জান্নাতের সুসংবাদ পাওয়া ১০ সাহাবি

আল্লাহ তাআলা মানবজাতির জন্য ইসলামকে পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান করে সত্যদ্বীনসহ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। তিনি অন্ধকার যুগের অমানিশা দূর করে সমগ্র মানবজাতিকে আলোর পথ দেখাতে এসেছিলেন। নবিজি দ্বীনের কাজ একা শুরু করেছিলেন। দিন দিন তা অন্যরাও গ্রহণ করতে থাকে। তারা হলেন সাহাবি। যারা নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আহ্বানে সাড়া দিয়ে ইসলাম গ্রহণ করেছেন। তাদের মধ্য থেকে তিনি ১০ জনের নাম ঘোষণা করলেন, যারা দুনিয়া থেকে পেয়েছেন জান্নাতের ঘোষণা। তাঁরা কারা?

আল্লাহ তাআলা সাহাবিদের ব্যাপারে ঘোষণা করেন-  رَّضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ وَرَضُوا عَنْهُ অর্থাৎ আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তারা আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট।` (সূরা বাইয়্যেনা : আয়াত ) এছাড়াও ১০ জন সাহাবিকে জান্নাতের সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে। তারা হলেন-

. আবু বকর ছিদ্দিক

ইসলামের প্রথম খলিফা এবং পুরুষদের মধ্যে সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণকারী ছিলেন হজরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু। তাঁর আসল নাম আবদুল্লাহ বিন উসমান বিন আমর। উপাধি আতিক, সিদ্দিক। মায়ের নাম উম্মুল খায়র। তাঁর হাতে হজরত উসমান বিন আফফান, হজরত জুবাইর, হজরত তালহা, হজরত আব্দুর রহমান বিন আউফ এর মতো বড় বড় সাহাবিরা ইসলাম গ্রহণ করেছেন। তিনি রাসুলুল্লাহ (.)-এর হিজরতের সঙ্গী ছিলেন। তিনি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্মের বছর পর জন্ম গ্রহণ করেন এবং তাঁর মৃত্যুর বছর পর ২৩ আগস্ট ৬৩৪ খ্রিস্টাব্দে ইন্তেকাল করেন।

. ওমর ইবনুল খাত্তাব

ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা, আমিরুল মুমিনিন খেতাবে ভূষিত ছিলেন হজরত ওমর ইবনুল খাত্তাব বিন নুফাইল বিন আব্দুল উজজা রাদিয়াল্লাহু আনহু। তিনি ৫৮৩ খ্রিস্টাব্দে জন্ম গ্রহণ করেন এবং ৬৪৪ খ্রিস্টাব্দে শাহাদাতবরণ করেন। তাঁর খেলাফতকাল ছিল ১০বছর মাস দিন। আল্লাহ তাআলা তার মাধ্যমে ইসলামকে শক্তিশালী করেছেন।

. উসমান ইবনে আফফান

ইসলামের তৃতীয় খলিফা, জিন্নুরাইন হজরত উসমান ইবনে আফফান বিন আবিল আস রাদিয়াল্লাহু আনহু। তিনি ৫৮০ খ্রিস্টাব্দে জন্ম নেন এবং ১৭ জুন ৬৫৬ খ্রিস্টাব্দে শাহাদাতবরণ করেন। তিনি ৬৪৪ থেকে ৬৫৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত খেলাফতের দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর খেলাফতকাল ১১ বছর ১১ মাসের চেয়ে কয়েক দিন বেশি।

. আলি ইবনে আবু তালিব

ইসলামের চতুর্থ খলিফা, আসাদুল্লাহিল গালিব  হজরত আলি ইবনে আবু তালিব বিন আবদুল মুত্তালিব রাদিয়াল্লাহু আনহু। তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জামাতা। তিনি সাত বছর বয়সে ইসলাম গ্রহণ করেন। ইসলামের ইতিহাসে পুরুষদের মধ্যে তিনি সর্বপ্রথম নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে নামাজ আদায় করেন। মাত্র ১০ বছর বয়সে বালক পুরুষদের মধ্যে তিনি সর্ব প্রথম ইসলাম গ্রহণ করেন। তবুক ছাড়া সকল যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন তিনি। বদর যুদ্ধে বিশেষ বীরত্বের জন্য নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকেজুলফিকারনামক তরবারি উপহার দেন।

. তলহা ইবনে উবাইদুল্লাহ

হজরত তলহা ইবনে উবাইদুল্লাহ বিন উসমান বিন উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু। ওহুদ যুদ্ধে তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে অত্যন্ত মজবুতভাবে অবস্থান নিয়েছিলেন। তিনি শরীরের চব্বিশ স্থানে আঘাত পেয়েছিলেন। তখন নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার নাম রেখেছিলেনতলহাতুল খায়র তিনি ইসলাম গ্রহণকারী প্রথম আট জনের মধ্যে অন্যতম ছিলেন। তিনি জামাল যুদ্ধে শাহাদতবরণ করেন।

. জুবাইর ইবনুল আওয়াম

আল্লাহর রাহে সর্ব প্রথম তলোয়ার ধারণকারী হজরত জুবাইর ইবনুল আওয়াম বিন খুয়াইলিদ রাদিয়াল্লাহু আনহু। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি সকল যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন। তিনি হাবশায় হিজরত করেছিলেন। তাঁর আকৃতিতে ফেরেশতাগণ বদর যুদ্ধে অবতরণ করেছিলেন। তিনি জামাল যুদ্ধে শাহাদতবরণ করেন।

. আব্দুর রহমান ইবনে আওফ

ইসলামের সব যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী হজরত আব্দুর রহমান ইবনে আওফ বিন আব্দুল হারিস রাদিয়াল্লাহু আনহু। তিনিও হাবশায় হিজরত করেছিলেন। তিনিও প্রথমে ইসলাম গ্রহণকারী আট সাহাবির একজন। তিনি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সকল যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তিনি ৩১ হিজরিতে ৭২ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেছেন।

. সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস
হজরত সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস রাদিয়াল্লাহু আনহু। তিনি ১৭ বয়সে ১৭তম ব্যক্তি হিসেবে ইসলাম গ্রহণ করেছেন। ইসলামের সব যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী আল্লাহর রাস্তায় সর্বপ্রথম তীর নিক্ষেপকারী। ওহুদ যুদ্ধে তাঁকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছিলেন, তোমার উপর আমার মা-বাবা কোরবান হোক, তীর নিক্ষেপ করো। তিনি সকল যুদ্ধে শরিক হয়েছেন। তিনি ৬৩৬ সালে পারস্য বিজয়ের নেতৃত্ব শাসনের জন্য অধিক পরিচিত। ৬১৬ ৬৫১ খ্রিস্টাব্দে কূটনৈতিক দায়িত্ব পালনে চীন ভ্রমণ করেছিলেন।

. সাঈদ ইবনে জায়েদ

হজরত সাঈদ ইবনে জায়েদ ইবনে উমর বিন নুফাইল রাদিয়াল্লাহু আনহু। তিনি প্রাথমিক পর্যায়ে ইসলাম গ্রহণকারী সাহাবিদের একজন ছিলেন। ইসলাম গ্রহণের আগেও তিনি পৌত্তলিকতামুক্ত ছিলেন। তিনি হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুর বোন ফাতিমা বিনতে খাত্তাবের স্বামী ছিলেন। বদর যুদ্ধ ছাড়া অন্য সকল যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন তিনি। ৬৭৩ খ্রিস্টাব্দে আমির মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহুর শাসনামলে তিনি ৮০ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন।

১০. আবু উবায়দা ইবনুল জাররাহ

হজরত আবু উবাইদাহ আমের ইবনে আবদুল্লাহ বিন জাররাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু। তিনি আবু উবায়দা ইবনুল জাররাহ নামে অধিক পরিচিত। খলিফা হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুর আমলে তিনি রাশিদুন সেনাবাহিনীর একজন সেনাপতি ছিলেন। তিনি সকল যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তিনি ওহুদ যুদ্ধে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের চোয়ালে বিঁধে যাওয়া লৌহবর্ম দাঁত দ্বারা উত্তোলন করেছিলেন। তখন তার সামনের দুটি দাঁত পড়ে গিয়েছিল।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সাহাবাগণের জীবন থেকে উত্তম আদর্শ গ্রহণ করার তাওফিক দান করুন। কোরআন সুন্নাহ মোতাবেক জীবন যাপন করে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের তাওফিক দান করুন। আমিন।

 

No comments

Powered by Blogger.