ঘূর্ণিঝড়-মহামারি কেন হয়?

প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, মহামারি দেখা দিলে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাহ বিচলিত হতেন। তিনি আল্লাহর আজাব-গজবকে ভয় করতেন। তিনি সাহাবিদের এসব আজাব-গজব থেকে মুক্ত থাকতে দিক-নির্দেশনাসহ তাওবাহ-ইসতেগফারের পরামর্শ দিতেন।

ঘূর্ণিঝড়, মহামারি যে কোনো দুর্যোগ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা মানুষকে সতর্ক করতে কুরআনুল কারিমের একাধিক আয়াতে নাজিল করেন। আল্লাহ তাআলা বলেন-

- 'মানুষের কৃতকর্মের জন্য জমিনে সমুদ্রে বিপর্যয় দেখা দেয়। যাতে আল্লাহ তাদের কতিপয় কৃতকর্মের স্বাদ তাদের আস্বাদন করান, যাতে তারা (সঠিক পথে) ফিরে আসে।' (সুরা রূম : আয়াত ৪১)

- 'আর অবশ্যই আমি তোমাদের পরীক্ষা করব কিছুটা ভয়, ক্ষুধা, মাল জানের ক্ষতি ফল-ফসল বিনষ্টের মাধ্যমে। তবে সুসংবাদ দাও সবরকারীদের।' (সুরা বাকারাহ : আয়াত ১৫৫)

প্রাকৃতিক দুর্যোগ মহামারি আসার কারণ বর্ণনায় হাদিসের ঘোষণা
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এসব মহামারি, ঘূর্ণিঝড়সহ যাবতীয় বিপদ-আপদ কেন হয়, সে সম্পর্কে সাহাবাদের কাছে বর্ণনা করেছেন। এমন কিছু কাজ আছে যেসব কাজের কারণে আল্লাহ তাআলা মানুষের ওপর দুর্যোগ-মহামারি চাপিয়ে দেন। হাদিসে এসেছে-

হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের দিকে এগিয়ে এসে বললেন-
হে মুহাজিরগণ! তোমরা পাঁচটি বিষয়ে পরীক্ষার সম্মুখীন হবে। তবে আমি আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি, যেন তোমরা তার সম্মুখীন না হও। (আর তাহলো)-
-
যখন কোনো জাতির মধ্যে প্রকাশ্যে অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়ে তখন মহামারি আকারে (নতুন-নতুন) প্লেগরোগের প্রাদুর্ভাব হয়, যা আগের লোকদের মধ্যে কখনও দেখা যায়নি।
-
যখন কোনো জাতি ওজন পরিমাপে কারচুপি করে তখন তাদের ওপর নেমে আসে দুর্ভিক্ষ, কঠিন পিবদ-মুসিবত।
-
আর যখন কোনো জাতি জাকাত আদায় করে না, তখন আসমান থেকে বৃষ্টিবর্ষণ বন্ধ করে দেয়া হয়। যদি জমিনে চতুষ্পদ জন্তু নির্বাক প্রাণী না থাকতো তবে আর কখনও বৃষ্টিপাত হতো না।
-
যখন কোনো জাতি আল্লাহ তাঁর রাসুলের অঙ্গীকার ভঙ্গ করে, তখন আল্লাহ তাদের ওপর বিজাতীয় দুশমনকে ক্ষমতাসীন করে দেন। আর তারা (শাসকবর্গ মানুষের) সহায় সম্পদ কেড়ে নেয়।
-
আর যখন তোমাদের শাসকবর্গ আল্লাহর কিতাব মোতাবেক মীমাংসা করে না এবং আল্লাহর নাজিলকৃত বিধান গ্রহণ করে না, তখন আল্লাহ তাদের পরস্পরের মধ্যে যুদ্ধ লাগিয়ে দেন।' (ইবনে মাজাহ)

উল্লেখিত কুরআনের আয়াত হাদিসের দিক-নির্দেশনা প্রমাণ করে যে, মানুষের গোনাহের কারণেই দুনিয়াতে বিভিন্ন রকম বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়ে। বিপর্যয় কখনো সমুদ্রে ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, জমিনে ঝড়-তুফান, অজানা মহামারি, রোগ-ব্যধি, অন্যায়ভাবে যুদ্ধ-বিগ্রহ তৈরি করে দেয়।

থেকে উত্তরণে একমাত্র উপায় হলো-
দুনিয়ায় যাবতীয় অন্যায় কাজ ছেড়ে দিয়ে মহান আল্লাহর দিকে ফিরে আসা। বেশি বেশি তাওবাহ ইসতেগফার করা। মানুষের অধিকারের ব্যাপারে সতর্ক হওয়া। তবেই মহান আল্লাহ এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ সব বিপদ-আপদ থেকে হেফাজত করবেন। তাই মহান আল্লাহর কাছে তার আজাব থেকে বাঁচত প্রথমেই অন্যায়মূলক সব গোনাহের কাজ ছেড়ে দেয়া আবশ্যক।

অতপর কুরআনে বর্ণিত ছোট্ট দোয়াটি বেশি বেশি পড়া। আর তাহলো-
- رَبَّنَا اكْشِفْ عَنَّا الْعَذَابَ إِنَّا مُؤْمِنُونَ
উচ্চারণ : 'রাব্বানাকশিফ আন্নাল আজাবা ইন্না মুমিনুন।'
অর্থ : 'হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদের উপর থেকে আপনার শাস্তি প্রত্যাহার করুন, আমরা বিশ্বাস স্থাপন করছি।' (সুরা দুখান : আয়াত ১২)

হে আল্লাহ! আপনি মুসলিম উম্মাহকে দুনিয়ার সব বিপর্যয় থেকে হেফাজত করুন। আমিন।

No comments

Powered by Blogger.