তোমাদের ধর্ম তোমাদেরই থাকুক, আমার ধর্ম আমার — আল-কাফিরুন
বলো, “কাফিরেরা শোনো! তোমরা যা উপাসনা করো, আমি তা করি না। আর আমি যা উপাসনা করি, তোমরা তার উপাসক নও। তোমরা যা উপাসনা করছ, আমি কখনই তা করবো না। আর আমি যা উপাসনা করি, তোমরা তার উপাসক নও। তোমাদের ধর্ম তোমাদেরই থাকুক, আমার ধর্ম আমার।” [আল-কাফিরুন]
বলো, “কাফিরেরা
শোনো! তোমরা
যা উপাসনা
করো, আমি
তা করি
না।”
তাহলে কি
আমরা প্রতিবেশী
হিন্দু, খ্রিস্টানদের
দরজায় কড়া
নেড়ে দাঁতে
দাঁত ঘষে
বলবো, “হে
কাফির, শুনেন।
আপনি যা
উপাসনা করেন,
আমি তা
করি না।
আর আমি
যা উপাসনা
করি, আপনি
তার উপাসক
নন…?” — রাসুল
عليه السلام কি এভাবে
ইসলাম প্রচার
করেছেন? বরং
রাসুল عليه السلام কুর‘আনের
নির্দেশ অনুসারে
সুন্দর মার্জিতভাবে
বিধর্মীদের ইসলামের
পথে ডেকেছেন।
তাহলে এই
সূরাহ’য়
তাকে এই
কঠিন ভাষায়
বিধর্মীদের সম্বোধন
করতে বলা
হলো কেন?
একদিকে কুর‘আন
বলে যে,
তাকে সবার
জন্য রহমত
রূপে পাঠানো
হয়েছে (২১:১০৭)।
মানুষকে প্রজ্ঞার
সাথে এবং
মার্জিতভাবে ইসলামের
পথে ডাকতে,
সুন্দরভাবে তাদের
সাথে যুক্তিতর্ক
করতে (১৬:১২৫)।
আবার এই
সূরাহ’য়
দেখা যাচ্ছে
বিধর্মীদেরকে ‘কাফির’
ডেকে তাদেরকে
কঠিন ভাষায়
বুঝিয়ে দিতে
তারা কী
ভুল করছে
—কীভাবে একই
কুর‘আনে
দুই জায়গায়,
দুইভাবে বিধর্মীদের
সাথে কথা
বলার নির্দেশ
থাকতে পারে?
এটা কি
স্ববিরোধী নয়?
আমাদেরকে বুঝতে
হবে ‘কাফিরুন’
অর্থাৎ সত্য
অস্বীকারকারীরা কারা।
আল্লাহ تعالى এই
সূরাহ’য়
দুইবার বলতে
বলেছেন — “আর
আমি যা
উপাসনা করি,
তোমরা তার
উপাসক নও।”
অর্থাৎ, তারা
আগেও এক
আল্লাহর تعالى উপাসক
ছিল না,
এখনও না,
ভবিষ্যতেও হবে
না। এরা
কোনোভাবেই ইসলাম
মানবে না।
একইসাথে আয়াতের
ভাষা থেকে
পরিষ্কার যে,
তারা জানে
রাসুল تعالى কীসের
উপাসক, তিনি
কী উপাসনা
করার কথা
বলছেন এবং
তারা এও
জানে রাসুল تعالى কী
উপাসনা করেন
না, যা
তারা নিজেরা
করে। অর্থাৎ
তাদেরকে ইসলামের
দাওয়াত দেওয়া
হয়েছে এবং
তারা জানে
তাদের ধর্মের
সাথে ইসলামের
পার্থক্য কোথায়।
কুর‘আনে
বহু আয়াতে
কাফির অর্থাৎ
সত্য অস্বীকারকারীদের
সংজ্ঞা দেওয়া
হয়েছে—
যারা
সত্য অস্বীকার
করবেই, তাদের
তুমি সাবধান
করো, আর
না-ই
করো, তাদের
কাছে তা
একই কথা—তারা
বিশ্বাস করবে
না। আল্লাহ
তাদের হৃদয়ের
উপর এবং
তাদের শোনার
ক্ষমতার উপর
সিল করে
দিয়েছেন; তাদের
দৃষ্টির উপরে
আছে এক
পর্দা। তাদের
জন্য আছে
এক প্রচণ্ড
শাস্তি। [আল-বাক্বারাহ
৬-৭]
যারা
সত্য অস্বীকার
করেছিল, তাদেরকে
দলে দলে
জাহান্নামের দরজার
দিকে ধেয়ে
নেওয়া হবে।
যখন তারা
সেখানে পৌঁছুবে,
তখন তার
দরজা খুলে
যাবে, আর
তার প্রহরীরা
বলবে, “তোমাদের
কাছে কি
তোমাদেরই মধ্য
থেকে বার্তাবাহক
যায়নি, যে
তোমাদেরকে তোমাদের
প্রভুর বাণী
শুনিয়েছিল এবং
তোমাদেরকে সাবধান
করেছিল যে
এই দিন
আসবে?” তারা
বলবে, “হ্যাঁ”।
কিন্তু ততক্ষণে
সত্য অস্বীকারকারীদের
উপর শাস্তির
বিধান কার্যকর
হয়ে গেছে।
[আয-যুমার
৩৯:৭১]
সত্য
অস্বীকারকারীদের
ডাকা হলো
এমন কাউকে
ডাকার মতো,
যে কিনা
হাঁকডাক ছাড়া
আর কিছু
শোনে না
— বধির, মূক
ও অন্ধ
—এরা কেউ
বিবেক-বুদ্ধি
খাঁটায় না।
[আল-বাক্বারাহ
১৭১]
যেভাবে
মুসাকে প্রশ্ন
করা হয়েছিল,
তোমরাও কি
সেভাবেই তোমাদের
নবীকে প্রশ্ন
করতে চাও?
যে ঈমানকে
কুফরি দিয়ে
বদল করে,
সে সঠিক
পথ থেকে
একেবারেই হারিয়ে
গেছে। [আল-বাক্বারাহ
১০৮]
আল্লাহর
সাথে যারা
শিরক করে
এবং আহলে
কিতাবের (ইহুদি
এবং খ্রিস্টান)
মধ্যে থেকে
যারা সত্যকে
অস্বীকার করেছে,
তারা কখনই
চায় না
যে, তোমাদের
প্রভুর কাছ
থেকে একটুও
ভালো কিছু
আসুক তোমাদের
উপর। কিন্তু
আল্লাহ যাকে
ইচ্ছা তাঁর
অনুগ্রহের জন্য
মনোনীত করেন।
আল্লাহ অপরিসীম
অনুগ্রহের অধিকারী।
[আল-বাক্বারাহ
২:১০৫]
আমি
এই কুর‘আনে
মানুষের জন্য
সবধরনের দৃষ্টান্ত
দিয়েছি। তুমি
যদি তাদেরকে
আয়াত এনে
দেখাও, তারা
অবশ্যই বলবে,
“তুমি একটা
মিথ্যুক”।
[আর-রুম
৩০:৫৮]
এই আয়াতগুলো
থেকে আমরা
কাফিরদের সম্পর্কে
জানতে পারি—
১) এদেরকে
সাবধান করে
লাভ নেই,
এরা কোনোভাবেই
শুনবে না।
২) এদের
কাছে কেউ
না কেউ
ইসলামের বাণী
নিয়ে গেছে,
কিন্তু তারা
মানেনি।
৩) এরা
বিবেক-বুদ্ধি
খাটায় না।
বাপ-দাদা
যা করেছে,
সেটাই আঁকড়ে
ধরে থাকতে
চায়।
৪) এরা
নবীদের নিয়ে
আপত্তিকর প্রশ্ন
করে, তাদেরকে
চ্যালেঞ্জ করে।
৫) এর
চায় না
যে, মুসলিমদের
ভালো কিছু
হোক।
৬) এদেরকে
কুর‘আনের
পরিষ্কার বাণী
দেখানো হলেও,
এরা তা
মিথ্যা বাণী
বলে দাবি
করে।
ইমাম ইবন
তাইমিয়্যাহ’র
‘কিতাবুল ঈমান’
বইয়ে তিনি
বলেছেন—
“কুর‘আনের
এই আয়াতগুলোতে
‘কুফর’ শব্দটি
দুই ক্ষেত্রে
এসেছে— ১)
মুনাফেক: যে
গোপনে বিশ্বাস
করতে অস্বীকার
করে, ২)
কাফির: যে
প্রকাশ্যে বিশ্বাস
করতে অস্বীকার
করে।”
সুতরাং কাফির
হচ্ছে যারা
গোপনে বা
প্রকাশ্যে ইসলাম
বিশ্বাস করতে
অস্বীকার করে।
এদের কাছে
কুর‘আনের
বাণী পৌঁছান
হয়েছে। কিন্তু
তারা মানতে
অস্বীকার করেছে।
কাফির যে
শুধু অমুসলিমরাই
হয় তাই
নয়, একই
সাথে মুসলিম
নামধারীরাও কাফির
হয়ে যায়,
যদি তারা
উপরের আয়াতের
বৈশিষ্ট্যগুলোর সাথে
মিলে যায়।
আজকাল অনেক
মুসলিম নামধারী
আছেন, যাদেরকে
কুর‘আনের
আয়াত দেখিয়ে
বার বার
সাবধান করেও
কোনো লাভ
হয় না,
এরা কোনোভাবেই
শুনবে না।
এরা ধর্মের
ব্যাপারে বিবেক-বুদ্ধি
খাটায় না।
সংস্কৃতি, কুসংস্কার,
বাপ-দাদার
অন্ধ অনুকরণে
গা ভাসিয়ে
দেয়। এদের
কাছে কুর‘আনের
নিষেধ থেকে
সংস্কৃতি, ফ্যাশন,
বিনোদন অনেক
বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
এদের অনেকে
মনে করে
যে, নবীরা
যা বলে
গেছেন, সেগুলো
হাজার বছর
আগে চলতো,
আজকে আর
চলে না।
নবীদের কথা,
কাজ নিয়ে
তারা প্রশ্ন
তোলে। এরা
যদিও নিজেদেরকে
মুসলিম বলে
পরিচয় দেয়,
কিন্তু সত্যিকারের
ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের
ভালো কোনো
অর্জন হলে,
তাদের সম্মান,
ক্ষমতা, প্রতিপত্তি
বেড়ে গেলে,
এরা ভেতরে
ভেতরে জ্বলতে
থাকে। ধর্মপ্রাণ
মুসলিমদের প্রতি
তাদের গোপন
বিতৃষ্ণা অনেক
সময় তাদের
লেখা, কথা,
কাজের মধ্যে
দিয়ে বেড়িয়ে
আসে।
আমি যা
উপাসনা করি,
তোমরা তার
উপাসক নও
প্রশ্ন হচ্ছে,
কেন আমি
‘যাকে’ উপাসনা
করি না
বলে, আমি
‘যা’ উপাসনা
করি বলা
হলো? আমরা
নিশ্চয়ই আল্লাহকে تعالى ‘যা’
বলে সম্বোধন
করি না?
আ‘বুদু
অর্থ শুধুই
ধর্মীয় উপাসনা
নয়, একইসাথে
নিজেকে দাস
বানিয়ে ফেলা।
আ’বদ
عبد অর্থ দাস।
আমরা শুধুই
আল্লাহর تعالى উপাসনা
করি না,
আমরা আল্লাহর تعالى দাসত্ব
করি। এমনটি
নয় যে,
আমরা পাঁচ
ওয়াক্ত নামাজ
পড়লাম, রোজা
রাখলাম, যাকাত
দিলাম –ব্যাস,
আল্লাহর تعالى সাথে
আমাদের সম্পর্ক
শেষ। এরপর
আমি যা
খুশি তাই
করতে পারি।
বরং আমরা
সবসময় আল্লাহর تعالى দাস।
ঘুমের থেকে
উঠার পর
থেকে ঘুমাতে
যাওয়া পর্যন্ত
প্রতিটা কাজে,
প্রতিটা কথায়
আমাদেরকে মনে
রাখতে হবে:
আমরা আল্লাহর تعالى দাস
এবং আমরা
যে কাজটা
করছি, যে
কথাগুলো বলছি,
তাতে আমাদের
প্রভু সম্মতি
দিবেন কি
না এবং
প্রভুর কাছে
আমি জবাব
দিতে পারবো
কি না।[১]
কিছু মানুষ
আছে যারা
ঠিকই নামাজ
পড়ে, রোজা
রাখে, যাকাত
দেয়, কিন্তু
ছেলে, মেয়ের
বিয়ে দেয়
হিন্দুদের বিয়ের
রীতি অনুসরন
করে গায়ে-হলুদ,
বউ-ভাত
করে। এরা
বাচ্চাদের কপালে
কালো টিপ
দেয় ‘অশুভ
শক্তির’ ভয়ে,
যা হিন্দু
ধর্মের ধারণা।
তারা মসজিদে
বা ইসলামিক
অনুষ্ঠানে যায়
একদম মুসলিম
পোশাক পড়ে,
হিজাব করে,
কিন্তু বন্ধু
বান্ধব, পাড়া-প্রতিবেশীর
বাসায় বা
বিয়ের অনুষ্ঠানে
যায় শরীরের
নানা অঙ্গ
বের করে,
রঙ-বেরঙের
সাজসজ্জা করে।
—এদের সবার
সমস্যা একটি:
এরা এখনও
আল্লাহকে تعالى প্রভু
হিসেবে মেনে
নিতে পারেনি।
এদের কাছে
“লোকে কী
বলবে” বেশি
গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু
“আমার প্রভু
কী বলবেন”
তা বেশি
গুরুত্বপূর্ণ নয়।
তোমরা যা
উপাসনা করছ,
আমি কখনই
তা করবো
না।
কিছু মানুষ
বিশ্বাস করে
সৃষ্টিকর্তা পৃথিবীতে
এসেছিলেন মানুষের
রূপ নিয়ে,
মানুষকে পথ
দেখাতে। কিন্তু
তারপর তিনি
মানুষের হাতে
ব্যাপক মার
খেয়ে, মানুষের
হাতেই ক্রুশ
বিদ্ধ হয়ে
মারা গিয়েছিলেন
মানবজাতিকে পাপ
থেকে মুক্তি
দেওয়ার জন্য।
আবার কিছু
মানুষ বিশ্বাস
করে সৃষ্টিকর্তা
ছয় দিনে
সবকিছু সৃষ্টি
করে তারপর
সপ্তম দিন
বিশ্রাম নিয়েছিলেন।
তিনি মানুষ
সৃষ্টি করে
তারপর মানুষের
ব্যাপক অপকর্ম
দেখে অনুতপ্ত
হয়েছিলেন। আবার
কিছু মানুষ
বিশ্বাস করে
সৃষ্টিকর্তা অবতার
রূপে মানুষের
পেটে জন্ম
নিয়ে, মানুষ
রূপে পৃথিবীতে
ঘুরে বেড়ান,
কাজকর্ম করেন,
বাঁশি বাজান,
ব্যাপক নাচগান
করেন, ষোল
হাজারের বেশি
নারীসঙ্গ উপভোগ
করেন এবং
একসময় এক
মহিষীর অভিশাপে
তিনি মারা
যান। এরকম
কয়েকবার তার
পুনর্জন্ম হয়েছে।
আবার কিছু
মানুষ বিশ্বাস
করে সৃষ্টিকর্তা
আসলে ব্যাক্তিত্বহীন
এক সত্তা,
যা শুধুই
সৃষ্টির প্রথম
কারণ বা
উৎস। সেই
উৎস থেকে
সৃষ্টি প্রক্রিয়া
শুরু হয়ে
সবকিছু স্বয়ংক্রিয়ভাবে
চলছে। আবার
কিছু মানুষ
বিশ্বাস করে
যে, সৃষ্টিকর্তা
একদম শুরুতে
একটা ধাক্কা
দিয়ে সৃষ্টি
প্রক্রিয়া শুরু
করে দিয়েছিলেন।
এখন আর
সৃষ্টির দিকে
তিনি খেয়াল
রাখেন না।
তার সময়
নেই প্রত্যেক
সৃষ্টির খুঁটিনাটি
দিক খেয়াল
করার। তিনি
শুধু বড়
বড় কাজগুলো
করেন।
সৃষ্টিকর্তা সম্পর্কে
এই সব
চরম অপমানকর
ধারণা আমাদের
কাছে শুধু
অযৌক্তিকই নয়,
বরং একজন
সর্বশক্তিমান মহাপবিত্র
স্রষ্টার মর্যাদার
প্রতি ব্যাঙ্গ
এবং চরম
ধৃষ্টতা। মানুষের
উর্বর মস্তিষ্ক
ছাড়া এই
সব অযৌক্তিক
ধারণা জন্ম
নেওয়া সম্ভব
না। এগুলো
এতটাই অযৌক্তিক
যে, আজকাল
শিক্ষিত সমাজের
এক বিরাট
অংশ ধর্ম
থেকে একদম
দূরে চলে
গেছে, কারণ
তারা তাদের
বিবেক-বুদ্ধি
দিয়ে কোনোভাবেই
মানতে পারে
না: কীভাবে
একজন স্রস্টা,
যিনি সবকিছুর
ঊর্ধে, যিনি
সবকিছু সৃষ্টি
করেছেন, সকল
ক্ষমতার উৎস
— তিনি এরকম
দুর্বল, ত্রুটিপূর্ণ,
অপবিত্র হতে
পারেন।
ইসলাম আমাদের
শেখায়: সৃষ্টিকর্তা
আল্লাহ تعالى এক,
অদ্বিতীয়। তাঁর
সাথে কোনো
কিছুর তুলনাই
হয় না।
তিনি কাউকে
জন্ম দেন
না। কেউ
তাঁকে জন্ম
দেওয়ার প্রশ্নই
আসে না।
আমরা সৃষ্টিকর্তার
রূপ সম্পর্কে
যা কিছুই
কল্পনা করি,
তিনি সেটা
বাদে অন্য
কিছু। তিনি
নিজে সবকিছু
সৃষ্টি করেছে।
সব কিছুর
পরিকল্পনা, ডিজাইন
তাঁর নিজের
করা। সকল
সৃষ্টিকে তিনি تعالى নিজে
রক্ষণাবেক্ষণ করেন।
সবার অভিভাবক
তিনি। তিনি تعالى প্রত্যেক
সৃষ্টির সাথে
সরাসরি জড়িত।
ক্লান্তি তাঁকে
স্পর্শ করে
না। তাঁর
আর সৃষ্টির
মাঝে কোনো
দেবতা বা
সাহায্যকারী নেই।
যে কেউ,
যে কোনো
সময় সরাসরি
তাঁর কাছে
চাইতে পারে।
সমস্ত ক্ষমতা
শুধুই তাঁর।
কারও ক্ষমতা
নেই তাঁর
অনুমতির বিরুদ্ধে
কিছু করার।
তিনি সব
দেখেন, সব
শোনেন, সব
জানেন। সৃষ্টির
সম্পর্কে জানার
জন্য, সৃষ্টির
কষ্ট বোঝার
জন্য কখনই
তাঁকে সৃষ্টির
রূপ নিয়ে
আসার প্রয়োজন
পড়ে না।
কোনো কিছুই
তাঁর কাছে
গোপন নেই।
আমাদের প্রতিটি
চিন্তা, অবচেতন
মনের সমস্ত
আকাঙ্ক্ষা, যা
আমরা নিজেরাও
জানি না,
তার সব
তিনি জানেন।
তিনি যুগে
যুগে মানুষকে
ভুল পথ
থেকে ফিরিয়ে
আনার জন্য
কিছু মানুষকে
তাঁর দূত
হিসেবে নির্বাচন
করেছেন। সেই
সম্মানিত মানুষগুলো
শুধু তাঁর
বাণীই প্রচার
করে গেছেন,
শুধুমাত্র তাকেই
উপাসনা করার
কথা বলে
গেছেন। এরা
নিজেরা কেউ
নিজেদেরকে দেবতা
বলে দাবি
করেননি। —এই
হচ্ছে ইসলামে
সৃষ্টিকর্তার সম্পর্কে
ধারণা। স্রষ্টার
সম্পর্কে এর
থেকে যৌক্তিক,
সুন্দর ধারণা
আর কোনো
ধর্মে নেই।
অন্য যে
কোনো ধর্ম
থেকে বিধর্মীদের
ইসলাম ধর্ম
বেশি গ্রহণ
করার পেছনে
ইসলামে দেওয়া
স্রষ্টার এত
পবিত্র, যৌক্তিক
ধারণা অন্যতম
কারণ।
এই আয়াতেও
একটা প্রশ্ন
আছে, কেন
তোমরা ‘যাকে/যাদের’
উপাসনা করো
বলা হলো
না? কেন
‘যা’ বলা
হলো?
মানুষ সংস্কৃতির
দাসত্ব করে।
নিজেদের প্রবৃত্তির
দাসত্ব করে।
ফ্যাশনের দাসত্ব
করে। মঙ্গল
শোভাযাত্রা করে।
ক্রিস্টমাস পালন
করে। বাচ্চার
কপালে কালো
ফোঁটা দেয়।
স্বামীর নাম
মুখে নিলে
অমঙ্গল হয়
বিশ্বাস করে।
নানা ধরনের
কুসংস্কার, অমঙ্গল,
কুফা’র
কবলে নিজেদেরকে
বন্দি করে
রাখে। বাপ-দাদার
অন্ধ অনুকরণ
করে। লোকে
কী বলবে,
তার ভয়ে
থাকে। —আমরা
এগুলোর কোনোটারই
দাসত্ব করি
না।
তোমাদের ধর্ম
তোমাদেরই থাকুক,
আমার ধর্ম
আমার
এই আয়াত
নিয়ে আমাদের
অনেকের ভুল
ধারণা আছে।
আমরা অনেকে
মনে করি
যে, এই
আয়াতে আল্লাহ تعالى বিধর্মীদেরকে
তাদের যার
যার মত
ধর্ম নিয়ে
থাকার সার্টিফিকেট
দিয়ে দিয়েছেন।
মানুষ যে
যার মত
ধর্ম পালন
করলে কোনো
সমস্যা নেই।
যাকে তাকে
ইসলামের কথা
বলে বিরক্ত
করার দরকার
নেই। “ধর্ম
যার যার,
উৎসব সবার”
—এই ধরনের
অবাস্তব কথাকে
সমর্থন করার
জন্য অনেক
সময় এই
আয়াত টানা
হয়।
বরং আয়াতের
ভাষা হচ্ছে,
তোমাদের ধর্ম
শুধুই তোমাদের
থাকবে। এর
সাথে আমার
কোনোই সম্পর্ক
নেই। এটা
কখনই আমার
হবে না।
আমি কোনোদিনও
তোমাদের ধর্ম
মানবো না।
আর আমার
ধর্ম শুধুই
আমার থাকবে।
আমি কোনোদিন
আমার ধর্মকে
তোমাদের কাছে
বেঁচে দিবো
না। তোমাদের
কথা শুনে
আমার ধর্মে
কোনো পরিবর্তন
আনব না।
ইসলামের দাওয়াতে
কোনো হেলা
করা যাবে
না। কখনই
ইসলামের সত্য
বাণীকে ঘোলা
করা যাবে
না। মানুষ
ইসলামের আসল
শিক্ষাকে পছন্দ
করুক আর
না করুক,
কিছুই যায়
আসে না।
ইসলামের বাণী
ঠিক যেভাবে
এসেছে, সেভাবেই
প্রচার হবে।
আল্লাহ تعالى আমাদেরকে
যেভাবে ইসলাম
মানতে বলেছেন,
আমরা ঠিক
সেভাবেই মানবো।
লোকে কী
বলবে, এই
ভয়ে কখনই
আমরা ইসলামকে
নিজের সুবিধামত
পরিবর্তন করে
নেব না।
ইসলামকে আমরা
দ্ব্যর্থহীন ভাষায়
একমাত্র সঠিক
ধর্ম বলতে
কখনই দ্বিধা
করবো না।
আজকাল সুধীবৃন্দরা
দাবি করেন,
“তোমাদের ইসলাম
একটা অসহনশীল,
বর্বর ধর্ম।
তোমরা দাবি
করো যে,
ইসলাম হচ্ছে
একমাত্র সঠিক
ধর্ম, আর
অন্য সব
ধর্ম সব
ভুল। আর
তোমরা অন্য
ধর্মের মানুষদের
সন্মান করো
না, তাদের
অধিকার দাও
না, তাদেরকে
কাফির গালি
দিয়ে হত্যা
করার কথা
বলো। এরচেয়ে
অমুক, অমুক
ধর্ম অনেক
সহনশীল, সুন্দর।
”
—এর
উত্তর খুব
সহজ: প্রথমত,
হ্যা, ইসলাম
দাবি করে
যে, ইসলাম
হচ্ছে একমাত্র
সঠিক ধর্ম
এবং বাকি
সব ধর্ম
তার আসল
রূপ থেকে
বিকৃত হয়ে
গেছে, যার
কারণে সেগুলো
আর মানা
যাবে না।
দ্বিতীয়ত, খ্রিস্টান
এবং ইহুদি
ধর্মও সেটাই
দাবি করে,
এমনকি হিন্দু/সনাতন
ধর্মও নিজেকে
একমাত্র গ্রহণযোগ্য
ধর্ম, একমাত্র
স্বর্গে যাওয়ার
উপায় বলে
দাবি করে।
খোদ কৃষ্ণই
সেই কথা
বলেছেন ভগবৎ
গীতায়। তৃতীয়ত,
যদি কোনো
ধর্ম না-ই
দাবি করে
যে, সেটাই
একমাত্র সঠিক
ধর্ম, কারণ
বাকি সব
ধর্ম বিকৃত
হয়ে গেছে,
তার মানে
দাঁড়ায়: সৃষ্টিকর্তা
সেই নতুন
ধর্ম পাঠিয়েছেন
এমনিতেই। তিনি
নতুন একটা
কিছু করার
জন্য প্রচুর
কাঠখড় পুড়িয়ে,
বিপুল পরিমাণ
মানুষের সময়
খরচ করে,
অনেক মানুষের
ত্যাগের বিনিময়ে
এমন একটা
নতুন ধর্ম
পাঠালেন, যেটা
না মানলেও
কোনো সমস্যা
নেই, কারণ
আগের ধর্মগুলো
তো ঠিকই
আছে। অন্য
ধর্মের লোকরা
সব সৎ
পথেই আছে
এবং স্বর্গেও
যাবে। তাই
এই নতুন
ধর্মটা যদি
কেউ মানে
তো ভালো,
না মানলেও
কোনো সমস্যা
নেই।
আজকাল এইসব
সুধীবৃন্দরা যা
দাবি করছেন,
তা হচ্ছে
অনেকটা এরকম:
ইসলাম বা
অন্য ধর্মগুলোতে,
যেখানে সৃষ্টিকর্তা
ঘোষণা দিয়েছেন
যে, সেটাই
একমাত্র সঠিক
ধর্ম কারণ
অন্য ধর্মগুলো
বিকৃত হয়ে
গেছে — এটা
অন্যায়। আসলে
স্রস্টার বলা
উচিত ছিল,
“হে আমার
বান্দারা, আজকে
আমি তোমাদেরকে
একটা নতুন
ধর্ম দিলাম।
এটা অন্য
সব ধর্ম
থেকে বেশি
ঠিক, তা
আমি দাবি
করবো না।
আমার ভুল
ত্রুটি হতেই
পারে। আর
এটা তোমরা
মানতেও পারো,
নাও পারো।
কোনো সমস্যা
নেই। কোনো
একটা ধর্ম
মানলেই হলো।
তোমাদের সবাইকে
আমি স্বর্গ
দিয়ে দেবো।”
[১] বাইয়িনাহ এর কু’রআনের তাফসীর। [২] ম্যাসেজ অফ দা কু’রআন — মুহাম্মাদ আসাদ। [৩] তাফহিমুল কু’রআন — মাওলানা মাওদুদি। [৪] মা’রিফুল কু’রআন — মুফতি শাফি উসমানী। [৫] মুহাম্মাদ মোহার আলি — A Word for Word Meaning of The Quran [৬] সৈয়দ কুতব — In the Shade of the Quran [৭] তাদাব্বুরে কু’রআন – আমিন আহসান ইসলাহি। [৮] তাফসিরে তাওযীহুল কু’রআন — মুফতি তাক্বি উসমানী। [৯] বায়ান আল কু’রআন — ড: ইসরার আহমেদ। [১০] তাফসীর উল কু’রআন — মাওলানা আব্দুল মাজিদ দারিয়াবাদি [১১] কু’রআন তাফসীর — আব্দুর রাহিম আস-সারানবি [১২] আত-তাবারি-এর তাফসীরের অনুবাদ। [১৩] তাফসির ইবন আব্বাস। [১৪] তাফসির আল কুরতুবি। [১৫] তাফসির আল জালালাইন। [১৬] লুঘাতুল কুরআন — গুলাম আহমেদ পারভেজ। [১৭] তাফসীর আহসানুল বায়ান — ইসলামিক সেন্টার, আল-মাজমাআহ, সউদি আরব [১৮] কু’রআনুল কারীম – বাংলা অনুবাদ ও সংক্ষিপ্ত তাফসীর — বাদশাহ ফাহাদ কু’রআন মুদ্রণ কমপ্লেক্স। [১৯] তাফসির আল-কাবির। [২০] তাফসির আল-কাশ্শাফ।
No comments