করজে হাসানা’র আয়াত নাজিলের কারণ

হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদিস থেকে ইমাম বুখারি রহমাতুল্লাহি আলাইহি সংকলন করেছেন যে, যখন আল্লাহ তাআলা নাজিল করেন-

مَثَلُ الَّذِيْنَ يَنْفِقُوْنَ اَمْوَالَهُمْ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ كَمَثَلِ حَبَّةٍ اَنْبَتَتْ سَبْعَ سَنَابِلَ

তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়অ সাল্লাম দোয়া করলেন-
হে পরওয়ারদেগার! আমার উম্মতকে (আল্লাহর রাস্তায় দানের বিনিময়) আরও বৃদ্ধি করে দিন।তখনকরজে হাসানাসম্পর্কিত সুরা বাকারার ২৪৫নং আয়াত নাজিল হয়।


আয়াতের শানে নুযুল সম্পর্কে হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুর একটি বর্ণনা ইমাম রাজী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘ আয়াতটি ( : ২৪৫) নাজিল হয়েছে হজরত আবু দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহু সম্পর্কে।

তিনি প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দরবারে এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমার দুটি বাগান আছে যদি তার একটি আমি আল্লাহর রাস্তায় দান করি তবে তার অনুরূপ বাগান জান্নাতে পাব?

প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করলেন, ‘হ্যাঁপাবে; পুনরায় তিনি প্রিয়নবিকে প্রশ্ন করলেন, ‘আমার স্তীও কি বাগানে আমার সঙ্গে থাকতে পারবে? তিনি ইরশাদ করলেন, ‘হ্যাঁ

সাহাবি আবার প্রশ্ন করলেন, ‘আমার সন্তান-সন্ততিও কি আমার সঙ্গে থাকতে পারবে? তিনি ইরশাদ করলেন, ‘হ্যাঁতখন তিনি তাঁর সর্বোত্তম বাগানটি আল্লাহর রাহে দান করলেন।

বাগানটির নাম ছিলহোনায়না

অতঃপর হজরত আবু দারদা ঘরে ফিরে গেলেন; যা বাগানেই অবস্থিত ছিল এবং বাগানের প্রবেশ দ্বারে দাঁড়িয়ে তাঁর স্ত্রীকে ডাক দিলেন এবং বিস্তারিত ঘটনা অবহিত করে বললেন, ‘তোমরা বেরিয়ে আস কেননা এই বাগান আমি জান্নাতের বিনিময়ে আল্লাহর রাস্তায় দান করেছি।

তাঁর স্ত্রী সন্তান-সন্ততির হাত ধরে বাগান থেকে রেব হয়ে আসলেন এবং বললেন, (স্ত্রী বললেন) আল্লাহ আপনার ব্যবসায় বরকত দান করুন।

আয়াতের শিক্ষা
আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদেরকে দানের ব্যাপারে উৎসাহিত করেছেন। আর কর্জ বা ঋণ বলা হয় সেই অর্থ সম্পদকে যা ফেরত পাওয়া যায়।

আলোচ্য আয়াতে শব্দটি অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে যে, আল্লাহর রাস্তায় যা দান করা হয়, তার বিনিময় অনুরূপ নয় বরং তার চেয়ে বহুগুণ বেশি অবশ্যই পাওয়া যাবে।

দানের অনুপ্রেরণা
হজরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদিসটি মুসলিম উম্মাহকে দানের প্রতি আগ্রহ বাড়িয়ে দেয়। কেয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করবেন-
হে আদম সন্তান!আমি তোমার কাছে খাবার চেয়েছিলাম কিন্তু তুমি আমাকে খাবার দাওনি। তখন বান্দা বলবে, হে পরওয়ারদেগার! আপনাকে কিভাবে খাবার দেব; আপনিতো বিশ্ব প্রতিপালক।

তখন আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, তোমার কাছে আমার অমুক বান্দা খাবার চেয়েছিল কিন্তু তুমি তাকে খাবার দাওনি; তুমি জানতে না, সেদিন যদি তাকে খাবার দিতে তবে আমার কাছে তা অবশ্যই পেতে। (তাফসিরে কাবির)

ইমাম রাজি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি তাঁর তাফসিরে লিখেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা আগের আয়াতে (২৪৪) জেহাদের কথা বলা হয়েছে, আর ঠিক তার পরের আয়াতে (২৪৫) আল্লাহর রাস্তায় সম্পদ ব্যয় করতে উদ্বুদ্ধ করেছেন।

যার দ্বীনের কাজে নিজেকে নিয়োজিত করতে পারেনি; তারা দ্বীনের কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিকে দান-অনুদান প্রদান করবে; তাদের ব্যয়ভার বহনে দায়িত্ব পালন করবে।

তাছাড়া বিপদগ্রস্ত, দারিদ্র-পীড়িত মানুষের দুঃখ দুর্দশা লাগবে অর্থ ব্যয় করার প্রতিও তাগিদ করা হয়েছে। তাই যে দানে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্য থাকে; সেই দানকেইআল্লাহর রাস্তায় দানবলা হয়।

দুনিয়ার দানের বিনিময়ে আল্লাহ তাআলা পরকালে মানুষের চিরস্থায়ী জিন্দেগিতে দানের বিনিময় বহুগুণে ফেরত দেবেন।

হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-
যে ব্যক্তি তার উত্তম রোজগার থেকে আল্লাহর পথে একটি খেজুর দান করে; আল্লাহ তাআলা তা ডান হাতে কবুল করেন; সে দানকে তিনি লালন-পালন করেন; যেভাবে তোমরা বাছুরকে লালন-পালন কর। এমনকি, সে খেজুরটি একটি পাহাড়ের সমান হয়ে যায়। আর আল্লাহ তাআলা শুধু উত্তম রোজগারই (হালাল উপার্জনই) কবুল করেন।

মনে রাখা জরুরি
আল্লাহর পথে দান করার সময় নিজেদের অভাব-অনটনের কথা মনে পড়ে যায়; কারণে অনেক সময় আল্লাহর পথে দান করা থেকে মানুষ বিরত থাকে। তখন আল্লাহ তাআলার কথাটি স্মরণে রাখা প্রয়োজন। আল্লাহ তাআলা বলেন-
আল্লাহ তাআলাই মানুষের রিজিক সংকুচিত করেন এবং বৃদ্ধি করেন।

অতএব অভাবের ভয়ে আল্লাহর পথে দান করা থেকে বিরত থাকা অনুচিত। কেননা আল্লাহর পথে দান করলে সম্পদ কমে না বরং বাড়ে। কেননা হাদিসে প্রিয়নিব বলেছেন-
প্রতিদিন সকালে যখন আল্লাহর বান্দারা (ঘুম থেকে) জেগে ওঠে; তখন দুজন ফেরেশতা আসমান থেকে আগমন করেন। তাদের একজন বলে, হে আল্লাহ! যে দাতা তাকে বিনিময় দান কর; আর যে কৃপন তার সম্পদ ধ্বংস কর।

হাদিস থেকেই প্রমাণিত যে, আল্লাহর পথে দান করার ফজিলত মর্যাদা অনেক বেশি। আর আল্লাহ পথে দান থেকে বিরত থাকার পরিণাম অনেক ভয়াবহ।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে আয়াতে ওপর যথাযথ আমল করতে গরীব-অসহায়দের কল্যাণে এবং আল্লাহর পথে দান করতে নিজেদের নিয়োজিত রাখার তাওফিক দান করুন। দান থেকে বিরত থাকার কুফল থেকে নিজেদেরকে হেফাজত করারও তাওফিক দান করুন। আমিন।

No comments

Powered by Blogger.