কোরানের গল্প বন্দে আলী মিয়া - হাবিল ও কাবিল
হাবিল ও কাবিল
হযরত আদ ও বিবি হাওয়া শয়তাদের কুচক্রে পড়ে বেহেশতচ্যুত হলেন। তাঁরা আল্লাহতা’লার অভিশাপে পৃথিবীতে এসে বাস করতে লাগলেন। ক্রমে তাঁদের সন্তান-সন্ততি জন্মগ্রহণ করতে লাগলো। হযরত আদমের বংশধরগণের মধ্যে হাবিল ছিলেন অতিশয় ধর্মপ্রাণ। তিনি রাতদিন কেবল খোদার বন্দেগীতে মশগুল হয়ে থাকতেন। অন্য কোন দিকে তাঁর দৃষ্টি ছিলো না।
ইবলিস আদমের ওপরে হাড়ে হাড়ে চটে ছিলো। সে কেবল সুযোগ খুঁজছিলো কি করে এঁর সন্তানগণকে পথভ্রষ্ট করা যায়। অবশেষে অনেক প্রলোভন দিয়ে কাবিল নামক পুত্রকে আপনার অধীনে আনতে সমর্থ হলো। কাবিল শয়তানের ফেরেরীতে পড়ে মুহুর্তের জন্য ভুলেও একবার আল্লাহতা’লার নাম মুখে আনতো না, বরং দিনে দিনে পাপের পথে অধিক অগ্রসর হতে লাগলো।
একদিন হাবিল ও কাবিল মনস্থ করলো যে, তারা উভয়ে আল্লাহতা’লার উদ্দেশ্যে একটা পশুকে কোরবানি দেবে। নির্দিষ্ট দিনে উভয়ে দু’টি পশু জবেহ করলো। ধার্মিক ও পরহেজগার হাবিলের কোরবানি মঞ্জুর হলো, কিন্তু পাপী কাবিলের কোরবানী খোদা মঞ্জুর করলেন না।
কাবিল যখন বুঝতে পারলো যে, আল্লাহ তার কোরবানি গ্রহণ করেননি, তখন সে মনে খুব আঘাত পেলো। সে ভাবলো যে, হাবিলের কারসাজিতেই খোদাতা’লা তার প্রতি বিমুখ হয়েছেন। সে প্রতিহিংসায় উত্তেজিত হয়ে চীৎকার করে বলে উঠলোঃ তেমাকে খুন করবো হাবিল। তোর জন্যই আমার কোরবানি মঞ্জুর হলো না।
কাবিলের কথা শুনে হাবিল তো অবাক! সে কাবিলকে বললোঃ সে কি কাবিল –আমি তোমার কাছে কি অপরাধ করেছি যে, তুমি আমাকে খুন করবে? তুমি যদি আমাকে খুন করো তবে আমার ও তোমার উভয়ের পাপ তোমাকে আজীবন বহন করতে হবে। তার পরে খোদাতা’লা তেমাকে এর শাস্তির জন্য দোজখে পাঠাবেন। তোমার দুর্দশার সীমা থাকবে না। তুমি এমন পাপ কখনো করো না ভাই।
হাবিলের কতায় কাবিল আলো বেশি উত্তেজিত হয়ে উঠলো। সে লাফ দিয়ে হাবিলের বুকের ওপরে ওঠে গলা টিপে ধরলো। ধর্মপ্রাণ হাবিল দম বন্ধ হয়ে মারা গেলো।
হাবিলকে মেরে ফেলে কাবিল ভয়ানগ বিপদে পড়ে গেলো। হতভম্ভ হয়ে দাঁড়িয়ে সে চিন্তা করতে লাগলো। কি করবে, কিছুই স্থির করতে পারলো না। সে পাগলের মতো এদিক-ওদিন ছুটোছুটি করতে লাগলো। হাবিলের লাশটার কি গতি হবে তা সে ভেবে পেলো না।
এই ঘটনার পূর্বে কোন মানুষ মরে নি, খুন খারাবিও কোনো দিন হয়নি। কাজেই মৃতদেহ কিরূপে দাফন-কাফন করতে হয় তা কারুরই জানা ছিলো না।
হাবিলকে খুন করে মাথায় হাত দিয়ে কাবিল আকাশ পাতাল চিন্তা করতে লাগলো। এখন সে কি করে, কোথায় যায়, কার পরামর্শ লয়।
আল্লাহতা’লা কাবিলের বিপদ বুঝতে পেরে একটি কাককে সেই স্থানে পাঠিয়ে দিলেন। কাকটি ঠোট দিয়ে ঠুকরে মাটি খুঁড়তে লাগলো। কাকের এই ব্যাপার দেখে কাবিল যেন অকূলে কুল পেলো। এরূপবাবে মাটি খুঁড়ে হাবিলকে তো অনায়াসে মাটিতে পুতে রাখা যায়। কথাটা মনে হতেই কাবিল একখানা অস্ত্র সংগ্রহ করে এনে মাটি খুঁড়ে হাবিলকে কবর দিলো। তারপর অনুতপ্ত হয়ে ভ্রাতার শোকে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলো।
No comments