তিনি যা সৃষ্টি করেছেন, তার ক্ষতি থেকে — আল-ফালাক্ব
বলো, আমি আশ্রয় নেই অন্ধকার চিরে বের হওয়া আলোর প্রভুর কাছে। তিনি যা সৃষ্টি করেছেন, তার ক্ষতি থেকে। অন্ধকার ঘনিয়ে আসা রাতের ক্ষতি থেকে, যখন তা ঘুটঘুটে অন্ধকার হয়ে যায়। যারা যাদু করে গ্রন্থিতে ফুঁ দেয়, তাদের ক্ষতি থেকে। হিংসুকের ক্ষতি থেকে, যখন সে হিংসার কাজ করে। [আল-ফালাক্ব]
বলো, আমি
আশ্রয় নেই
অন্ধকার চিরে
বের করা
আলোর প্রভুর
কাছে
ফালাক্ব শব্দটির
দুটো অর্থ
রয়েছে— ১)
অন্ধকার চিরে
যখন আলোর
রশ্মি বেড়িয়ে
আসে, ২)
যা অন্য
কোনো কিছু
চিরে বা
ভেদ করে
বের হয়
বা জন্ম
হয়। প্রথম
অর্থ নিলে
এই আয়াতের
অর্থ হবে—
বলো, আমি
আশ্রয় নেই
ঊষার প্রভুর
কাছে। আর
দ্বিতীয় অর্থ
নিলে এই
আয়াতের অর্থ
দাঁড়াবে যে,
আমরা আশ্রয়
চাইছি সৃষ্টির
প্রভুর কাছে।
কারণ আমরা
যদি লক্ষ্য
করি, সকল
সৃষ্টিই কিছু
না কিছু
বিদীর্ণ করে
বেড়িয়ে এসে
অস্তিত্ব নেয়।
বীজ চিরে
নতুন চারা
বের হয়।
মাটি চিরে
গাছ বের
হয়। মায়ের
গর্ভ চিরে
বাচ্চা জন্ম
নেয়। ডিম
চিরে ছানা
বের হয়।
শূন্য চিরে
সৃষ্টিজগত বের
হয়। অন্ধরকার
মহাবিশ্ব চিরে
নক্ষত্রের আলো
বের হয়।
—আমরা আশ্রয়
চাইছি তাঁর تعالى কাছে
যিনি অন্ধকার
চিরে আলো
বের করেন,
যিনি সব
সৃষ্টি করেন।[১৮][১৭][১][৪][২০]
তিনি যা
সৃষ্টি করেছেন,
তার ক্ষতি
থেকে
আয়াতটি বলে
না যে,
তিনি تعالى যে
ক্ষতিকর সৃষ্টি
করেছেন তার
ক্ষতি থেকে,
বরং বলে
যে, তাঁর تعالى সৃষ্টি
যখন কোনো
ক্ষতির কারণ
হয়ে দাঁড়ায়,
তখন সেই
ক্ষতি থেকে।
আল্লাহ تعالى কখনই
কোনো ক্ষতিকর
কিছু তৈরি
করেন না।
সবকিছু সৃষ্টির
পেছনেই কোনো
না কোনো
ভালো উদ্দেশ্য
রয়েছে। কিন্তু
অনেক সময়
তাঁর সৃষ্টি
কিছু পরিস্থিতিতে
আমাদের ক্ষতির
কারণ হয়ে
যায়। যেমন,
মেঘ থেকে
বৃষ্টি হয়।
বৃষ্টি থেকে
আমরা ফল
ফসল পাই।
কিন্তু মেঘ
থেকে যদি
বেশি বৃষ্টি
হয়, তাহলে
তা বন্যা
হয়ে আমাদের
ক্ষতি করে।
আবার সূর্য
ছাড়া আমরা
বাঁচব না।
সূর্যের কারণেই
পৃথিবীতে প্রাণ
টিকে আছে,
প্রাণের জন্য
সবকিছু তৈরি
হচ্ছে। কিন্তু
এই সূর্যই
জ্বালিয়ে, পুড়িয়ে
কোনো এলাকাকে
মরুভূমি করে
দিতে পারে।
বাতাস ছাড়া
কোনো প্রাণী
বাঁচে না।
কিন্তু এই
বাতাসই যখন
হারিকেনের গতিতে
আঘাত করে,
তখন ব্যাপক
প্রাণহানি হয়।
তাই আমরা
আল্লাহর تعالى কোনো
সৃষ্টিকে ‘খারাপ
সৃষ্টি’ বলবো
না। বরং
তাঁর تعالى কোনো
সৃষ্টি যখন
আমাদের জন্য
ক্ষতিকর হয়ে
দাঁড়ায়, আমরা
সেই ক্ষতি
থেকে তাঁর تعالى কাছে
রক্ষা চাইবো।
তাহলে ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস আল্লাহ تعالى তৈরি করলেন কেন? এগুলো তো ক্ষতি ছাড়া আর কিছু করে না? ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস না থাকলে মানুষের অসুখ হতো না, পশুপাখি মারা যেত না, ফসলের ক্ষতি হতো না। পৃথিবীটা কত সুন্দর হতো। এগুলোর তো ক্ষতিকর সৃষ্টি ছাড়া আর কিছু না? আল্লাহ تعالى পরম করুণাময়, অসীম দয়ালু। কিন্তু ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাসের মধ্যে তো কোনো কল্যাণ নেই?
ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাস উপকারী এবং অপকারী দুই ধরনের হয়। আমরা প্রত্যেককেই একেক জন চলমান ব্যাকটেরিয়ার পাহাড়। একজন সাধারণ মানুষের শরীরে প্রায় ৩০ ট্রিলিয়ন কোষ আছে, আর আছে প্রায় ৪০ ট্রিলিয়ন ব্যাকটেরিয়া।[৩৯৪] এই ব্যাকটেরিয়াগুলো আমাদের নানা ধরনের উপকার করে। হজমে সাহায্য, নানা ধরনের রোগ থেকে প্রতিরোধ, পরজীবী মেরে আমাদের রক্ষা করা, শরীর থেকে ক্ষতিকর ক্যামিকাল সরানো ইত্যাদি হাজারো কাজ ব্যাকটেরিয়া করে। ব্যাকটেরিয়া শুধু মানুষের না, সকল প্রাণী এবং উদ্ভিদের উপকার করে। নাইট্রোজেন চক্র —অর্থাৎ বাতাস থেকে নাইট্রোজেন মাটিতে নিয়ে তা গাছপালার পুষ্টি জোগানোর কাজ করে ব্যাকটেরিয়া। একইসাথে মৃত জীবজন্তুকে পচিয়ে মাটিতে পুষ্টি ছেড়ে দেওয়ার কাজ অনেকখানি করে ব্যাকটেরিয়া। যদি ব্যাকটেরিয়া না থাকতো, তাহলে গাছপালা জন্মানোর মতো মাটি তৈরি হতো না। ব্যাকটেরিয়া না থাকলে পৃথিবীতে কোনো উদ্ভিদ বা প্রাণী বেঁচে থাকত না।[৩৯৬]
ভাইরাস হচ্ছে
প্রোটিনের খোলসে
মোরা ডিএনএ
বা আরএনএ-এর
প্রাণহীন বাহক।
এটি কোষের
দেওয়ালে ফুটো
করে কোষের
ভেতরে তার
ডিএনএ বা
আরএনএ ঢুকিয়ে
দেয়। তারপর
সেই ডিএনএ
বা আরএনএ
কোষের উপর
দখল নিয়ে
কোষকে দিয়ে
আরও ভাইরাস
বানানো শুরু
করে। একসময়
ভাইরাসে কোষ
ভরে গিয়ে
কোষ ফেটে
যায় এবং
ভাইরাসগুলো ছড়িয়ে
পড়ে। এন্টিবায়োটিক
খেয়ে ভাইরাস
মারা যায়
না। একারণে
বেশিরভাগ ভাইরাল
রোগের চিকিৎসা
হচ্ছে অপেক্ষা
করা। নিজের
রোগ প্রতিরোধ
ব্যবস্থাকে সময়
দেওয়া। আর
রোগের উপশম,
কষ্ট কমানোর
জন্য কিছু
ওষুধ খাওয়া।
ওষুধগুলো ভাইরাস
যে টক্সিন
তৈরি করে,
তা দূর
করতে সাহায্য
করে।
ভাইরাস বহু
ধরনের ব্যাকটেরিয়া
মারে। ভাইরাস
হচ্ছে ব্যাকটেরিয়াকে
নিয়ন্ত্রণে রাখার
প্রথম ব্যবস্থা।
ভাইরাস না
থাকলে প্রকৃতি
ব্যাকটেরিয়াতে ভরে
যেত। এছাড়াও
মৌমাছি যেমন
ফুল পরাগায়িত
করে ফল,
ফসল তৈরিতে
সাহায্য করে,
উদ্ভিদের মধ্যে
নতুন বৈশিষ্ট্য
এনে দেয়,
ঠিক একইভাবে
ভাইরাসও এক
কোষ থেকে
ডিএনএ নিয়ে
অন্য কোষে
ঢুকিয়ে দিয়ে
ব্যাকটেরিয়া এবং
নানা অণুজীবের
কোষের মধ্যে
বিবর্তন ঘটায়।
এই বিবর্তন
তাদেরকে ক্ষতিকর
পরিবেশে বেঁচে
থাকতে সাহায্য
করে। নতুন
পরিস্থিতি মোকাবেলায়
সাহায্য করে।
এছাড়াও ভাইরাস
মাটির উর্বরতা
রক্ষায় মাটিতে
থাকা ফাঙ্গাসকে
সাহায্য করে।
গাছপালাকে পানির
স্বল্পতায় বেঁচে
থাকতে সাহায্য
করে। প্রাণীদের
লালা এবং
ভেতর থেকে
বেড়িয়ে থাকা
অঙ্গগুলোতে যে
আঠালো পিচ্ছিল
আবরণ থাকে,
তার সাথে
যুক্ত হয়ে
ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ
থেকে সেগুলোকে
বাঁচায়। ভাইরাস
হচ্ছে প্রাণীদের
প্রথম প্রতিরক্ষা
দেওয়াল। ভাইরাসের
সাথে উদ্ভিদ
এবং প্রাণী
জগতের মিথোজীবী
সম্পর্ক আছে।
একজন অন্যজনকে
বেঁচে থাকতে
সাহায্য করে।[৩৯৭]
কিন্তু যখন
এক প্রাণীর
ভাইরাস অন্য
প্রাণীর মধ্যে
ঢুকে গিয়ে
ক্ষতিকর বিবর্তন
হয়, তখন
তা অসুখের
সৃষ্টি করে।
যেমন, সয়াইন
ফ্লু ভাইরাস
শুকরের দেহে
থাকে এবং
তাদের সমস্যা
করে না।
কিন্তু যখন
তা মানুষের
রক্তে ঢুকে
যায়, তখন
তা বিবর্তিতই
হয়ে জটিল
অসুখ তৈরি
করে। আবার,
এইডস যেই
ভাইরাসের কারণে
হয়—এইচআইভি,
তা বানরের
দেহে থাকে
এবং বানরের
তাতে ক্ষতি
হয় না।
যতদিন পর্যন্ত
এইচআইভি বানরের
দেহে ছিল,
ততদিন কোনো
সমস্যা হয়নি।
কিন্তু যখন
তা মানুষের
রক্তে ঢুকে
গেলো, তখন
তা বিবর্তিত
হয়ে এইডস
রোগের জন্ম
দিলো।[৩৯৮] শুকর,
মুরগি, বানরের
রক্ত কীভাবে
মানুষের রক্তের
সংস্পর্শে আসে
তা নিয়ে
কিছু ধারণা
রয়েছে। এর
মধ্যে একটি
ধারণা হচ্ছে,
যখন বন্য
প্রাণীর বাসস্থান
ধ্বংসের কারণে
কোনো বন্য
প্রাণী মানুষের
সংস্পর্শে বেশি
আসে, অথবা
মাত্রাতিরিক্ত কৃত্রিম
ঘনবসতিতে কোনো
প্রাণীকে রাখা
হয়, অথবা
মানুষকে কামড়ানোর
ফলে মানুষের
রক্তে তাদের
ভাইরাস ঢুকে
যায়। আরেকটি
ভয়ংকর কারণ
হলো পশুকামিতা,
যা সরাসরি
মানুষের রক্তে
প্রাণীর ভাইরাস
ঢুকিয়ে দেয়।
কিছু বিজ্ঞানী
দাবি করেন
যে, সৃষ্টিকর্তা
ব্যাকটেরিয়া এবং
ভাইরাসকে কখনও
মানুষের ক্ষতি
করার জন্য
তৈরি করেননি।
কিন্তু মানুষের
অন্যায়ের কারণে
এগুলো মানুষের
দেহে অস্বাভাবিকভাবে
ঢুকে যাওয়ার
কারণে এরা
বিবর্তন করার
সুযোগ পায়।
সেই বিবর্তনের
ফল ভালো
হয় না।
জটিল সব
অসুখের জন্ম
হয়। মহামারি
দেখা দেয়।
খোঁজ নিলে
দেখা যায়,
ভয়ংকর সব
মহামারি বা
নতুন রোগের
সূচনা ঘটে
একজনের অন্যায়ের
কারণে। যেমন,
এইডস এর
সূচনা ঘটেছিল
আফ্রিকার একজন
মানুষের কারণে,
যে বানরের
সাথে অন্যায়
করেছিল। তারপর
সে নিজে
সেই রোগ
বহন করে
এবং অন্য
মানুষের মধ্যে
অন্যায়ভাবে ছড়িয়ে
দেয়। অবাধ
অবৈধ সম্পর্কের
কারণে আজকে
সেই রোগ
আফ্রিকা থেকে
সারা বিশ্বে
ছড়িয়ে গেছে।[৩৯৯]
অন্ধকার ঘনিয়ে
আসা রাতের
ক্ষতি থেকে,
যখন তা
ঘুটঘুটে অন্ধকার
হয়ে যায়।
অন্ধকার মানুষকে
অপরাধে উদ্বুদ্ধ
করে। গবেষণায়
দেখা গেছে,
যখন কিছু
মানুষকে উজ্জ্বল
আলোর ঘরে
রেখে কোনো
কাজ করতে
দেওয়া হয়
এবং একই
সংখ্যক কিছু
মানুষকে নিভু
নিভু আলোর
ঘরে রেখে
ঠিক একই
কাজ করতে
দেওয়া হয়,
তখন নিভু
নিভু আলোর
ঘরে অসৎ
আচরণ এবং
অপরাধী প্রবণতা
অপেক্ষাকৃত বেশি
দেখা যায়।
এমনকি যখন
একই উজ্জ্বলতার
ঘরে কিছু
মানুষকে খালি
চশমা এবং
কিছু মানুষকে
সানগ্লাস পরে
একই কাজ
করতে দেওয়া
হয়, দেখা
যায় সানগ্লাস
পরা মানুষগুলোর
ভেতরে অসৎ
আচরণ করার
প্রবণতা বেশি
দেখা যায়।
মানুষের অবচেতনে
একটি ধারণা
বদ্ধমূল হয়ে
আছে যে,
অন্ধকারে তার
ধরা পরার
সম্ভাবনা কম।
তাই অন্ধকারে
অপরাধ করার
প্রতি মানুষের
প্রবৃত্তি বেশি
তাড়না দেয়।[৪০০][৪০১] পরিসংখ্যানে
দেখা গেছে,
প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে
রাত ৯টা
থেকে ১টা
পর্যন্ত হিংস্র
অপরাধ করার
পরিমাণ দিনের
অন্য যেকোনো
সময়ের চেয়ে
বেশি।[৪০৩]
এছাড়াও দেখা
যায়, যারা
রাত জেগে
কম্পিউটারে কাজ
করে বা
পড়াশুনা করে,
তাদের ভেতরে
পর্ণ দেখা,
অশ্লীল কাজ
করার প্রবণতা
অনেক বেশি।
গবেষণায় দেখা
গেছে, রাতের
বেলা কম্পিউটারে
বা ফোনে
নিজেকে বিনোদনে
বা অশ্লীল
কাজে বুঁদ
করে রাখার
প্রতি মানুষের
যে আসক্তি
দেখা যায়,
তার সাথে
মাদকের প্রতি
আসক্তির অনেক
মিল পাওয়া
গেছে। এই
দুই আসক্তি
মানুষের মস্তিষ্কে
একইভাবে কাজ
করে।[৪০২]
অন্ধকার রাত
আর একাকীত্ব
—এক ভয়ংকর
জোড়া। মানুষের
বেশিরভাগ পাপের
কারণ এই
জোড়া। দুঃখজনকভাবে
আজকে অনেক
কিশোর এবং
তরুণ রাতের
বেলা একা
ঘরে থাকে।
আগেকার আমলে
যৌথ পরিবার
ছিল। নয়ত
ভাইবোন অনেক
বেশি ছিল।
তাই রাতের
বেলা একা
ঘরে থাকার
সম্ভাবনা কম
ছিল। কিন্তু
আজকের যুগে
পরিবার ছোট
হওয়ার কারণে
এবং একক
পরিবার বেশি
হয়ে যাওয়ার
কারণে, এবং
একইসাথে ব্যক্তিগত
কক্ষে কম্পিউটার
এবং মোবাইল
ফোন পেয়ে
যাওয়ায়, কিশোর
তরুণদের নৈতিক
অধঃপতন মহামারির
আকার ধারণ
করেছে। দিনের
বেলা যে
ছেলে বা
মেয়েকে মানুষ
ভদ্র, নম্র,
সৎ, সরল,
এমনকি নামাজী
বলেও চেনে,
রাতের বেলায়
একা হলে
সেই ছেলে
বা মেয়ের
ভেতরে থেকেই
এক বিকৃত
পশু বের
হয়ে আসে।
এই পশুটা
রাত ১টা,
২টা, এমনকি
৩টা পর্যন্ত
উল্লাস করে
তারপর ঘুমাতে
যায়। তারপর
পরদিন সারাদিন
ঢুলতে থাকে।
পড়ালেখা উচ্ছন্নে
যায়। পারিবারিক,
সামাজিক কোনো
দায়িত্ব পালনের
প্রতি আগ্রহ
থাকে না।
বাপের হোটেলে
খেয়ে অকর্মা
হয়ে একেকটা
রক্ত চোষা
পরজীবী হয়ে
বড় হয়।
তারপর একসময়
বিয়ে করে
আরেকজন পুরুষ
বা নারীর
জীবন সারাজীবনের
জন্য কষ্টের
করে দেয়।
এছাড়াও রাতের
বেলা বিষাক্ত
সরীসৃপ, পোকামাকড়,
জ্বিন, শয়তানের
প্রভাব বেশি
থাকে। তাই
রাতে মানুষের
ক্ষতির সম্ভাবনা
বেশি দেখে
আল্লাহ تعالى আমাদেরকে
অন্ধকার রাতের
ক্ষতি থেকে
রক্ষা চাইতে
বলেছেন।[৫]
যারা যাদু
করে গ্রন্থিতে
ফুঁ দেয়,
তাদের ক্ষতি
থেকে
মানুষ যখন
আল্লাহর تعالى কিতাবকে
ভুলে যায়,
তখন তারা
এই সব
দুই নম্বরী
পদ্ধতি নিয়ে
ব্যস্ত হয়ে
পরে। পীর
ধরা, বান
মারা, জাদুটোনা
করা —এই
সব চাহিদা
মানুষের মধ্যে
তখনি আসে,
যখন তার
জীবনে কুরআনের
শিক্ষা, আল্লাহর تعالى প্রতি
বিশ্বাস এবং
আল্লাহর تعالى সিদ্ধান্তের
উপর আস্থা
— এসব কিছু
হারিয়ে যায়।
তখন সে
তার দুর্বিষহ
জীবন থেকে
মুক্তি পাওয়ার
জন্য মরীয়া
হয়ে এইসব
জঘন্য পদ্ধতির
আশ্রয় নেয়।
কিন্তু এগুলো
করে তার
জীবনে সমস্যা
দূর হওয়া
তো দুরের
কথা, সে
তার জীবনকে
আরো দুর্বিষহ
করে ফেলে
এবং আল্লাহর تعالى প্রতি
কুফরী করে
চিরজীবনের জন্য
জাহান্নামী হয়ে
যায়।[১]
কুর‘আনে
আল্লাহ تعالى আমাদেরকে
সাবধান করে
দিয়েছেন যে,
কিছু মানুষ
এগুলোর অপব্যবহার
করবেই। তাই
তাদের আক্রমণ
থেকে বাঁচতে
তিনি تعالى আমাদের
সুরাহ আল-ফালাক্ব
দিয়েছেন।
হিংসুকের ক্ষতি
থেকে, যখন
সে হিংসার
কাজ করে
মানুষের ভেতরে
কম বেশি
হিংসা থাকবেই।
কিন্তু মানুষ
যখন হিংসার
বশবর্তী হয়ে
কোনো অন্যায়
করে ফেলে,
তখন সেটা
অনেক সময়
ভয়ংকর হয়ে
যায়। হিংসার
বশবর্তী হয়ে
স্বামী স্ত্রীকে
খুন করে।
ননদ ভাবির
গায়ে আগুন
লাগিয়ে দেয়।
শাশুড়ি নতুন
বউকে বিষ
খাওয়ায়। বউ
স্বামীকে রাতের
বেলা বালিশ
চেপে মেরে
ফেলে। প্রেমিক
প্রেমিকাকে এসিড
মারে। ভাই
ভাইকে খুন
করে। বোন
সুন্দরী বোনকে
কুপিয়ে মারে।
মেয়ের জনপ্রিয়তায়
বাবা তাকে
খুন করে।
সারা জীবনের
বন্ধু একটি
মাত্র হিংসার
ঘটনায় চিরজীবনের
শত্রু হয়ে
যায় —এই
ধরনের বীভৎস
সব ঘটনায়
সংবাদপত্র ভরে
আছে।
ইতিহাসের প্রথম
খুন, আদমের
সন্তান একজন
অন্যজনকে খুন
করেছিল হিংসার
কারণে। তাই
হিংসার মতো
ভয়ংকর মানবিক
আবেগ আর
কিছু নেই।
এটা মানুষকে
মুহূর্তের মধ্যে
সৃষ্টিজগতের নিকৃষ্টতম
পশুতে পরিণত
করতে পারে।
আমাদের প্রতিনিয়ত
উচিত মানুষের
হিংসা থেকে
নিজের এবং
পরিবারের জন্য
আল্লাহর تعالى কাছে
প্রতিরক্ষা চাওয়া।
উপসংহার
আমাদেরকে সবসময়
মনে রাখতে
হবে যে,
একজন বিশ্বাসীর
জন্য সবচেয়ে
শক্তিশালী অস্ত্র
হচ্ছে কু’রআন।
পৃথিবীতে কোনো
অশুভ শক্তি
নেই, যা
কু’রআনের
আয়াতের বিরুদ্ধে
কিছু করতে
পারে। কু’রআন
যে কোনো
দৃঢ় বিশ্বাসী
মুসলিমকে হতাশা,
গ্লানি, অবসাদ,
অমূলক ভয়ভীতি,
কিছু হারানোর
ভয়, কিছু
না পাওয়ার
অতৃপ্তি — এই
সব মানসিক
সমস্যা থেকে
মুক্তি দিতে
পারে। শুধু
দরকার বুঝে
কু’রআন
পড়া। শুধু
তাই না,
কু’রআনে
আল্লাহ تعالى আমাদেরকে
সব ধরনের
জাদুটোনা, অশুভ
দৃষ্টি থেকে
বেঁচে থাকার
জন্য তিনটি
প্রতিরক্ষা দিয়েছেন:
সুরা ফাতিহা,
ফালাক্ব এবং
নাস।[১৯২]
সুরা ফাতিহা
আমাদেরকে তাওহীদ
এবং আল্লাহর
উপর নির্ভরতা
শেখায়। মানুষের
প্রথম কাজ
হচ্ছে তার
ভেতরে তাওহীদকে
শক্তিশালী করা।
যতক্ষন পর্যন্ত
তাওহীদের ধারণা
মানুষের মধ্যে
শক্ত না
হচ্ছে, ততক্ষণ
পর্যন্ত সে
আল্লাহর تعالى ক্ষমতা,
প্রতিরক্ষা, পরীক্ষায়
গভীরভাবে বিশ্বাস
করতে পারবে
না। আল্লাহর تعالى প্রতি
তার বিশ্বাস
নড়বড়ে থাকবে।
জীবনে কোনো
খারাপ কিছু
ঘটলেই তার
বিশ্বাসে ফাটল
ধরবে। নানা
ধরনের সন্দেহ,
সংশয়, হতাশা
এসে ভর
করবে। তখন
তার মানসিক
দুর্বলতাকে ব্যবহার
করে তার
আরও বেশি
ক্ষতি করা
যাবে। যখন
তার ভিতরে
তাওহীদ এতটাই
শক্তভাবে বসবে
যে, কোনো
ধরনের কষ্ট,
বিপদ, ভয়ংকর
ঘটনা আল্লাহর تعالى প্রতি
তার বিশ্বাস,
আস্থা এবং
নির্ভরতাকে একটুও
টলাতে পারবে
না, তখন
সে তৈরি
হবে সুরা
ফালাক্বের জন্য।
সুরা ফালাক্ব
কোনো মন্ত্র
নয় যে,
আমরা কিছুই
না বুঝে
সেটা বিড়বিড়
করলেই আমাদের
সমস্যার সমাধান
হয়ে যাবে।
বরং এটি
একটি শক্তিশালী
দু’আ।
এই সুরায়
আমরা আল্লাহর تعالى কাছে
বিশেষ কিছু
অশুভ শক্তি
এবং খারাপ
প্রভাব থেকে
প্রতিরক্ষার আবেদন
করি। আমরা
বার বার
নিজেদেরকে মনে
করিয়ে দেই,
এগুলো সবই
আল্লাহর تعالى সৃষ্টি
এবং একমাত্র
আল্লাহই تعالى পারেন
আমাদেরকে এগুলো
থেকে মুক্তি
দিতে। আমরা
আকুলভাবে সুরা
ফালাক্বের মাধ্যমে
আল্লাহর تعالى কাছে
এই সব
অশুভ শক্তি
এবং খারাপ
প্রভাব থেকে
মুক্তি চাই।
এই সুরা
তিলাওয়াত করাটা
তখন আমাদের
জন্য আল্লাহর تعالى কাছে
দু’আ
হয়ে যায়।
আর আল্লাহ تعالى তাঁর
বান্দাদের দু’আ
কখনো ফেলে
দেন না।
তারপর সুরা
নাস আমাদের
সবচেয়ে বড়
শত্রু শয়তান
থেকে বিশেষভাবে
মুক্তির জন্য
দু’আ।
এই সুরায়
আমরা বার
বার নিজেদেরকে
মনে করিয়ে
দেই, আল্লাহই تعالى সবচেয়ে
বড়, সবকিছুর
মালিক, সবাইকে
পরম যত্নে
পালন করেন।
তিনি তাঁর
পছন্দের বান্দাদেরকে
কখনও ফেলে
দেন না।
আর শয়তান
সবসময় চেষ্টা
করে মানুষকে
এগুলো ভুলিয়ে
দেওয়ার, তাদের
বিশ্বাস নড়বড়ে
করে দেওয়ার।
শয়তানের কাজ
হচ্ছে ওয়াসওয়াসার
মাধ্যমে মানুষকে
হতাশা, মানসিক
অবসাদ, আত্মবিশ্বাসের
অভাবে ভোগানো।
সুরা নাস
আমাদেরকে শেখায়
যে, এই
সব ফালতু
ওয়াসওয়াসায় কান
না দিয়ে,
আমাদেরকে আল্লাহর تعالى প্রতি
গভীর শ্রদ্ধা,
ভালোবাসা, এবং
নির্ভরতা আনার
চেষ্টা করতে
হবে। এতে
করে আমাদের
মন শক্ত
হবে, আত্মবিশ্বাস
বাড়বে, হতাশা,
অবসাদ দূর
হবে।
সূত্র[১] বাইয়িনাহ এর কু’রআনের তাফসীর। [২] ম্যাসেজ অফ দা কু’রআন — মুহাম্মাদ আসাদ। [৩] তাফহিমুল কু’রআন — মাওলানা মাওদুদি। [৪] মা’রিফুল কু’রআন — মুফতি শাফি উসমানী। [৫] মুহাম্মাদ মোহার আলি — A Word for Word Meaning of The Quran [৬] সৈয়দ কুতব — In the Shade of the Quran [৭] তাদাব্বুরে কু’রআন – আমিন আহসান ইসলাহি। [৮] তাফসিরে তাওযীহুল কু’রআন — মুফতি তাক্বি উসমানী। [৯] বায়ান আল কু’রআন — ড: ইসরার আহমেদ। [১০] তাফসীর উল কু’রআন — মাওলানা আব্দুল মাজিদ দারিয়াবাদি [১১] কু’রআন তাফসীর — আব্দুর রাহিম আস-সারানবি [১২] আত-তাবারি-এর তাফসীরের অনুবাদ। [১৩] তাফসির ইবন আব্বাস। [১৪] তাফসির আল কুরতুবি। [১৫] তাফসির আল জালালাইন। [১৬] লুঘাতুল কুরআন — গুলাম আহমেদ পারভেজ। [১৭] তাফসীর আহসানুল বায়ান — ইসলামিক সেন্টার, আল-মাজমাআহ, সউদি আরব [১৮] কু’রআনুল কারীম – বাংলা অনুবাদ ও সংক্ষিপ্ত তাফসীর — বাদশাহ ফাহাদ কু’রআন মুদ্রণ কমপ্লেক্স। [১৯] তাফসির আল-কাবির। [২০] তাফসির আল-কাশ্শাফ। [১৯২] রুকইয়াহ, জিন এবং অশুভ দৃষ্টির প্রভাব থেকে মুক্তির পদ্ধতি — http:/islamqa.info/en/3476, http:/islamqa.info/en/89604, http:/islamqa.info/en/9691
[৩৯৪] Sender, R., Fuchs, S., & Milo, R. (2016). Revised estimates for the number of human and bacteria cells in the body. doi:10.1101/036103 [৩৯৫] Friendly Viruses Protect Us Against Bacteria. (2013). Science | AAAS. Retrieved 4 June 2017, from http:/www.sciencemag.org/news/2013/05/friendly-viruses-protect-us-against-bacteria
No comments