আমি একে নাজিল করেছি এক মহান রাতে — আল-ক্বদর

আমি একে নাজিল করেছি এক মহান রাতে কে তোমাকে বলতে পারবে এই মহান রাত কী? এই মহান রাত হাজার মাসের থেকেও উত্তম এই রাতে ফেরেশতারা এবং রূহ আল্লাহর নির্দেশে সব সিদ্ধান্ত নিয়ে নেমে আসে ফজর আসা পর্যন্ত শান্তি-নিরাপত্তা বিরাজ করে [আল-ক্বদর]

কুরআন তো এক রাতে নাজিল হয়নি? এটা না ২৩ বছর ধরে একটু একটু করে নাজিল হয়েছে? তাহলে কেন বলা হলো যে, কুরআন নাজিল হয়েছে এই রাতে?

কেন আল্লাহ নির্দিষ্ট করে বলে দিলেন না এই রাত কোনটা? এত গুরুত্বপূর্ণ একটা রাত এভাবে ধোঁয়াশা রাখা হলো কেন? মানুষকে খামোখা কষ্ট দিয়ে কী লাভ?

আর এই রাতেসব সিদ্ধান্ত নিয়ে নাজিল হয়মানে কি যে, অন্য রাতে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় না? তাহলে বাকি রাতে আল্লাহর কাছে কিছু চেয়ে লাভ নেই? আল্লাহর تعالى সব সিদ্ধান্ত আগামী ক্বদর রাত না আসা পর্যন্ত আর বদলাবে না? কিন্তু কুরআনেই না অন্য জায়গায় বলা আছে যে, আল্লাহর تعالى কাছে যখনি দুআ করা হয়, তখনি তিনি শোনেন?

অনেক সময় দেখা যায় মানুষের দুআর ফল অল্প সময়ের মধ্যেই পাওয়া যায়? তাহলে সব সিদ্ধান্ত এই রাতে নেওয়া হলো কীভাবে?

আর এই রাতে যদি শান্তি, নিরাপত্তা থাকে, তাহলে খারাপ লোকেরা এই রাতে চুরি, ডাকাতি, ধর্ষণ করতে পারে কেন? গাজা, ফিলিস্তিন, কাশ্মীরে মুসলিমদের হত্যা হয় কীভাবে?

সুরা ক্বদর নিয়ে মানুষের বিভ্রান্তির শেষ নেই। এই সব বিভ্রান্তির কারণ হলো মূলত তিনটি) কুরআনের আয়াতের অর্থ ঠিকভাবে না বোঝা, ) ক্বদর সম্পর্কে ভুল ধারনা থাকা এবং ) একজন মুসলিমের কীভাবে চিন্তা করার কথা, তা বুঝতে ব্যর্থ হওয়া

আমি একে নাজিল করেছি এক মহান রাতে

আমরা যেমন বলি, “মনে আছে? আমি তোমাকে সেদিন টাকা দিয়েছিলাম? সেইদিনের কথা মনে আছে?”—এর মানে এই না যে, সেদিনই তাকে আমি সব টাকা দিয়েছিলাম, কিন্তু এর পরে মাসে মাসে আর টাকা দেইনি। বরং বলা হচ্ছে যে, সেদিন তাকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণের টাকা দেওয়া হয়েছিল। সেদিনের গুরুত্ব বেশি বোঝাতে এভাবে বলা হয়েছে

এই মহান রাতে রাসুলকে عليه السلام কুরআন প্রথম দেওয়া হয়েছিল। একারণে এই রাত বিশেষ মর্যাদার রাত। এছাড়াও আমরা হাদিস থেকে জানতে পারি যে, লাওহে মাহফুজ থেকে নিচের আকাশে জিব্রাইলকে عليه السلام এই বিশেষ রাতে সম্পূর্ণ কুরআন দেওয়া হয়েছিল। তারপর জিব্রাইল عليه السلام তা ২৩ বছর ধরে রাসুলকে عليه السلام প্রয়োজন অনুসারে একটু একটু করে দেন। ক্বদরের রাত সম্পর্কে এই দুটো ধারনা বহুল প্রচলিত।[][][১৭][১৮]

কিন্তু তখন মানুষ প্রশ্ন করে, রাসুল عليه السلام এর জীবনে বিভিন্ন ঘটনার প্রেক্ষিতে তো অনেক আয়াত নাজিল হয়েছে। তাহলে, কীভাবে কুরআন আগেই সম্পূর্ণটা জিব্রাইল عليه السلام এর কাছে গেল? তার মানে রাসুল عليه السلام এর জীবনের প্রতিটি ঘটনা আগে থেকেই সাজানো? তাহলে যারা অন্যায় করেছিল, তাদের অন্যায়কে কি আগে থেকেই সাজানো হয়েছিল, যেন সেই প্রেক্ষিতে বিশেষ কিছু আয়াত নাজিল করা যায়? তাহলে তারা তাদের অন্যায়ের জন্য শাস্তি পাবে কেন?

ক্বদর কী?

অনেকেই প্রশ্ন করেন, “যদি আমার ক্বদরে লেখা থাকেই যে, আমার কবে অসুখ হবে, কবে আমি সুস্থ থাকবো, কবে কোথায় চাকরি করবো, কত বছর বাঁচব, কত টাকা কামাবোএই সবই যদি আগেই থেকেই নির্ধারণ করা থাকে, তাহলে আমার আর নিজে থেকে কোনো কিছুর করার চেষ্টা করে লাভ কী? অসুখ হলে চিকিৎসা করে কী লাভ? চাকরির জন্য ছোটাছুটি করে করে কী লাভ? পড়ালেখা করে কী লাভ? যদি ক্বদরে লেখাই থাকে যে, আমি খারাপ কাজ করবো, তাহলে আর ভালো হওয়ার চেষ্টা করে কী লাভ? নামাজ পড়ে কী লাভ?” ইত্যাদি ইত্যাদি

ক্বদর সম্পর্কে যুক্তি দিয়ে বুদ্ধি খাটিয়ে কোনো ধরণের ব্যাখ্যা দাঁড় করানো সম্ভব না। কারণ যেই ব্যাখ্যাই মানুষ দাঁড় করাতে যাবে, দেখা যাবে যে, হয় সেই ব্যাখ্যা দাবি করছে যে, মানুষ তার ইচ্ছা অনুসারে ভবিষ্যৎ পরিবর্তন করতে পারে, যা আল্লাহ تعالى আগে থেকে জানতেন না। অথবা মানুষের কোনো ইচ্ছাই নেই, আল্লাহ تعالى আগে থেকেই সব কিছু নির্ধারণ করে রেখেছেন, যেহেতু তিনি আগে থেকেই সব জানেন।এই দুই পরিণাম ছাড়া আর কোনো পরিণামে যুক্তি ব্যবহার করে পৌঁছানো যায় না। একারণে ক্বদর হচ্ছে বিশ্বাসের ব্যাপার। আমাদেরকে বিশ্বাস করতে হবে যে, আমি কী সিদ্ধান্ত নেব, সেটা আল্লাহ تعالى আগে থেকেই জানেন, কিন্তু একই সাথে আমার সিদ্ধান্ত আমি নেই এবং সে জন্য আমি দায়ী —এই কথাটা যতই অযৌক্তিক, স্ববিরোধী শোনাক না কেন, আমাদেরকে এটাই বিশ্বাস করতে হবে, যদি আমরা নিজেদেরকে মুসলিম বলে দাবি করি। কিন্তু কেন আমাদেরকে অযৌক্তিক ব্যাপার বিশ্বাস করতে হবে?

কোয়ান্টাম মেকানিক্স অনুসারে একটি পরমাণু একই সময় দুই জায়গায় থাকতে পারে। এটা শুধু কোনো তত্ত্ব নয়, গবেষণাগারে পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে যে, একটি পরমাণু একই সময় প্রায় দুই ফুট দূরত্বে দুটো জায়গায় ছিল। অনেকটা এমন যে, আপনার হাতে যেই বলটা আছে, সেটা একই সময় আমার হাতেও আছে। আপনি বলটাতে লাথি মারলে সেটা একইসাথে সামনেও যায়, আবার পেছনেও যায়। যতই অযৌক্তিক, অবাস্তব শোনাক না কেন, পরমাণুর জগতে এই ধরণের ঘটনা ঘটে। কোয়ান্টাম ফিজিক্স নামে ফিজিক্সের এক শাখা রয়েছে, যার কাজ হচ্ছে এই সব অযৌক্তিক, অবাস্তব ঘটনা নিয়ে কাজ করা।[৪০১][৪০২]

আমাদের কাছে কিছু একটা অবাস্তব মনে হওয়া মানেই সেটা মিথ্যা নয়, বরং সেটা মানুষের চিন্তার সীমা। এই সীমার বাইরে কোনো কিছু মানুষ হাজার চেষ্টা করলেও বুঝতে পারে না। যেমন, ‘সময়কী, সেটা আমরা জানি না। বিজ্ঞানীরা এবং দার্শনিকরা হাজার চেষ্টা করেও সময়ের সংজ্ঞায় একমত হতে পারেননি। মহাবিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারসময়সম্পর্কেই মানুষের কোনো ধারনা নেই। সময়ের বাইরে কোনো কিছু মানুষ ধারনাই করতে পারে না। আমাদের ভাষায় অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ নিয়ে শব্দ আছে। কিন্তু সময়ের বাইরে কোনো কিছু বোঝানোর জন্য কোনো শব্দ নেই, কারণ আমরা সেটা ধারনাই করতে পারি না

যেমন, আমি যদি সময়ের বাইরে চলে যাই, তাহলে কি আমি বলতে পারবো, “আমি খেয়েছি?” বাআমি খাবো?” পারবো না, কারণ এগুলো সময়ের মধ্যে যারা সীমাবদ্ধ, তাদের জন্য প্রযোজ্য। কারণ আমিখেয়েছিবললে ভুল হবে, যেহেতু আমার কোনো অতীত নেই, আমি সময়ের বাইরে। আবার আমিখাবোবললেও ভুল হবে, কারণ আমার কোনো ভবিষ্যৎ নেই, আমি সময়ের বাইরে। যেহেতু আমি সময়ের বাইরে, তার মানে আমি একইসাথে খাইনি, খেয়েছি, খাচ্ছি এবং খাবো। এই সবগুলোই একসাথে প্রযোজ্য, আবার একটাও প্রযোজ্য না। সম্পূর্ণ অবাস্তব কথাবার্তা শোনাচ্ছে! কিন্তু এটাই সত্যি। কেউ সময়ের বাইরে চলে গেলে সেই সত্তার জন্য মানুষের ভাষা, যুক্তি সব বাতিল হয়ে যাবে। সেই সত্তার সম্পর্কে কোনো ধারনাই আমরা করতে পারবো না

এখন আমি যদি মানুষ নামের একটা স্বল্প বুদ্ধির প্রাণীকে আমার খাওয়া সম্পর্কে কিছু একটা ধারনা দিতে চাই, তাহলে আমি বলবো, “আমি খেয়েছি মানুষের বোঝার জন্য আমাকে তাদের সীমিত ভাষা ব্যবহার করে কিছু একটা বলতে হবে। কিন্তু তার মানে এই না যে, আমার খাওয়াটা অতীতে ঘটে গেছে। আমার কোনো সময়ই নেই, অতীত হওয়ার তো প্রশ্নই আসে না

আল্লাহ تعالى সময়ের বাইরে আছেন। তিনি تعالى সময়কে সৃষ্টি করেছেন। তাই আমরা যখন বলিতিনি জানেনআমরা আসলে মনে মনে ধরে নেই যে, তাঁর জানাটা অতীতে ঘটে গেছে। কিন্তু আল্লাহ تعالى সময়ের বাইরে আছেন। তার تعالى বেলায় আমরা অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ কোনো শব্দই ব্যবহার করতে পারব না। এর অর্থ হচ্ছে, ‘তিনি জানেনবলতে আসলে কী বোঝায়, সেটা আমরা কোনোদিন ধারনাই করতে পারবো না। মানুষের কোনো ভাষা ব্যবহার করে বোঝানো যাবে নাতিনি জানেনবলতে আসলে কী বোঝায়। কেউ যদি ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করে যে, ‘তিনি জানেনএর মানে হচ্ছে: তিনি সময় সৃষ্টির আগে থেকেই জানেন, তাহলে সেটা ভুল কথা। কারণ সময় যখন ছিল না, তখন আবারআগেআসলো কীভাবে। আবার কেউ যদি বলে, ‘তিনি জানেনমানে তিনি সময়ের সৃষ্টির সময়ই সব জানতেন, তাহলে সেটাও ভুল ধারনা। কারণ সময়কখনসৃষ্টি হয়েছে, সেটা কীভাবে হয়? সময়ের আবার সময় হয় কীভাবে?

সুতরাং আমরা দেখতে পাই যে, ‘আল্লাহ সব জানেন’ —এটার মানে আসলে কী, সেটা কেউ কোনোদিন ধারনাই করতে পারবে না। যেহেতু কেউ ধারনা করতে পারবে না, তাই নিজে থেকে কোনো একটা কিছু ধরে নিয়ে, তারপর ক্বদর সম্পর্কে কোনো ধরণের সিদ্ধান্তে পৌঁছে গিয়ে অভিযোগ করা ভুল। মানুষ কোনোদিন ক্বদর বুঝতে পারবে না, যেরকম কিনা মহাবিশ্বের অনেক কিছুই মানুষ কোনোদিন বুঝতে পারবে না। কুরআনে কিছু আয়াতে এবং কিছু সাহিহ হাদিসে আমাদেরকে ভাসা ভাসা কিছু ধারনা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সম্পূর্ণ ধারনা আমরা কোনোদিন পাবো না। কেউ ক্বদর ব্যাখ্যা করতে পেরেছে বলে দাবি করলে, তার থেকে শত হাত দূরে থাকতে হবে। সময়েরই কোনো সংজ্ঞা সে দিতে পারবে না, আর ক্বদর তো দূরের কথা

তাহলে প্রশ্ন আসে, কুরআনে আল্লাহ تعالى কেন অতীত এবং বর্তমানকাল ব্যবহার করেন? আল্লাহ تعالى কুরআন পাঠিয়েছেন মানুষের ভাষায়। তাই মানুষের ভাষায় যতটুকু বোঝানো সম্ভব, ততটুকুই বোঝানো হয়েছে। একইসাথে এটাও পরিষ্কার করে দেওয়া হয়েছে যে, মানুষের অনেক সীমাবদ্ধতা আছে। কিছু ব্যাপার মানুষ কখনই বুঝতে পারবে না। তাকে সেগুলো বিশ্বাস করতে হবে। আল্লাহর تعالى উপর আস্থা রেখে, তাঁর تعالى উপর বিশ্বাস আনতে হবে। অনেকে এই বিশ্বাসকে অন্ধ বিশ্বাস মনে করে। তর্ক করে যে, বিজ্ঞান-যুক্তি দিয়ে যা বোঝা যায় না, তা কেন অন্ধভাবে বিশ্বাস করতে হবে? কিন্তু সে বুঝতে পারে না যে, মানুষের ভাষা, যুক্তি, বুদ্ধি দিয়েসময়’-কেই ব্যাখ্যা করা যায় না। যেই প্রাণী বুঝতে পারে না সময় কী জিনিস, সেই প্রাণী কীভাবে দাবি করে যে, সে যুক্তি দিয়ে সবকিছু বুঝতে পারবে? ‘সময়যে আছে, এটা ঠিকই সে বিশ্বাস করেছে, যদিও তার কাছে কোনো যুক্তি, প্রমাণ নেই সময়ের অস্তিত্ব নিয়ে। আর সে সময়ের স্রস্টাকে বিশ্বাস করতে পারবে না?

কে তোমাকে বলতে পারবে এই মহান রাত কী?

কেন আল্লাহ নির্দিষ্ট করে বলে দিলেন না এই রাত কোনটা? এত গুরুত্বপূর্ণ একটা রাত এভাবে ধোঁয়াশা রাখা হলো কেন? মানুষকে খামোখা কষ্ট দিয়ে কী লাভ?

ক্বদরের রাত রমজানের শেষ দশ রাতের যে কোনো একটি, বা শেষ দশ বেজোড় রাতের যে কোনো একটি।[][][১৮][১৯][২০] এটি নির্দিষ্ট না করে দেওয়াতে লাভ কী হয়েছে দেখি। যারা মনে করে ক্বদর হচ্ছে একটি নির্দিষ্ট রমজানের রাত, তারা সেই রাতে অনেক বেশিহুজুগেইবাদত করে। কিন্তু অন্য দিনগুলোতে ঢিলে থাকে। অন্য রাতগুলোতে তাদেরকে আপত্তিকর অনুষ্ঠান, বিনোদন, অপেক্ষাকৃত কম ইবাদত করতে দেখা যায় এক রাত লম্বা ইবাদত করেই সে নিশ্চিত হয়ে যায় যে, হাজার রাতের সওয়াব জয় করে ফেলেছে। পরদিন থেকে সে এক ধরণের আত্মতৃপ্তিতে ভোগে যে, ক্বদর-এর রাত সে হাসিল করে ফেলেছে

আর যারা জানে যে, ক্বদরের রাত শেষ দশ রাতের যে কোনো একটি, বা বেজোড় রাতগুলোর একটি, তখন সে এক রাতের জায়গায় দশ রাত বা পাঁচ রাতের জন্য ভালো হয়ে যায়। এভাবে সে অনেকগুলো রাত কম অন্যায় করে থাকতে পারে। এতে তারই বিরাট লাভ হয়। এক রাতের হুজুগে ইবাদত করার মানসিকতা থেকে বেড়িয়ে এসে, সে নিয়মিত বেশি ইবাদত করার মানসিকতা এবং অভ্যাস তৈরি করে

এই রাতে ফেরেশতারা এবং রূহ আল্লাহর নির্দেশে সব সিদ্ধান্ত নিয়ে নেমে আসে

কোনো ধরণের ব্যাখ্যা দিয়ে লাভ নেই এই রাতে আসলেই কী ঘটে। যত ধরণের ব্যাখ্যাই দেওয়া হবে, সেগুলো চিত্তরঞ্জন ছাড়া আর কিছু নয়। আমরা সাহিহ হাদিস থেকে কিছু ধারনা পাই। কিন্তু সেই সব ধারনা কোনো যুক্তিবাদী মানুষের বিভ্রান্তি দূর করতে পারবে না।সব সিদ্ধান্তবলতে কী বোঝায়? অন্য রাতে কি তাহলে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় না? রূহ কী? সে কি ফেরেশতাদের একজন না? তাকে আলাদা করে বলা হলো কেন? রহস্য কী? —এই সব হাজারো প্রশ্ন মানুষের মনে আসতে পারে। এগুলো সবই অমূলক কৌতূহল। শয়তান এগুলোর সুযোগ নিয়ে মানুষের ঈমানে ফাটল ধরিয়ে দেয়। কিন্তু একজন বুদ্ধিমান মুসলিম জানে তার বোঝার সীমাবদ্ধতা কোথায়। সে এটাও জানে যে, কোনটা বোঝাটা জরুরি, আর কোনটা বোঝার চেষ্টা করা ফালতু সময় নষ্ট ছাড়া আর কিছু নয়। সুতরাং একজন মুসলিমের কাছে এই আয়াতের কোনো ধরণের ব্যাখ্যা বোঝার চেষ্টা করা অপ্রয়োজনীয় কৌতূহল ছাড়া আর কিছু নয়। আল্লাহ تعالى সূরাহ আল-বাকারাহতে আমাদেরকে পরিষ্কার করে বলেছেন যে, সব সময় তাঁর কাছে সরাসরি চাইতে। আমাদের দুআ শোনার জন্য তিনি সবসময় প্রস্তুত, যদি আমরা তাঁর কথা শুনি।আমরা বরং সেই নির্দেশ পালন করি। ক্বদরের রাতে কী ঘটে, সেটা বোঝার চেষ্টা করে কোনো লাভ নেই

ফজর আসা পর্যন্ত শান্তি-নিরাপত্তা বিরাজ করে

ফেরেশতারা এবং রূহ এই রাতে নেমে আসেন এবং তাদেরকে দেওয়া দায়িত্ব পালন করেন। এই রাতে বিশেষ নিরাপত্তা এবং শান্তি ব্যবস্থা নেওয়া হয়, যেন তাদের কাজে কোনো ব্যাঘাত না ঘটে। সূরাহ আল-বাকারাহতে আমরা দেখেছি যে, জিব্রাইল عليه السلام যখন কুরআন নিয়ে পৃথিবীতে আসেন, তখন মহাবিশ্বে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়, যেন কেউ কুরআনের বাণী পৌঁছে দেওয়াতে কোনো সমস্যা করতে না পারে। তিনি আসার সময় তাঁর সামনে এবং পেছনে বিশ্বজগত জুড়ে বিশাল নিরাপত্তা বাহিনী দাঁড় করানো হয়। এই বাহিনী শক্তিশালী ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে ওঁত পেতে থাকা জিনদের আক্রমণ করে তাড়িয়ে দেয়। কোনো মানুষ বা জিন কোনোদিন পারেনি কুরআনের বাণী নাজিল হওয়াতে কোনো ধরণের বাঁধা দিতে

একইভাবে ক্বদরের রাতেও বিশেষ নিরাপত্তা এবং শান্তি ব্যবস্থা নেওয়া হয়। ফজর পর্যন্ত তা চলতে থাকে। এর বেশি বোঝার কোনো দরকার নেই

উপসংহার

সূরাহ ক্বদর থেকে আমাদের যে শিক্ষা নিতে হবে তা হলো, এই রাত হাজার রাত থেকে উত্তম। সুতরাং এই রাতে যত বেশি সম্ভব আল্লাহর تعالى ইবাদত করতে হবে, যেন আমরা হাজার রাত ইবাদত করার সওয়াব পেতে পারি। এটাই এই সূরাহতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষার বিষয়। একজন বুদ্ধিমান মুসলিম চেষ্টা করবে কীভাবে এই রাতে সবচেয়ে বেশি সওয়াব কামানো যায়, সেটার সঠিক পদ্ধতি খুঁজে বের করতে। আর যারা বিভ্রান্ত, তারা চিন্তা করবে ক্বদর মানে কী? ফেরেশতারা কোথায় নামে? রূহ কে? শান্তি বলতে কী বোঝায়? এই রাতে সব কিছু নির্ধারণ করা হয় মানে কী? —এসব নিয়ে গবেষণা করবে

সূত্র

[] বাইয়িনাহ এর কুরআনের তাফসীর। [] ম্যাসেজ অফ দা কুরআনমুহাম্মাদ আসাদ। [] তাফহিমুল কুরআনমাওলানা মাওদুদি। [] মারিফুল কুরআনমুফতি শাফি উসমানী। [] মুহাম্মাদ মোহার আলি — A Word for Word Meaning of The Quran [] সৈয়দ কুতব — In the Shade of the Quran [] তাদাব্বুরে কুরআনআমিন আহসান ইসলাহি। [] তাফসিরে তাওযীহুল কুরআনমুফতি তাক্বি উসমানী। [] বায়ান আল কুরআন: ইসরার আহমেদ। [১০] তাফসীর উল কুরআনমাওলানা আব্দুল মাজিদ দারিয়াবাদি [১১] কুরআন তাফসীরআব্দুর রাহিম আস-সারানবি [১২] আত-তাবারি-এর তাফসীরের অনুবাদ। [১৩] তাফসির ইবন আব্বাস। [১৪] তাফসির আল কুরতুবি। [১৫] তাফসির আল জালালাইন। [১৬] লুঘাতুল কুরআনগুলাম আহমেদ পারভেজ। [১৭] তাফসীর আহসানুল বায়ানইসলামিক সেন্টার, আল-মাজমাআহ, সউদি আরব [১৮] কুরআনুল কারীমবাংলা অনুবাদ সংক্ষিপ্ত তাফসীরবাদশাহ ফাহাদ কুরআন মুদ্রণ কমপ্লেক্স। [১৯] তাফসির আল-কাবির। [২০] তাফসির আল-কাশ্শাফ। [৪০১] Phys.org. (2017). Atoms can be in two places at the same time. [online] Available at: https:/phys.org/news/2015-01-atoms.html [Accessed 19 Oct. 2017]. http:/www.webcitation.org/6uLAAW5Xf [৪০২] Bennett, J. (2017). Atoms Exist in Two Places Nearly 2 Feet Apart Simultaneously. [online] Popular Mechanics. Available at: http:/www.popularmechanics.com/science/a18756/atoms-exist-two-places-simultaneously/ [Accessed 19 Oct. 2017]. http:/www.webcitation.org/6uLAAnorB

No comments

Powered by Blogger.