কথাবার্তা বলার আদব বা শিষ্টাচার
কথাবার্তা বলার আদব বা শিষ্টাচার
পার্থিব জীবনে বিভিন্ন প্রয়োজনে মানুষের সাথে কথাবার্তা বলতে হয়। মানুষের পক্ষে সমাজে মুখ বন্ধ করে বসবাস করা সম্ভব নয়। নিজের প্রয়োজন যেমন তাকে অন্যের কাছে ব্যক্ত করতে হয়, তেমনি অন্যের প্রয়োজনে তাকে এগিয়ে আসতে হয়। এক্ষেত্রে কথা বলার কোন বিকল্প নেই। কিন্তু কথা বলার ক্ষেত্রেও মুমিনকে কিছু আদব-কায়েদা বা শিষ্টাচার মেনে চলতে হয়। কেননা সে বিনা প্রয়োজনে যেমন কথা বলবে না, তেমনি প্রয়োজনের সময় কথা না বলে নিশ্চুপ থাকবে না। বরং ইসলামের নির্দেশ মেনে কথাবার্তা বলবে। আলোচ্য নিবন্ধে কথাবার্তা বলার কিছু আদব বা শিষ্টাচার আলোচনা করা হবে ইনশাআল্লাহ।-
১. কথাবার্তা উত্তম বিষয়ে হওয়া :
মানুষের উচ্চারিত প্রত্যেকটি কথা আল্লাহর দরবারে সংরক্ষিত
হয় (ক্বাফ ৫০/১৮)।
তাই সদা উত্তম কথা বলা এবং কারো সাথে কথাবার্তা উত্তম বিষয়ে হওয়া উচিত। রাসূল
(ছাঃ) বলেন,وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ فَلْيَقُلْ خَيْرًا أو ليصمت، ‘যে
লোক আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন ভাল কথা বলে অথবা চুপ থাকে’।[1] তিনি আরো বলেন, اتَّقُوا النَّارَ وَلَوْ بِشِقِّ تَمْرَةٍ فَمَنْ لَمْ يَجِدْ فَبِكَلِمَةٍ طَيِّبَةٍ ‘তোমরা জাহান্নাম থেকে
বেঁচে থাক, এক টুকরা খেজুরের বিনিময়ে হ’লেও। যদি সেটা কেউ না পায় তাহ’লে সে যেন উত্তম কথা বলে’।[2] কেননা মানুষ কথার কারণে পরকালে পাকড়াও হবে। রাসূল
(ছাঃ) বলেন,وَهَلْ يَكُبُّ النَّاسَ فِي النَّارِ عَلَى وُجُوْهِهِمْ أَوْ عَلَى مَنَاخِرِهِمْ إِلَّا حَصَائِدُ أَلْسِنَتِهِمْ- ‘মানুষ
তো তার অসংযত কথাবার্তার কারণেই অধোমুখে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে’।[3] আল্লাহ বলেন,لَا خَيْرَ فِيْ كَثِيْرٍ مِنْ نَجْوَاهُمْ إِلَّا مَنْ أَمَرَ بِصَدَقَةٍ أَوْ مَعْرُوْفٍ أَوْ إِصْلَاحٍ بَيْنَ النَّاسِ وَمَنْ يَّفْعَلْ ذَلِكَ ابْتِغَاءَ مَرْضَاتِ اللهِ فَسَوْفَ نُؤْتِيهِ أَجْرًا عَظِيمًا- ‘তাদের
অধিকাংশ শলা-পরামর্শে কোন মঙ্গল নেই। কিন্তু যে পরামর্শে তারা মানুষকে ছাদাক্বা
করার বা সৎকর্ম করার কিংবা লোকদের মধ্যে পরস্পরে সন্ধি করার উৎসাহ দেয় সেটা
ব্যতীত। যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে সেটা করে, সত্বর আমরা তাকে
মহা পুরস্কার দান করব’ (নিসা ৪/১১৪)।
২. কথাবার্তা শোনা যায় এমন আওয়াজে হওয়া :
কথা বলার সময় আওয়াজ এমন হওয়া
উচিত যা মানুষ শুনতে পায়। আবার এমনভাবে চিৎকার করে কথা বলা উচিত নয়, যাতে মানুষ
বিরক্ত হয় এবং অন্যের অসুবিধা হয়। অপ্রয়োজনে চিৎকার করাকে গাধার আওয়াজের সাথে
তুলনা করা হয়েছে। আল্লাহ বলেন,وَاقْصِدْ فِي مَشْيِكَ وَاغْضُضْ مِنْ صَوْتِكَ إِنَّ أَنْكَرَ الْأَصْوَاتِ لَصَوْتُ الْحَمِيْرِ- ‘তুমি পদচারণায় মধ্যপন্থা
অবলম্বন কর এবং তোমার কণ্ঠস্বর নীচু কর। নিশ্চয়ই সবচেয়ে বিকট স্বর হ’ল গাধার কণ্ঠস্বর’ (লোক্বমান ৩১/১৯)।
৩. অনর্থক ও অপ্রয়োজনীয় কথা
বর্জন করা :
অপ্রয়োজনীয় ও অনর্থক কথা
পরিহার করতে হবে। কেননা এতে কোন উপকারিতা নেই। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,مِنْ حُسْنِ إِسْلَامِ الْمَرْءِ تَرْكُهُ مَا لَا يَعْنِيهِ- ‘মানুষের জন্য ইসলামের
সৌন্দর্য হচ্ছে তার অনর্থক কথাবার্তা পরিহার করা’।[4] এছাড়া মানুষের ব্যক্ত
করা কথাবার্তার কারণে তাকে শাস্তি পেতে হ’তে পারে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)
বলেন,إِنَّ الرَّجُلَ لَيَتَكَلَّمُ بِالْكَلِمَةِ مِنْ سَخَطِ اللهِ، لَا يَرَى بِهَا بَأْسًا، فَيَهْوِيْ بِهَا فِيْ نَارِ جَهَنَّمَ سَبْعِيْنَ خَرِيْفًا- ‘মানুষ আল্লাহর
অসন্তুষ্টিমূলক কথা বলে এবং তাকে দূষণীয় মনে করে না। অথচ এই কথার দরুন সত্তর বছর
ধরে সে জাহান্নামে পতিত হ’তে থাকবে’।[5]
৪. শোনা কথা যাচাই না করে
বলা অনুচিত :
কারো নিকট থেকে শোনা কথার
সত্যাসত্য যাচাই না করে বলা উচিত নয়। কেননা এতে পাপী ও মিথ্যাবাদী হওয়ার সমূহ
সম্ভাবনা রয়েছে। নবী করীম (ছাঃ) বলেন,كَفَى بِالْمَرْءِ إِثْمًا أَنْ يُحَدِّثَ بِكُلِّ مَا سَمِعَ- ‘কোন ব্যক্তির পাপী হওয়ার
জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে কোন কথা শোনামাত্রই (যাচাই না করে) বলে বেড়ায়’।[6] অন্যত্র তিনি বলেন,كَفَى بِالْمَرْءِ كَذِبًا أَنْ يُحَدِّثَ بِكُلِّ مَا سَمِعَ. ‘কোন ব্যক্তির মিথ্যাবাদী
সাব্যস্ত হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে যা শুনে তাই বলে বেড়ায়’।[7]
৫. অপ্রয়োজনীয় বাকবিতন্ডা
পরিহার করা :
তর্ক-বিতর্ক, ঝগড়া বা
বাকবিতন্ডা কখনো ভাল ফল বয়ে আনে না। কাজেই অপ্রয়োজনে এসব থেকে দূরে থাকা একান্ত
যরূরী। রাসূল (ছাঃ) বলেন,
أَنَا زَعِيمٌ بِبَيْتٍ فِى رَبَضِ الْجَنَّةِ لِمَنْ تَرَكَ الْمِرَاءَ وَإِنْ كَانَ مُحِقًّا وَبِبَيْتٍ فِى وَسَطِ الْجَنَّةِ لِمَنْ تَرَكَ الْكَذِبَ وَإِنْ كَانَ مَازِحًا وَبِبَيْتٍ فِى أَعْلَى الْجَنَّةِ لِمَنْ حَسَّنَ خُلُقَهُ.
‘আমি সেই ব্যক্তির জন্য
জান্নাতের পার্শ্বদেশে এক গৃহের যামিন হচ্ছি, যে ব্যক্তি সত্যাশ্রয়ী হওয়া সত্ত্বেও
তর্কবিতর্ক বর্জন করে। সেই ব্যক্তির জন্য জান্নাতের মধ্যদেশে এক গৃহের যামিন
হচ্ছি, যে ব্যক্তি উপহাসছলেও মিথ্যা বলে না। আর সেই ব্যক্তির জন্য জান্নাতের
ঊর্ধ্বদেশে এক গৃহের যামিন হচ্ছি, যে ব্যক্তি তার চরিত্রকে সুন্দর করে’।[8]
অন্যত্র তিনি বলেন,
مَا ضَلَّ قَوْمٌ بَعْدَ هُدًى كَانُوْا عَلَيْهِ إِلَّا أُوتُوْا الْجَدَلَ ثُمَّ تَلَا هَذِهِ الْآيَةَ {بَلْ هُمْ قَوْمٌ خَصِمُوْنَ-
‘হেদায়াত লাভের পর কোন কওমই
গোমরাহ হয়নি, যারা ঝগড়ায় লিপ্ত হয়নি। অতঃপর তিনি পাঠ করেন ‘বরং তারা হ’ল ঝগড়াকারী সম্প্রদায়’ (যুখরুফ ৪৩/৫৮)।[9]
৬. ধীরে ধীরে কথা বলা :
কথাবার্তা ধীরে ধীরে হওয়া
উচিত। যাতে তা অপরের নিকটে বোধগম্য হয়। আয়েশা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন,أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يُحَدِّثُ حَدِيثًا لَوْ عَدَّهُ الْعَادُّ لَأَحْصَاهُ- ‘নবী করীম (ছাঃ) এমনভাবে কথা
বলতেন যে, কোন গণনাকারী গুণতে চাইলে তাঁর কথাগুলি গণনা করতে পারত’।[10] অন্য হাদীছে এসেছে,
উরওয়াহ ইবনু যুবায়ের (রহঃ) সূত্রে বর্ণিত, নবী করীম (ছাঃ)-এর স্ত্রী আয়েশা (রাঃ)
বলেন, আবূ হুরায়রার আচরণ তোমাকে কি অবাক করে না? সে এসে আমার ঘরের এক পাশে বসে
আমাকে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর একটি হাদীছ পড়ে শুনাতে লাগলো। আমি তখন ছালাতরত ছিলাম।
আমার ছালাত শেষ হওয়ার পূর্বেই সে উঠে চলে গেল। আমি যদি তাকে পেতাম তবে তাকে বলতাম,
لَمْ يَكُنْ يَسْرُدُ الْحَدِيْثَ كَسَرْدِكُمْ، ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তোমাদের
ন্যায় তাড়াহুড়া করে কথা বলতেন না’।[11]
আনাস (রাঃ) বলেন,أَنَّهُ كَانَ إِذَا تَكَلَّمَ بِكَلِمَةٍ أَعَادَهَا ثَلَاثًا حَتَّى تُفْهَمَ عَنْهُ- ‘নবী করীম (ছাঃ) যখন কথা
বলতেন, তখন তিনি তা তিনবার বলতেন, যাতে তা বোঝা যায়’।[12]
৭. কথাবার্তায় অশ্লীলতা
পরিহার করা :
অশ্লীল কথা বলা বা
কথাবার্তায় অশ্লীল ভাষা প্রয়োগ করা মুমিনের বৈশিষ্ট্য নয়। এগুলি সর্বতোভাবে
পরিত্যাজ্য। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,لَيْسَ الْمُؤْمِنُ بِالطَّعَّانِ وَلَا اللَّعَّانِ وَلَا الْفَاحِشِ وَلَا الْبَذِيءِ ‘মুমিন কখনো দোষারোপকারী ও
নিন্দাকারী হ’তে পারে না, অভিসম্পাতকারী হ’তে পারে না, অশ্লীল কাজ করে
না এবং কটূভাষীও হয় না’।[13]
৮. তর্ক-বিতর্ক ও বাচালতা
পরিহার করা :
কথাবার্তা বলার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত
কথা বলা বা বাচালতা অনুচিত। এগুলি মানুষ পসন্দ করে না। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,
إِنَّ مِنْ أَحَبِّكُمْ إِلَيَّ وَأَقْرَبِكُمْ مِنِّي مَجْلِسًا يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَحَاسِنَكُمْ أَخْلَاقًا وَإِنَّ أَبْغَضَكُمْ إِلَيَّ وَأَبْعَدَكُمْ مِنِّي مَجْلِسًا يَوْمَ الْقِيَامَةِ الثَّرْثَارُونَ وَالْمُتَشَدِّقُونَ وَالْمُتَفَيْهِقونَ قَالُوا يَا رَسولَ اللهِ قَدْ عَلِمْنَا الثَّرْثَارُونَ وَالْمُتَشَدِّقُونَ فَمَا الْمُتَفَيْهِقُونَ قَالَ الْمُتَكَبِّرُوْنَ-
‘তোমাদের মধ্যে যার চরিত্র ও
আচরণ সর্বোত্তম সে-ই আমার নিকট সর্বাধিক প্রিয় এবং ক্বিয়ামত দিবসেও সে আমার খুবই
নিকটে থাকবে। আর তোমাদের যে ব্যক্তি আমার নিকট সবচেয়ে বেশী ঘৃণ্য সে ব্যক্তি
কিয়ামত দিবসে আমার নিকট হ’তে অনেক দূরে থাকবে তারা হ’ল বাচাল, ধৃষ্ট-নির্লজ্জ এবং
অহংকারে মত্ত ব্যক্তিরা। ছাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! বাচাল ও
ধৃষ্ট-দাম্ভিকদের তো আমরা জানি কিন্তু মুতাফাইহিকূন কারা? তিনি বললেন, অহংকারীরা’।[14]
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আরো বলেন,إِنَّ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ يُبْغِضُ الْبَلِيغَ مِنَ الرِّجَالِ الَّذِيْ يَتَخَلَّلُ بِلِسَانِهِ تَخَلُّلَ الْبَاقِرَةِ بِلِسَانِهَا- ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ সেসব লোককে
ঘৃণা করেন যারা বাকপটুত্ব প্রদর্শনের জন্য জিহবাকে দাঁতের সঙ্গে লাগিয়ে বিকট শব্দ
করে, গরু তার জিহবা নেড়ে যেমন করে থাকে’।[15] ভান করে বা ছল-চাতুরীর
আশ্রয় নিয়ে কথা বলাও ঠিক নয়। সহজ-সরলভাবে কথা বলা মুমিনের জন্য যরূরী। সেই সাথে অহেতুক
তর্ক-বিতর্ক এড়িয়ে চলা উচিত।
৯. গীবত ও চোগলখুরী পরিহার
করা :
কথাবার্তায় গীবত ও চোগলখুরী
বর্জন করা যরূরী। আল্লাহ বলেন,وَلَا يَغْتَبْ بَعْضُكُمْ بَعْضًا أَيُحِبُّ أَحَدُكُمْ أَنْ يَأْكُلَ لَحْمَ أَخِيهِ مَيْتًا فَكَرِهْتُمُوهُ وَاتَّقُوا اللهَ إِنَّ اللهَ تَوَّابٌ رَحِيمٌ ‘আর তোমরা ছিদ্রান্বেষণ করো
না এবং একে অপরের পিছনে গীবত করো না। তোমাদের কেউ কি তার মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে
পসন্দ করে? বস্ত্ততঃ তোমরা সেটি অপসন্দ করে থাক। তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয়ই
আল্লাহ সর্বাধিক তওবা কবুলকারী ও পরম দয়ালু’ (হুজুরাত ৪৯/১২)।
গীবত পরিহার করার জন্য যেমন নিষেধ করা হয়েছে তেমনি চোগলখোরী বর্জন করার ব্যাপারে
নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হয়েছে। চোগলখোরী সম্পর্কে আল্লাহ বলেন,وَلَا تُطِعْ كُلَّ حَلَّافٍ مَهِيْنٍ، هَمَّازٍ مَشَّاءٍ بِنَمِيْمٍ- ‘আর তুমি তার আনুগত্য করবে না
যে অধিক শপথ করে, যে লাঞ্ছিত। যে পশ্চাতে নিন্দা করে ও একের কথা অপরের নিকট লাগিয়ে
বেড়ায়’ (ক্বলম ৬৮/১০-১১)।
হাদীছে এসেছে, হুযাইফাহ
(রাঃ)-এর নিকট খবর পেঁŠছল যে,أَنَّ رَجُلاً يَنِمُّ الْحَدِيثَ فَقَالَ حُذَيْفَةُ سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ لاَ يَدْخُلُ الْجَنَّةَ نَمَّامٌ. ‘এক ব্যক্তি চোগলখোরী করে
বেড়ায়। তিনি বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, চোগলখোর জান্নাতে
প্রবেশ করবে না’।[16] অন্যত্র তিনি বলেন, لَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ قَتَّاتٌ ‘চোগলখোর জান্নাতে প্রবেশ
করবে না’।[17]
১০. মনোযোগ সহকারে কথা শ্রবণ
করা :
বক্তার কথা মনোযোগ সহকারে
শ্রবণ করা উচিত। কারো কথা শ্রবণ না করে তাকে হেয় করা, তার থেকে নিজেকে অধিক পন্ডিত
যাহির করার চেষ্টা করা কিংবা তাকে অযথা মিথ্যুক সাব্যস্ত করা যাবে না। বরং তার কথা
শ্রবণ করে সেটা যাচাই করার প্রয়োজন হ’লে তা করার চেষ্টা করা যেতে
পারে।
১১. একাই কথা বলার মানসিকতা
পরিহার করা :
অনেকে আছেন কেবল নিজেই অধিক
কথা বলতে বেশী পসন্দ করেন। অন্যকে কথা বলার সুযোগ কম দেন। এরূপ মানসিকতা পরিহার
করা আবশ্যক। বরং অন্যের কথা শুনতে হবে ও তাদেরকে বলার সুযোগ দিতে হবে। আর কোন
মজলিসে কথা বলার ক্ষেত্রে বয়জ্যেষ্ঠকে প্রাধান্য দিতে হবে। হাদীছে এসেছে, সাহল
ইবনু আবূ হাসমাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, আব্দুল্লাহ ইবনু সাহল ও
মুহায়্যিছাহ ইবনু মাসঊদ বিন যায়েদ (রাঃ) খায়বারের দিকে গেলেন। তখন খায়বারের
ইহূদীদের সঙ্গে সন্ধি ছিল। পরে তাঁরা উভয়ে আলাদা হয়ে গেলেন। অতঃপর মুহায়্যিছাহ
আব্দুল্লাহ বিন সাহলের নিকট আসেন এবং বলেন যে, তিনি মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করছেন।
তখন মুহায়্যিছাহ তাঁকে দাফন করলেন। অতঃপর মদীনায় এলেন। আব্দুর রহমান ইবনু সাহল ও
মাসউদের দুই পুত্র মুহায়্যিছাহ ও হুওয়ায়্যিছাহ নবী করীম (ছাঃ)-এর নিকট গেলেন।
আব্দুর রহমান (রাঃ) কথা বলার জন্য এগিয়ে এলেন। তখন আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) বললেন, كَبِّرْ كَبِّرْ ‘বড়কে আগে বলতে দাও, বড়কে আগে
বলতে দাও’। আর আব্দুর রহমান ইবনু সাহল
(রাঃ) ছিলেন বয়সে সবচেয়ে ছোট। এতে তিনি চুপ রইলেন এবং মুহায়্যিছাহ ও হুওয়ায়্যিছাহ
উভয়ে কথা বললেন।[18]
ইবনু আববাস (রাঃ) বলেছেন,
ওমর (রাঃ) যখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর প্রবীণ ছাহাবীদেরকে ডাকতেন, তখন সেই সাথে
আমাকেও ডাকতেন। আর বলতেন, তারা যতক্ষণ কথা না বলেন, ততক্ষণ তুমি কথা বলো না। একদিন
আমাকে ডেকে বললেন, লায়লাতুল ক্বদর সম্পর্কে (অর্থাৎ তার ফযীলত ও মর্যাদা সম্পর্কে)
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যা বলেছেন, তা তো তোমরা জেনেছ। অতএব তোমরা রামাযানের শেষ দশ
দিনের বেজোড় রাতে লায়লাতুল ক্বদর তালাশ কর। যে কোন বেজোড় রাতে তোমরা তার সাক্ষাত
পাবে’।[19]
১২. রূঢ়তা ও কর্কশতা পরিহার
করা :
কথা বলার ক্ষেত্রে নম্রতা
অবলম্বন করা যরূরী। রূঢ়তা ও কর্কশতা মুমিনের বৈশিষ্ট্য নয়। আল্লাহ স্বীয় রাসূলকে
উদ্দেশ্য করে বলেন,فَبِمَا رَحْمَةٍ مِنَ اللهِ لِنْتَ لَهُمْ وَلَوْ كُنْتَ فَظًّا غَلِيظَ الْقَلْبِ لَانْفَضُّوا مِنْ حَوْلِكَ- ‘আর আল্লাহর রহমতের কারণেই
তুমি তাদের প্রতি (অর্থাৎ স্বীয় উম্মতের প্রতি) কোমলহৃদয় হয়েছ। যদি তুমি কর্কশভাষী
কঠোর হৃদয়ের হ’তে তাহ’লে তারা তোমার পাশ থেকে সরে যেত’ (আলে ইমরান ৩/১৫৯)।
বিরোধীদের সাথেও আল্লাহ
নম্রভাষায় কথা বলার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি মূসা ও হারূণ (আঃ)-কে উদ্দেশ্য করে
বলেন, اذْهَبَا إِلَى فِرْعَوْنَ إِنَّهُ طَغَى، فَقُولَا لَهُ قَوْلًا لَيِّنًا- ‘তোমরা দু’জন ফেরাঊনের নিকটে যাও।
নিশ্চয়ই সে উদ্ধত হয়েছে। অতঃপর তার সাথে নরমভাবে কথা বল। হয়ত সে উপদেশ গ্রহণ করবে
অথবা ভয় করবে’ (ত্ব-হা ২০/৪৩-৪৪)।
১৩. ঠাট্টা-বিদ্রূপ ও কাউকে
হেয় করার মানসিকতা ত্যাগ করা :
কউকে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করা এবং
হেয় করার চিন্তা মন থেকে দূরে সরিয়ে দিতে হবে। আল্লাহ বলেন,يَاأَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا لَا يَسْخَرْ قَوْمٌ مِنْ قَوْمٍ عَسَى أَنْ يَكُوْنُوْا خَيْرًا مِنْهُمْ وَلَا نِسَاءٌ مِنْ نِسَاءٍ عَسَى أَنْ يَكُنَّ خَيْرًا مِنْهُنَّ وَلَا تَلْمِزُوا أَنْفُسَكُمْ وَلَا تَنَابَزُوا بِالْأَلْقَابِ بِئْسَ الِاسْمُ الْفُسُوقُ بَعْدَ الْإِيمَانِ وَمَنْ لَمْ يَتُبْ فَأُولَئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ- ‘হে বিশ্বাসীগণ! কোন
সম্প্রদায় যেন কোন সম্প্রদায়কে উপহাস না করে। হ’তে পারে তারা তাদের চাইতে
উত্তম। আর নারীরা যেন নারীদের উপহাস না করে। হ’তে পারে তারা তাদের চাইতে
উত্তম। তোমরা পরস্পরের দোষ বর্ণনা কর না এবং একে অপরকে মন্দ লকবে ডেকো না।
বস্ত্ততঃ ঈমান আনার পর তাকে মন্দ নামে ডাকা হ’ল ফাসেক্বী কাজ। যারা এ থেকে
তওবা করে না, তারা সীমালংঘনকারী’ (হুজুরাত ৪৯/১১)।
আনাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,لَا تَقَاطَعُوا وَلَا تَدَابَرُوا وَلَا تَبَاغَضُوا وَلَا تَحَاسَدُوا وَكُونُوا عِبَادَ اللهِ إِخْوَانًا وَلَا يَحِلُّ لِمُسْلِمٍ أَنْ يَهْجُرَ أَخَاهُ فَوْقَ ثَلَاثٍ- ‘তোমরা একজন অন্যজনের সাথে
সম্পর্ক ছিন্ন কর না, পরস্পরে শক্রতা পোষণ কর না, পরস্পরকে ঘৃণা কর না, পরস্পর
হিংসা কর না, বরং আল্লাহ তা‘আলার বান্দাহগণ পরস্পর ভাই হয়ে থেকো। কোন
মুসলমান ব্যক্তির পক্ষেই বৈধ নয় তার ভাইকে তিনদিনের অধিক সময় ধরে ত্যাগ করে থাকা’।[20]
সেই সাথে অন্যের
ত্রুটি-বিচ্যুতি বের করে তাদের অপমান-অপদস্ত করার মানসিকতা পরিহার করতে হবে। কেননা
এর মাধ্যমে পরস্পরের মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্বেষ তৈরী হয়।
১৪. তিনজন থাকলে দু’জনে কানে কানে কথা না বলা :
কোথাও তিনজন লোক থাকলে
একজনকে বাদ দিয়ে দু’জনে কানে কানে কথা বলা যাবে না। কারণ এতে তৃতীয়
ব্যক্তি মনে কষ্ট পায়। রাসূল (ছাঃ) বলেন,إِذَا كُنْتُمْ ثَلَاثَةً فَلَا يَتَنَاجَى اثْنَانِ دُونَ صَاحِبِهِمَا، فَإِنَّ ذَلِكَ يَحْزُنُهُ- ‘তোমরা তিনজন একত্র হ’লে একজনকে বাদ দিয়ে যেন দু’জনে কানে কানে কথা না বলে।
কেননা তাতে সে চিন্তিত হ’তে পারে’।[21]
১৫. মানুষের বোধগম্য ভাষায়
কথা বলা :
কথা বলার ক্ষেত্রে মানুষের
বোধগম্য ভাষায় কথা বলা উচিত। দুর্বোধ্য ভাষায় কথা বলা সমীচীন নয়। কারণ এতে মানুষ
কথা বুঝতে না পেরে কষ্ট পায়। আলী (রাঃ) বলেন, حَدِّثُوا النَّاسَ بِمَا يَعْرِفُوْنَ أَتُحِبُّوْنَ أَنْ يُكَذَّبَ اللهُ وَرَسُولُهُ، ‘মানুষের নিকট সেই ধরনের কথা
বল, যা তারা বুঝতে পারে। তোমরা কি পসন্দ কর যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি
মিথ্যা আরোপ করা হোক’?[22]
১৬. অন্যের আমানত রক্ষা করা
:
কোন ব্যক্তি কোন কথা আমানত
হিসাবে বললে তা রক্ষা করা মুমিনের জন্য অবশ্য কর্তব্য। রাসূল (ছাঃ) বলেন,لَا إِيمَانَ لِمَنْ لَا أَمَانَةَ لَهُ، ‘যার আমানতদারী নেই, তার ঈমান
নেই’।[23] অন্যের বলা কথার
গোপনীয়তা রক্ষা করা যরূরী। সে ব্যক্তি মুখে গোপনীয়তা রক্ষার কথা না বললেও যখন সে ঐ
কথা অন্যের সামনে বলতে চাইবে না কিংবা অন্য কেউ শুনুক সেটাও পসন্দ করবে না, তখন
বুঝে নিতে হবে যে, সেটা গোপনীয় কথা-যা গোপন রাখাই যরূরী। রাসূল (ছাঃ) বলেন, إِذَا حَدَّثَ الرَّجُلُ بِالْحَدِيْثِ ثُمَّ الْتَفَتَ فَهِىَ أَمَانَةٌ ‘কোন ব্যক্তি কোন কথা বলার পর
মুখ ঘুরালে (কেউ শুনছে কি-না তা দেখলে) তা আমানতস্বরূপ’।[24]
১৭. পাপ ও হারাম কথা থেকে
জিহবাকে সংযত রাখা :
কথাবার্তায় জিহবাকে সংযত ও
নিয়ন্ত্রণ করা যরূরী। কেননা কোন গোনাহের কথা বা হারাম কথা বললে তার জন্য পরকালে
শাস্তি পেতে হবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন,لَا يَسْتَقِيْمُ إِيْمَانُ عَبْدٍ حَتَّى يَسْتَقِيْمَ قَلْبُهُ، وَلَا يَسْتَقِيْمُ قَلْبُهُ حَتَّى يَسْتَقِيْمَ لِسَانُهُ، ‘কোন বান্দার ঈমান ততক্ষণ
পর্যন্ত সঠিক হবে না যতক্ষণ না তার অন্তর সঠিক হবে। আর অন্তর ঠিক হবে না যতক্ষণ না
তার জিহবা ঠিক হবে’।[25] অন্যত্র রাসূল (ছাঃ) বলেন,إِذَا أَصْبَحَ ابْنُ آدَمَ فَإِنَّ الْأَعْضَاءَ كُلَّهَا تُكَفِّرُ اللِّسَانَ فَتَقُولُ اتَّقِ اللهَ فِينَا فَإِنَّمَا نَحْنُ بِكَ فَإِنْ اسْتَقَمْتَ اسْتَقَمْنَا وَإِنْ اعْوَجَجْتَ اعْوَجَجْنَا، ‘মানুষ সকালে ঘুম হ’তে উঠার সময় তার সমস্ত
অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিনীতভাবে জিহবাকে বলে, তুমি আমাদের ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলাকে ভয় কর। আমরা তো তোমার
সাথে সম্পৃক্ত। তুমি যদি সোজা পথে দৃঢ় থাক তাহ’লে আমরাও দৃঢ় থাকতে পারি। আর
তুমি যদি বাঁকা পথে যাও তাহ’লে আমরাও বাঁকা পথে যেতে বাধ্য’।[26]
পরিশেষে বলব, কথাবার্তায়
ইসলামী আদব বা শিষ্টাচার মেনে চলা যরূরী। এর মাধ্যমে ইহকালে মানুষের ভালাবাসা ও
শ্রদ্ধা লাভ করা যাবে এবং পরকালীন জীবনে অশেষ ছওয়াব হাছিল করা যাবে। আল্লাহ আমাদের
সবাইকে জীবনের সকল ক্ষেত্রে ইসলামী আদব বা শিষ্টাচার মেনে চলার তাওফীক দান
করুন-আমীন!
– ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম
[1]. বুখারী হা/৬০১৮-১৯;
মুসলিম হা/৪৭।
[2]. বুখারী হা/৬০২৩,
৬৫৪০; মুসলিম হা/১০১৬; তিরমিযী হা/২৯৫৩; নাসাঈ হা/২৫৫২; মিশকাত হা/৫৮৫৭।
[3]. তিরমিযী হা/২৬১৬;
ইবনু মাজাহ হা/৩৯৭৩; ইরওয়া হা/৪১৩।
[4]. ইবনু মাজাহ
হা/৩৯৭৬, ‘কলহ-বিপর্যয় চলাকালে রসনা সংযত রাখা’ অনুচ্ছেদ; তিরমিযী
হা/২৩১৭-১৮; মিশকাত হা/৪৮৩৯; ছহীহ আত-তারগীব হা/২৮৮১, সনদ ছহীহ।
[5]. তিরমিযী হা/২৩১৪;
ইবনু মাজাহ হা/৩৯৭০; মিশকাত হা/৪৮৩৩; ছহীহাহ হা/৫৪০, ৮৮৮।
[6]. আবূদাঊদ হা/৪৯৯২, সনদ
ছহীহ।
[7]. মুসলিম হা/৫; মিশকাত
হা/১৫৬।
[8]. আবূদাঊদ হা/৪৮০০;
তিরমিযী হা/১৯৯৩; ছহীহ আত-তারগীব হা/২৬৪৮; ছহীহাহ হা/২৭৩।
[9]. তিরমিযী হা/৩২৫৩;
ইবনু মাজাহ হা/৪৮; মিশকাত হা/১৮০।
[10]. বুখারী হা/৩৫৬৭; মিশকাত
হা/৫৮১৫।
[11]. বুখারী হা/৩৫৬৮;
মুসলিম হা/২৪৯৩; আবূদাঊদ হা/৩৬৫৫, ‘দ্রুত কথা বলা ঠিক নয়’ অনুচ্ছেদ; মিশকাত
হা/৫৮১৫।
[12]. বুখারী
হা/৯৫; মিশকাত হা/২০৮।
[13]. তিরমিযী হা/১৯৭৭;
মিশকাত হা/৩৬; ছহীহাহ হা/৩২০।
[14]. তিরমিযী
হা/২০১৮, ‘উন্নত চারিত্রিক গুণ’ অনুচ্ছেদ; ছহীহাহ
হা/৭৯১।
[15]. আবূদাঊদ
হা/৫০০৫, ‘বাকপটুতা সম্পর্কে’ অনুচ্ছেদ; ছহীহাহ
হা/৮৮০।
[16]. মুসলিম
হা/১৬৮/১০৫, ‘চোগলখোরী জঘন্যতম হারাম’ অনুচ্ছেদ; ছহীহ
আত-তারগীব হা/২৮২১।
[17]. বুখারী
হা/৬০৫৬; মুসলিম হা/১৭০/১০৫, ‘চোগলখোরী জঘন্যতম হারাম’ অনুচ্ছেদ; আবূদাঊদ হা/৪৮৭৩;
মিশকাত হা/৪৮২৩।
[18]. বুখারী হা/৩১৭৩, ৭১৯২;
মুসলিম হা/১৬৬৯।
[19]. আহমাদ হা/৮৫; ছহীহ
ইবনে খুযায়মাহ হা/২১৭২-৭৩, সনদ ছহীহ।
[20]. মুসলিম হা/২৫৫৮;
তিরমিযী হা/১৯৩৫, ‘হিংসা-বিদ্বেষ’ অনুচ্ছেদ।
[21]. বুখারী হা/৬২৯০;
মুসলিম হা/২১৮৪; তিরমিযী হা/২৮২৫; ইবনু মাজাহ হা/৩৭৭৫; আবূদাঊদ হা/৪৮৫১।
[22]. বুখারী হা/১২৭, তা‘লীক।
[23]. আহমাদ হা/১২৩৮৩; মিশকাত হা/৩৫; ছহীহ
আত-তারগীব হা/৩০০৪।
[24]. আবূদাঊদ হা/৪৮৬৮; তিরমিযী
হা/১৯৫৯; মিশকাত হা/৫০৬১; ছহীহাহ হা/১০৯০।
[25]. আহমাদ হা/১৩০৪৮;
ছহীহাহ হা/২৮৪১; ছহীহ আত-তারগীব হা/২৫৫৪।
[26]. তিরমিযী হা/২৪০৭, ‘রসনা সংযত রাখা বা সংযতবাক
হওয়া’ অনুচ্ছেদ; মিশকাত হা/৪৮৩৮; ছহীহ
আত-তারগীব হা/২৮৭১, সনদ হাসান।
No comments