গর্তের অধিবাসিদের ঘটনা

গর্তের অধিবাসিদের ঘটনা
অতীতকালে এক কাফির বাদশাহ ছিল। তার দরবারে থাকত এক জাদুকর। জাদুকরের মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে এলে সে বাদশাহর নিকট আবেদন জানায়, আমাকে একজন বিচক্ষণ ছেলে দিন, কথানুযায়ী একটি ছেলে নির্ধারণ করা হলো। সে প্রতিদিন জাদুকরের কাছে গিয়ে জাদুবিদ্যা শিক্ষা করত। পথে এক খ্রিষ্টান পাদ্রির বাড়ি ছিল। তখনকার সময়ের বিচারে পাদ্রির ধর্মই সত্য ছিল। বালকটি তাঁর কাছেও যাওয়া-আসা শুরু করল। একদিন গোপনে সে পাদ্রির হাতে মুসলমান হয়ে যায় এবং তাঁর সাহচর্যের ফলে আল্লাহর নৈকট্য আলৌকিতার স্তরে উন্নীত হয়। একদিন বালকটি দেখল, একটি বিরাটকায় জন্তু (সিংহ বা অন্য কিছু পথ রোধ করে দাঁড়িয়ে আছে। যার ফলে মানুষ অস্থির, পেরেশান। সে একখন্ড পাথর হাতে নিয়ে দোয়া করল-‘হে আল্লাহ! পাদ্রির ধর্ম যদি সত্য হয়ে থাকে, তাহলে জন্তুটি যেন আমার পাথরের আঘাতে মারা যায়।এই বলে সে পাথর নিক্ষেপ করে। আর অমনি জন্তুটি মারা যায়। চারিদিকে হৈ চৈ পড়ে যায় যে ছেলেটি অদ্ভুত জ্ঞানের অঘিকারী। একজন অন্ধলোক তার কাছে আবেদন করে আমার চক্ষু দুটি ভালো করে দাও। ছেলেটি বলল, ভালো করার ক্ষমতা আমার হাতে নেই। ভালো করার মালিক হলেন এক আল্লাহ। তবে হ্যাঁ, তুমি আল্লাহর প্রতি ঈমান আনলে আমি দোয়া করব। আশা করা যায়, তিনি তোমার দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিবেন। বাস্তবে তা- হলো। ঘীরে ঘীরে এসব ঘটনা বাদশার কানে পোঁছৈ যায়। বাদশা ক্রুদ্ধ হয়ে পাদ্রি অন্ধ সহ বালকটিকে তলব করে এবং সামান্য কথা কাটাকাটির পর পাদ্রি অন্ধকে হত্যা করে। আর ছেলেটিকে একটি উঁচু পাহাড় থেকে নিক্ষেপ করে হত্যা করার নির্দেশ দেয়। কিন্তু আল্লাহর কুদরতের খেলা , যারা তাকে পাহাড় থেকে নিক্ষেপ করার জন্যে নিয়ে গেল, তারাই মারা গেল। ছেলেটির কিছুই হোল না। সে নিরাপদে ফিরে এল। তারপর বাদশা তাকে নদীতে ডুবিয়ে মারার নির্দেশ দেয়। কিন্তু সেখানেও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হলো যারা তাকে ডুবিয়ে মারার জন্যে নিয়ে গেল তারা সবাই ডুবে মারা গেল, আর ছেলেটি নিরাপদে ফিরে এল
শেষ পর্যায়ে বলকটি বাদশাহকে বলল, আমাকে বিভাবে মারা যাবে তার উপায় আমি নিজেই বলে দিচ্ছি। আপনি সমস্ত মানুষকে একটি মাঠে একত্রিত করুন। সকলের সামনে আমাকে শূলিতে চড়ান এবং এই বলে আমার উপর তীর নিক্ষেপ করুন- بِسْمِ اللهِ رَبِّ الْغُلاَمِ (বালকের পালনকর্তা আল্লাহর নামে) বাদশা তা- করল। এতে বালকটি তার প্রতিপালকের জন্যে উৎসর্গ হয়ে গেল। অলৌকিক ঘটনা প্রত্যক্ষ করে উপস্থিত সকলে তৎক্ষণাৎ বলে উঠল- أمَنَّا بِرَبِّ الْغُلاَمِ অর্থাৎ- আমরা বালকের পালনকর্তার প্রতি ঈমান আনলাম।) লোকজন বাদশাহকে বলল, দেখলেন তোঃ যা ঠেকাতে চেয়েছিলেন, শেষ পর্যন্ত তা- ঘটল। আগে তো মাত্র দু-একজন মুসলমান হতো। এখন বিপুল সংখ্যক লোক ইসলাম গ্রহণ করে ফেলেছে? বাদশা ক্রুদ্ধ হয়ে বড় বড় গর্ত খনন করে সেগুলোতে ভালো ভাবে আগুন জ্বালিয়ে ঘোষণা দিলো- ‘যারা ইসলাম ত্যাগ করবে না, তাদেরকে জ্বলন্ত অগ্নিকুন্ডে নিক্ষেপ করা হবে।শেষ পর্যায়ে সবাইকে আগুনে নিক্ষেপ করা হলো, কিন্তু কেউ ইসলাম ত্যাগ করতে রাজি হয়নি। একজন মুসলমান মহিলাকে ধরে আনা হলো তার কোলো দুগ্ধপোষ্য শিশু ছিল। সম্ভবত বাচ্চাটির কারণে মহিলাটি আগুনে নিক্ষিপ্ত হতে ইতস্তত করে। কিন্তু আল্লাহর হুকুম শিশুটি চিৎকার করে বলে উঠল, أُمَّاهْ! اِصْبِرِيْ فَإِنَّكِ عَلَى الْحَقِّ অর্থাৎ- ‘আম্মাজান! ধৈর্যধারণ করুন, আপনি সত্যের উপর রয়েছেন
[
সূত্র- সহীহ মুসলিম, জামে তিরমিযী, মুসনাদে আহমদ]

No comments

Powered by Blogger.