মৃতদের কল্যাণে জীবিতদের দোয়া ও করণীয়

জন্মের পর মৃত্যু সুনিশ্চিত। জন্য মানুষের দুনিয়ার প্রতিটি কাজ হবে কল্যাণের। যার ফলে মানুষ উত্তম বিনিময় লাভ করবে। কুরআনুল কারিমে এমনই ঘোষণা এসেছে। আল্লাহ তাআলা বলেন-

'প্রত্যেক প্রাণীকে আস্বাদন করতে হবে মৃত্যু। আর তোমরা কিয়ামতের দিন পরিপূর্ণ বদলা প্রাপ্ত হবে। তারপর যাকে দোযখ থেকে দূরে রাখা হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে, তার কার্যসিদ্ধি ঘটবে। আর পার্থিব জীবন ধোঁকা ছাড়া অন্য কোন সম্পদ নয়।' (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১৮৫)

মানুষের মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে তার সব আমলের দরজা বন্ধ হয়ে যায়। শুধু ৩টি আমল ছাড়া। যারা ৩টি আমল যথাযথভাবে পালন করবে, তাদের জন্য অবিরাম সাওয়াবের দরজা খোলা থাকবে। হাদিসে এসেছে-
-
হজরত আনাস ইবনে মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তিনটি জিনিস মৃত ব্যক্তিকে অনুসরণ করে থাকে। দুটি ফিরে আসে, আর একটি তার (মৃত ব্যক্তির) সঙ্গে থেকে যায়। জিনিস তিনটি হলো- তার পরিবার; তার ধন-সম্পদ তার আমলনামা। এর মধ্যে পরিবার ধন-সম্পদ ফিরে আসে। তার সঙ্গে শুধুমাত্র আমলনামাই থেকে যায়।' (বুখারি মুসলিম)

- হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন, ‘যখন মানুষ মারা যায়,তখন ৩টি কাজ ছাড়া মানুষের (সব) আমলের দরজা বন্ধ হয়ে যায়।
>>
প্রথমটি : অর্জিত ধন-সম্পদ থেকে দান-সাদকা করা। যে দানের সাওয়াব অবিরাম দানকারী মৃতব্যক্তির আমলনামায় পৌঁছবে।
>>
দ্বিতীয়টি : ইলম বা জ্ঞান বিতরণ : যার দ্বারা মানুষ উপকৃত হবে। আর
>>
তৃতীয়টি : এমন নেক সন্তান, যে সন্তান মৃত্যুর পর মৃতব্যক্তির জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করবে। (মুসলিম)

হাদিসের ঘোষণা অনুযায়ী জীবিত ব্যক্তিরা মৃতদের জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করলে ওই ব্যক্তির আমলনামায় সাওয়াব পৌঁছবে আর তা মৃতব্যক্তির জন্য হবে কল্যাণকর।

তাই মুমিন মুসলমানের উচিত, দুনিয়া জীবিত থাকাকালীন সময়ে এমন কাজ করে যাওয়া, যেন হাদিসে উল্লেখিত ৩টি কাজই এর মধ্যে শামিল থাকে। তবেই মৃত্যুর পরও আমলনামায় সাওয়াব পৌঁছবে অবিরাম।

এছাড়াও মৃত ব্যক্তির জন্য জীবিতদের আরও কিছু করণীয় দোয়া রয়েছে। যে কেউ যে কোনো মৃত ব্যক্তির জন্যই দোয়া করতে পারে। আর তা মৃত ব্যক্তির জন্য হবে কল্যাণকর। হাদিসে এসেছে-
হজরত বুরায়দা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন কবরস্থানে যেতেন তখন দোয়া পড়তেন-
السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ أَهْلَ الدِّيَارِ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُسْلِمِينَ، وَإِنَّا إِنْ شَاءَ اللَّهُ بِكُمْ لاَحِقُونَ، أَنْتُمْ لَنَا فَرَطٌ وَنَحْنُ لَكُمْ تَبَعٌ، أَسْأَلُ اللَّهَ الْعَافِيَةَ لَنَا وَلَكُمْ
উচ্চারণ : ‘আসসালামু আলাইকুম আহলাদ দিয়ারি মিনাল মুমিনিনা ওয়াল মুসলিমিনা, ওয়া ইন্না ইংশা আল্লাহু বিকুম লাহিকুন, ওয়া আংতুম লানা ফারাতুন ওয়া নাহনু লাকুম তাবাউন, আসআলুল্লাহাল আফিয়াতা লানা ওয়া লাকুম।' (নাসাঈ)

- السَّلاَمُ عَلَى أَهْلِ الدِّيَارِ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُسْلِمِينَ وَيَرْحَمُ اللَّهُ الْمُسْتَقْدِمِينَ مِنَّا وَالْمُسْتَأْخِرِينَ وَإِنَّا إِنْ شَاءَ اللَّهُ بِكُمْ لَلاَحِقُونَ
আসসালামু আলা আহলাদ দিয়ারি মিনাল মুমিনিনা ওয়াল মুসলিমিনা ওয়া ইয়ারহামুল্লাহুল মুসতাক্বদিমীনা মিন্না ওয়াল মুসতাআখিরিনা ওয়া ইন্না ইংশাআল্লাহু বিকুম লা-লাহিকুন
অর্থ- 'কবরবাসী মুমিন মুসলমানদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক। আল্লাহর ইচ্ছায় অবশ্যই আমরাও তোমাদের সঙ্গে মিলিত হব আমরা আল্লাহর কাছে আমাদের জন্য তোমাদের জন্য নিরাপত্তা কামনা করছি।' (মুসলিম)

সুতরাং জীবিত প্রত্যেক মুমিন মুসলমানের উচিত মৃত বাবা-মা, আত্মীয়-স্বজনসহ ইসলাম দেশের জন্য যারা আজীবন সেবা দিয়ে গেছেন তাদের জন্য সব সময় দোয়া করা। প্রতিদিন সম্ভব না হলেও অন্তত প্রতি সপ্তাহ, মাস, বছর কিংবা যখনই মনে হবে তখনই তাদের জন্য দোয়া করা। তাদের রূহের মাগফেরাত কামনা করা।

মৃতদের জন্য জীবিতদের কল্যাণ কামনা প্রসঙ্গে হাদিসের শিক্ষা হলো-
সব মানুষের মৃত্যুর পর ৩টি নেক আমল চালু থাকে। তার মধ্যে নেককার সন্তানরা শামিল। সুতরাং সু-সন্তান তাদের বাবা-মা, আত্মীয় স্বজনের জন্য দোয়া করবে।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে গত হওয়া সব মুমিন মুসলমানের জন্য দোয়া করার তাওফিক দান করুন। হাদিসের উপর যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

No comments

Featured Post

চাকরি লাভের আমল, রিজিকে বরকত লাভের দোয়া

রিজিকে বরকত লাভে যেভাবে দোয়া করেছেন ঈসা ( আ .)

Powered by Blogger.