রোজাদারের বিশেষ পুরস্কার ও করণীয়
ক্ষমা ও নাজাতের মাস রমজান অতিবাহিত করছে মুসলিম উম্মাহ। এটি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের বসন্তকাল হিসেবে পরিচিত। এ মাসের ইবাদাত বন্দেগির সাওয়াব ও ফজিলত অন্য মাসের তুলনায় অনেক বেশি। রমজানের রোজা পালনকারীর মর্যাদা আলাদা করতেই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জান্নাতের রাইয়্যান নামক আলাদা দরজার ঘোষণা দিয়েছেন। হাদিসে এসেছে-
হজরত সাহল রাদিয়াল্লাহু
আনহু
বর্ণনা
করেন
রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু
আলাইহি
ওয়া
সাল্লাম
বলেছেন,
জান্নাতের
মধ্যে
রাইয়্যান
নামক
একটি
দরজা
রয়েছে।
কেয়ামতের
দিন
এ
দরজা
দিয়ে
শুধুমাত্র
রোজাদাররাই
প্রবেশ
করবে।
তাদের
ব্যতিত
এ
দরজা
দিয়ে
অন্য
কাউকে
(জান্নাতে)
প্রবেশ
করতে
দেয়া
হবে
না।
ঘোষণা
দেয়া
হবে-
রোজাদাররা
কোথায়?
তখন
তারা
(সব
রোজাদার)
দাঁড়াবে।
তাদের
ছাড়া
আর
কেউ
এ
দরজা
দিয়ে
প্রবেশ
করবে
না।
রোজাদাদের
প্রবেশের
পরপরই
(রাইয়্যান
নামক)
দরজা
বন্ধ
করে
দেয়া
হবে।
যাতে
এ
দরজা
দিয়ে
আর
কেউ
প্রবেশ
করনে
না
পারে।’
(বুখারি)
এ বিশেষ মর্যাদা লাভে রোজাদারকে রমজানের যথাযথ হক আদায় করতে হবে। প্রথম দশকে রোজার হকগুলো আদায় করতে ব্যর্থ হলে দ্বিতীয় ও তৃতীয় দশকও ব্যর্থতায় পরিণত হবে। তাই প্রথম দশক থেকেই রমজানের যথাযথ হক আদায় করে আল্লাহর ভয় অর্জন করা জরুরি। তবেই রোজাদার পাবে হাদিসে ঘোষিত সব মর্যাদা ও ফজিলত।
সুতরাং মুসলিম
উম্মাহর
উচিত
রমজানের
রোজা
পালন
এবং
তার
হক
আদায়
করা।
সে
আলোকে
রোজাদারের
জন্য
বিশেষ
কিছু
করণীয়
তুলে
ধরা
হলো-
দিনের বেলায় পানাহার ও স্ত্রী-সম্ভোগ ত্যাগের নামই রোজা নয়, বরং প্রতিদিন অন্যায় কাজ, মিথ্যা, গিবত, হারাম উপার্জনসহ আল্লাহ তাআলা কর্তৃক নিষিদ্ধ কাজ থেকে বিরত থাকা। রোজা রেখে এ কাজগুলো করলে সারাদিন উপবাস করার কোনো ফায়েদা নেই। সুতরাং রোজা পালন করে সব অন্যায় থেকে বিরত থাকাজরুরি।
- রমজান মাসের আমল-ইবাদাতে কুরআনের বাস্তবায়ন করা অত্যন্ত জরুরি। কেননা এ মাসেই নাজিল হয়ে মহাগ্রন্থ আল-কুরআন। ঈমানের দাবি হচ্ছে- ‘বান্দার প্রতিটি আমল হবে কুরআন-সুন্নাহ মোতাবেক।
- রোজা মানুষকে কষ্ট সহিষ্ণু শিক্ষা দেয়। অভুক্ত মানুষের অবস্থা মূল্যয়ন করতে শেখায়। সারাদিন উপবাস করে নিজের নফসকে নিয়ন্ত্রণ করতে উদ্বুদ্ধ করে। তাই সাহরি ও ইফতারে অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণ থেকে বিরত থাকা। রমজানের অতিরিক্তি খাবার বর্জন করা জরুরি।
- অযথা গল্প-গুজবে সময় ব্যয় না করে ইফতার পরবর্তী সময়ে ইশা এবং তারাবিহ নামাজ আদায়ের ব্যাপারে যথাযথ প্রস্তুতি গ্রহণ করা। আবার তারাবিহ পরবর্তী সময়ে শেষ রাতে নফল নামাজ, জিকির-আজকারসহ দোয়া-ইসতেগফার করা। রাতের শেষ সময়ে কল্যাণকর কাজ সাহরি গ্রহণ করা যায়, সেদিকে বিশেষ নজর দেয়া।
- রমজানে সব অশ্লীল ও বেহায়াপনা কাজ থেকে বিরত থাকা রোজা অন্যতম শিক্ষা। রোজা পালন করে অশ্লীল-বেপর্দার কাজ করা, অযথা সময় নষ্ট করে সিনেমা-টেলিভিশন দেখা, বেহায়াপনা সমৃদ্ধ মাধ্যমগুলোতে বিচরণ করা রমজানের রোজার আদর্শের পরিপন্থী কাজ। সুতরাং সব খারাপ মাধ্যমগুলোও পরিত্যাগ করা রোজার অন্যতম দাবি।
- রমজানের ইবাদাতের সবচেয়ে বড় বাধা হলো ভোগ-বিলাসী জীবন-যাপন। রমজানের প্রথম সপ্তাহ অতিবাহিত হওয়ার পর থেকেই শুরু হয়ে যায় ঘুরাঘুরি ও কেনা-কাটা। যদিও এবার মহামারি করোনার কারণে এমনটি হওয়ার সম্ভাবনা কম, তবুও যাতে অযথা সময় নষ্ট না হয়।
সর্বোপরি রমজান মাস অন্যান্য মাসের চেয়ে নীতি-নৈতিকতার শিক্ষার অন্যতম মাস। এ মাসেই মানুষ নৈতিক ও দ্বীনি শিক্ষায় নিজেদেরকে আত্ম-নিয়োগ করতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। তাই যারা এ মাসের যথাযথ হক আদায় করে রোজা পালন করতে পারবে তাদের জন্য রমজানের নির্ধারিত ও বিশ্বনবির দেয়া সুসবাংবদ বিশেষ জান্নাত রাইয়্যান।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে উপরোল্লিখিত গ্রহণীয় ও বর্জনীয় কাজগুলো যথাযথ আদায়ের মাধ্যমে রমজানের রহমত মাগফিরাত ও নাজাত লাভে এগিয়ে আসার তাওফিক দান করুন। রোজাদারের জন্য নির্ধারিত বিশেষ জান্নাত রাইয়্যান লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।
No comments