আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দন
আল্লাহর
ভয়ে ক্রন্দন
আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দনকারীর জন্যে উচ্চ মর্যাদা রয়েছে। আল্লাহর ভয়ে কাঁদা নবী-রাসূল এবং সালাফে ছালেহীনের বিশেষ বৈশিষ্ট্য। এটি হৃদয়ে ঈমান ও আল্লাহর প্রতি ভয়ের নিদর্শন। আমরা কুরআন তেলাওয়াত করি, জাহান্নাম ও আল্লাহর শাস্তি সম্পর্কে আলোচনা শুনি। কিন্তু আমাদের হৃদয়ে আল্লাহর ভীতি আসে না। তাঁর ভয়ে দু’চোখ দিয়ে অশ্রু প্রবাহিত হয় না। এরূপ পাষাণ হৃদয়ের অধিকারী হওয়া মুমিনের বৈশিষ্ট্য নয়। পক্ষান্তরে আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দনকারীর জন্য পরকালে মর্যাদাপূর্ণ স্থান ও সুখময় জান্নাত রয়েছে। আলোচ্য নিবন্ধে আমরা উক্ত বিষয়ে আলোচনার প্রয়াস পাব ইনশাআল্লাহ।-
আল্লাহর ভয়ে
ক্রন্দনকারীর ফযীলত :
আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দনের
ফযীলত অত্যধিক। এ বৈশিষ্ট্যের অধিকারীর সবচেয়ে বড় পুরস্কার হ’ল
জাহান্নাম থেকে মুক্তি। নিম্নে তাদের আরো কিছু ফযীলত ও মর্যাদা উল্লেখ করা হ’ল।-
(১) জাহান্নামী না
হওয়ার নিশ্চয়তা :
আবূ হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, لاَ يَلِجُ النَّارَ
رَجُلٌ بَكَى مِنْ
خَشْيَةِ اللَّهِ حَتَّى
يَعُودَ اللَّبَنُ فِي
الضَّرْعِ، وَلَا يَجْتَمِعُ
غُبَارٌ فِيْ سَبِيْلِ
اللهِ وَدُخَانُ جَهَنَّمَ
‘আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দনকারীর জাহান্নামে যাওয়া এরূপ
অসম্ভব যেরূপ দোহনকৃত দুধ পুনরায় পালানে ফিরে যাওয়া অসম্ভব। আর আল্লাহর পথের ধুলা
ও জাহান্নামের ধোঁয়া কখনও একত্রিত হবে না’।[1] আরেকটি হাদীছে এসেছে, ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, عَيْنَانِ
لاَ تَمَسُّهُمَا النَّارُ:
عَيْنٌ بَكَتْ مِنْ
خَشْيَةِ اللهِ، وَعَيْنٌ
بَاتَتْ تَحْرُسُ فِيْ
سَبِيْلِ اللهِ، ‘জাহান্নামের
আগুন দু’টি চোখকে স্পর্শ করবে না। এক- আল্লাহর ভয়ে যে
চোখ ক্রন্দন করে এবং দুই- আল্লাহর রাস্তায় যে চোখ পাহারা দিয়ে বিনিদ্র রাত
অতিবাহিত করে’।[2]
উল্লেখিত হাদীছদ্বয়ের প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, কোন ব্যক্তি আল্লাহ
তা‘আলার প্রতি পূর্ণ আনুগত্যশীল হয়ে এবং তাঁর
নিষিদ্ধ বিষয়াবলী পরিহার করে আল্লাহর ভয়ে অশ্রু প্রবাহিত করলে সে ব্যক্তি উক্ত
মর্যাদার অধিকারী হবে। হৃদয়ে পূর্ণ তাক্বওয়া বা আল্লাহভীতি রেখে নীরবে-নিভৃতে
আল্লাহর দিকে লুটিয়ে পড়লে দু’চোখ
দিয়ে অশ্রু ঝরবে। তবে এজন্য হৃদয়ে থাকা চাই পরিপূর্ণ ইখলাছ এবং আল্লাহর প্রতি
নিখাদ ভালোবাসা। কপট হৃদয়ের মানুষ কখনোই উক্ত মর্যাদার অধিকারী হ’তে পারবে না। তারা তো দুনিয়ার নগণ্য স্বার্থে
ধার্মিকতার লেবাস পরে নিজেকে যাহির করে। তাদের কাছে দুনিয়া হ’ল মুখ্য, আখেরাতের সফলতা তাদের কাছে গুরুত্বহীন।
পক্ষান্তরে মুমিন বান্দা আখেরাত হাছিলের জন্য সদা ব্যস্ত। তাই কখনও কোন নেকী বা
কল্যাণ তার হাতছাড়া হ’লেই
সে ডুকরে কেঁদে ওঠে, অঝোরে দু’চোখ
দিয়ে অশ্রু ঝরে। যেমন সহায় সম্বলহীন দরিদ্র ছাহাবীগণ যারা তাবূক যুদ্ধে পাথেয়র
অভাবে যেতে না পারায় কেঁদেছিল। ত্রিশ হাযার সেনা নিয়ে রওয়ানা হওয়ার পূর্বে আল্লাহর
রাসূল (ছাঃ) বাহনের অভাবে নিজের অপারগতা প্রকাশ করে যাদের বিদায় দিয়েছিলেন সেই
সৌভাগ্যবান ব্যক্তিদের প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন,إِذَا مَا
أَتَوْكَ لِتَحْمِلَهُمْ قُلْتَ
لَا أَجِدُ مَا
أَحْمِلُكُمْ عَلَيْهِ تَوَلَّوْا
وَأَعْيُنُهُمْ تَفِيضُ مِنَ
الدَّمْعِ حَزَنًا أَلَّا
يَجِدُوْا مَا يُنْفِقُونَ- ‘যারা
তোমার নিকট এজন্য আসে যে, তুমি তাদের (জিহাদে যাবার) জন্য বাহনের ব্যবস্থা করবে।
অথচ তুমি বলেছ যে, আমার নিকটে এমন কোন বাহন নেই যার উপর তোমাদের সওয়ার করাবো। তখন
তারা এমন অবস্থায় ফিরে যায় যে, তাদের চক্ষুসমূহ হ’তে অশ্রু প্রবাহিত হ’তে থাকে এই দুঃখে যে, তারা এমন কিছু পাচ্ছে না যা তারা ব্যয় করবে’ (তওবা ৯/৯২)।
উক্ত জান্নাত পিয়াসী ব্যক্তিদের সম্পর্কে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)
বলেন, إِنَّ بِالْمَدِينَةِ أَقْوَامًا
مَا سِرْتُمْ مَسِيْرًا
وَلاَ قَطَعْتُمْ وَادِيًا
إِلاَّ كَانُوْا مَعَكُمْ.
قَالُوْا يَا رَسُوْلَ
اللهِ وَهُمْ بِالْمَدِيْنَةِ، قَالَ
وَهُمْ بِالْمَدِينَةِ، حَبَسَهُمُ
الْعُذْرُ- ‘মদীনায় এমন কিছু লোক রয়েছে, তোমরা যেখানেই সফর করেছ এবং যে
উপত্যকাই অতিক্রম করেছ তারা তোমাদের সঙ্গে ছিল। ছাবায়ে কেরাম বললেন, হে আল্লাহর
রাসূল! তারা তো মদীনায় ছিল? তিনি বললেন, তারা মদীনায় ছিল, কেবল ওযর তাদের আটকিয়ে
রেখেছিল’।[3]
(২) ক্রন্দনকারী হাশরের ময়দানে নিরাপদে অবস্থান করবে :
হাশরের ময়দান এমন এক স্থান, যেখানে পৃথিবীর যাবতীয় সম্পর্ক ছিন্ন
হয়ে মানুষ নতুন এক ময়দানে উত্থিত হবে। আল্লাহ বলেন, وَرَأَوُا الْعَذَابَ وَتَقَطَّعَتْ بِهِمُ
الْأَسْبَابُ ‘এবং তারা আযাবকে প্রত্যক্ষ করবে ও পরস্পরের সকল সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে
যাবে’ (বাক্বারাহ ২/১৬৬)।
সেদিন যালেমের যুলুম শেষ হয়ে যাবে এবং কোন ব্যক্তির কর্তৃত্ব চলবে
না কেবল আল্লাহর কর্তৃত্ব ব্যতীত। আল্লাহ বলেন, لِمَنِ الْمُلْكُ
الْيَوْمَ لِلَّهِ الْوَاحِدِ
الْقَهَّارِ ‘আজ রাজত্ব কার? কেবলমাত্র আল্লাহর, যিনি এক ও মহাপরাক্রান্ত’ (মুমিন ৪০/১৬)।
ক্বিয়ামতের কঠিন দিনে মানুষের ভয়াবহ পরিস্থিতি সম্পর্কে রাসূল
(ছাঃ) বলেন,يَعْرَقُ النَّاسُ يَوْمَ
القِيَامَةِ حَتَّى يَذْهَبَ
عَرَقُهُمْ فِي الأَرْضِ
سَبْعِينَ ذِرَاعًا، وَيُلْجِمُهُمْ حَتَّى
يَبْلُغَ آذَانَهُم ‘ক্বিয়ামতের
দিন মানুষের ঘাম ঝরবে। এমনকি তাদের ঘাম যমীনে সত্তর হাত পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়বে এবং
তাদের মুখ পর্যন্ত ঘামে ডুবে যাবে, এমনকি কান পর্যন্ত’।[4]
আর ক্বিয়ামতের কঠিন পরিস্থিতিতে সাত শ্রেণীর মুমিন আরশের নিচে
আশ্রয় পাবে। তাদের এক শ্রেণী সম্বন্ধে রাসূল (ছাঃ) বলেন, وَرَجُلٌ ذَكَرَ اللهَ
خَالِيًا فَفَاضَتْ عَيْنَاه
‘ঐ ব্যক্তি যে নির্জনে আল্লাহকে স্মরণকালে তার দু’চোখ দিয়ে অশ্রুধারা বইতে থাকে’।[5]
(৩) আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দনকারী আল্লাহর গযব থেকে রক্ষা পায়
:
বিগত যুগে আল্লাহর গযবে যে সমস্ত জাতি ধ্বংস হয়ে গেছে যেমন ‘আদ, ছামূদ ও লূত্ব ইত্যাদি, তাদের ধ্বংসস্থল
অতিক্রমকালে ক্রন্দন করতে বলা হয়েছে এজন্য যে, তাদের উপর যে গযব এসেছিল অনুরূপ
গযবে যেন কেউ না পড়ে। এ মর্মে রাসূল (ছাঃ) বলেন,لاَ تَدْخُلُوْا عَلَى
هَؤُلاَءِ المُعَذَّبِيْنَ إِلاَّ
أَنْ تَكُوْنُوْا بَاكِيْنَ،
فَإِنْ لَمْ تَكُوْنُوْا بَاكِيْنَ
فَلاَ تَدْخُلُوْا عَلَيْهِمْ، لاَ
يُصِيْبُكُمْ مَا أَصَابَهُمْ- ‘তোমরা
এসব আযাবপ্রাপ্ত সম্প্রদায়ের লোকালয়ে ক্রন্দনরত অবস্থা ব্যতীত প্রবেশ করবে না। যদি
কান্না না আসে তাহলে সেখানে প্রবেশ কর না, যাতে তাদের উপর যা আপতিত হয়েছিল তা
তোমাদের উপর আপতিত না হয়’।[6]
(৪) কঠোর হৃদয়ের প্রতি আল্লাহর ভীতি প্রদর্শন :
যাদের অন্তর কঠিন ও আল্লাহভীতি শূন্য তাদের সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,فَوَيْلٌ لِلْقَاسِيَةِ قُلُوبُهُمْ مِنْ
ذِكْرِ اللهِ أُولَئِكَ
فِيْ ضَلَالٍ مُبِيْنٍ-
‘দুর্ভোগ ঐ লোকদের জন্য, যাদের অন্তর আল্লাহর
স্মরণ থেকে কঠোর। তারা সুস্পষ্ট ভ্রান্তির মধ্যে রয়েছে’ (যুমার ৩৯/২২)।
বিভিন্ন কারণে মানুষের হৃদয় কঠোর হয়ে যায়। ফলে হৃদয়ে আল্লাহভীতি
নষ্ট হয়ে যায়। যেমন- (১) আখেরাত বিমুখতা এবং দুনিয়ার প্রতি অধিক হারে ঝুঁকে পড়া।
(২) অনর্থক কথা ও কর্মে জড়িয়ে পড়া (৩) পাপ ও অন্যায় কর্মে জড়িত থাকা। মূলতঃ পাপের
সঙ্গে জড়িত ব্যক্তির হৃদয় অত্যন্ত কঠোর হয়, ফলে পাপিষ্ঠ ব্যক্তির হৃদয়ে আল্লাহভীতি
জাগ্রত হয় না। রাসূল (ছাঃ) বলেন,
إِنَّ العَبْدَ
إِذَا أَخْطَأَ خَطِيْئَةً
نُكِتَتْ فِيْ قَلْبِهِ
نُكْتَةٌ سَوْدَاءُ، فَإِذَا
هُوَ نَزَعَ وَاسْتَغْفَرَ وَتَابَ
سُقِلَ قَلْبُهُ، وَإِنْ
عَادَ زِيدَ فِيْهَا
حَتَّى تَعْلُوَ قَلْبَهُ،
وَهُوَ الرَّانُ الَّذِيْ
ذَكَرَ اللهُ {كَلاَّ
بَلْ رَانَ عَلَى
قُلُوْبِهِمْ مَا كَانُوْا
يَكْسِبُوْنَ}
‘বান্দা যখন একটি গুনাহ করে তখন তার অন্তরে একটি কালো দাগ পড়ে।
অতঃপর যখন সে গুনাহের কাজ পরিহার করে, ক্ষমা প্রার্থনা করে এবং তওবা করে তখন তার
অন্তর পরিষ্কার ও দাগমুক্ত হয়ে যায়। সে আবার পাপ করলে তার অন্তরে দাগ বৃদ্ধি পেতে
থাকে এবং তার পুরো অন্তর এভাবে কালো দাগে ঢেকে যায়। এটাই সেই মরিচা আল্লাহ তা‘আলা যা বর্ণনা করেছেন- ‘কখনই না, বরং তাদের অপকর্মসমূহ তাদের অন্তরে
মরিচা ধরিয়েছে’ (মুত্বাফফিফীন ৮৩/১৪)।[7]
আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দনের গুরুত্ব :
আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দনের গুরুত্ব অত্যধিক। যা বিভিন্ন হাদীছ দ্বারা
প্রতীয়মান হয়। নিম্নে কয়েকটি হাদীছ উল্লেখ করা হ’ল।-
আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, لَوْ تَعْلَمُوْنَ مَا
أَعْلَمُ لَضَحِكْتُمْ قَلِيْلاً،
وَلَبَكَيْتُمْ كَثِيْرًا- ‘আমি
যা জানি তোমরা যদি তা জানতে, তবে খুব কম হাসতে এবং অধিক কাঁদতে’।[8] অন্য হাদীছে এসেছে, আবূ যার (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)
বলেছেন,
إِنِّي أَرَى
مَا لَا تَرَوْنَ،
وَأَسْمَعُ مَا لاَ
تَسْمَعُوْنَ، إِنَّ السَّمَاءَ
أَطَّتْ، وَحَقَّ لَهَا
أَنْ تَئِطَّ، مَا
فِيْهَا مَوْضِعُ أَرْبَعِ
أَصَابِعَ إِلَّا وَمَلَكٌ
وَاضِعٌ جَبْهَتَهُ سَاجِدًا
لِلَّهِ، وَاللهِ لَوْ
تَعْلَمُونَ مَا أَعْلَمُ
لَضَحِكْتُمْ قَلِيْلاً، وَلَبَكَيْتُمْ كَثِيْرًا،
وَمَا تَلَذَّذْتُمْ بِالنِّسَاءِ عَلَى
الْفُرُشَاتِ، وَلَخَرَجْتُمْ إِلَى
الصُّعُدَاتِ، تَجْأَرُونَ إِلَى
اللهِ، وَاللهِ لَوَدِدْتُ
أَنِّي كُنْتُ شَجَرَةً
تُعْضَدُ-
‘আমি যা দেখি তোমরা তা দেখ না, আর আমি যা শুনতে পাই তোমরা তা শুনতে
পাও না। আসমান তো চড়চড় শব্দ করছে, আর সে এই শব্দ করার যোগ্য। তাতে এমন চার আঙ্গুল
পরিমাণ জায়গাও নেই যেখানে কোন ফিরিশতা আল্লাহর জন্য সিজদারত নেই। আল্লাহর শপথ! আমি
যা জানি তোমরা যদি তা জানতে তাহ’লে
তোমরা খুব কম হাসতে, বেশী কাঁদতে এবং বিছানায় স্ত্রীদের উপভোগ করতে না, বাড়ী-ঘর
ছেড়ে পথে-প্রান্তরে বেরিয়ে পড়তে এবং চিৎকার করে আল্লাহর কাছে দো‘আ করতে যে, আল্লাহর শপথ! হায়, আমি যদি একটি গাছ
হ’তাম এবং তা কেটে ফেলা হ’ত’।[9]
আল্লাহর ভয়ে নির্গত অশ্রু ফোঁটা তাঁর নিকট অধিক প্রিয় : আবূ উমামা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত নবী করীম (ছাঃ) বলেন, لَيْسَ شَيْءٌ أَحَبَّ
إِلَى اللهِ مِنْ
قَطْرَتَيْنِ وَأَثَرَيْنِ، قَطْرَةٌ
مِنْ دُمُوْعٍ فِيْ
خَشْيَةِ اللهِ، وَقَطْرَةُ
دَمٍ تُهَرَاقُ فِيْ
سَبِيْلِ اللهِ، ‘দু’টি ফোঁটা ও দু’টি চিহ্নের চেয়ে অধিক প্রিয় আল্লাহর নিকট অন্য কিছু নেই। (১)
আল্লাহর ভয়ে নিঃসৃত অশ্রু ফোঁটা (২) আল্লাহর পথে (জিহাদে) নির্গত রক্তের ফোঁটা’।[10]
মহা মানবদের আল্লাহভীতি :
১. নবী-রাসূলগণ
:
মানব জাতির মধ্যে নবী-রাসূলগণ হ’লেন শ্রেষ্ঠ। মানবতার হেদায়াতের জন্য তাঁদের আগমন। তাঁরা অহী মারফত
জাহান্নামের শাস্তি ও অদৃশ্য বিষয়াদির খবর পেতেন। এজন্যে তাঁরা সাধারণ মানুষের
চাইতে আল্লাহকে অধিক ভয় করতেন। নবী-রাসূলদের অশ্রুসিক্ত হৃদয় প্রসঙ্গে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,أُولَئِكَ الَّذِيْنَ
أَنْعَمَ اللهُ عَلَيْهِمْ
مِنَ النَّبِيِّيْنَ مِنْ
ذُرِّيَّةِ آدَمَ وَمِمَّنْ
حَمَلْنَا مَعَ نُوحٍ
وَمِنْ ذُرِّيَّةِ إِبْرَاهِيْمَ وَإِسْرَائِيْلَ وَمِمَّنْ
هَدَيْنَا وَاجْتَبَيْنَا إِذَا
تُتْلَى عَلَيْهِمْ آيَاتُ
الرَّحْمَنِ خَرُّوْا سُجَّدًا
وَبُكِيًّا. ‘এরাই হ’ল
তারা যাদেরকে আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেন নবীগণের মধ্যে। যারা আদমের বংশধর এবং যাদেরকে
আমরা নূহের সাথে নৌকায় আরোহন করিয়েছিলাম তাদের বংশধর। তারা ইবরাহীম ও ইসরাঈল (ইয়া‘কূব)-এর বংশধর এবং যাদেরকে আমরা সুপথ প্রদর্শন
করেছিলাম ও মনোনীত করেছিলাম তাদের বংশধর। যখন তাদের নিকট দয়াময়ের (আল্লাহর) আয়াত
সমূহ তেলাওয়াত করা হ’ত,
তখন তারা সিজদায় লুটিয়ে পড়ত ক্রন্দনরত অবস্থায়’ (মারইয়াম ১৯/৫৮)।
আল্লাহ তা‘আলা
আরো বলেন,إِنَّهُمْ كَانُوْا يُسَارِعُوْنَ فِي
الْخَيْرَاتِ وَيَدْعُوْنَنَا رَغَبًا
وَرَهَبًا وَكَانُوْا لَنَا
خَاشِعِيْنَ- ‘তারা (পিতা-পুত্র) সর্বদা সৎকর্মে প্রতিযোগিতা করত। তারা আশা ও
ভীতির সাথে আমাদের ডাকত। আর তারা ছিল আমাদের প্রতি বিনয়াবনত’ (আম্বিয়া ২১/৯০)।
২. ছাহাবায়ে কেরাম :
নবী ও রাসূলের পর ছাহাবীগণ ছিলেন মানব জাতির মধ্যে শ্রেষ্ঠতম।
আল্লাহ তা‘আলার প্রতি তাঁদের ভালোবাসা, ভয় এবং ইসলামের
জন্য তাদের অসাধারণ ত্যাগ আমাদেরকে বিস্মিত করে। আল্লাহর আয়াত শ্রবণ করে তারা
ক্রন্দন করতেন। এখানে কয়েকজন ছাহাবীর ঘটনা উল্লেখ করা হ’ল।-
(ক) ওছমান (রাঃ) :
ওছমান (রাঃ)-এর মুক্ত দাস হানী বলেন,
كَانَ عُثْمَانُ
بْنُ عَفَّانَ إِذَا
وَقَفَ عَلَى قَبْرٍ
يَبْكِيْ حَتَّى يَبُلَّ
لِحْيَتَهُ، فَقِيلَ لَهُ:
تَذْكُرُ الْجَنَّةَ وَالنَّارَ، وَلاَ
تَبْكِي، وَتَبْكِيْ مِنْ
هَذَا؟ قَالَ: إِنَّ
رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى
اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ،
قَالَ: إِنَّ الْقَبْرَ
أَوَّلُ مَنَازِلِ الْآخِرَةِ، فَإِنْ
نَجَا مِنْهُ، فَمَا
بَعْدَهُ أَيْسَرُ مِنْهُ،
وَإِنْ لَمْ يَنْجُ
مِنْهُ، فَمَا بَعْدَهُ
أَشَدُّ مِنْهُ قَالَ:
وَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ
صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ: مَا رَأَيْتُ
مَنْظَرًا قَطُّ إِلاَّ
وَالْقَبْرُ أَفْظَعُ مِنْهُ-
‘ওছমান (রাঃ) কোন কবরের পাশে দাঁড়িয়ে এত বেশী কাঁদতেন যে, তাঁর দাঁড়ি
ভিজে যেত। তাঁকে প্রশ্ন করা হ’ল,
জান্নাত-জাহান্নামের আলোচনা করলে তো আপনি কাঁদেন না, অথচ কবর দর্শনে এত বেশী
কাঁদেন কেন? তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘আখেরাতের মনযিলগুলোর মধ্যে কবর হ’ল প্রথম মনযিল। এখান থেকে কেউ মুক্তি পেয়ে গেলে
তার জন্য পরবর্তী মনযিলগুলোতে মুক্তি পাওয়া খুব সহজ হয়ে যাবে। আর এখান থেকে মুক্তি
না পেলে তার জন্য পরবর্তী মনযিলগুলো আরো বেশী কঠিন হবে’। ওছমান (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আরো
বলেছেন, ‘আমি কবরের দৃশ্যের চাইতে অধিক ভয়ংকর দৃশ্য আর
কখনো দেখিনি।[11]
(খ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) :
আবূ হুরায়রা (রাঃ) তাঁর নিজের অসুস্থতায় কাঁদলেন। অতঃপর তাকে বলা হ’ল, কোন জিনিস আপনাকে কাঁদাচ্ছে? তিনি বললেন, ‘আমি তোমাদের এ দুনিয়ার জন্যে কাঁদছি না, বরং আমি
কাঁদছি আমার সফরের দূরত্ব এবং স্বল্প পাথেয়র জন্য। নিশ্চয়ই আমি জান্নাত বা
জাহান্নামের কঠিন পথ (অতিক্রমের দুঃশ্চিন্তায়) সন্ধ্যা করি। আমি জানি না, আমাকে
এতদুভয়ের (জান্নাত বা জাহান্নামের) কোথায় নেওয়া হবে?[12]
(গ) ইবনু ওমর (রাঃ) :
ইবনু ওমর (রাঃ) যখন আল্লাহ তা‘আলার বাণী,وَيْلٌ
لِلْمُطَفِّفِيْنَ ‘দুর্ভোগ মাপে কম দানকারীদের জন্য’ (মুত্বাফফিফিন ৮৩/১) এই আয়াত পাঠের পর আল্লাহর
বাণী, يَوْمَ يَقُوْمُ النَّاسُ
لِرَبِّ الْعَالَمِيْنَ ‘যেদিন
মানুষ দন্ডায়মান হবে বিশ্বপালকের সম্মুখে’ (মুত্বাফফিফিন ৮৩/৬) এই আয়াতে পৌঁছলেন তখন
কেঁদে ফেললেন। অতঃপর আয়াতের মর্মবাণী ও আল্লাহর ভয় তাঁর অন্তরে এমন প্রভাব ফেলল
যে, তিনি ভেঙ্গে পড়লেন এবং ঐ আয়াতের পর আর সামনের দিকে অগ্রসর হ’তে পারলেন না।[13]
সালাফে ছালেহীনগণ :
(১) ওমর বিন আব্দুল আযীয : উমাইয়া খলীফা ওমর বিন আব্দুল আযীয ইসলামের ইতিহাসে অধিক
ক্রন্দনকারী হিসাবে খ্যাত। তাঁর পুণ্যময় জীবনের বিস্ময়কর একটি ঘটনা হচ্ছে, ফাতেমা
বিনতে আব্দুল মালেক কেঁদে কেঁদে তাঁর দৃষ্টিশক্তি দুর্বল করে ফেলল। অতঃপর তাঁর ভাই
মাসলামা ও হিশাম তাঁর নিকট এসে বলল, কোন জিনিসটি তোমাকে এভাবে কাঁদাচ্ছে? তোমার
যদি দুনিয়ার কোন কিছু হারায় তাহ’লে
আমাদের সম্পদ ও পরিজন দ্বারা তোমাকে আমরা সাহায্য করব। তাদের জবাবে ফাতেমা বললেন,
ওমরের কোন কিছুর জন্যে আমি দুঃখ করছি না। কিন্তু আল্লাহর কসম! গত রাত্রে দেখা একটি
দৃশ্য আমার ক্রন্দনের কারণ। অতঃপর ফাতেমা বিনতে আব্দুল মালেক বললেন, আমি গত রাত্রে
ওমর বিন আব্দুল আযীযকে ছালাতরত অবস্থায় দেখেছি। অতঃপর তিনি আল্লাহর বাণী,يَوْمَ يَكُوْنُ النَّاسُ
كَالْفَرَاشِ الْمَبْثُوْثِ، وَتَكُوْنُ
الْجِبَالُ كَالْعِهْنِ الْمَنْفُوْشِ- ‘যেদিন
মানুষ হবে বিক্ষিপ্ত পতঙ্গের মত এবং পর্বতমালা হবে ধুনিত রঙিন পশমের মত’ (ক্বারি‘আহ ১০১/৪-৫) এই আয়াত পাঠ করে চিৎকার করে উঠলেন এবং মাটিতে পড়ে
গেলেন। অতঃপর কঠিনভাবে চিৎকার করতে থাকলে আমার মনে হ’ল তাঁর রূহ বের হয়ে যাবে। অতঃপর তিনি থামলে আমার
মনে হ’ল তিনি হয়ত মারা গেছেন। এরপর তিনি চেতনা ফিরে
পেয়ে ফরিয়াদ করে বলতে লাগলেন, হায়! মন্দ সকাল! এরপর তিনি লাফিয়ে উঠে ঘরের মধ্যে
ঘুরতে থাকলেন আর বলতে লাগলেন, ‘হায়!
আমার জন্য দুর্ভোগ। সেদিন কোন লোক হবে বিক্ষিপ্ত পতঙ্গের মত এবং পর্বতমালা হবে
ধুনিত রঙিন পশমের মত’?[14]
(২) মুহাম্মাদ বিন মুনকাদির :
কোন এক রাত্রে মুহাম্মাদ বিন মুনকাদির ছালাত আদায় করছিলেন। এক
পর্যায়ে তিনি কাঁদতে লাগলেন। এক সময় তাঁর ক্রন্দনের মাত্রা বেড়ে গেলে তাঁর পরিবার
ঘাবড়ে যায়। অতঃপর তাকে জিজ্ঞেস করা হ’ল যে, তিনি কেন কাঁদছেন? এমতাবস্থায় তাঁর ক্রন্দনের সীমা অতিক্রম
করলে তাঁর পরিবার ইবনু হাযমকে ডেকে পাঠালেন। ইবনু হাযম মুহাম্মাদ ইবনু মুনকাদিরকে
জিজ্ঞেস করলেন, কোন জিনিস তোমাকে কাঁদাচ্ছে? জবাবে ইবনু মুনকাদির বললেন, আমি একটি
আয়াত তেলাওয়াত করে সামনের দিকে অগ্রসর হচ্ছিলাম। আবু হাযেম বললেন, সে আয়াতটি কি?
ইবনু মুনকাদির বললেন, আয়াতটি হচ্ছে-وَلَوْ أَنَّ
لِلَّذِيْنَ ظَلَمُوْا مَا
فِي الْأَرْضِ جَمِيعًا
وَمِثْلَهُ مَعَهُ لَافْتَدَوْا بِهِ
مِنْ سُوْءِ الْعَذَابِ
يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَبَدَا
لَهُمْ مِنَ اللهِ
مَا لَمْ يَكُوْنُوْا يَحْتَسِبُوْنَ ‘যদি
যালেমদের কাছে পৃথিবীর সকল সম্পদ থাকে এবং তার সাথে সমপরিমাণ আরও থাকে, তাহ’লে অবশ্যই তারা ক্বিয়ামতের দিন কঠিন শাস্তি থেকে
বাঁচার জন্য মুক্তিপণ হিসাবে সবই দিয়ে দিবে। অথচ সেদিন আল্লাহর পক্ষ হ’তে তাদের জন্য এমন শাস্তি প্রকাশ করা হবে, যা
তারা কল্পনাও করত না’ (যুমার
৩৯/৪৭)। ইবনু মুনকাদির থেকে উক্ত আয়াত শুনে আবু হাযেম কেঁদে ফেললেন। অতঃপর
তারা উভয়ে কঠিনভাবে কাঁদতে লাগলেন।[15]
হৃদয়ে আল্লাহভীতি আনয়নের উপায় :
মানব মনে আল্লাহভীতি জাগ্রত করার অনেক মাধ্যম রয়েছে, যেগুলি অনুসরণ
করলে আললাহর ভয় চলে আসবে এবং কঠোর হৃদয় নরম হবে। যেমন-
১. কুরআন তেলাওয়াত করা : কুরআন এমন এক বরকতময় কিতাব, যার সংস্পর্শে কঠোর হৃদয়ের
মানুষও নরম হয়ে যায়। আরবের মরুচারী কঠোর স্বভাবের মানুষগুলি কুরআনের ছায়াতলে এসে
বিনয়ী ও সুসভ্য হয়েছে এবং তাদের পাষাণ অন্তর বিনম্র হয়েছে। কুরআনের বাণী শুনে
শ্রেষ্ঠ মানব আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)ও কেঁদেছেন।
আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ (রাঃ) বলেন, একদা নবী করীম (ছাঃ) আমাকে
বললেন, আমার সামনে কুরআন তিলাওয়াত কর। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি আপনার
সামনে পড়ব, অথচ আপনার কাছে তা নাযিল হয়েছে? তিনি বললেন, আমি অপরের তেলাওয়াত শুনতে
ভালবাসি। সুতরাং আমি তাঁর সামনে সূরা নিসা পড়ে শুনালাম। পড়ার সময় আমি যখন এই আয়াতে
এসেছি,فَكَيْفَ إِذَا جِئْنَا
مِنْ كُلِّ أُمَّةٍ
بِشَهِيْدٍ وَجِئْنَا بِكَ
عَلَى هَؤُلاَءِ شَهِيْدًا-
‘অতএব সেদিন কেমন হবে, যেদিন আমরা প্রত্যেক উম্মত
থেকে একজন সাক্ষী (নবী) আনব এবং তোমাকে তাদের সকলের উপর সাক্ষী করব? (নিসা
৪/৪১)। তিনি বললেন, حَسْبُكَ
الآنَ فَالْتَفَتُّ إِلَيْهِ،
فَإِذَا عَيْنَاهُ تَذْرِفَانِ ‘বেশ
যথেষ্ট হয়েছে, থাম। এ সময় আমি তাঁর দিকে তাকিয়ে দেখলাম তাঁর দু’চোখ দিয়ে অশ্রু প্রবাহিত হচ্ছে’।[16]
২. আল্লাহর কিতাব ও তাঁর আয়াত অনুধাবন করা : আল্লাহ তা‘আলা বলেন, أَفَلَا
يَتَدَبَّرُوْنَ الْقُرْآنَ أَمْ
عَلَى قُلُوْبٍ أَقْفَالُهَا ‘তবে
কি তারা কুরআন নিয়ে গবেষণা করে না? নাকি তাদের হৃদয়গুলি তালাবদ্ধ?’ (মুহাম্মাদ ৪৭/২৪)।
নাছের আস-সা‘দী
(মৃতঃ ১৩৭৬ হিঃ) উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন,فإنهم لو
تدبروه، لدلهم على
كل خير، ولحذرهم
من كل شر،
ولملأ قلوبهم من
الإيمان، وأفئدتهم من
الإيقان، ولأوصلهم إلى
المطالب العالية، والمواهب
الغالية ‘অতঃপর তারা যদি কুরআন নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করে, তবে তা তাদেরকে
সমগ্র কল্যাণের পথে পরিচালিত করবে এবং প্রত্যেক অকল্যাণ হ’তে সাবধান করবে। আর তাদের হৃদয় ঈমান এবং দৃঢ়
বিশ্বাস দ্বারা পূর্ণ করে দিবে। অতঃপর তাদেরকে উচ্চ মর্যাদায় পৌঁছে দিবে এবং
মূল্যবান পারিতোষিক দান করবে’।[17]
আল্লাহ আরো বলেন,اللهُ
نَزَّلَ أَحْسَنَ الْحَدِيثِ
كِتَابًا مُتَشَابِهًا مَثَانِيَ
تَقْشَعِرُّ مِنْهُ جُلُودُ
الَّذِينَ يَخْشَوْنَ رَبَّهُمْ
ثُمَّ تَلِينُ جُلُودُهُمْ وَقُلُوبُهُمْ إِلَى
ذِكْرِ اللهِ ذَلِكَ
هُدَى اللهِ يَهْدِي
بِهِ مَنْ يَشَاءُ
وَمَنْ يُضْلِلِ اللهُ
فَمَا لَهُ مِنْ
هَادٍ- ‘আল্লাহ সর্বোত্তম বাণী সম্বলিত কিতাব নাযিল করেছেন। যা পরস্পরে
সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং পুনঃ পুনঃ পঠিত। এতে তাদের দেহচর্ম ভয়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে, যারা
তাদের প্রতিপালককে ভয় করে। অতঃপর তাদের দেহ-মন আল্লাহর স্মরণে বিনীত হয়। এটা হ’ল আল্লাহর পথপ্রদর্শন। এর মাধ্যমে তিনি যাকে চান
পথপ্রদর্শন করেন। আর আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন, তাকে পথ দেখানোর কেউ নেই’ (যুমার ৩৯/২৩)।
৩. দ্বীনী আলোচনা শ্রবণ করা :
আল্লাহ তা‘আলা
বলেন, فَذَكِّرْ بِالْقُرْآنِ مَنْ
يَخَافُ وَعِيدِ ‘সুতরাং
যে শাস্তিকে ভয় করে তাকে উপদেশ দান কর কুরআনের সাহায্যে’ (ক্বাফ ৫০/৪৫)। তিনি আরো বলেন, وَذَكِّرْ فَإِنَّ الذِّكْرَى
تَنْفَعُ الْمُؤْمِنِيْنَ ‘তুমি
উপদেশ দিতে থাক, কারণ উপদেশ মুমিনদের উপকারে আসবে’ (যারিয়াত ৫১/৫৫)।
ইরবায বিন সারিয়াহ (রহঃ) বলেন,صَلَّى بِنَا
رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى
اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
ذَاتَ يَوْمٍ، ثُمَّ
أَقْبَلَ عَلَيْنَا فَوَعَظَنَا مَوْعِظَةً
بَلِيغَةً ذَرَفَتْ مِنْهَا
الْعُيُوْنُ وَوَجِلَتْ مِنْهَا
الْقُلُوْبُ، فَقَالَ قَائِلٌ:
يَا رَسُوْلَ اللهِ
كَأَنَّ هَذِهِ مَوْعِظَةُ
مُوَدِّعٍ، فَمَاذَا تَعْهَدُ
إِلَيْنَا؟ فَقَالَ أُوصِيكُمْ
بِتَقْوَى اللهِ وَالسَّمْعِ وَالطَّاعَة… ‘রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ) একদিন ফজরের ছালাতের পর আমাদেরকে মর্মস্পর্শী ওয়ায শুনালেন, যাতে (আমাদের)
সকলের চোখে পানি এল এবং অন্তর কেঁপে উঠল। কোন একজন বলল, এটা তো বিদায়ী ব্যক্তির
নছীহতের মত। হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! এখন আপনি আমাদেরকে কি উপদেশ দিচ্ছেন? তিনি
বললেন, আমি তোমাদেরকে আল্লাহভীতির এবং (আমীরের আদেশ) শ্রবণ ও মান্য করার উপদেশ
দিচ্ছি…’।[18]
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, আল্লাহর ভয়ে ভীত হয়ে ক্রন্দন করা
নবী-রাসূল, ছাহাবী, তাবেঈ ও মুমিনদের বৈশিষ্ট্য। আমাদের উচিত এই গুণটি হাছিল করে
ইহকাল ও পরকালে সাফল্য লাভ করা। আল্লাহ আমাদেরকে তাক্বওয়া বা আল্লাহভীতি দান
করুন-আমীন!
– মুহাম্মাদ মীযানুর রহমান
[1]. তিরমিযী হা/১৬৩৩; মিশকাত হা/৩৮২৮, সনদ ছহীহ।
[2]. তিরমিযী হা/১৬৩৯; মিশকাত হা/৩৮২৯, সনদ ছহীহ।
[3]. বুখারী হা/৪৪২৩; আবু দাউদ হা/২০৫৮; মিশকাত হা/৩৮১৫।
[4]. বুখারী হা/৬৫৩২; মুসলিম হা/২৮৬৩; মিশকাত হা/৫৫৩৯।
[5]. বুখারী হা/৬৬০; মুসলিম হা/৭১১; তিরমিযী হা/২৩৯১; মিশকাত হা/৭০১।
[6]. বুখারী হা/৪৩৩; মুসলিম হা/২৯৮; আহমাদ হা/৫২৫।
[7]. তিরমিযী হা/৩৩৩৪; ইবনু মাজাহ হা/৪২৪৪; মিশকাত হা/২৩৪২; ছহীহুল
জামে হা/১৬৭০।
[8]. বুখারী হা/৬৪৮৫; তিরমিযী হা/২৩১৩; ইবনু মাজাহ হা/৪১৯১; মিশকাত
হা/৫৩৩৯।
[9]. ইবনু মাজাহ হা/৪১৯০; মিশকাত হা/৫৩৪৭; ছহীহাহ হা/১৭২২।
[10]. তিরমিযী হা/১৬৬৯; মিশকাত হা/৩৮৩৭, সনদ হাসান।
[11]. ইবনু মাজাহ হা/৪২৬৭; তিরমিযী হা/২৩০৮; মিশকাত হা/১৩২।
[12]. বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ হা/৪১৭৬।
[13]. আবূ নু‘আইম,
হিলইয়াতুল আওলিয়া, (বৈরূত : দারুল কুতুবুল আরাবী, প্রথম সংস্করণ, ১৪০৯ হিঃ), ১/৩০৫
পৃঃ।
[14]. জামালুদ্দীন আল-জাওযী, আল-মুনতাযাম ফী তারীখিল উমাম ওয়াল মুলূক,
তাহক্বীক : মুহাম্মাদ আব্দুল কাদির ও মোস্তফা আব্দুল ক্বাদির (বৈরূত : দারুল
কুতুবুল ইলমিয়াহ, প্রথম সংস্করণ, ১৪১২ হিঃ/১৯৯২ খ্রীঃ), ৭/৭২।
[15]. হাফেয যাহাবী, তারীখুল ইসলাম, তাহক্বীক : ওমর আব্দুস সালাম,
(বৈরূত : দারুল কিতাবিল আরাবী, ২য় সংস্করণ, ১৪১৩ হিঃ/১৯৯৩ খ্রীঃ) ৮/২৫৮, সনদ যঈফ।
[16]. বুখারী হা/৫০৫০।
[17]. তাইসীরুল কারীমির রহমান, পৃঃ ৭৩৩।
[18]. তিরমিযী হা/২৬৭৬; আবু দাঊদ হা/৪৬০৭; আহমাদ হা/১৭১৪৪।
No comments