কুনুতে নাজেলা’ দোয়া-বদদোয়ায় পড়ার নিয়ম

মুসলমানদের উপর কোনো বিপদ-আপদ এলে, ইসলামের শত্রুদের জন্য হেদায়াতের দোয়া বা বদদোয়া করাই হলোকুনুতে নাজেলাকুনুতে নাজেলাএকটি প্রতিষ্ঠিত সুন্নাত। ইসলাম মুসলমানদের বিপদ-আপদ কিংবা ভয়-চাপের সময় আল্লাহর সাহায্য লাভে দোয়া বা বদদোয়া করাই হলো কুনুতে নাজেলা। ফ্রান্সের চলমান সংকট বিশ্বনবিকে অবমাননায় বয়কটের পাশাপাশি তাদের ব্যাপারেকুনুতে নাজেলা মাধ্যমে আল্লাহর দরবারে সাহায্য চাওয়া মুমিন মুসলমানের ঈমানি দায়িত্ব।

ইসলাম মুসলমানদের বিপদ-আপদ, ভয়-চাপ ক্ষতির সময়ে বিশ্বনবির প্রতিষ্ঠিত সুন্নাতকুনুতে নাজেলা মাধ্যমে ফ্রান্সের কটুক্তির মোকাবেলায় আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া খুবই জরুরি।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুসলমানদের বিপদ-আপদ কাফের অবিশ্বাসীদের ব্যাপারে দোয়া কিংবা বদদোয়ায় নামাজেকুনুতে নাজেলাপড়ে আল্লাহর সাহায্য কামনা করতেন।

ফরজ নামাজের মধ্যে হাত তুলে কাফির বা অমুসলিমদের জন্য বদদু' করেকুনুতে নাজেলাপড়া একটি প্রতিষ্ঠিত সুন্নাত। অথচ ফ্রান্সের প্রতি শুধু বয়কটের চাপের ভিড়ে বিশ্বনবির প্রতিষ্ঠিত সুন্নাতটি প্রায় হারিয়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে যেন, আল্লাহর সাহায্য লাভের মাধ্যমকুনুতে নাজেলা হারিয়ে যাচ্ছে।

সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, কাফির-অমুসলিমদের এসব মানসিক শারীরিক নির্যাতন থেকে মুক্তির উপয় হিসেবে আল্লাহর সাহায্য লাভেকুনুতে নাজেলা আমলের দিকে ধাবিত হওয়া। বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাহায্য লাভের পথটি জারি রাখা।

কুনুতে নাজেলা
ইমাম বাইহাকি তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ বাইহাকিতেকুনুতে নাজেলা পড়ার দোয়া এভাবে তুলে ধরেছেন-
اللَّهُمَّ اغْفِرْ لَنَا ، وَلِلْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ وَالْمُسْلِمِينَ وَالْمُسْلِمَاتِ ، وَأَلِّفْ بَيْنَ قُلُوبِهِمْ ، وَأَصْلِحْ ذَاتَ بَيْنِهِمْ ، وَانْصُرْهُمْ عَلَى عَدُوِّكَ وَعَدُوِّهِمْ، اللَّهُمَّ الْعَنْ كَفَرَةَ أَهْلِ الْكِتَابِ الَّذِينَ يَصُدُّونَ عَنْ سَبِيلِكَ ، وَيُكُذِّبُونَ رُسُلَكَ ، وَيُقَاتِلُونَ أَوْلِيَاءَكَ اللَّهُمَّ خَالِفْ بَيْنَ كَلِمَتِهِمَ ، وَزَلْزِلْ أَقْدَامَهُمْ، وَأَنْزِلْ بِهِمْ بَأْسَكَ الَّذِى لاَ تَرُدُّهُ عَنِ الْقَوْمِ الْمُجْرِمِينَ اللَّهُمَّ إِنَّا نَسْتَعِينُكَ وَنَسْتَغْفِرُكَ وَنُثْنِى عَلَيْكَ وَلاَ نَكْفُرُكَ، وَنَخْلَعُ وَنَتْرُكُ مَنْ يَفْجُرُكَ اللَّهُمَّ إِيَّاكَ نَعْبُدُ، وَلَكَ نُصَلِّى وَنَسْجُدُ، وَلَكَ نَسْعَى وَنَحْفِدُ ، نَخْشَى عَذَابَكَ الْجَدَّ، وَنَرْجُو رَحْمَتَكَ، إِنَّ عَذَابَكَ بِالْكَافِرِينَ مُلْحَقٌ.
বাংলা উচ্চারণ : আল্লাহুম্মাগফিরলানা ওয়ালিল মুমিনিনা ওয়াল মুমিনাত। ওয়াল মুসলিমিনা ওয়াল মুসলিমাত। ওয়া আল্লিফ বাইনা কুলুবিহিম। ওয়া আসলিহ জাতা বাইনিহিম। ওয়াংসুরহুম আলা আদুয়্যিকা ওয়া আদুয়্যিহিম। আল্লাহুম্মালআন কাফারাতা আহলিল কিতাবিল্লাাজিনা ইয়াসুদ্দুনা আন সাবিলিকা। ওয়া ইউকাজজিবুনা রুসুলাকা। ওয়া ইউকাতিলুনা আওলিয়াআকা। আল্লাহুম্মা খালিফ বাইনা কালিমাতিহিম। ওয়া যালযিল আকদামাহুম। ওয়া আনযিল বিহিম বাসাকাল্লাজি লা তারুদ্দুহু আনিল কাওমিল মুঝরিমিন। আল্লাহুম্মা ইন্না নাসতাঈনুকা ওয়া নাসতাগফিরুকা ওয়া নুছনি আলাইকা ওয়ালা নাকফুরুক ওয়া নাখলাউ ওয়া নাতরুকু মাইঁ-ইয়াফজুরুকা। আল্লাহুম্মা ইয়্যাকা নাবুদু ওয়া লাকা নুসাল্লি, ওয়া নাসজুদু, ওয়া লাকা নাসআ, ওয়া নাহফিদু, নাখশা আজাবাকালঝাদ্দা, ওয়া নারজু রাহমাতাক। ইন্না আযাবাকা বিল কাফিরিনা মুলহিক।’ (বাইহাকি)

কুনুতে নাজেলা
কুনুতে নাজেলা ফজরের নামাজের দ্বিতীয় রাকাতে রুকু থেকে দাঁড়িয়ে পড়া মোস্তাহাব। তবে সব সময় নিয়মিত কুনুতে নাজেলার আমল না করা। তবে কেউ যদি নিয়মিত আমল করে, তবে সেটিকে বাতিল বলে বাঁধা দেয়ারও প্রয়োজন নেই। মূলত কুনুতে নাজেলা শুধু বিশেষ মুহুর্ত তথা ব্যাপক বিপদ, যুদ্ধকালীন সময়সহ ইত্যাদি মুসিবতের সময় পড়াই মোস্তাহাব। হাদিসে এসেছে-
-
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফজরের নামাজের সময় সব সময় কুনুত (নাজেলাহ) পড়তেন না। শুধু পড়তেন- কোনো জাতির জন্য দোয়া করতে বা বদদোয়া করার প্রয়োজন হলে। তিনি কুনুত পড়তেন যখন ফজরের নামাজের দ্বিতীয় রাকেআতের রুকু থেকে মাথা উঠাতেন।’ (ইবনে খুজাইমা)

তবে কুনুতে নাজেলা রহিত হয়নি বরং তা এখনও বহাল রয়েছে। মুসলমানদের দুর্যোগকালে ফজরের নামাজে ইমাম কুনুত পড়বে।’ (এলাউস সুনান)

সুতরাং মুমিনর মুসলমানে উচিত- যখন তাদের উপর ব্যাপক বালা-মুসিবত বিপদ-আপদ আসে; তবে সেক্ষেত্রে আল্লাহ তাআলার কাছে সাহায্য চেয়ে কুনুতে নাজেলা পড়া মোস্তাহাব। কেননা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিপদ-আপদ পতিত হলে ফজরের নামাজের দ্বিতীয় রাকাআতে রুকু থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বিভিন্ন সময় কুনুতে নাজেলা পড়েছেন।’ (বুখারি, মুসলিম)

কুনুতে নাজেলা পড়ার পদ্ধতি
ফজরের ফরজ নামাজের দ্বিতীয় রাকাআতে রুকু থেকে উঠে দাঁড়িয়ে ইমাম উচ্চ আওয়াজ কুনুতে নাজেলা (দোয়া) পড়বেন। আর মুসল্লিরা মনে মনে আমিন, আমিন বলবেন। দোয়া শেষে নিয়ম অনুযায়ী বাকি নামাজ শেষ করবেন।

No comments

Powered by Blogger.