আমানতদারিতা Depository

আমানতদারিতা

عَن أبي هُرَيْرَةَ قَالَ : بَيْنَمَا كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُحَدِّثُ إِذْ جَاءَ أَعْرَابِيٌّ فَقَالَ : مَتَى السَّاعَةُ؟ قَالَ : إِذَا ضُيِّعَتِ الْأَمَانَةُ فَانْتَظِرِ السَّاعَةَ. قَالَ : كَيْفَ إِضَاعَتُهَا؟ قَالَ : إِذَا وُسِّدَ الْأَمْرُ إِلَى غَيْرِ أَهْلِهِ فَانْتَظِرِ السَّاعَةَ، رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ-

হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) তে বর্ণিত তিনি বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহুআলাইহে ওয়া সাল্লাম) মজলিসে আলোচনা করছিলেন। এমন সময় তাঁর কাছে একজন বেদুঈন এল এবং প্রশ্ন করল, ক্বিয়ামত কবে হবে? উত্তরে তিনি বললেন, যখন আমানত বিনষ্ট হবে তখন ক্বিয়ামতের অপেক্ষা কর। লোকটি বলল, তা কিভাবে বিনষ্ট হবে? তিনি বললেন, যখন অযোগ্য লোকের হাতে ক্ষমতা অর্পণ করা হবে, তখন ক্বিয়ামতের অপেক্ষা কর[1]

এখানে তিনটি বিষয়ে ইঙ্গিত রয়েছে। এক- আমানতের খেয়ানত করার প্রতি মানুষের স্বাভাবিক প্রবণতা। দুই- উক্ত প্রবণতা দূর করার জন্য প্রয়োজন শক্ত শাসন তদারকি। তিন- যথাযোগ্য ব্যক্তির হাতে আমানত সোপর্দ করা। এটাকে চুরি হিসাবে গণ্য করে ইসলামে রয়েছে হাত কেটে ফেলার মত সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান (মায়েদাহ /৩৮)

আমানতের প্রকারভেদ : আমানত একটি ব্যাপক অর্থবোধক শব্দ। যার মধ্যে আর্থিক আমানত, কথার আমানত, পরামর্শের আমানত, নছীহতের আমানত, গোপনীয়তা রক্ষার আমানত, ইযযতের আমানত, দায়িত্বের আমানত, ইলমের আমানত, ইসলামী দাওয়াতের আমানত, দ্বীন প্রতিষ্ঠার আমানত, রাষ্ট্রীয় আমানত, আদালতের মাধ্যমে আল্লাহর দন্ডবিধি সমূহ বাস্তবায়নের আমানত, নেতৃত্ব পদমর্যাদার আমানত, ন্যায়বিচারের আমানত, জনগণের আমানত, সংগঠনের আমানত, চাকুরীর আমানত, ব্যবসায়ের আমানত, স্বামী-স্ত্রীর পরস্পরের আমানত, পরিবার পালনের আমানত প্রভৃতি। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,أَدِّ الأَمَانَةَ إِلَى مَنِ ائْتَمَنَكَ وَلاَ تَخُنْ مَنْ خَانَكَ- ‘তুমি তার আমানত আদায় কর, যে তোমার নিকট আমানত রেখেছে। আর তোমার সাথে যে খেয়ানত করেছে, তার সাথে খেয়ানত করো না[2] অর্থাৎ খেয়ানতকারীর প্রতি পাল্টা খেয়ানত করা যাবেনা।

সৃষ্টির সূচনায় আল্লাহ তাঁর দ্বীনের আমানত সোপর্দ করার জন্য আসমান, যমীন, পাহাড় মানুষের নিকট প্রস্তাব করেছিলেন। তখনকার সেই অবস্থা বর্ণনা করে আল্লাহ বলেন,إِنَّا عَرَضْنَا الْأَمَانَةَ عَلَى السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَالْجِبَالِ فَأَبَيْنَ أَنْ يَّحْمِلْنَهَا وَأَشْفَقْنَ مِنْهَا وَحَمَلَهَا الْإِنْسَانُ إِنَّهُ كَانَ ظَلُومًا جَهُولاً- ‘আমরা আকাশ, পৃথিবী পর্বতমালার নিকট এই আমানত পেশ করেছিলাম। অতঃপর তারা তা বহন করতে অস্বীকার করল এবং থেকে শংকিত ল। কিন্তু মানুষ তা বহন করল। বস্ত্ততঃ সে অতিশয় যালেম অজ্ঞ’ (আহযাব ৩৩/৭২)

জমহূর বিদ্বানগণ বলেন, الْأَمَانَةُ تَعُمُّ جَمِيعَ وَظَائِفِ الدِّينِ، ‘আমানতবলে দ্বীনের সকল প্রকার দায়িত্বকে বুঝানো হয়েছে (কুরতুবী) আব্দুল্লাহ ইবনু আববাস (রাঃ) উপরোক্ত আয়াতের তাফসীর হিসাবে বর্ণনা করেন যে,عُرِضَتْ عَلَى آدَمَ فَقَالَ : خُذْهَا بِمَا فِيهَا، فَإِنْ أَطَعْتَ غَفَرت لَكَ، وَإِنْ عَصَيت عَذَّبْتُكَ قَالَ : قَبِلْتُ، فَمَا كَانَ إِلاَّ قَدْرُ مَا بَيْنَ الْعَصْرِ إِلَى اللَّيْلِ مِنْ ذَلِكَ الْيَوْمِ، حَتَّى أَصَابَ الْخَطِيئَةَ- আল্লাহ আদমকে বলেন, তুমি আমানত গ্রহণ কর এই মর্মে যে, যদি তুমি আনুগত্য কর, তাহলে আমি তোমাকে ক্ষমা করে দেব। আর যদি অবাধ্যতা কর, তাহলে তোমাকে শাস্তি দেব। আদম বলল, আমি কবুল করলাম। অতঃপর আছর থেকে মাগরিবের মধ্যেই আদম ভুল করে বসেন।[3] ظَلُومًا جَهُولاً، ‘অতিশয় যালেম অজ্ঞঅর্থفِي عَاقِبَةِ أَمْرِهِ، ‘পরিণাম সম্পর্কে অজ্ঞ’ (ইবনু কাছীর) কেন আল্লাহ এটা করলেন, সে বিষয়ে তিনি বলেন,لِيُعَذِّبَ اللهُ الْمُنَافِقِينَ وَالْمُنَافِقَاتِ وَالْمُشْرِكِينَ وَالْمُشْرِكَاتِ وَيَتُوبَ اللهُ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ وَكَانَ اللهُ غَفُورًا رَّحِيمًا- ‘যাতে আল্লাহ মুনাফিক পুরুষ নারী এবং মুশরিক পুরুষ নারীদের শাস্তি দেন। আর মুমিন পুরুষ নারীদের ক্ষমা করেন। বস্ত্ততঃ আল্লাহ ক্ষমাশীল দয়াবান’ (আহযাব ৩৩/৭৩) এতে বুঝা যায়, মুনাফিক মুশরিকরাই কেবল আমানতের খেয়ানত করতে পারে, প্রকৃত মুমিনরা নয়।

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,يُطْبَعُ الْمُؤْمِنُ عَلَى الْخِلاَلِ كُلِّهَا إِلاَّ الْخِيَانةَ وَالْكَذِبَ- ‘মুমিন সকল স্বভাবের উপর সৃষ্টি তে পারে খেয়ানত মিথ্যা ব্যতীত[4] অর্থাৎ মুমিন কখনো খেয়ানতকারী মিথ্যাবাদী তে পারে না। যারা এটা করে, তারা আসলে মুমিন নয়।

আব্দুল্লাহ বিনআমর (রাঃ) তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন,أَرْبَعٌ إِذَا كُنَّ فِيكَ فَلاَ عَلَيْكَ مَا فَاتَكَ مِنَ الدُّنْيَا : حِفْظُ أَمَانَةٍ وَصِدْقُ حَدِيثٍ وَحُسْنُ خَلِيقَةٍ وَعِفَّةٌ فِي طُعْمَةٍ- ‘চারটি বিষয় যদি তোমার মধ্যে থাকে, তাহলে দুনিয়ায় তুমি কি ছেড়ে গেলে সেটা দেখার বিষয় থাকবেনা। . আমানত রক্ষা করা। . সত্য কথা বলা। . সচ্চরিত্রতা এবং . হালাল পবিত্র জীবিকা[5]

আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন,الْقَتْلُ فِي سَبِيلِ اللهِ يُكَفِّرُ الذُّنُوبَ كُلَّهَا إِلاَّ الْأَمَانَةَ، ‘আল্লাহর পথে জিহাদ সকল গোনাহের কাফফারা, আমানত ব্যতীত[6] অন্য বর্ণনায় এসেছে, إِلاَّ الدَّيْنَ، ‘ঋণ ব্যতীত[7] অতএব প্রত্যেক মুমিনের কর্তব্য হবে, আমানত রক্ষা করা যথাসম্ভব ঋণ না করা। আর বাধ্য হয়ে ঋণ করলেও তা যত দ্রুত সম্ভব পরিশোধ করা অথবা অছিয়ত করা। যাতে হঠাৎ মৃত্যু হয়ে গেলে ওয়ারিছগণ সর্বাগ্রে সেটি পরিশোধ করে।

হযরত আনাস (রাঃ) বলেন,قَلَّمَا خَطَبَنَا رَسُولُ اللهِ -صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ- إِلاَّ قَالَ : لاَ إِيمَانَ لِمَنْ لاَ أَمَانَةَ لَهُ، وَلاَ دِينَ لِمَنْ لاَ عَهْدَ لَهُ- ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আমাদের নিকট খুব কমই ভাষণ দিতেন যেখানে তিনি বলতেন না যে, ব্যক্তির ঈমান নেই, যার আমানতদারিতা নেই। আর ব্যক্তির দ্বীন নেই, যার অঙ্গীকার ঠিক নেই[8]

আল্লাহ সফলকাম মুমিনদের সাতটি নিদর্শন বর্ণনা করেন। তার মধ্যে ৫ম ৬ষ্ঠ নিদর্শন হিসাবে বলেন,وَالَّذِينَ هُمْ لِأَمَانَاتِهِمْ وَعَهْدِهِمْ رَاعُونَ- ‘আর যারা তাদের আমানত অঙ্গীকার রক্ষা করে’ (মুমিনূন ২৩/; মাআরেজ ৭০/৩২) তিনি বলেন,إِنَّ اللهَ يَأْمُرُكُمْ أَنْ تُؤَدُّوا الْأَمَانَاتِ إِلَى أَهْلِهَا، ‘আল্লাহ তোমাদের নির্দেশ দিচ্ছেন যে, তোমরা আমানত সমূহকে তার যথাযথ হকদারগণের নিকট পৌঁছে দাও’... (নিসা /৫৮)

মূসা (আঃ)-এর আমানতদারিতার সাক্ষ্য দিয়ে শোআয়েব (আঃ)-এর দুই কন্যার একজন তাদের পিতাকে বলেছিল, আববা! এঁকে বাড়ীতে কর্মচারী হিসাবে রেখে দিন। কেননাআপনার কর্ম সহায়ক হিসাবে সেই- উত্তম হবে, যে শক্তিশালী বিশ্বস্ত’ (ক্বাছাছ ২৮/২৬) পরে শোআয়েব (আঃ) মূসাকে তাঁর জামাই করে নেন (ক্বাছাছ ২৮/২৭)

আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেন,أَفْرَسُ النَّاسِ ثَلاَثَةٌ : الْعَزِيزُ حِينَ قَالَ لِامْرَأَتِهِ أَكْرِمِي مَثْوَاهُ عَسَى أَنْ يَنْفَعَنَا أَوْ نَتِّخِذَهُ وَلَدًا، وَالَّتِي قَالَتْ : يَا أَبَتِ اسْتَأْجِرْهُ إِنَّ خَيْرَ مَنِ اسْتَأْجَرْتَ الْقَوِيُّ الْأَمِينُ، وَأَبُو بَكْرٍ حِينَ تَفَرَّسَ فِي عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا- ‘দুনিয়াতে তিন ব্যক্তি ছিলেন সর্বাধিক বিচক্ষণ। () ‘আযীযে মিছরবা মিসরের রাজস্ব মন্ত্রী (যিনি শিশু ইউসুফের চেহারা দেখেই তাকে চিনেছিলেন এবং স্ত্রীকে বলেছিলেন,) ‘একে সম্মানজনকভাবে থাকার ব্যবস্থা কর। সম্ভবতঃ সে আমাদের কল্যাণে আসবে অথবা আমরা তাকে পুত্ররূপে গ্রহণ করে নেব’ (ইউসুফ ১২/২১) () শোআয়েব (আঃ)-এর কন্যা, যে মূসা সম্পর্কে স্বীয় পিতাকে বলেছিল, হে পিতা! আপনি এঁকে আপনার কর্মসহযোগী হিসাবে রেখে দিন। কেননা উত্তম সহযোগী সেই-, যে শক্তিশালী বিশ্বস্ত হয়’ (ক্বাছাছ ২৮/২৬) () হযরত আবুবকর ছিদ্দীক্ব (রাঃ), যিনি ওমর (রাঃ)-কে তাঁর পরবর্তী খলীফা হিসাবে অছিয়ত করেছিলেন[9]

নেতৃত্বের আমানত : এটি অত্যন্ত কঠিন আমানত। অনেক সময় এই আমানত রক্ষা করতে গিয়ে নিজের জীবন বিপন্ন হয়। নানাবিধ অপবাদ জেল-যুলুম সহ্য করতে হয়। অতি ভক্তদের বাড়াবাড়ি বিরোধীদের চক্রান্ত সর্বদা তার সাথী হয়। মানুষ সর্বদা দায়িত্বশীলদের বিশেষ করে নেতাদের আমানতে সন্দেহ করে। এমনকি তারা শেষনবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-কেও ছাড়েনি। যেমন আব্দুল্লাহ ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, বদর যুদ্ধের গণীমতের মাল থেকে একটি লাল চাদর খোয়া গেলে কিছু লোক বলে,لَعَلَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَخَذَهَا، সম্ভবতঃ রাসূল (ছাঃ) এটি নিয়েছেন তখন আয়াত নাযিল হয়,وَمَا كَانَ لِنَبِيٍّ أَنْ يَّغُلَّ، وَمَنْ يَّغْلُلْ يَأْتِ بِمَا غَلَّ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ثُمَّ تُوَفَّى كُلُّ نَفْسٍ مَّا كَسَبَتْ وَهُمْ لاَ يُظْلَمُونَ- ‘কোন নবীর জন্য সমীচীন নয় খেয়ানত করা। যে ব্যক্তি যা খেয়ানত করে, তা নিয়ে সে ক্বিয়ামতের দিন হাযির হবে। অতঃপর প্রত্যেককে তার কৃতকর্ম অনুযায়ী তার ফলাফল পুরোপুরি দেওয়া হবে এবং তারা কেউ অত্যাচারিত হবে না[10]

৮ম হিজরীর শাওয়াল মাসে অনুষ্ঠিত হুনায়েন যুদ্ধের গণীমত বণ্টনের সময় ইয়ামন থেকে আলী (রাঃ) প্রেরিত সামান্য কিছু অপরিশোধিত স্বর্ণ চারজনকে বণ্টন করায় অসন্তুষ্ট কিছু ব্যক্তি রাসূল (ছাঃ)-কে উদ্দেশ্য করে বলেছিল,كُنَّا نَحْنُ أَحَقَّ بِهَذَا مِنْ هَؤُلاَءِ، আমরা ওদের চাইতে এর অধিক হকদার। জওয়াবে রাসূল (ছাঃ) বলেছিলেন,أَلاَ تَأْمَنُونِى وَأَنَا أَمِينُ مَنْ فِى السَّمَاءِ، يَأْتِينِى خَبَرُ السَّمَاءِ صَبَاحًا وَمَسَاءً؟ ‘তোমরা কি আমাকে বিশ্বাস করো না? অথচ আমি আসমানবাসীর নিকট বিশ্বস্ত। সকাল-সন্ধ্যায় আমার নিকট আসমানের খবর আসে এরপরেও তারা বলল, يَا رَسُولَ اللهِ اتَّقِ اللهَ ‘হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহকে ভয় করুন তখন রাসূল (ছাঃ) বললেন, وَيْلَكَ أَوَلَسْتُ أَحَقَّ أَهْلِ الأَرْضِ أَنْ يَتَّقِىَ اللهَ؟ ‘তোমার ধ্বংস হৌক! আমি কি বিশ্ববাসীর মধ্যে আল্লাহকে ভয় করার অধিক হকদার নই?’...[11] অন্য বর্ণনায় এসেছে তিনি বলেন,رَحِمَ اللهُ مُوسَى قَدْ أُوذِىَ بِأَكْثَرَ مِنْ هَذَا فَصَبَرَ- ‘আল্লাহ মূসার প্রতি রহম করুন! এর চাইতে বেশী কষ্ট তাঁকে দেওয়া হয়েছিল। এরপরেও তিনি ছবর করেছিলেন[12] এতে বুঝা যায় যে, নেতাকে কঠোর আমানতদার অত্যন্ত ধৈর্যশীল তে হয়।

বড় আমানত জনগণের আমানত : এই আমানত রক্ষার জন্য যোগ্যতা, সততা আল্লাহভীরুতা ছাড়াও প্রয়োজন ভার বহনের সৎসাহস। প্রখ্যাত ছাহাবী আবু যার গিফারী (রাঃ) একদিন রাসূল (ছাঃ)-কে বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কি আমাকে কোন এলাকার শাসক নিযুক্ত করবেন না? তখন তিনি আমার কাঁধে আঘাত করে বললেন,يَا أَبَا ذَرٍّ إِنَّكَ ضَعِيفٌ وَإِنَّهَا أَمَانَةٌ وَإِنَّهَا يَوْمَ الْقِيَامَةِ خِزْيٌ وَنَدَامَةٌ إِلاَّ مَنْ أَخَذَهَا بِحَقِّهَا وَأَدَّى الَّذِي عَلَيْهِ فِيهَا. وَفِي رِوَايَةٍ : قَالَ لَهُ : يَا أَبَا ذَرٍّ إِنِّي أَرَاكَ ضَعِيفًا وَإِنِّي أُحِبُّ لَكَ مَا أُحِبُّ لِنَفْسِي لاَ تَأَمَّرَنَّ عَلَى اثْنَيْنِ وَلاَ تَوَلَّيَنَّ مَالَ يَتِيمٍ، رَوَاهُ مُسْلِمٌ- ‘হে আবু যার! তুমি দুর্বল। আর শাসনকার্য একটি আমানত। নিশ্চয় তা হবে ক্বিয়ামতের দিন অপমান লাঞ্ছনার কারণ। তবে সে ব্যক্তি নয়, যে তা যথার্থভাবে গ্রহণ করে এবং নিষ্ঠার সাথে তার উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করে

অন্য বর্ণনায় এসেছে, রাসূল (ছাঃ) তাকে বলেন, হে আবূ যার! আমি দেখছি তুমি একজন দুর্বল ব্যক্তি। আর আমি তোমার জন্য সেটাই পসন্দ করি, যা আমি নিজের জন্য পসন্দ করি। তুমি কখনো দুজন লোকেরও নেতা হয়োনা এবং ইয়াতীমের মালের অভিভাবক হয়ো না[13] একই ধরণের কথা তিনি মিক্বদাম বিন মাদীকারিবকেও বলেছিলেন।[14]

উক্ত হাদীছে আমানত গ্রহণ করতে নিষেধ করা হয়নি বরং আমানতদারিতার গুরুত্ব যে কত বেশী, সেটা বুঝানো হয়েছে। আর এটাই বাস্তব যে, ব্যক্তি সমাজ জীবনে দায়িত্ব পালন আমানতদারিতার বাধ্য-বাধকতা থাকবেই। কিন্তু আমানত যেন যথাযথভাবে রক্ষিত হয় এবং তাতে কোনভাবেই খেয়ানত না হয়, সেটাই দেখার বিষয়।

আল্লাহ বলেন,يَآ أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لاَ تَخُونُوا اللهَ وَالرَّسُولَ وَتَخُونُوآ أَمَانَاتِكُمْ وَأَنْتُمْ تَعْلَمُونَ- ‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহ তাঁর রাসূলের সাথে খেয়ানত করো না এবং জেনে-শুনে তোমাদের পরস্পরের আমানত সমূহে খেয়ানত করো না’ (আনফাল /২৭) তিনি বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ খেয়ানতকারীদের ভালবাসেন না’ (আনফাল /৫৮) আল্লাহ স্বীয় রাসূলকে বলেন,وَلاَ تَكُن لِّلْخَآئِنِينَ خَصِيمًا- ...‘আর তুমি খেয়ানতকারীদের পক্ষে বাদী হয়ো না’ (নিসা /১০৫) অত্র আয়াত থেকে স্পষ্টরূপে বুঝা যায় যে, নেতা কখনো কোন অধঃস্তন কর্মচারী বা কর্মকর্তার খেয়ানতের পক্ষে বাদী তে পারবেন না। আর সেকারণেই রাসূল (ছাঃ) কুরায়েশ বংশের সম্ভ্রান্ত মাখযূম গোত্রের জনৈকা মহিলা চুরি করলে তার পক্ষে সুফারিশের জওয়াবে উসামা বিন যায়েদকে বলেন, তুমি আমার নিকট আল্লাহর দন্ডবিধির ব্যাপারে সুফারিশ করছ? অতঃপর তিনি দাঁড়িয়ে সকলের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিয়ে বলেন,إِنَّمَا أَهْلَكَ الَّذِينَ قَبْلَكُمْ أَنَّهُمْ كَانُوا إِذَا سَرَقَ فِيهِمُ الشَّرِيفُ تَرَكُوهُ، وَإِذَا سَرَقَ فِيهِمُ الضَّعِيفُ أَقَامُوا عَلَيْهِ الْحَدَّ، ‘তোমাদের পূর্বেকার জাতি ধ্বংস হয়েছে একারণে যে, যখন তাদের মধ্যে কোন সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি চুরি করত, তখন তাকে ছেড়ে দিত। আর যখন কোন দুর্বল ব্যক্তি চুরি করত, তখন তার উপরে দন্ডবিধি জারি করতوَايْمُ اللهِ لَوْ أَنَّ فَاطِمَةَ بِنْتَ مُحَمَّدٍ سَرَقَتْ لَقَطَعْتُ يَدَهَا- ‘আল্লাহর কসম! যদি মুহাম্মাদের কন্যা ফাতেমাও চুরি করত, তাহলে আমি তার হাত কেটে দিতাম[15] রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,مَا مِنْ عَبْدٍ يَسْتَرْعِيهِ اللهُ رَعِيَّةً، يَمُوتُ يَوْمَ يَمُوتُ وَهُوَ غَاشٌّ لِّرَعِيَّتِهِ، إِلاَّ حَرَّمَ اللهُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ- ‘আল্লাহ যখন তার কোন বান্দাকে কিছু লোকের দায়িত্বশীল নিয়োগ করেন, অতঃপর সে খেয়ানত কারী হিসাবে মৃত্যুবরণ করে, আল্লাহ তার উপরে জান্নাতকে হারাম করে দেন[16] এরূপ কঠোর বিধানের কারণেই কোনরূপ চুরি বা সরকারী সম্পদের আমানতের খেয়ানত করার ঘটনা ইসলামী খেলাফতের ইতিহাসে দুর্লভ। ফলে বিশ্বব্যাপী ইসলামী বিজয়ের মূল কারণ ছিল মূলতঃ এই আমানতদারী এবং সুশাসন ন্যায়বিচার।

মুসলিম বাহিনী ওয়াদিল ক্বোরা উপস্থিত লে ইহূদীরা তীর নিক্ষেপ শুরু করে। তাতে মিদআম (مِدْعَم) নামক রাসূল (ছাঃ)-এর জনৈক গোলাম মৃত্যুবরণ করে। সাথীরা তাকে সম্ভাষণ জানিয়ে বলে ওঠেন, الْجَنَّةُ ‘তার জন্য জান্নাত তখন রাসূল (ছাঃ) রাগতঃস্বরে বলেন, ‘কখনোই না। সেই সত্তার কসম! যার হাতে আমার প্রাণ, এই ব্যক্তি খায়বরের দিন গণীমত বণ্টনের পূর্বেই তা থেকে একটা চাদর নিয়েছিল। সে চাদর এখন তার উপর অবশ্যই আগুন হয়ে জ্বলবে একথা শুনে কেউ জুতার একটি ফিতা বা দুটি ফিতা যা গোপনে নিয়েছিল, সব এনে রাসূল (ছাঃ)-এর নিকটে জমা দিল। রাসূল (ছাঃ) বললেন, ফিতা ছিল আগুনের[17]

জাবের (রাঃ) বলেন, জনৈক ব্যক্তি মারা গেলে মাত্র দুই দীনার ঋণ থাকায় রাসূল (ছাঃ) তাঁর জানাযা পড়াননি। তখন আবু ক্বাতাদাহ উক্ত ঋণ পরিশোধের দায়িত্ব নিল। অতঃপর রাসূল (ছাঃ) বললেন, ঋণগ্রস্ত নির্ধারিত এবং মাইয়েত দায়মুক্ত ? আবু ক্বাতাদাহ বলল, হ্যাঁ। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তার জানাযা পড়ালেন। একদিন পরে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, দুই দীনারের অবস্থা কি? আবু ক্বাতাদাহ বলল, মাত্র গতকালই লোকটি মারা গেছে। পরের দিন রাসূল (ছাঃ) পুনরায় তার নিকটে এলেন। আবু ক্বাতাদাহ বলল, আমি তার দুই দীনার পরিশোধ করেছি। তখন রাসূল (ছাঃ) বললেন, الآنَ بَرَدَتْ عَلَيْهِ جِلْدُهُ- ‘এখন মাইয়েতের চামড়া ঠান্ডা [18] এতে বুঝা যায় যে, কেবল দায়িত্ব নিলেই মাইয়েতের আযাব দূর হবেনা, যতক্ষণ না তার ঋণ পরিশোধ করা হবে।[19]

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) গণীমতের মালের দুই দিরহাম বা তার কম মূল্যের তুচ্ছ বস্ত্তর খেয়ানতকারী[20] এবং আত্মহত্যাকারীর জানাযা পড়েননি বরং অন্যকে পড়তে বলেছেন।[21] এক্ষণে আমানতের খেয়ানতকারী ব্যক্তির সাথে মুমিন সমাজের আচরণ কেমন হওয়া উচিৎ, তা সহজেই অনুমেয়।

عَنْ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَقُولُ : أَدُّوا الْخِيَاطَ وَالْمَخِيطَ، وَإِيَّاكُمْ وَالْغُلُولَ فَإِنَّهُ عَارٌ عَلَى أَهْلِهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ-

উবাদা বিন ছামেত (রাঃ) তে বর্ণিত তিনি বলেন, (হোনায়েন যুদ্ধের দিন) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘হে জনগণ! তোমাদের গণীমতের মালের সুঁই সুতা সহ সবই জমা দাও। গণীমতের মাল আত্মসাৎ করা তে বেঁচে থাক। কেননা ক্বিয়ামতের দিন তা আত্মসাৎকারীর জন্য লজ্জা অপমানের কারণ হবে[22]

তৎকালীন বিশ্বের পরাশক্তি রোম সম্রাটের সেনাপতি মুসলিম বাহিনীর নিকট বারবার পরাজিত হয়ে ১৩ হিজরীতে শামের আজনাদাইন যুদ্ধের এক পর্যায়ে তার এক দুঃসাহসী উনণত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত আরব খৃষ্টান গুপ্তচরকে নিয়োগ দেন। গুপ্তচর মুসলিম সেনা শিবিরে কয়েকদিন অবস্থান শেষে ফিরে গিয়ে যে রিপোর্ট দেয়, তা ছিল নিম্নরূপ :هُمْ بِاللَّيْلِ رُهْبَانٌ وَبِالنَّهَارِ فُرْسَانٌ، وَلَوْ سَرَقَ ابْنُ مَلِكِهِمْ قَطَعُوْا يَدَهُ وَلَوْ زَنَى رَجَمُوْهُ- ‘তারা রাতের বেলায় ইবাদতগুযার দিনের বেলায় ঘোড় সওয়ার। আল্লাহর কসম! যদি তাদের শাসকপুত্র চুরি করে, তাহলে তারা তার হাত কেটে দেয়। আর যদি যেনা করে, তবে তাকে প্রস্তরাঘাতে মাথা ফাটিয়ে হত্যা করে একথা শুনে সেনাপতি ক্বায়কুলান বলে ওঠেন, وَللهِ لَئِنْ كُنْتَ صَادِقًا لَبَطْنُ الْاَرْضِ خَيْرٌ لَنَا مِنْ ظَهْرِهَا ‘আল্লাহর কসম! যদি তোমার কথা সত্য হয়, তাহলে ভূগর্ভ আমাদের জন্য উত্তম হবে ভূপৃষ্ঠের চাইতে অর্থাৎ আমাদের মরে যাওয়াই উত্তম হবে।

পরে ১৬ হিজরীতে শাম থেকে নিরাশ হয়ে রাজধানী কনস্টান্টিনোপলে ফিরে গিয়ে রোম সম্রাট হেরাক্লিয়াস তাঁর এক বিশ্বস্ত গুপ্তচরকে মুসলমানদের বিজয়ের কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে তার কাছ থেকে একই ধরনের রিপোর্ট পেয়ে বলেন,لَئِنْ كُنْتَ صَدَقْتَنِيْ لَيَمْلِكُنَّ مَوْضِعَ قَدَمَيَّ هَاتَيْنِ- ‘যদি তুমি আমাকে সত্য বলে থাক, তাহলে ওরা অবশ্যই আমার দুপায়ের নীচের এই সিংহাসনটারও মালিক হয়ে যাবে[23]

তাঁর ভবিষ্যদ্বাণী সত্য হয়েছিল এবং হযরত ওমর ওছমান (রাঃ)-এর খেলাফতকালে রোমক পারসিক সাম্রাজ্য ইসলামী খেলাফতের অধীনস্ত হয়েছিল। পরবর্তীতে উক্ত বিজয় অব্যাহত থাকে। যা এশিয়া, ইউরোপ অফ্রিকা সহ পৃথিবীর দুই তৃতীয়াংশ ভূ-ভাগে বিস্তৃত হয়। ১৯২৪ সালের ২৪শে মার্চ সর্বশেষ তুরষ্কের ওছমানীয় খেলাফত ইহূদী-নাছারা তাদের দোসর মুনাফিকদের চাতুরী কপটতার কারণে বিলুপ্ত হয়।

আমানতদারিতার গুরুত্ব যে কত বেশী, তা বুঝা যায় পরবর্তী খলীফা কাকে করা হবে সে বিষয়ে খলীফা আবুবকর ওমরের মৃত্যুকালীন দুশ্চিন্তা থেকে। আবুবকর (রাঃ) তাঁর মৃত্যুর সময় পরবর্তী খলীফা হিসাবে নিকটতম ছাহাবীদের নিকট ওমর ফারূকের নাম প্রস্তাব করেন। তাতে তারা সবাই একবাক্যে সম্মত হন। তবে কেউ কেউ ওমরের কঠোরতার বিষয়ে প্রশ্ন তুললে তিনি বলেন, খেলাফতের গুরুভার চেপে বসলে কঠোরতা কমে যাবে।[24] ওমর (রাঃ) মৃত্যুর আগে আততায়ীর হামলায় আহত হওয়ার পর যখম যন্ত্রণা ভুলে পরবর্তী খলীফা কাকে করা যায়, সেটা নিয়ে দুশ্চিন্তায় অস্থিরভাবে পায়চারি করতে থাকেন। এসময় উপস্থিত আব্দুল্লাহ ইবনু আববাসের নিকট যোগ্যতম কয়েকজনের নাম নিয়ে আলোচনা করেন এবং প্রত্যেকের ভাল-মন্দ সূক্ষ্মভাবে বিশ্লেষণ করেন। শেষে কারু ব্যাপারে নিশ্চিত সিদ্ধান্তে পৌঁছতে না পেরে তিনি স্ব স্ব জীবদ্দশায় জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত উম্মতের শ্রেষ্ঠ ছয় জনের নাম প্রস্তাব করে যান এবং তাঁর মৃত্যুর তিন দিনের মধ্যে তাদেরকে যেকোন এক জনের ব্যাপারে একমত হওয়ার আদেশ দেন। যদি দুই পক্ষে তিন তিন সমান হয়ে যায়, তাহলে বড় ছেলে আব্দুল্লাহ বিন ওমরকে এক পক্ষে সমর্থন দিয়ে খলীফা নিযুক্তির কথা বলে যান।[25] এতে বুঝা যায় যে, সমাজ রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে যোগ্য নেতা নির্বাচন সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এবং সেখানে যোগ্য নির্বাচকমন্ডলী থাকা তার চাইতে বেশী গুরুত্বপূর্ণ। কারণ নেতাই হবেন সর্বোচ্চ আমানতদার। তাঁর কাছেই থাকবে সমাজ রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আমানত।

খেয়ানতকারীর পরিণতি : ক্বিয়ামতের দিন অঙ্গীকার বিশ্বাস ভঙ্গকারী ব্যক্তিদের ডেকে বলা হবে,هَذِهِ غَدْرَةُ فُلاَنِ بْنِ فُلاَنٍ- ‘এটি অমুকের সন্তান অমুকের বিশ্বাসঘাতকতা[26] আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন,لِكُلِّ غَادِرٍ لِوَاءٌ عِنْدَ اسْتِهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَفِي رِوَايَةٍ : لِكُلِّ غَادِرٍ لِوَاءٌ يَوْمَ الْقِيَامَةِ يُرْفَعُ لَهُ بِقَدْرِ غَدْرِهِ أَلاَ وَلاَ غَادِرَ أَعْظَمُ غَدْرًا مِنْ أَمِيرِ عَامَّةٍ- ‘প্রত্যেক খেয়ানতকারীর জন্য ক্বিয়ামতের দিন একটি ঝান্ডা থাকবে, যা তার পিঠের পিছনে পুঁতে দেওয়া হবে। অন্য বর্ণনায় এসেছে, তার খেয়ানতের পরিমাণ অনুযায়ী সেটি উঁচু হবে। সাবধান! জনগণের নেতার খেয়ানতের চাইতে বড় খেয়ানত আর হবেনা[27] দায়িত্বশীলগণ কোনরূপ খেয়ানত করবেন না বলে অঙ্গীকার করে থাকেন। অথচ তারাই অঙ্গীকার ভঙ্গ করে আমানতের খেয়ানত করেন। আল্লাহ বলেন,وَأَوْفُوْا بِالْعَهْدَ إِنَّ الْعَهْدَ كَانَ مَسْؤُوْلاً- ‘তোমরা অঙ্গীকার পূর্ণ কর। নিশ্চয়ই অঙ্গীকার সম্পর্কে (ক্বিয়ামতের দিন) তোমরা জিজ্ঞাসিত হবে’ (বনু ইস্রাঈল ১৭/৩৪)

কুরআনের আমানত : আমানতদারিতার বিষয়ে সতর্ককারী শ্রেষ্ঠ ইলাহী গ্রন্থ আল-কুরআন। যা মানুষকে বিশ্ব পরিচালনার সর্বোচ্চ আমানত সুষ্ঠুভাবে সংরক্ষণ সর্বোত্তম উপায়ে পরিপালনের যথাযথ পথ প্রদর্শন করে। সেদিকে ইঙ্গিত করেই আল্লাহ বলেন,لَوْ أَنْزَلْنَا هَذَا الْقُرْآنَ عَلَى جَبَلٍ لَّرَأَيْتَهُ خَاشِعًا مُّتَصَدِّعًا مِّنْ خَشْيَةِ اللهِ، وَتِلْكَ الْأَمْثَالُ نَضْرِبُهَا لِلنَّاسِ لَعَلَّهُمْ يَتَفَكَّرُونَ- ‘যদি এই কুরআন আমরা কোন পাহাড়ের উপর নাযিল করতাম, তাহলে অবশ্যই তুমি তাকে দেখতে আল্লাহর ভয়ে বিনীত বিদীর্ণ তে। আর আমরা এইসব দৃষ্টান্ত মানুষের জন্য বর্ণনা করি যাতে তারা চিন্তা-গবেষণা করে’ (হাশর ৫৯/২১) আর কারণেই জ্ঞানীশ্রেষ্ঠ হিসাবেআবুল হাকামনামে প্রসিদ্ধআবু জাহ্ল তার সাথীরা কুরআনী আমানত বহনে অস্বীকার করেছিল। যে বিষয়ে আল্লাহ বলেন,قَدْ نَعْلَمُ إِنَّهُ لَيَحْزُنُكَ الَّذِي يَقُولُونَ فَإِنَّهُمْ لاَ يُكَذِّبُونَكَ وَلَكِنَّ الظَّالِمِينَ بِآيَاتِ اللهِ يَجْحَدُونَ- ‘আমরা জানি যে, তারা যেসব কথা বলে তা তোমাকে দুঃখ দেয়। কিন্তু বাস্তব কথা এই যে, ওরা তোমাকে মিথ্যাবাদী বলে না, বরং এইসব যালেমরা আল্লাহর আয়াত সমূহকে অস্বীকার করে’ (আনআম-মাক্কী /৩৩)

জগৎ সংসারে শান্তি সুখের আকাঙ্খী এবং ন্যায় সত্যের প্রতিষ্ঠাকামী মানুষকে অবশ্যই কুরআনী আমানত বহনে এগিয়ে আসতে হবে। নইলে বিশেষ করে মুসলিম উম্মাহকে খেয়ানতের দায়ে আল্লাহর নিকট দায়ী তে হবে।

আল্লাহ আমাদেরকে খেয়ানতের কঠিন পাপ থেকে রক্ষা করুন- আমীন!

[1]. বুখারী হা/৬৪৯৬; মিশকাত হা/৫৪৩৯ফিতানঅধ্যায়, ‘ক্বিয়ামতের আলামত সমূহঅনুচ্ছেদ।

[2]. আবুদাঊদ হা/৩৫৩৫; তিরমিযী হা/১২৬৪; মিশকাত হা/২৯৩৪ রাবী আবু হুরায়রা (রাঃ); ছহীহাহ হা/৪২৩০।

[3]তাফসীর ইবনু জারীর ২০/৩৩৭ পৃ.; ইবনু কাছীর।

[4]মুসনাদ বাযযার হা/১১৩৯; মুসনাদ আবী ইয়ালা হা/৭১১মাজমাউয যাওয়ায়েদ হা/৩২৮, হায়ছামী বলেন, রাবীগণ ছহীহ-এর রাবী।

[5]. আহমাদ হা/৬৬৫২; বায়হাক্বী শোআব হা/৪৮৭৮; মিশকাত হা/৫২২২রিক্বাক্বঅধ্যায়; ছহীহাহ হা/৭৩৩।

[6]. বায়হাক্বী শোআব হা/৪৮৮৫; ছহীহুত তারগীব হা/১৭৬৩; ইবনু জারীর ২০/৩৪০।

[7]. মুসলিম হা/১৮৮৬; মিশকাত হা/৩৮০৬জিহাদঅধ্যায়।

[8]. বায়হাক্বী শোআব হা/৪০৪৫; মিশকাত হা/৩৫; ছহীহুত তারগীব হা/৩০০৪।

[9]. হাকেম /৩৭৬, হা/৩৩২০, হাকেম একেছহীহবলেছেন এবং যাহাবী তা সমর্থন করেছেন; ইবনু কাছীর, আল-বিদায়াহ ওয়ান-নিহায়াহ /১৮৯।

[10]. তিরমিযী হা/৩০০৯; আবুদাঊদ হা/৩৯৭১; আলে ইমরান /১৬১; ইবনু কাছীর।

[11]বুখারী হা/৪৩৫১।

[12]বুখারী হা/৪৩৩৬।

[13]. মুসলিম হা/১৮২৫; মিশকাত হা/৩৬৮২নেতৃত্ব পদমর্যাদাঅধ্যায়।

[14]. আবুদাঊদ হা/২৯৩৩; মিশকাত হা/৩৭০২ যঈফ।

[15]. বুখারী হা/৩৪৭৫; মুসলিম হা/১৬৮৮ (); মিশকাত হা/৩৬১০দন্ডবিধি সমূহঅধ্যায়।

[16]. মুসলিম হা/১৪২; রাবী মাক্বিল বিন ইয়াসার (রাঃ)

[17]বুখারী হা/৪২৩৪; মুসলিম হা/১১৫; মিশকাত হা/৩৯৯৭, জিহাদ অধ্যায়-১৯, অনুচ্ছেদ-৭।

[18]আহমাদ হা/১৪৫৭৬, সনদ হাসান।

[19]শাওকানী, নায়লুল আওত্বার /২৮৫।

[20]ছহীহ ইবনু হিববান হা/৪৮৫৩।

[21]. বুখারী হা/৫৭৭৮; মুসলিম হা/১০৯; মিশকাত হা/৩৪৫৩।

[22]. দারেমী হা/২৪৮৭; নাসাঈ হা/৩৬৮৮ হাসান; মিশকাত হা/৪০২৩।

[23]. ইবনু জারীর, তারীখুত ত্বাবারী /২১৫; ইবনু কাছীর, আল-বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ /, ৫৪ পৃ.

[24]. ইবনুল আছীর, আল-কামেল ফিত তারীখ /২৬৬ পৃ.

[25]. আল-মাওয়ার্দী, আল-আহকামুস সুলত্বা-নিইয়াহ ১৩ পৃ.

[26]. বুখারী হা/৬১৭৭মানুষকে তাদের পিতার নামে ডাকা হবেঅনুচ্ছেদ-৯৯; মুসলিম হা/১৭৩৫; মিশকাত হা/৩৭২৫নেতৃত্ব পদমর্যাদাঅধ্যায়, রাবী আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ)

[27]. মুসলিম হা/১৭৩৮; মিশকাত হা/৩৭২৭নেতৃত্ব পদমর্যাদাঅধ্যায়।

No comments

Powered by Blogger.