মুহাম্মাদ (সা.)-এর শাফাআত পাওয়ার ৩ উপায়
প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শাফাআত পাওয়া মুমিন মুসলমানের জন্য অনন্য সৌভাগ্য। কেয়ামতের ময়দানে তিনি তাঁর উম্মতের জন্য শাফাআত করবেন। আল্লাহ তাআলা তাকে শাফাআত করার বিশেষ ক্ষমতা ও অনুমতি দান করবে। কিন্তু প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শাফাআত পাওয়ার উপায় কী?
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শাফাআত পাওয়ার অন্যতম উপায় হচ্ছে, তার প্রতি বেশি বেশি দরূদ পড়া। শাফাআত পাওয়ার জন্য আল্লাহর কাছে বেশি বেশি ধরণা ধরা। তবেই মহান আল্লাহ তাআলা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শাফাআত দিয়ে উম্মতে মুহাম্মাদিকে ধন্য করবেন।
> শাফাআত পেতে দোয়া
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শাফাআত কামনাকারীর জন্য বেশি বেশি এ দোয়া করা-
اَللَّهُمَّ ارْزُقْنَا شَفَاعَةَ نَبِيِّكَ
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মার যুক্বনা শাফাআতা নাবিয়্যিকা।’
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমাদেরকে তোমার নবির সুপারিশ দান কর।’
> শাফাআত পেতে তাওহিদের জিকির
যে ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শাফাআত পেয়ে ধন্য হতে চায়, তার উচিত বেশি বেশি তাওহিদের জিকির করা। হাদিসে এসেছে-
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘কেয়ামতের দিন আমার সুপারিশে ধন্য ব্যক্তি সবচেয়ে সুখী মানুষ। আর সে হলো- যে অন্তর বা নফস থেকে ইখলাস তথা একনিষ্ঠতার সঙ্গে বলে-
لَا اِلَهَ اِلَّا الله
উচ্চারণ : ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’
অর্থ : ‘আল্লাহ ছাড়া ইবাদাতের উপযুক্ত কোনো সত্য উপাস্য নেই।’ (বুখারি)
> আজানের পর দরূদ ও দোয়া পড়া
যে ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শাফাআত পেয়ে ধন্য হতে চায়, তার উচিত বেশি বেশি দরূদ পড়া। বিশেষ করে আজানের পর দোয়া ও দরূদ পড়া। হাদিসে এসেছে-
- হজরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আজান শুনে বলে-
اَللَّهُمَّ رَبَّ هَذِهِ الدَّعْوَةِ التَّامَّةِ – وَالصَّلَاةِ
الْقَائِمَة – اتِ مُحَمَّدَانِ الْوَاسِلَةَ وَ الْفَضِيْلَةَ – وَابْعَثْهُ
مَقَامًا مَّحْمُوْدَانِ الَّذِىْ وَعَدْتَه
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা রাব্বা হাজিহিদ দাওয়াতিত তাম্মাহ, ওয়াস-সালাতিল কায়িমাহ, আতি মুহাম্মাদানিল ওয়াসিলাতা ওয়াল ফাদিলাহ, ওয়াবআছহু মাকামাম মাহমুদানিল্লাজি ওয়া আদ্তাহ’ তার জন্য কেয়ামতের দিন আমার শাফাআত ওয়াজিব হবে।’ (তিরমিজি, বুখারি, ইবনে মাজাহ)
- দরূদ পাঠকারীর জন্য শাফাআত অবধারিত। হজরত রুওয়াইফি ইবনে ছাবিত আল-আনসারি রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি এ দরুদ পাঠ করবে তার জন্য আমার সুপারিশ অবধারিত হয়ে যাবে।’ (আলমুজামুল কাবির, তবারানি, মাজমাউয যাওয়াইদ)
শুধু তা-ই নয়, দরূদ পাঠকারী কেয়ামতের দিন প্রিয় নবির সবচেয়ে কাছাকাছি হবে। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘কেয়ামতের দিন ওই ব্যক্তি আমার সবচেয়ে কাছাকাছি হবে, যে আমার উপর সবচেয়ে বেশি দরূদ পড়ে।’ (তিরমজি)
এ আমলটিও মুসলিম উম্মাহর জন্য সহজ। শুধু তাই নয়, কোনো ব্যক্তি যদি আজানের পর দোয়ার আগে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি দরূদ পাঠ করে; তার জন্যও প্রিয় নবির সুপারিশ ওয়াজিব হয়ে যায়। তাই বেশি বেশি ছোট্ট ও সহজ এ দরূদ বেশি বেশি পড়া-
اَللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّد وَ عَلَى أل مُحَمَّد
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদ ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদ।’
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শাফাআত কামনা করা। শাফাআত পেতে আল্লাহর কাছে দোয়া করা, বেশি বেশি তাওহিদের কালেমা তথা আল্লাহর একত্ববাদের ঘোষণা দেয়া এবং এ কালেমার জিকির করা। আর আজানের পর দরূদ ও দোয়া পড়া।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শাফাআত পাওয়ার তাওফিক দান করুন। হাদিসে বর্ণিত আমল ও দোয়াগুলো যথাযথভাবে আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
No comments