জা’ফর ইবন আবী তালিব (রাঃ) এর জীবনী

আবু আবদিল্লাহ জা’ফর নাম, পিতা আবু তালিব এবং মাতা ফাতিমা। কুরাইশ গোত্রের হাশেমী শাখার সন্তান। রাসূলুল্লাহর সা. চাচাত ভাই এবং হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহুর সহোদর। বয়সে আলী রা. থেকে দশ বছর বড়।

বনী আবদে মান্নাফের পাঁচ ব্যক্তির চেহারা রাসূলুল্লাহর সা. চেহারার সাথে এত বেশী মিল ছিল যে প্রায়শঃ ক্ষীণ দৃষ্টির লোকেরা তাদের মধ্যে পার্থক্য করতে গিয়ে তালগোল পাকিয়ে ফেলতো। সে পাঁচ ব্যক্তি হলেনঃ ১. আবু সুফিয়ান ইবনুল হারিস ইবন আবদিল মুত্তালিব। তিনি একাধারে রাসূলুল্লাহর সা. চাচাতো ভাই এবং দুধ ভাইও। ২. কুসাম ইবনুল আব্বাস ইবন মুত্তালিব। তিনিও রাসূলুল্লাহর সা. চাচাতো ভাই। ৩. আস-সায়িব ইবন ’উবায়িদ ইবন আবদে ইয়াযিদ ইবন হাশিম। তিনি ছিলেন ইমাম শাফেয়ীর রহ. পিতামহ। ৪. হাসান ইবন আলী- রাসূলুল্লাহর সা. দৌহিত্র। রাসূলুল্লাহর সা. চেহারার সাথে তাঁর চেহারার সাদৃশ্য ছিল সর্বাধিক। ৫ম ব্যক্তি হলেন জা’ফর ইবন আবী তালিব।

কুরাইশদের মধ্যে উচ্চ মর্যাদা ও সম্মানের অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও অধিক সন্তান-সন্ততি ও পোষ্যের কারণে আবু তালিবের আর্থিক অবস্থা ছিল দারুণ অসচ্ছল। মরার ওপর খাড়ার ঘা’র মত সেই অনাবৃষ্টির বছরটি তাঁর অসচ্ছল অবস্থাকে আরও নিদারুণ করে তোলে। সেই মারাত্মক খরার বছরে কুরাইশদের সব ফসল পুড়ে যায়, গবাদি পশুও ধ্বংস হয়ে যায়। মানুষের মধ্যে একটা হাহাকার পড়ে যায়। এ সময় বনী হাশিমের মধ্যে ‍মুহাম্মদ বিন আবদিল্লাহ এবং তাঁর চাচা আব্বাস অপেক্ষা অধিকতর সচ্ছল ব্যক্তি আর কেউ ছিলেন না।

একদিন মুহাম্মাদ সা. চাচা আব্বাসকে বললেনঃ ‘চাচা, আপনার ভাই আবু তালিবের তো অনেক সন্তানাদি। মানুষ এ সময় দারুণ দুর্ভিক্ষ ও অন্নকষ্টের মধ্যে আছে। চলুন না আমরা তাঁর কাছে যাই এবং তাঁর কিছু সন্তানের বোঝা আমাদের কাঁধে তুলে নেই। তাঁর একটি ছেলেকে আমি নেব এবং অপর একটিকে আপনি নেবেন।’

আব্বাস মন্তব্য করলেনঃ তুমি সত্যিই একটি কল্যাণের দিকে আহ্‌বান জানিয়েছ এবং একটি ভালো কাজের প্রতি উৎসাহিত করেছ।’

অতঃপর তাঁরা দু’জন আবু তালিবের নিকট গেলেন। বললেন, ‘আমরা এসেছি আপনার পরিবারের কিছু বোঝা লাঘব করতে, যাতে মানুষ যে দুর্ভিক্ষে নিপতিত হয়েছে তা থেকে আপনি কিছুটা মুক্তি পান।’

আবু তালিব বললেন, ‘আমার জন্য আকীলকে (আকীল ইবন আবী তালিব) রেখে তোমরা যা খুশী তাই করতে পার।’ অতঃপর মুহাম্মাদ সা. নিলেন আলীকে এবং আব্বাস জা’ফরকে।

আলী প্রতিপালিত হতে লাগলেন মুহাম্মাদের সা. তত্ত্বাবধানে। অতঃপর আল্লাহ তা’আলা মুহাম্মাদকে সা. নবুওয়াত দান করেন এবং যুবকদের মধ্যে আলীই তাঁর ওপর প্রথম ঈমান আনার সৌভাগ্য অর্জন করেন। অন্যদিকে জা’ফর তাঁর চাচা আব্বাসের নিকট প্রতিপালিত হয়ে যৌবনে পদার্পণ করেন এবং ইসলাম গ্রহণ করে স্বনির্ভর হন।

জা’ফর ইবন আবী তালিব ও তাঁর সহধর্মিনী আসমা বিনতু ’উমাইস ইসলামী নূরের কাফিলার যাত্রাপথেই তাতে যোগদান করেন। তাঁরা দু’জনই হযরত সিদ্দীকে আকবরের হাতে রাসূলুল্লাহর সা. ‘দারুল আরকামে’ প্রবেশের পূর্বেই ইসলাম গ্রহণ করেন। (দারুল আরকাম মক্কার একটি গৃহ দারুল ইসলাম নামেও প্রসিদ্ধ গৃহটি আরকাম ইবন আবদে মান্নাফ আল মাখযুমীর মক্কায় রাসূল সা. এ বাড়ী থেকে মানুষকে ইসলামের দাওয়াত দিতেন) একদিন আবু তালিব দেখতে পেলেন, রাসূলুল্লাহর সা. পাশে দাঁড়িয়ে আলী নামায আদায় করছেন। এ দৃশ্য আবু তালিবের খুবই ভালো লাগলো। পাশেই দাঁড়ানো জা’ফরের দিকে তাকিয়ে তিনি বললেনঃ জা’ফর, তুমিও তোমার চাচাতো ভাই মুহাম্মাদের সা. একপাশে দাঁড়িয়ে যাও। জা’ফর রাসূলুল্লাহর সা. বাম দিকে দাঁড়িয়ে সেদিন নামায আদায় করেন। এ ঘটনা জা’ফরের মনে দারুণ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। এর অল্পকিছু দিনের মধ্যেই তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। তাঁর পূর্বে মাত্র ৩১/৩২ জন ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন।

প্রথম যুগের মুসলমানরা যেসব দৈহিক ও মানসিক কষ্ট ভোগ করেছিল তার সবই এ হাশেমী যুবক ও তাঁর যুবতী স্ত্রী ভোগ করেছিলেন। কিন্তু কখনও তাঁরা ধৈর্যহারা হননি। তাঁরা জানতেন, জান্নাতের পথ বন্ধুর ও কন্টাকাকীর্ণ। তবে যে বিষটি তাঁদের অন্যান্য দ্বীনী ভাইদের মত তাঁদেরকেও পীড়া দিত এবং ভাবিয়ে তুলতো তা হল, ইসলামী অনুশাসনগুলি পালনে এবং এক আল্লাহর ইবাদাতে কুরাইশদের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি। প্রতিটি ক্ষেত্রেই কুরাইশরা তাঁদের জন্য ওঁৎ পেতে থেকে এক শ্বাসরুদ্ধকর পরিবেশ গড়ে তুলতো।

এমনি এক মুহূর্তে জা’ফর ইবন আবী তালিব, তাঁর স্ত্রী এবং আরও কিছু সাহাব রাসূলুল্লাহর সা. নিকট হাবশায় হিজরাতের অনুমতি চাইলেন। অত্যন্ত বেদনা ভারাক্রান্ত হৃদয়ে তিনি তাদের অনুমতি দিলেন। ব্যাপারটি তাঁর কাছে এত কষ্টদায়ক ছিল এ জন্য যে, এসব সৎ ও পবিত্র-আত্মা লোক তাদের প্রিয় জন্মভূমি-শৈশব কৈশোর ও যৌবনের চারণভূমি ছেড়ে যেতে বাধ্য হচ্ছে শুধু এ কারণে যে, তারা বলে আমাদের প্রতিপালক আল্লাহ। তাছাড়া অন্য কোন অপরাধে তারা অপরাধী নয়। তারা দেশত্যাগ করছে, তাদের ওপর যুল্‌ম, উৎপীড়ন চলছে আর তিনি নিতান্ত অসহায়ভাবে তা তাকিয়ে দেখছেন।

মুহাজিরদের প্রথম দলটি জা’ফর ইবন আবী তালিবের নেতৃত্বে হাবশায় উপনীত হলেন। সেখানে তাঁরা সৎ ন্যায়নিষ্ঠ নাজ্জাশীল দরবারে আশ্রয় লাভ করলেন। ইসলাম গ্রহণের পর এই প্রথমবারের মত তাঁরা একটু নিরাপত্তার স্বাদ এবং নিঃশঙ্কচিত্তে স্বাধীনভাবে এক আল্লাহর ইবাদতের মাধুর্য অনুভব করলেন।

মুসলমানদের এ দলটির হাবশায় হিজরাত এবং সেখানে বাদশার দরবারে আশ্রয় ও নিরাপত্তা লাভের ব্যাপারে কুরাইশরা অবহিত ছিল। তারা তাদেরকে হত্যা অথবা ফিরিয়ে আনার জন্য ষড়যন্ত্র আরম্ভ করল। এই ঘটনার সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত হযরত উম্মু সালামা রা. বলেনঃ ‘আমরা যখন হাবশায় পৌঁছলাম, সেখানে সৎ প্রতিবেশী এবং আমাদের দ্বীনের ব্যাপারে নিরাপত্তা লাভ করলাম। আমাদের প্রতিপালক আল্লাহ তা’আলার ইবাদাতের ব্যাপারে আমরা কোন প্রকার যুল্‌ম-অত্যাচারের সম্মুখীন হলাম না অথবা আমাদের অপছন্দনীয় কোন কথাও আমরা শুনলাম না। এ কথা কুরাইশরা জানতে পেরে ষড়যন্ত্র শুরু করল। তারা তাদের মধ্য থেকে শক্তিমান ও তাগড়া জোয়ান দু’ব্যক্তিকে নির্বাচন করে নাজ্জাশীর কাছে পাঠাল। এ দু’ব্যক্তি হল, আমর ইবনুল ’আস ও আবদুল্লাহ ইবন আবী রাবীয়া। তারা তাদের দু’জনের সংগে নাজ্জাশী ও তার দরবারের চাটুকার পাদ্রীদের জন্য প্রচুর মূল্যবান উপঢৌকন পাঠাল। তাদেরকে বলে দেওয়া হয়েছিল, হাবশার রাজার সাথে আমাদের বিষয়টি আলোচনার পূর্বেই প্রত্যেক পাদ্রীর জন্য নির্ধারিত হাদিয়া তাদের পৌঁছে দেবে।

তারা দু’জন হাবশা পৌঁছে নাজ্জাশীর পাদ্রীদের সাথে মিলিত হল এবং তাদের প্রত্যেককে তার জন্য নির্ধারিত উপঢৌকন পৌছে দিয়ে বলল, ‘‘বাদশাহর সাম্রাজ্যে আমাদের কিছু বিভ্রান্ত সন্তান আশ্রয় নিয়েছে। তারা তাদের পিতৃপুরুষের ধর্ম ত্যাগ করে নিজ সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভেদ ও অনৈক্য সৃষ্টি করেছে। আমরা যখন তাদের সম্পর্কে বাদশাহর সংগে কথা বলবো, আপনারা তাদের দ্বীন সম্পর্কে কোন রকম জিজ্ঞাসাবাদ ছাড়াই তাদেরকে আমাদের নিকট ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে বাদশাহকে একটু অনুরোধ করবেন। কারণ, তাদের জাতীয় নেতৃবৃন্দইতো তাদের বিশ্বাস ও আচরণ সম্পর্কে অধিক জ্ঞাত। তারাই তাদের সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেবেন।’’

দরবারী পাদ্রীরা তাদের কথায় সায় দিল।

উম্মু সালামা বলেন, ‘বাদশাহ আমাদের কাউকে ডেকে তার কথা শুনুক, এর চেয়ে বিরক্তিকর আর কিছু ’আমর ইবনুল আস ও তার সংগীর নিকট ছিলনা।’

তারা দু’জন নাজ্জাশীর দরবারে উপস্থিত হয়ে তাঁকে উপঢৌকন পেশ করল। উপঢৌকনগুলি নাজ্জাশীল খুবই পছন্দ হল। তিনি সেগুলির ভূয়সী প্রশংসা করলেন। অতঃপর তারা বাদশাহকে বললঃ ‘‘মহামান্য বাদশাহ, আমাদের কিছু দুষ্টু প্রকৃতির ছেলে আপনার সাম্রাজ্যে প্রবেশ করেছে। তারা এমন একটি ধর্ম আবিষ্কার করেছে যা আমরাও জানিনে এবং আপনিও জানেন না। তারা আমাদের দ্বীন পরিত্যাগ করেছে। কিন্তু আপনাদের দ্বীনও গ্রহণ করেনি। তাদের পিতা, পিতৃব্য ও গোত্রের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা তাদেরকে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আমাদেরকে আপনার নিকট পাঠিয়েছেন। তাদের সৃষ্ট অশান্তি ও বিপর্যয় সম্পর্কে তাদের গোত্রীয় নেতারাই অধিক জ্ঞাত।’’

নাজ্জাশী তাঁর দরবারে উপস্থিত পাদ্রীদের দিকে তাকালেন। তারা বললঃ ‘মহামান্য বাদশাহ, তারা সত্য কথাই বলেছে। কারণ তাদের গোত্রীয় নেতারাই তাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে অধিক জ্ঞাত। গোত্রীয় নেতাদের নিকট আপনি তাদের ফেরত পাঠিয়ে দিন, যাতে গোত্রীয় নেতারা তাদের সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।’

পাদ্রীদের কথায় বাদশাহ দারুণভাবে ক্ষুব্ধ হলেন। বললেনঃ ‘‘আল্লাহর কসম! তা হতে পারেনা। তাদের প্রতি যে অভিযোগ আরোপ করা হচ্ছে সে সম্পর্কে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ না করা পর্যন্ত একজনকেও আমি সমর্পণ করব না। সত্যিই তারা যদি এমনই হয় যেমন এ দু’ব্যক্তি বলছে, তাহলে তাদেরকে সমর্পণ করব। তা না হলে তারা যতদিন আমার আশ্রয়ে থাকতে চায়, আমি তাদেরকে নিরাপত্তার সাথে থাকতে দেব।’’

উম্মু সালাম বলেনঃ ‘‘অতঃপর নাজ্জাশী আমাদেরকে ডেকে পাঠালেন তাঁর সাথে সাক্ষাতের জন্য। যাওয়ার আগে আমরা সকলে একস্থানে সমবেত হলাম। আমরা অনুমান করলাম, নিশ্চয় বাদশাহ আমাদের নিকট আমাদের দ্বীন সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন। তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম, যা আমরা বিশ্বাস করি তা প্রকাশ করে দেব। আর সবার পক্ষ থেকে জা’ফর ইবন আবী তালিব কথা বলবেন। অন্য কেউ কোন কথা বলবে না।’’

উম্মু সালামা বলেনঃ অতঃপর নাজ্জাশীর নিকট গিয়ে দেখতে পেলাম, তিনি তাঁর সকল পাদ্রীদের ডেকেছেন। তারা তাদের বিশেষ অভিজাত পোশাক পরে সাথে ধর্মীয় গ্রন্থসমূহ মেলে ধরে বাদশাহর ডান ও বাম দিকে বসে আছে। আমর ইবনুল আস ও আবদুল্লাহ ইবন আবী রাবীয়াকেও আমরা বাদশাহর নিকট দেখতে পেলাম। মজলিসে আমরা স্থির হয়ে বসার পর, নাজ্জাশী আমাদের দিকে দৃষ্টি ফিরিয়ে জিজ্ঞেস করলেনঃ ‘সে কোন্‌ ধর্মমত- যা তোমরা নতুন আবিষ্কার করেছ এবং যার কারণে তোমরা তোমাদের খান্দানী ধর্মকেও পরিত্যাগ করেছ, অথচ আমার অথবা অন্যকোন ধর্মও গ্রহণ করনি?’

জা’ফর ইবন আবী তালিব সবার পক্ষ থেকে বললেনঃ ‘‘মহামান্য বাদশাহ! আমরা ছিলাম একটি মূর্খ জাতি। মূর্তির উপাসনা করতাম, মৃত জন্তু ভক্ষণ করতাম, অশ্লীল কার্যকলাপে লিপ্ত ছিলাম, আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করতাম, এবং প্রতিবেশীর সাথে অসদ্ব্যবহার করতাম। আমাদের সবলরা দুর্বলদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করত। আমরা ছিলাম এমনি এক অবস্থায়। অবশেষে আল্লাহ তা’আলা আমাদের নিকট একজন রাসূল পাঠালেন। আমরা তাঁর বংশ, সততা, আমানতদারী, পবিত্রতা ইত্যাদি সম্পর্কে অবহিত। তিনি আমাদেরকে আল্লাহর দিকে আহ্‌বান জানালেন, যেন আমরা তার একত্বে বিশ্বাস করি, তাঁর ইবাদত করি এবং আমরা ও আমাদের পূর্ব পুরুষরা যেসব গাছ, পাথর ও মূর্তির পূজা করতাম তা পরিত্যাগ করি।

তিনি আমাদের নির্দেশ দিলেন সত্য বলার, গচ্ছিত সম্পদ যথাযথ প্রত্যর্পণের, আত্মীয়তার বন্ধন অক্ষুণ্ন রাখার, প্রতিবেশীর সাথে সদ্ব্যবহার করার, হারাম কাজ ও অবৈধ রক্তপাত থেকে বিরত থাকার। তাছাড়া অশ্লীল কাজ, মিথ্যা বলা, ইয়াতিমের সম্পদ ভক্ষণ ও নিষ্কলূষ চরিত্রের নারীর প্রতি অপবাদ দেয়া থেকে নিষেধ করলেন।

তিনি আমাদের আরও আদেশ করেছেন এক আল্লাহর ইবাদত করার, তাঁর সাথে অন্য কিছু শরীক না করার, নামায কায়েম করার, যাকাত দানের এবং রমযান মাসে রোযা রাখার।

আমরা তাঁকে সত্যবাদী জেনে তাঁর প্রতি ঈমান এনেছি এবং আল্লাহর কাছ থেকে যা কিছু নিয়ে এসেছেন তার অনুসরণ করেছি। সুতরাং যা তিনি আমাদের জন্য হালাল এবং হারাম ঘোষণা করেছেন, আমরা তা হালাল ও হারাম বলে বিশ্বাস করেছি।

মহামান্য বাদশাহ! অতঃপর আমাদের জাতির সকলেই আমাদের ওপর বাড়াবাড়ি আরম্ভ করল। তারা আমাদের দ্বীন থেকে পুনরায় মূর্তিপূজার দিকে ফিরিয়ে নেয়ার জন্য আমাদের ওপর অত্যাচার চালাল। তারা যখন আমাদেরকে অত্যাচার উৎপীড়নে জর্জরিত করে তুলল এবং আমাদের ও আমাদের দ্বীনের মধ্যে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়াল, তখন আমরা অন্য কোথাও না গিয়ে আপনার এখানেই আসাকেই প্রাধান্য দিলাম এই আশায় যে, আপনার এখানে আমরা অত্যাচারিত হব না।’’

উম্মু সালামা বলেনঃ অতঃপর নাজ্জাশী জা’ফর ইবন আবী তালিবের দিকে একটু তাকালেন এবং জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমাদের নবী আল্লাহর নিকট থেকে যা নিয়ে এসেছেন তার কিছু অংশ কি তোমাদের সংগে আছে? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ। ‘আমাকে একটু পাঠ করে শুনাও তো।’ জা’ফর পাঠ করলেনঃ ‘‘কাফ্‌-হা-ইয়া-আইন-সাদ। এ তোমাদের প্রতিপালকের অনুগ্রহের বিবরণ তাঁর বান্দা যাকারিয়ার প্রতি। যখন সে তার প্রতিপালককে আহ্‌বান করেছিল গোপনে। সে বলেছিল, ‘আমার অস্থি দুর্বল হয়েছে, বার্ধক্যে আমার মস্তক সাদা হয়েছে; হে আমার প্রতিপালক! তোমাকে আহ্‌বান করে আমি কখনও ব্যর্থকাম হইনি।’’

এভাবে তিনি পবিত্র কুরআনের সূরা মরিয়মের প্রথম অংশ পাঠ করে শুনালেন।

আল্লাহর কালাম শুনে নাজ্জাশী এত কাঁদলেন যে অশ্রুধারায় তার শ্মশ্রু সিক্ত হয়ে গেল এবং দরবারে উপস্থিত পাদ্রীরা কেঁদে তাদের সম্মুখে উন্মুক্ত ধর্মগ্রন্থসমূহ ভিজিয়ে দিল। কিছুটা শান্ত হয়ে নাজ্জাশী বললেনঃ ‘তোমাদের নবী যা নিয়ে এসেছেন এবং তাঁর পূর্বে ঈসা আ. যা নিয়ে এসেছিলেন উভয়ের উৎস এক। অতঃপর আমর ও তার সংগীর দিকে তাকিয়ে বললেন, তোমরা চলে যাও। আল্লাহর কসম! তোমাদের হাতে আমি তাদেরকে সমর্পণ করব না।’

উম্মু সালামা বলেনঃ আমরা নাজ্জাশীর দরবার থেকে বেরিয়ে এলে আমর ইবনুল আস আমাদেরকে শুনিয়ে শুনিয়ে তার সংগীকে বলল, ‘আল্লাহর কসম! আগামীকাল আবার আমরা বাদশাহর নিকট আসব এবং তাঁর নিকটে তাদের এমন সব কার্যকলাপ তুলে ধরব যাতে তাঁর হৃদয়ে হিংসার আগুনে দাউ দাউ করে জ্বলে উঠে এবং তাদের প্রতি ঘৃণায় তাঁর অন্তর পূর্ণ হয়ে যায়। তাদেরকে সম্পূর্ণ উৎখাত করার জন্য আমরা অবশ্যই বাদশাহকে উৎসাহিত করব।’

একথা শুনে তার সংগী আবদুল্লাহ ইবন আবী রাবীয়া বললঃ ‘আমর, এমনটি করা উচিত হবে না। ধর্মীয় ব্যাপারে আমাদের বিরোধিতা করলেও তারা তো আমাদের আত্মীয়।’

আমর বললঃ ‘তুমি রাখ তো এসব কথা। আমি অবশ্যই বাদশাহকে এমন সব কথা অবহিত করব যা তাদের অন্তরকে কাঁপিয়ে তুলবে। বাদশাহকে আমি বলবঃ তারা মনে করে ঈসা ইবন মরিয়ম অন্যদের মতই একজন বান্দা।’

পরদিন সত্যি সত্যিই আমর নাজ্জাশীর দরবারে উপস্থিত হয়ে বললঃ ‘মহামান্য বাদশাহ! এসব লোক, যাদেরকে আপনি আশ্রয় দিয়ে সাহায্য করছেন, তারা ঈসা ইবন মরিয়ম সম্পর্কে একটা মারাত্মক কথা বলে থাকে। আপনি তাদের কাছে লোক পাঠিয়ে জিজ্ঞেস করে দেখুন তারা তাঁর সম্পর্কে কি বলে।’

উম্মু সালাম বলেনঃ আমরা একথা জানতে পেয়ে ভীষণ দুঃশ্চিন্তায় পড়লাম। আমরা পরস্পর পরস্পরকে জিজ্ঞেস করলামঃ ‘বাদশাহ যখন ঈসা ইবন মরিয়ম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবেন, তোমরা তখন কি বলবে? ‘সবাই ঐকমত্যে পৌছলাম; তাঁর সম্পর্কে আল্লাহ যা বলেছেন তার অতিরিক্ত আর কিছুই আমরা বলব না। আমাদের নবী তাঁর সম্পর্কে যা কিছু এনেছেন তা থেকে আমরা এক আংগুলের ডগা পরিমাণও বাড়িয়ে বলবনা। তাতে আমাদের ভাগ্যে যা থাকে তা-ই হবে। আমাদের পক্ষ থেকে এবারও জা’ফর ইবন আবী তালিব কথা বলবেন।

নাজ্জাশী আমাদের ডেকে পাঠালেন। আমরা তাঁর দরবারে উপস্থিত হয়ে দেখতে পেলাম, পাদ্রীরা পূর্বের দিনের মত একই বেশভূষায় বসে আছে। আমর ইবনুল আস তার সংগী সেখানে উপস্থিত হতেই বাদশাহ আমাদেরকে জিজ্ঞেস করলেনঃ ‘ঈসা ইবন মরিয়ম সম্পর্কে তোমরা কি বলে থাক?’

জা’ফর ইবন আবী তালিব বললেনঃ ‘আমাদের নবী তাঁর সম্পর্কে যা বলেন তার অতিরিক্ত আমরা কিছুই বলিনে।’

‘তিনি কি বলে থাকেন?’

‘তিনি বলেনঃ তিনি আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল। তিনি তার রূহ ও কালাম- যা তিনি কুমারী ও পবিত্র মরিয়মের প্রতি নিক্ষেপ করেছেন।’

জা’ফরের কথা শুনে নাজ্জাশী হাত দ্বারা মাটিতে আঘাত করতে করতে বললেনঃ ‘আল্লাহর কসম! ঈসা ইবন মরিয়ম সম্পর্কে তোমাদের নবী যা বলেছেন তা একটি লোম পরিমাণও অতিরঞ্জন নয়।’ একথা শুনে নাজ্জাশীর আশেপাশে উপবিষ্ট পেট্রিয়ার্করা তাদের নাসিকাছিদ্র দিয়ে ঘৃণাসূচক শব্দ বের করল। বাদশাহ বললেনঃ ‘তা তোমরা যতই ঘৃণা কর না কেন।’ তারপর তিনি আমাদের দিকে তাকিয়ে বললেনঃ যাও, তোমরা স্বাধীন ও নিরাপদ। কেউ তোমাদের গালি দিলে বা কোনরূপ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করলে তার বদলা নেওয়া হবে। আল্লাহর কসম! আমি সোনার পাহাড় লাভ করি, আর তার বিনিময়ে তোমাদের কারও ওপর সামান্য বিপদ আপতিত হোক- এটাও আমার পছন্দনীয় নয়। এরপর তিনি আমর ও তার সংগীর দিকে ফিরে বললেনঃ ‘এ দু’ব্যক্তির উপঢৌকন তাদেরকে ফেরত দাও। আমার সেগুলি প্রয়োজন নেই।’

উম্মু সালামা বলেনঃ এভাবে আমর ও তাঁর সংগীর ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হল এবং তারা ভগ্ন হৃদয়ে পরাজিত ও হতাশ অবস্থায় দরবার থেকে বেয়ে গেল। আর আমরা উত্তম বাসগৃহে সম্মানিত প্রতিবেশীর মত নাজ্জাশীর নিকট বসবাস করতে লাগলাম।

অতঃপর জা’ফর ইবন আবী তালিব ও তাঁর সহধর্মিনী নাজ্জাশীর আশ্রয়ে সম্পূর্ণ নিরাপদ ও নিশ্চিন্তে পূর্ণ দশটি বছর অতিবাহিত করেন। সপ্তম হিজরীতে তাঁরা দু’জন এবং আরও কিছু মুসলমান হাবশা থেকে ইয়াসরিবের (মদীনা) দিকে রওয়ানা হলেন। তাঁরাও মদীনায় পৌঁছলেন, আর এদিকে রাসূল সা. খাইবার বিজয় শেষ করে মদীনায় প্রত্যাবর্তন করলেন। রাসূল সা. জা’ফরকে দেখে এত খুশী হলেন যে, তাঁর দু’চোখের মাঝখানে চুমু দিযে বললেনঃ ‘আমি জানিনে, খাইবার বিজয় আর জা’ফরের আগমণ- দু’টির কোন্‌টির কারণে আমি বেশী খুশী।’

সাধারণভাবে সমগ্র মুসলিম সমাজ এবং বিশেষভাবে গরীব মুসলমানদের আনন্দ ও খুশী জা’ফরের আগমণে রাসূলুল্লাহর সা. থেকে বিন্দুমাত্র কম ছিল না। কারণ জা’ফর ছিলেন গরীব-মিসকীনদের প্রতি ভীষণ দয়ালু ও সহানুভূতিশীল। এ কারণে তাঁকে ডাকা হত আবূল মাসাকীন বা মিসকীনদের পিতা বলে।

জা’ফর ইবন আবী তালিবের মদীনায় আসার পর একটি বছর কেটে গেল। অষ্টম হিজরীর প্রথম দিকে সিরিয়ার রোমান বাহিনীকে আক্রমণের জন্য রাসূল সা. সেনাবাহিনী প্রস্তুত করলেন। যায়িদ বিন হারিসাকে সেনাপতি নিয়োগ করে তিনি বললেনঃ ‘যায়িদ নিহত হলে আমীর হবে জা’ফর ইবন আবী তালিব। জা’ফর নিহত বা আহত হলে আমীর হবে আবদুল্লাহ ইবন রাওয়াহা। আর সে নিহত বা আহত হলে মুসলমানরা নিজেদের মধ্য থেকে একজনকে আমীর নির্বাচন করবে।’

মুসলিম বাহিনী জর্দানের সিরিয়া সীমান্তের ‘মূতা’ নামক স্থানে পৌঁছে দেখতে পেল, এক লাখ রোমান সৈন্য তাদের মুকাবিলার জন্য প্রস্তুত এবং তাদের সাহায্যের জন্য লাখম, জুজাম, কুদাআ ইত্যাদি আরব গোত্রের আরও এক লাখ খৃষ্টান সৈন্য পেছনে প্রতীক্ষা করছে। অন্যদিকে মুসলমানদের সৈন্যসংখ্যা মাত্র তিন হাজার। যুদ্ধ শুরু হতেই যায়িদ বিন হারিসা বীরের ন্যায় শাহাদাত বরণ করেন। অতপর জা’ফর বিন আবী তালিব তাঁর ঘোড়ার পিঠ থেকে লাফিয়ে পড়েন এবং শত্রু বাহিনী যাতে সেটি ব্যবহার করতে না পারে সেজন্য নিজের তরবারী দ্বারা ঘোড়াটিকে হত্যা করে ফেলেন। তারপর পতাকাটি তুলে ধরেন রোমান বাহিনীর অভ্যন্তরভাগে বহু দূর পর্যন্ত প্রবেশ করে শত্রু নিধন কার্য চালাতে থাকেন। এমতাবস্থায় তাঁর ডান হাতটি দ্বিখণ্ডিত হয়ে যায়। তিনি বাম হাতে পতাকা উঁচু করে ধরেন। কিছুক্ষণের মধ্যে তরবারির অন্য একটি আঘাতে তাঁর বাম হাতটিও দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তবুও তিনি হাল ছাড়লেন না। বাহু দিয়ে বুকের সাথে জাপ্টে ধরে তিনি ইসলামী পতাকা সমুন্নত রাখলেন। এ অবস্থায় কিছুক্ষণ পর তরবারির তৃতীয় একটি আঘাত তাঁর দেহটি দ্বিখণ্ডিত হয়ে যায়।

অতঃপর পতাকাটি আবদুল্লাহ ইবন রাওয়াহা তুলে নিলেন। শত্রু সৈন্যের সাথে বীর বিক্রমে লড়তে লড়তে তিনিও তাঁর দুই সাথীর অনুগামী হলেন। তারপর খালিদ বিন ওয়ালিদ পতাকা হাতে নিয়ে মুসলিম বাহিনীকে উদ্ধার করেন।

এ যুদ্ধে হযরত আবদুল্লাহ ইবন ’উমারও অংশগ্রহণ করেছিলেন। তিনি বলেনঃ জাফরের লাশ তালাশ করে দেখা গেল, শুধু তাঁর সামনের দিকেই পঞ্চাশটি ক্ষতচিহ্ন। সারা দেহে তাঁর নব্বইটিরও বেশী ক্ষত ছিল। কিন্তু তার একটিও পেছন দিকে ছিল না।

এ তিন সেনাপতির শাহাদাতের খবর শুনে রাসূল সা. দারুণভাবে ব্যথিত হন। বেদনা ভারাক্রান্ত হৃদয়ে তিনি তাঁর চাচাত ভাই জা’ফরের বাড়ীতে যান। তখন তাঁর স্ত্রী আসমা স্বামীকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তিনি রুটির জন্য আটা বানিয়ে রেখেছেন, ছেলেমেয়েদের গোসল করিয়ে তেল মাখিয়েছেন এবং তাদেরকে নতুন পোশাক পরিয়েছেন।

আসমা বলেনঃ পাতলা ও পরিষ্কার একখানা কাপড় দিয়ে পবিত্র মুখমণ্ডল ঢেকে রাসূলকে সা. আমাদের বাড়ীর দিকে আসতে দেখে আমার মনে নানারকম ভীতি ও শঙ্কার উদয় হল। কিন্তু খারাপ কিছু শুনতে হয় এ ভয়ে আমি তাঁকে জা’ফর সম্পর্কে কিছু জিজ্ঞেস করতে সাহস পাচ্ছিলাম না। কুশলাদি জিজ্ঞেস করার পর তিনি বললেনঃ ‘জা’ফরের ছেলেমেয়েদের আমার কাছে নিয়ে এস।’ আমি তাদেরকে ডাকলাম। তারা খুশিতে বাগবাগ হয়ে কে আগে রাসূলের সা. নিকট পৌঁছবে এরূপ একটা প্রতিযোগিতা নিয়ে দৌড় দিল। রাসূল সা. তাদেরকে জড়িয়ে ধরে চুমু দিতে লাগলেন। তখন তাঁর দু’চোখ দিয়ে অঝোরে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছিল। আমি বললামঃ ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার মা-বাবা আপনার প্রতি কুরবান হোক। আপনি কাঁদছেন কেন?’ জা’ফর ও তার সংগী দু’জনের কোন দুঃসংবাদ পেয়েছেন কি? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ। আজই তারা শাহাদাত বরণ করেছেন। আর সেই মুহূর্তে ছোট্ট ছেলে-মেয়েদের মুখের হাসি বিলীন হয়ে গেল। যখন তারা শুনতে পেল তাদের মা কান্না ও বিলাপ করছে, তারা নিজ নিজ স্থানে পাথরের মত এমন স্থির হয়ে গেল, যেন তাদের মাথার ওপর পাখি বসে আছে। প্রতিবেশী মহিলারা এসে আসমার পাশে ভিড় করল। রাসূল সা. চোখ মুছতে মুছতে বেরিয়ে গেলেন। বাড়ীতে পৌঁছে আযওয়াজে মুতাহ্‌হারাতকে বললেনঃ ‘আজ তোমরা জা’ফরের পরিবারবর্গের প্রতি একটু নজর রেখ। তারা আজ চেতনাহীন।’

হযরত জা’ফরের শাহাদাতের পর দীর্ঘদিন ধরে রাসূল সা. শোকাভিভূত ও বিমর্ষ ছিলেন। অবশেষে হযরত জিবরীল আ. তাঁকে সুসংবাদ দান করেন যে, আল্লাহ তা’আলা জা’ফরকে তাঁর দুটি কর্তিত হাতের পরিবর্তে নতুন দু’টি রক্তরাঙা হাত দান করেছেন এবং তিনি জান্নাতে ফিরিশতাদের সাথে উড়ে বেড়াচ্ছেন। এ কারণে তাঁর উপাধি হয়, ‘যুল-জানাহাইন’ ও ‘তাইয়ার’- দু’ ডানাওয়ালা ও উড়ন্ত।

ইবন সা’দ তাঁর তাবাকাতে বর্ণনা করেনঃ যায়িদ বিন হারিসা, জা’ফর ইবন আবী তালিব ও আবদুল্লাহ ইবন রাওয়াহার শাহাদাতের খবর শুনে রাসূলুল্লাহ সা. উপস্থিত লোকদের উদ্দেশ্যে তাদের পরিচয় তুলে ধরে প্রশংসা করে এক সংক্ষিপ্ত খুতবা দেন এবং দু’আ করেনঃ ‘হে আল্লাহ, আপনি যায়িদকে ক্ষমা করুন, হে আল্লাহ, আপনি যায়িদকে ক্ষমা করুন। হে আল্লাহ, আপনি জা’ফর ও আবদুল্লাহ ইবন রাওয়াহাকে মাফ করে দিন।’

ইমাম আহমাদ আবদুল্লাহ ইবন আসলাম থেকে বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ সা. জা’ফরকে বলতেন, ‘সিরাত ও সুরাত- চরিত্র ও দৈহিক গঠনে তুমি আমার মত।’

হযরত জা’ফর ছিলেন গরীব মিসকীনদের প্রতি অত্যন্ত সদয়। আবু হুরাইরা বলেনঃ ‘‘আমাদের মিসকীন সম্প্রদায়ের জন্য জা’ফর ইবন আবী তালিব ছিলেন সর্বোত্তম ব্যক্তি। তিনি আমাদেরকে সংগে করে তাঁর গৃহে নিয়ে যেতেন, যা কিছু তাঁর কাছে থাকত তা আমাদের খাওয়াতেন। যখন তাঁর খাবার শেষ হয়ে যেত তখন তাঁর ছোট্ট শূন্য ঘি-এর মশকটি বের করে দিতেন। আমরা তা ফেঁড়ে ভেতরে যা কিছু লেগে থাকত চেটেপুটে খেতাম। রাসূলুল্লাহ সা. বলতেনঃ ‘আমার আগে যত নবী এসেছেন তাঁদের মাত্র সাতজন বন্ধু দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আমার বিশেষ বন্ধুর সংখ্যা চৌদ্দ এবং জা’ফর তার একজন’। (বুখারী, মানাকিবু জাফর)

No comments

Powered by Blogger.