রাসূল (ছাঃ) ও মুজাহিদদের সম্পদে বরকত
রাসূল (ছাঃ) ও মুজাহিদদের সম্পদে তাদের জীবনে ও মৃত্যুর পরে আল্লাহ বরকত দান করেন। এ সম্পর্কে নিম্নোক্ত হাদীছ :
আব্দুল্লাহ বিন যুবায়র (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, উষ্ট্র যুদ্ধের দিন যুবায়র (রাঃ) যুদ্ধক্ষেত্রে অবস্থান গ্রহণ করে আমাকে ডাকলেন। আমি তাঁর পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। তিনি আমাকে বললেন, হে বৎস! আজকের দিনে যালেম অথবা মাযলূম ব্যতীত কেউ নিহত হবে না। আমার মনে হয়, আমি আজ মাযলূম হিসাবে নিহত হব। আর আমি আমার ঋণ সম্পর্কে অধিক চিন্তিত। তুমি কি মনে কর যে, আমার ঋণ আদায় করার পর আমার সম্পদের কিছু অবশিষ্ট থাকবে? অতঃপর তিনি বললেন, হে পুত্র! আমার সম্পদ বিক্রয় করে আমার ঋণ পরিশোধ করে দিও। তিনি এক-তৃতীয়াংশের ওছিয়ত করেন। আর সেই এক-তৃতীয়াংশের এক-তৃতীয়াংশ ওছিয়ত করেন তাঁর (আব্দুল্লাহ বিন যুবায়রের) পুত্রদের জন্য। তিনি বললেন, এক-তৃতীয়াংশকে তিন ভাগে বিভক্ত করবে। ঋণ পরিশোধ করার পর যদি আমার সম্পদের কিছু উদ্বৃত্ত থাকে, তবে তার এক-তৃতীয়াংশ তোমার পুত্রদের জন্য।
হিশাম (রহ.) বলেন, আব্দুল্লাহ বিন যুবায়র (রাঃ)-এর কোন কোন পুত্র যুবায়র (রাঃ)-এর পুত্রদের সমবয়সী ছিলেন। যেমন- খুবায়েব ও আববাদ। আর মৃত্যুকালে তাঁর নয় পুত্র ও নয় কন্যা ছিল।
আব্দুল্লাহ (রাঃ) বলেন, তিনি আমাকে তাঁর ঋণ সম্পর্কে ওছিয়ত করছিলেন এবং বলছিলেন, হে পুত্র! যদি এসবের কোন বিষয়ে তুমি অক্ষম হও, তবে এ ব্যাপারে আমার মাওলার সাহায্য চাইবে।
তিনি বলেন, আল্লাহর কসম! আমি বুঝে উঠতে পারিনি যে, তিনি মাওলা দ্বারা কাকে উদ্দেশ্য করেছেন। অবশেষে আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে পিতা! আপনার মাওলা কে? তিনি উত্তর দিলেন, আল্লাহ। আব্দুল্লাহ (রাঃ) বলেন, আল্লাহর কসম! আমি যখনই তাঁর ঋণ আদায়ে কোন সমস্যার সম্মুখীন হয়েছি, তখনই বলেছি, হে যুবায়রের মাওলা! তাঁর পক্ষ হ’তে তাঁর ঋণ আদায় করে দিন। আর তাঁর করয শোধ হয়ে যেত। অতঃপর যুবায়র (রাঃ) শহীদ হ’লেন। তিনি নগদ কোন দীনার রেখে যাননি আর না কোন দিরহাম।
তিনি কিছু জমি রেখে যান। যার মধ্যে এটি হ’ল গাবা। আরো রেখে যান মদীনায় এগারোটি বাড়ী, বছরায় দু’টি, কূফায় একটি ও মিসরে একটি। আব্দুল্লাহ বিন যুবায়র (রাঃ) বলেন, যুবায়র (রাঃ)-এর ঋণ থাকার কারণ এই ছিল যে, তাঁর নিকট কেউ যখন কোন মাল আমানত রাখতে আসত তখন যুবায়র (রাঃ) বলতেন, না, এভাবে নয়; তুমি তা আমার নিকট ঋণ হিসাবে রেখে যাও। কেননা আমি ভয় করছি যে, তোমার মাল নষ্ট হয়ে যেতে পারে। যুবায়র (রাঃ) কখনও কোন প্রশাসনিক ক্ষমতা বা কর আদায়কারী অথবা অন্য কোন কাজের দায়িত্ব গ্রহণ করেননি। অবশ্য তিনি আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)-এর সঙ্গী হয়ে অথবা আবুবকর, ওমর ও ওছমান (রাঃ)-এর সঙ্গী হয়ে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন। আব্দুল্লাহ বিন যুবায়র (রাঃ) বলেন, অতঃপর আমি তাঁর ঋণের পরিমাণ হিসাব করলাম এবং তাঁর ঋণের পরিমাণ বাইশ লাখ পেলাম। রাবী বলেন, ছাহাবী হাকীম বিন হিযাম (রাঃ) আব্দুল্লাহ বিন যুবায়র (রাঃ)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বলেন, হে ভাতিজা! বল তো, আমার ভাইয়ের কত ঋণ আছে? তিনি তা প্রকাশ না করে বললেন, এক লাখ। তখন হাকীম বিন হিযাম (রাঃ) বললেন, আল্লাহর কসম! এ সম্পদ দ্বারা এ পরিমাণ ঋণ শোধ হ’তে পারে, আমি এরূপ মনে করি না। তখন আব্দুল্লাহ বিন যুবায়র (রাঃ) তাঁকে বললেন, যদি ঋণের পরিমাণ বাইশ লাখ হয়, তবে কী ধারণা করেন? হাকীম বিন হিযাম (রাঃ) বললেন, আমি মনে করি না যে, তোমরা এর সামর্থ্য রাখ। যদি তোমরা এ বিষয়ে অক্ষম হও, তবে আমার সহযোগিতা গ্রহণ করবে।
আব্দুল্লাহ বিন যুবায়র (রাঃ) বলেন, যুবায়র (রাঃ) গাবাস্থিত ভূমিটি এক লাখ সত্তর হাযারে কিনেছিলেন। আব্দুল্লাহ বিন যুবায়র (রাঃ) তা ষোল লাখের বিনিময়ে বিক্রয় করেন। আর দাঁড়িয়ে ঘোষণা করেন, যুবায়র (রাঃ)-এর নিকট কারা পাওনাদার রয়েছে, তারা আমার সঙ্গে গাবায় এসে মিলিত হবে। তখন আব্দুল্লাহ বিন জা‘ফর (রাঃ) তাঁর নিকট এলেন। যুবায়র (রাঃ)-এর নিকট তার চার লাখ পাওনা ছিল। তিনি আব্দুল্লাহ বিন যুবায়র (রাঃ)-কে বললেন, তোমরা চাইলে আমি তা তোমাদের জন্য ছেড়ে দিব। আব্দুল্লাহ বিন যুবায়র (রাঃ) বললেন, না। আব্দুল্লাহ বিন জা‘ফর (রাঃ) বললেন, যদি তোমরা তা পরে দিতে চাও, তবে তা পরে পরিশোধের অন্তর্ভুক্ত করতে পার। আব্দুল্লাহ বিন যুবায়র (রাঃ) বললেন, না। তখন আব্দুল্লাহ বিন জা‘ফর (রাঃ) বললেন, তবে আমাকে এক টুকরা জমি দাও। আব্দুল্লাহ বিন যুবায়র (রাঃ) বললেন, এখান হ’তে ওখান পর্যন্ত জমি আপনার।
রাবী বলেন, অতঃপর আব্দুল্লাহ বিন যুবায়র (রাঃ) গাবার জমি হ’তে বিক্রয় করে সম্পূর্ণ ঋণ পরিশোধ করেন। তখনও তাঁর নিকট গাবার ভূমির সাড়ে চার অংশ অবশিষ্ট থেকে যায়।
অতঃপর তিনি মু‘আবিয়াহ (রাঃ)-এর নিকট এলেন। সে সময় তাঁর নিকট আমর বিন ওছমান, মুনযির বিন যুবায়র ও আব্দুল্লাহ বিন যাম‘আ (রাঃ) উপস্থিত ছিলেন। মু‘আবিয়া (রাঃ) তাঁকে বললেন, গাবার মূল্য কত নির্ধারিত হয়েছে? তিনি বললেন, প্রত্যেক অংশ এক লাখ হারে। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, কত বাকী আছে? আব্দুল্লাহ (রাঃ) বললেন, সাড়ে চার অংশ। তখন মুনযির বিন যুবায়র (রাঃ) বললেন, আমি একাংশ এক লাখে নিলাম। আমর বিন ওছমান (রাঃ) বলেন, আমি একাংশ এক লাখে নিলাম। আর আব্দুল্লাহ বিন যাম‘আহ (রাঃ) বললেন, আমি একাংশ এক লাখে নিলাম। তখন মু‘আবিয়াহ (রাঃ) বললেন, আর কী পরিমাণ বাকী আছে? আব্দুল্লাহ বিন যুবায়র (রাঃ) বললেন, দেড় অংশ অবশিষ্ট রয়েছে। মু‘আবিয়া (রাঃ) বললেন, আমি তা দেড় লাখে নিলাম।
রাবী বলেন, আব্দুল্লাহ বিন জা‘ফর (রাঃ) তাঁর অংশ মু‘আবিয়াহ (রাঃ)-এর নিকট ছয় লাখে বিক্রয় করেন। অতঃপর যখন ইবনু যুবায়র (রাঃ) তাঁর পিতার ঋণ পরিশোধ করে দিলেন, তখন যুবায়র (রাঃ)-এর পুত্ররা বললেন, আমাদের মীরাছ ভাগ করে দিন। তখন আব্দুল্লাহ বিন যুবায়র (রাঃ) বললেন, না, আল্লাহর কসম! আমি তোমাদের মাঝে ভাগ করব না, যতক্ষণ আমি চারটি হাজ্জ মৌসুমে এ ঘোষণা প্রচার না করব যে, যদি কেউ যুবায়র (রাঃ)-এর নিকট পাওনা থাকে, সে যেন আমাদের নিকট আসে, আমরা তা পরিশোধ করব। রাবী বলেন, তিনি প্রতি হজ্জের মৌসুমে ঘোষণা করেন। অতঃপর যখন চার বছর অতিবাহিত হ’ল, তখন তিনি তা তাদের মধ্যে ভাগ করে দিলেন। রাবী বলেন, যুবায়র (রাঃ)-এর চার স্ত্রী ছিলেন। এক-তৃতীয়াংশ পৃথক করে রাখা হ’ল। প্রত্যেক স্ত্রী বার লাখ করে পেলেন। আর যুবায়র (রাঃ)-এর মোট সম্পত্তি পাঁচ কোটি দু’লাখ ছিল (বুখারী হা/৩১২৯; আ. প্র. হা/২৮৯৫; ই. ফা. হা/২৯০৬)।
শিক্ষা : আল্লাহর উপরে যথাযথভাবে ভরসা করলে আল্লাহ এভাবে মানুষকে সাহায্য করেন এবং সম্পদে বরকত দান করেন। আমাদের সবাইকে আল্লাহর উপরে তাওয়াক্কুল করতে হবে। আল্লাহ আমাদের তাওফীক্ব দান করুন-আমীন!
মুসাম্মাৎ শারমীন আখতার
পিঞ্জুরী, কোটালীপাড়া, গোপালগঞ্জ।
No comments