ফোরাত নদীর তীরে ইমাম হুসাইনের (রা.) ঐতিহাসিক ভাষণ


কারবালার ঘটনা মুসলমানদের ইতিহাসের অত্যন্ত নির্মম ও দুঃখজনক ঘটনা। মহররম মাসের ১০ তারিখ মহানবী (সা.)-এর ওফাতের ৫০ বছর পর ৬১ হিজরিতে সংঘটিত হয় এ মর্মান্তিক ঘটনা। হজরত হুসাইন (রা.) ফোরাত নদীর তীরে দাঁড়িয়ে ইয়াজিদ কর্তৃক নিয়োজিত সেনাবাহিনী এবং কুফাবাসীর উদ্দেশে এক নাতিদীর্ঘ হৃদয়গ্রাহী ভাষণ দিয়েছেন।
এই ভাষণটি ইতিহাসবিদ ও তাফসিরবিদ ইবনে জারির তাবারি (রহ.) কর্তৃক প্রণীত তারিখুল উমাম ওয়াল মুলুক গ্রন্থের চতুর্থ খণ্ডে বর্ণিত হয়েছে।
হজরত হুসাইন (রা.) বলেন, হে জনগণ! একটু থামো। তোমরা মনোযোগ দিয়ে আমার কথা শোনো। আমি আমার ওপর অর্পিত দায়িত্ব সম্পন্ন করতে চাই। তোমরা আমার কথা শুনলে তোমাদেরই কল্যাণ হবে। না শুনলেও আমার কোনো ক্ষতি নাই। বিষয়টি পরিষ্কার হওয়ার পর তোমরা যা খুশি করতে পারবে।
হে জনগণ! তোমরা একবার চিন্তা করে দেখো আমি কে? তোমরা গভীরভাবে চিন্তা করে দেখো, আমাকে হত্যা করা কিংবা আমার সম্মানে আঘাত হানা তোমাদের জন্য জায়েজ হবে কি না? আমি কি তোমাদের নবীর প্রিয় দৌহিত্র নই? আমি কি তাঁর পিতৃব্য আলীর সন্তান নই? সাইয়্যিদুশ শুহাদা হামজাহ (রা.) কি আমার চাচা ছিলেন না? শহীদ জাফর তাইয়্যার (রা.) কি আমার চাচা নন? আমি ও আমার সহোদর হাসান (রা.) সম্পর্কে কি মহানবী (সা.) বলেননি যে হাসান ও হুসাইন হচ্ছে বেহেশতি যুবকদের সর্দার?
তোমরা মনোযোগ দিয়ে আমার কথা শোনো। প্রাচ্য ও প্রতীচ্যে আমি ছাড়া মহানবী (সা.)-এর আর কোনো দৌহিত্র খুঁজে পাবে না। তোমরা কেন আমাকে হত্যা করতে চাচ্ছ? আমি কি তোমাদের কাউকে হত্যা করেছি? আমি কি তোমাদের কারো সম্পদ আত্মসাৎ করেছি? আমি কি তোমাদের কাউকে আহত করেছি?
অতঃপর হজরত হুসাইন (রা.) কুফার কিছু নেতৃস্থানীয় লোকের নাম ধরে ডেকে বলেন, তোমরা কি আমাকে এখানে আসার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়ে পত্র দাওনি? তারা বিষয়টি অস্বীকার করলে হুসাইন (রা.) বলেন, নিশ্চয়ই তোমরা তা দিয়েছ। কিন্তু এখন তা পছন্দ করছ না। সুতরাং তোমরা আমাকে নিরাপদ স্থানে চলে যেতে দাও।
কুফাবাসীর মধ্য থেকে একজন বলল, আপনি কেন আবদুল্লাহ ইবনে জিয়াদের প্রস্তাব মেনে নিচ্ছেন না? হজরত হুসাইন (রা.) বলেন,
আমি হীন-নীচ প্রকৃতির লোকদের মতো আমার হাত দুশমনদের হাতে সোপর্দ করতে পারি না।

No comments

Featured Post

দোয়া-ই নুর- Doya e Nur

Powered by Blogger.