যে, আমি রোযাদার।’
মুমিন মুসলমান যদি পুরো রমজান মাস এভাবে সিয়াম-সাধনা করে তবে বছরের বাকি ১১ মাস তার দ্বারা সুদ, ঘুষ, অশ্লীলতা, বেহায়াপনা, ইভটিজিং, দ্রব্য-সামগ্রী অস্বাভাবিক উর্ধ্বগতি ও মাদকের ছড়াছড়িসহ পারস্পরিক সম্পর্ক ও লেন-দেনে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হবে। তাদের প্রতিটি কথা ও কাজে আসবে পরিবর্তন। অর্জিত হবে তাকওয়া ও পরহেজগারী।
রমজানের রাতের নামাজ তারাবিহ, তাহাজ্জুদসহ নফল নামাজ আদায়ে ঘোষিত হয়েছে বিশেষ ফজিলত। যারা রাতের নামাজগুলো যথাযথভাবে আদায় করবে তাদের বিগত জীবনের গোনাহ মাফ করে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম্
যারা ফরজ নামাজ আদায়ের পাশাপাশি তারাবিহ, তাহাজ্জুদ ও নফল আদায়ে নিজেদের নিয়োজিত রাখে। তাদের জন্য বাকী ১১ মান নামাজে অনিয়মিত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
রমজানের নিয়মতান্ত্রিক ঘুম মানুষকে সুস্বাস্থ্য ও অধ্যাবসায়ী করে তোলে। রমজানের সাহরি গ্রহণ ও ইফতার গ্রহণের মাধ্যমে মানুষ লাভ করবে অসংখ্য বরকত ও কল্যাণ। আর ফেরেশতারা সাহরি ও ইফতার গ্রহণকারীদের জন্য মাগফেরাতের দোয়া করতে থাকবেন। আর তাতে লাভবান হবে মুমিন মুসলমান। তারা পেয়ে যাবেন পাপ-পংকিলতামুক্ত সুন্দর জীবন। যে জীবন মানুষকে আল্লাহর নিকটবর্তী করে দেয়।
পরিশেষে…
রমজানের রোজা যথাযথভাবে পালন করা জরুরি। কেননা রমজানের সিয়াম সাধনা মানুষকে সময় ও নিয়মানুবর্তী হতে শেখায়। ধৈর্য ও সহমর্মিতা শেখায়। গরিবের ক্ষুধার কষ্ট অনুধাবন করার শিক্ষা দেয়। সমাজের প্রতি পরস্পরের দায়িত্ববোধের প্রতি আগ্রহী করে তোলে।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে রমজানের রোজা পালনের মাধ্যমে আলোকিত গোনাহমুক্ত জীবন যাপনের তাওফিক দান করুন। তাকওয়া তথা আল্লাহর ভয় অর্জনের তাওফিক দান করুন। দুনিয়া ও পরকালের সফলতা দান করুন। আমিন।
No comments