এস্তেখারার দু'আ এবং ইস্তেখারা করার পদ্ধতি কি?

ইস্তিখারা এর শাব্দিক অর্থ: কোন বিষয়ে কল্যাণ চাওয়া।
পরিভাষায়: দু রাকাত নামায ও বিশেষ দুআর মাধ্যমে আল্লাহর তায়ালার নিকট পছন্দনীয় বিষয়ে মন ধাবিত হওয়ার জন্য আশা করা। অর্থাৎ দুটি বিষয়ের মধ্যে কোনটি অধিক কল্যাণকর হবে এ ব্যাপারে আল্লাহর নিকট দু রাকাত সালাত ও ইস্তিখারার দুয়ার মাধ্যমে সাহায্য চাওয়ার নামই ইস্তেখারা।

ইস্তিখারার হুকুম: এটি সুন্নাত

ইস্তিখারা কখন করবে
মানুষ বিভিন্ন সময় একাধিক বিষয়ের মধ্যে কোনটিকে গ্রহণ করবে সে ব্যাপারে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে পড়ে যায়। কারণ, কোথায় তার কল্যাণ নিহীত আছে সে ব্যাপারে কারো জ্ঞান নাই। তাই সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার জন্য আসমান জমীনের সৃষ্টিকর্তা, অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যত সকল বিষয়ে যার সম্যক জ্ঞান আছে, যার হাতে সকল ভাল-মন্দের চাবী-কাঠি, সেই মহান আল্লাহর তায়ালার নিকট উক্ত বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য সাহায্য প্রার্থনা করতে হয়। যেন তিনি তার মনের সিদ্ধান্তকে এমন জিনিসের উপর স্থীর করে দেন যা তার জন্য উপকারী। যার ফলে তাকে পরবর্তীতে আফসোস করতে না হয়। যেমন, বিয়ে, চাকুরী, সফর ইত্যাদি বিষয়ে ইস্তেখারা করতে হয়।

ইস্তিখারা করার নিয়ম:
১) ওযু করতে হয়।
২) ইস্তিখারার উদ্দেশ্যে দু রাকায়াত নামায পড়তে হয়।
৩) নামাযের সালাম ফিরিয়ে আল্লাহ তায়ালার বড়ত্ব ও মর্যাদার কথা মনে জাগ্রত করে একান্ত বিনয় ও নম্রতা সহকারে আল্লাহর প্রশংসা ও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপর দরূদ পেশ করার পর নিচের দুয়াটি পাঠ করতে হয়:

اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْتَخِيرُكَ بِعِلْمِكَ وَأَسْتَقْدِرُكَ بِقُدْرَتِكَ وَأَسْأَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ الْعَظِيمِ فَإِنَّكَ تَقْدِرُ وَلَا أَقْدِرُ وَتَعْلَمُ وَلَا أَعْلَمُ وَأَنْتَ عَلَّامُ الْغُيُوبِ اللَّهُمَّ إِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنَّ هَذَا الْأَمْرَ خَيْرٌ لِي فِي دِينِي وَمَعَاشِي وَعَاقِبَةِ أَمْرِي فَاقْدُرْهُ لِي وَيَسِّرْهُ لِي ثُمَّ بَارِكْ لِي فِيهِ وَإِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنَّ هَذَا الْأَمْرَ شَرٌّ فِي دِينِي وَمَعَاشِي وَعَاقِبَةِ أَمْرِي فَاصْرِفْهُ عَنِّي وَاصْرِفْنِي عَنْهُ وَاقْدُرْ لِيَ الْخَيْرَ حَيْثُ كَانَ ثُمَّ ارْضِنِي بِهِ

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নী-আস্তাখিরুকা বি-ইলমিকা ওয়া আস্তাকদিরুকা বি-কুদরাতিকা ওয়াআসআলুকা মিনফাদলিকাল আযীম, ফা-ইন্নাকা তাকদিরু ওয়ালা আকদিরু, ওয়া তালামু ওয়ালা আলামু ওয়া আন্তা আল্লামুল গুয়ূব। আল্লাহুম্মা ইনকুন্তা তালামু আন্না হাযাল আমরা (এখানে নিজের কাজের কথা উল্লেখ করবে) খাইরুল্লি ফী- দ্বীনী ওয়া মাআশী ওয়া আক্বিবাতি আমরী (অথবা বলবে: আ জিলি আমরি ওয়া আজিলিহি) ফাকদিরহু লী, ওয়া-য়াসসিরহু লী, সুম্মা বা-রিকলী ফীহি, ওয়া ইন কুনতা তালামু আন্না হাযাল আমরা (এখানে নিজের কাজের কথা উল্লেখ করবে) শাররুল্লী ফী দীনী ওয়া মাআশী ওয়াআকী¡বাতি আমরী (অথবা বলবে: আ জিলি আমরী ওয়া আজিলীহি) ফাসরিফহু আন্নী ওয়াসরীফনী আনহু ওয়াকদির লিয়াল খাইরা হাইসু কানা সুম্মা আরদিনী বিহী। (এর পর নিজের কাজের কথা উল্লেখ করবে)

অর্থ: হে আ্ল্লাহ! আমি আপনার কাছে কল্যাণ চাই আপনার ইলমের সাহায্যে। আপনার কাছে শক্তি কামনা করি আপনার কুদরতের সাহায্যে। আপনার কাছে অনুগ্রহ চাই আপনার মহা অনুগ্রহ থেকে। আপনি সর্বোময় ক্ষমতার অধিকারী, আমার কোন ক্ষমতা নাই। আপনি সর্বজ্ঞ আমি কিছুই জানি না। আপনি সকল গোপন বিষয় পূর্ণ অবগত।
হে আল্লাহ! আপনার ইলমে এ কাজ আমার দ্বীন আমার জীবন-জিবীকা ও কর্মফলের দিক থেকে (অথবা বলেছিলেন, দুনিয়া ও পরকালের দিক থেকে মন্দ হয়) তবে তা আমাকে করার শক্তি দান করুন। পক্ষান্তরে আপনার ইলমে এ কাজ যদি আমার দ্বীন আমার জীবন-জিবীকা ও কর্মফলের দিক থেকে তবে আমার ধ্যান-কল্পনা একাজ থেকে ফিরিয়ে নিন। তার খেয়াল আমার অন্তর থেকে দূরীভূত করে দিন। আর আমার জন্যে যেখানেই কল্যাণ নিহিত রয়েছে এর ফায়সালা করে দিন এবং আমাকে এরই উপর সন্তুষ্ট করে দিন ।

এ দুআর যেখানে হাজাল আমরা শব্দটি আসবে, সেখানে মনে মনে যে কাজটির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে চাচ্ছে সেটি উচ্চারণ করবে আরবীতে বা মনে মনে, পুনরায় সে বিষয়টি ভেবে নিবে। উক্ত দুআ শেষ করে কারো সাথে কথা না বলে কিবলামুখী হয়ে ঘুমিয়ে পড়বে। ঘুম থেকে জাগার পর মন যেদিকে সায় দিবে, বা যেদিকে আগ্রহী হয়ে উঠবে, সেটিই ফলাফল মনে করবে। [সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং-৪৮০, তুহফাতুল আলমায়ী-২/৩৩৮]


1 comment:

Powered by Blogger.