মহিমান্বিত রজনী শবে কদর অনুসন্ধান
মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা মানুষের মুক্তির জন্য বিশেষ কিছু সুবিধা প্রদান করেছেন। এগুলোর মধ্যে শ্রেষ্ঠতম একটি হলো শবে কদর বা লাইলাতুল কদর। এই রাতেই কোরআন নাজিল হয়েছে। তবে এই অনন্য মাহাত্ম্যপূর্ণ রাতটি বিশেষ হিকমাতে আল্লাহ তাআলা গোপন রেখেছেন রমজানের শেষ দশকে, যাতে বান্দা সাগ্রহে সন্ধান করে এর মহিমা অর্জন করে।
হজরত উবাদা ইবনে সামিত (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) শবে কদরের সংবাদ দেওয়ার জন্য বের হলেন, দেখলেন দুজন মুসলমান ঝগড়া–বিবাদে লিপ্ত। তারপর তিনি বললেন: শবে কদর সম্বন্ধে খবর দেওয়ার জন্য আমি বের হয়েছিলাম; তোমাদের অমুক অমুক বিবাদে লিপ্ত হলো, আর তা আমা থেকে তুলে নেওয়া হলো। হয়তো এটাই তোমাদের জন্য মঙ্গলজনক হবে। এখন তোমরা তা রমাদানের শেষ দশকে বিজোড় রাতগুলোতে তালাশ করো। (বুখারি)।
কোরআন অবতরণ এবং শবে কদরের ফজিলত সম্পর্কে আল্লাহ কোরআন কারিমে ‘সুরা কদর’ নামে একটি সুরা নাজিল করেছেন। তাতে তিনি বলেছেন: ‘নিশ্চয়ই আমি কোরআন নাজিল করেছি কদর (মর্যাদাপূর্ণ) রজনীতে। আপনি কি জানেন মহিমাময় কদর রজনী কী? মহিমান্বিত কদর রজনী হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। সে রাতে ফেরেশতাগণ হজরত জিবরাঈল (আ.) সমভিব্যাহারে অবতরণ করেন; তাঁদের প্রভু মহান আল্লাহর নির্দেশ ও অনুমতিক্রমে, সকল বিষয়ে শান্তির বার্তা নিয়ে। এই শান্তির ধারা চলতে থাকে উষার উদয় পর্যন্ত।’ (সুরা-৯৭ কদর, আয়াত: ১-৫)। রমাদান মাস যাতে কোরআন নাজিল করা হয়েছে মানবজাতির পথপ্রদর্শক রূপে এবং তা সত্য–মিথ্যা পার্থক্যকারী ও হিদায়াতের প্রমাণ। (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৮৫)।
কোরআনের ভাষায় এ রাতের নাম ‘লাইলাতুল কদর’ মর্যাদাপূর্ণ মহিমান্বিত রাত; ফারসিতে ও উর্দুতে ‘শবে কদর’। কোরআনেরই সংস্পর্শে এ রাত ‘লাইলাতুল কদর’ বা ‘শবে কদর’ রজনীর অসাধারণ সম্মানে ভূষিত হয়েছে। কোরআনের সঙ্গে যাঁর যতটুকু সম্পর্ক ও সান্নিধ্য থাকবে, তিনি ততটুকু সম্মানিত ও মর্যাদার অধিকারী হবেন। রাসুলে আকরাম (সা.) বলেন, ‘কোরআনওয়ালাই আল্লাহওয়ালা এবং তাঁর খাস ব্যক্তি ও পরিবারভুক্ত।’ (বুখারি)। হাদিস শরিফে আরও এসেছে, ‘যার অন্তরে কোরআনের সামান্যতম অংশও নেই, সে যেন এক বিরান বাড়ি।’ (মুসলিম)।
শবে কদরে সূর্যাস্তের পরপরই আল্লাহ তাআলা আরশে আজিম থেকে প্রথম আসমানে নেমে আসেন এবং বান্দাদের উদ্দেশে ডেকে ডেকে বলতে থাকেন, কে আছ পাপী ক্ষমা চাও, আমি ক্ষমা করে দেব, কে আছ দুঃখী আমি দুঃখ মোচন করে দেব, কে আছ রোগী আমি সুস্থ করে দেব, কে আছ দায়গ্রস্ত আমি দায়মুক্ত করে দেব, কার রিজিকের প্রয়োজন, আমি রিজিক বাড়িয়ে দেব। এভাবে চলতে থাকে সকাল পর্যন্ত। এ রাতে পরবর্তী এক বছরের জন্য মানুষের হায়াত, মউত, রিজিক-দৌলত বরাদ্দ হয় এবং ভাগ্য চূড়ান্ত হয়। শবে কদরে নির্ধারিত ফরজ ইবাদতগুলো সযত্নে পালনপূর্বক সামর্থ্যমতো সর্বাধিক নফল ইবাদতের মাধ্যমে রাত্রি জাগ্রত করা সুন্নাত। প্রিয় রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে সওয়াবের উদ্দেশ্যে আত্মমূল্যায়নসহ কদরের রাত জেগে ইবাদত করবে, তার অতীতের সকল গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।’ (বুখারি শরিফ, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা: ৩০, হাদিস: ৩৪; ই.ফা.)।
মা আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) রাসুলুল্লাহ (সা.)–কে জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! (সা.), আমি যদি লাইলাতুল কদর সম্পর্কে জানতে পারি, তাহলে ওই রাতে আমি আল্লাহর কাছে কী দোয়া করব? রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, তুমি বলবে, ‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন, তুহিব্বুল আফওয়া; ফাফু আন্নি।’ অর্থাৎ ‘হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমাশীল, ক্ষমা করা পছন্দ করেন; সুতরাং আমাকে ক্ষমা করে দিন।’ (ইবনে মাজা, আস সিলসিলাতুস সহিহাহ লিল আলবানি)।
মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী: বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতির যুগ্ম মহাসচিব ও আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজমের সহকারী অধ্যাপক
smusmangonee@gmail.com
No comments